২৬ মার্চ ২০২৫, বুধবার, ৬:১৮:৫৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
বাংলাদেশ ও মেক্সিকোর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার এদেশে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন আমরা হতে দিব না- আখতার হোসেন সাংবাদিকতা ব্যবস্থাকে সাংবাদিকবান্ধব করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে- মাহফুজ আলম আমাদের যেকোনো মূল্যে ঐক্য ধরে রাখতে হবে- তারেক রহমান প্যারিসে বাংলাদেশ কমিউনিটি মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টারে পুরস্কার বিতরণ সংস্কার ও নির্বাচনকে যেভাবে মুখোমুখি করা হচ্ছে তা ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক- তারেক রহমান আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার কোনো পরিকল্পনা নেই- প্রধান উপদেষ্টা আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবীতে মধ্যরাতে মিছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানাইলের কারণে ৫৫ হাজার মৃত্যু ট্রাম্পকে থামাতে আদালতকে ভূমিকা রাখতে হবে


হাসিনা পরিবারের বিরুদ্ধে চার্জশিট, ব্যাংক হিসাব ও সম্পত্তি জব্দের আদেশ
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-০৩-২০২৫
হাসিনা পরিবারের বিরুদ্ধে চার্জশিট, ব্যাংক হিসাব ও সম্পত্তি জব্দের আদেশ শেখ হাসিনা


গণঅভ্যুত্থানের মুখে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন শেখ হাসিনা। এরপরও হঠাৎ ১১ মার্চ মঙ্গলবার শেখ হাসিনা ও তার পরিবারবর্গের বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে দেশ ত্যাগের নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। দিনভর এটা নিয়ে আলোচনা হয়। যারা নিশ্চিত দেশে নেই। তাদের বিরুদ্ধে কেন আবার দেশ ত্যাগের নিষেধাজ্ঞা? বিদেশে থাকার পরও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে। এ নিয়ে বিভিন্ন অঙ্গনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। 

জানা গেছে, মঙ্গলবার (১১ মার্চ) দুদকের উপ-পরিচালক মনিরুল ইসলামের আবেদনের প্রেক্ষিতে পরিবারসহ শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয় আদালত। দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার আট মাসের মাথায় তাদের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। 

জানা গেছে, নিষেধাজ্ঞার আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয়, ছোট বোন শেখ রেহানা ও তার ছোট বোনের মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক ও অন্যান্যের বিরুদ্ধে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের নামে প্রায় ৫৯ হাজার কোটি টাকা লোপাট বা আত্মসাতের একটি অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশনে অনুসন্ধানাধীন রয়েছে। অভিযোগটি অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি অনুসন্ধান দল গঠন করা হয়েছে। অনুসন্ধানকালে বিশ্বস্ত সূত্রের মাধ্যমে জানা যায়, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সপরিবারে গোপনে দেশ ত্যাগ করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তারা দেশ ত্যাগ করে বিদেশে পালিয়ে গেলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ডপত্র প্রাপ্তিতে ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে। তাছাড়া সার্বিক অনুসন্ধানকাজে বিঘ্ন সৃষ্টিসহ সমূহ ক্ষতির কারণ রয়েছে। এ অবস্থায় অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধান কার্যক্রমের স্বার্থে তাদের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা একান্ত প্রয়োজন। শুনানি শেষে আদালত এই আবেদন মঞ্জুর করেন।

দুদক প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ বিভিন্ন গণমাধ্যমের মারফতে জানতে পারেন, শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা দেশ ছাড়ার বিষয়টি প্রমাণিত হয়নি। এ সংক্রান্ত রাষ্ট্রের কাছে ডকুমেন্টারি কোনও সাক্ষ্য-প্রমাণ নেই। দুর্নীতি অভিযোগে কারও বিরুদ্ধে মামলা হলে সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। যাতে করে, দেশে আসলে আর কেউ ফেরত যেতে না পারে।

