৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৯:৩২:৪৪ অপরাহ্ন


জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব নিষেধাজ্ঞা চালু করতে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন ট্রাম্প প্রশাসনের
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-০৩-২০২৫
জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব নিষেধাজ্ঞা চালু করতে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন ট্রাম্প প্রশাসনের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব


প্রথম সার্কিট কোর্ট অব আপিলস ১২ মার্চ জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব সীমিত করার জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের ওপর আরোপিত ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখেছে। আপিলে হেরে গেলে ট্রাম্পের প্রশাসন গত ১৩ ফেব্রুয়ারি আইনি লড়াই চলাকালীন জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব নিষেধাজ্ঞা আংশিকভাবে কার্যকর করার অনুমতি দেওয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছে। ট্রাম্প প্রশাসন মেরিল্যান্ড, ম্যাসাচুসেটস এবং ওয়াশিংটনের ফেডারেল ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের যে আদেশগুলো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে তা সীমিত করার সুপ্রিম কোর্টের কাছে অনুরোধ করেছে। তারা দাবি করছে যে, সুপ্রিম কোর্টে মামলাটি চলমান থাকায়, নিষেধাজ্ঞাটি আংশিকভাবে কার্যকর করা হোক, অর্থাৎ সারা দেশে আদেশটি প্রযোজ্য না হলেও, যাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর না হয়। বর্তমানে এ নির্বাহী আদেশটি সারা দেশে স্থগিত রয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন তার আবেদনপত্রে উল্লেখ করেছে, যাতে নিম্ন আদালতের আদেশগুলির প্রভাব কেবল মামলার আবেদনকারী রাজ্যগুলোর জন্য সীমাবদ্ধ রাখা হয়। তারা আরো দাবি করেছে যে, রাজ্যগুলোর এই নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে মামলা করার আইনি অধিকার নেই। অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল সারা হ্যারিস সুপ্রিম কোর্টে বলেছেন যে ১৪তম সংশোধনের নাগরিকত্ব ক্লজ সঠিকভাবে পড়লে, এটি যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া সবাইকে নাগরিকত্ব দেয় না।

১ম সার্কিট কোর্ট অব আপিলস ট্রাম্পের আইনজীবীদের আবেদন খারিজ করে ম্যাসাচুসেটসের ফেডারেল বিচারক কর্তৃক আরোপিত বাধা মামলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রত্যাহার না করতে আদেশ দিয়েছে। ১ম সার্কিট কোর্টের চিফ বিচারক ডেভিড ব্যারন ঐক্যমত্যপূর্ণ প্যানেল থেকে লিখিত রায়ে বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে এটি প্রমাণ করার জন্য কোনো ‘বিকশিত যুক্তি’ নেই কেন ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশটি আইনি হতে পারে। আদেশে বিচারক ব্যারন লিখেছেন, প্রশাসনের আইনজীবীরা আদালতকে ব্যাখ্যা করতে ব্যর্থ হয়েছেন যে, স্টেটগুলো এবং অন্যান্য বাদীপক্ষ মামলা করার অধিকারী নয়। তিনি উল্লেখ করেছেন যে নিম্ন আদালত এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিল যে, রাজ্যগুলো যদি আদেশ কার্যকর হয়, তবে তাদের অপূরণীয় ক্ষতি হবে এবং আদেশটি নিষিদ্ধ করা হলে কেবল বর্তমান অবস্থা বজায় থাকবে।