তবে এ ব্যাপারে এক আইনজ্ঞ জানিয়েছেন, দুর্নীতির অভিযোগ সংশ্লিষ্ট কোনও ব্যক্তি বা আসামির বিরুদ্ধে যখন রাষ্ট্রীয় কিংবা আন্তর্জাতিকভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় তখন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনগত সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়। কারণ ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনগত কোনও প্রক্রিয়া বাকি রয়েছে, এমন কোনও প্রশ্ন যাতে না ওঠে। সেসব দিন বিবেচনা করেই দেশের বাইরে থাকা সত্ত্বেও শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

একই দিনে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারবর্গের সকল ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ ও এদের নামে থাকা সুধাসদন থেকে শুরু সকল ফ্লাট, প্লট, জমি জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। 

হাসিনার বিরুদ্ধে চার্জশিট 

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানাসহ তাদের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে পৃথক ৫টি মামলায় চার্জশিট দাখিল করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সোমবার (১০ মার্চ) নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এসব চার্জশিট দাখিলের কথা জানান দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন। তাদের বিরুদ্ধে প্লট, ফ্ল্যাট জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়েছে।

চার্জশিটগুলোতে যাদের অভিযুক্ত করা হয়েছে তারা হলেন- সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, শেখ রেহানা সিদ্দিক, তার মেয়ে টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক ও আজমিনা সিদ্দিক। এছাড়া গণপূর্ত ও রাজউকের বেশ কয়েকজনও কর্মকর্তা রয়েছেন। 

ব্যাংক হিসেব জব্দ 

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা, ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এবং তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ১২৪টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার (১১ মার্চ) ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম তথ্য জানান। তিনি বলেন, দুদকের উপপরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম এ আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত আবেদনটি মঞ্জুর করেন।

ফ্লাট, প্লট ও জমি জব্দের আদেশ 

গণঅভ্যুত্থানের মুখে দেশত্যাগ করে ভারতে অবস্থান করা শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত বাসভবন সুধা সদনসহ ও তার পরিবারের সদস্যদের জমি ও ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার (১১ মার্চ) দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত এসব সম্পদ জব্দের আদেশ দেন। দুদকের পক্ষে সংস্থাটির উপপরিচালক মনিরুল ইসলাম এসব সম্পত্তি জব্দ চেয়ে আবেদন করেন। 

জব্দের আদেশ হওয়া এসব সম্পদের মধ্যে রয়েছে, ধানমন্ডি আবাসিক এলাকার ১৬ কাঠা জমির সুধা সদন; যা শেখ হাসিনার ছেলে জয় ও মেয়ে পুতুলের নামে। গুলশান আবাসিক এলাকায় টিউলিপ সিদ্দিকের নামে ২৪৩৬ স্কয়ার ফিটের একটি ফ্ল্যাট, শেখ রেহানার নামে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ১০ শতাংশ জমি, সেগুনবাগিচায় একটি ফ্ল্যাট। এছাড়া রাদওয়ান মুজিবের নামে গুলশানের ছয়টি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

দুদকের আবেদনে বলা হয়েছে, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজিব আহমেদ ওয়াজেদ জয়, তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, তার ছোট বোন শেখ রেহানা সিদ্দিক, রেহানার সন্তান রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও টিউলিপ সিদ্দিক স্থাবর সম্পদগুলো অন্যত্র হস্তান্তর, স্থানান্তর বা বেহাত করার চেষ্টা করছেন। 

এমতাবস্থায়, অভিযোগটির সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে অনুসন্ধান সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তারা যেন স্থাবর সম্পদ বা সম্পত্তির মালিকানা পরিবর্তন বা স্থানান্তর বা অন্য কোনও প্রক্রিয়ায় হস্তান্তর করতে না পারেন এ মর্মে জব্দ (অ্যাটাচমেন্ট) আদেশ হওয়া আবশ্যক।

শেয়ার করুন