ট্রাম্প প্রশাসনের আইনজীবীরা ১ম সার্কিট কোর্টকে আবেদন করেছিলেন যাতে ম্যাসাচুসেটসের বিচারক লিও সোরকিন কর্তৃক আরোপিত ব্লকটি প্রত্যাহার করা হয়, তারা দাবি করেছিলেন যে নিউ জার্সি এবং অন্যান্য রাজ্য বা সংগঠনগুলির এই মামলা দায়ের করার আইনি অধিকার বা অবস্থান নেই।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশটি ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এর পর যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া শিশুদের বাবা-মা যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বা অস্থায়ীভাবে অবস্থান করেন, তাহলে জন্ম নেওয়া শিশুদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না। এ আদেশটি আমেরিকান নাগরিকত্বের ধারণাকে পুনর্মূল্যায়ন করার চেষ্টা করছে, যা সংবিধানের ১৪তম সংশোধনের নাগরিকত্ব ক্লজের প্রাথমিক ব্যাখ্যাকে চ্যালেঞ্জ করছে। এর মাধ্যমে অবৈধ অভিবাসী বাবা-মায়ের সন্তানদের নাগরিকত্ব বাতিল করা হবে। যতদূর জানা গেছে, প্রায় দুই ডজন স্টেট, নাগরিক অধিকার গ্রুপ এবং অভিবাসী অধিকার সংগঠনরা এই নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। তারা দাবি করেছে যে এটি সংবিধানের ১৪তম সংশোধনীর অধীনে নাগরিকত্বের অধিকারকে লঙ্ঘন করছে। এর ফলস্বরূপ, মেরিল্যান্ড, ম্যাসাচুসেটস, ওয়াশিংটন এবং নিউ হ্যাম্পশায়ারের ফেডারেল বিচারকরা আদেশটি স্থগিত করেছেন এবং তা সাংবিধানিকভাবে স্পষ্টভাবে অসাংবিধানিক বলে উল্লেখ করেছেন।

জাতীয় নিষেধাজ্ঞা নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট কখনো সরাসরি রায় দেয়নি। তবে পাঁচজন রক্ষণশীল বিচারক অতীতে একক বিচারকদের দ্বারা প্রদত্ত জাতীয় আদেশের ব্যাপক প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এই ধরনের আদেশের ব্যাপকতা বিচারপতিরা এর আগে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন, তবে এই বিষয়ে আদালত এখনো কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছায়নি। ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুর দিকে একাধিক বিতর্কিত নীতি বাস্তবায়ন করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে অভিবাসী নীতি, রাষ্ট্রীয় সাহায্য সীমিত করা এবং ট্রান্সজেন্ডারদের অধিকার সীমিত করা। এই আইনি লড়াইগুলো তা প্রমাণ করে যে, প্রশাসন দ্রুত তার নীতিমালা পরিবর্তন করছে এবং বিভিন্ন গ্রুপ এবং স্টেট গুলির দ্বারা উত্থাপিত আইনি চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়ছে।

মেরিল্যান্ড, ম্যাসাচুসেটস এবং ওয়াশিংটনের ফেডারেল ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট এই নির্বাহী আদেশটি সারা দেশে স্থগিত করে এবং তা সাংবিধানিকভাবে স্পষ্টভাবে অসাংবিধানিক বলে মন্তব্য করেছে। এরপর ট্রাম্প প্রশাসন ২০২৫ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টে একটি জরুরি আবেদন জমা দেয়, যাতে আদেশটি আংশিকভাবে কার্যকর করার অনুমতি দেওয়া হয়, আইনি লড়াই চলাকালীন। প্রশাসন সুপ্রিম কোর্টে দাবি করেছে যে, আদেশটি সারা দেশে প্রযোজ্য না হলেও, যাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর না হওয়া উচিত। তারা আরো যুক্তি দিয়েছে যে, রাজ্যগুলোর এই নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে মামলার আইনি অধিকার নেই। প্রশাসন উল্লেখ করেছে যে ১৪তম সংশোধনের নাগরিকত্ব ক্লজ সঠিকভাবে পড়লে, এটি সবসময় যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া সবাইকে নাগরিকত্ব দেয় না এবং এটি অবৈধ অভিবাসী বাবা-মায়ের সন্তানদের নাগরিকত্ব বাতিল করতে সক্ষম।

ট্রাম্প প্রশাসন একক বিচারকদের দ্বারা প্রদত্ত জাতীয় আদেশের ব্যাপক প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা মনে করে, আদালত যখন এককভাবে এমন আদেশ দেয়, তখন তা দেশব্যাপী ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে, যা অযৌক্তিক হতে পারে। এই মামলা ট্রাম্প প্রশাসনের অন্যান্য বিতর্কিত অভিবাসন নীতির অংশ, যেমন শরণার্থী গ্রহণ সীমিত করা, ট্রান্সজেন্ডারদের অধিকার সীমিত করা এবং বিভিন্ন রাজ্যে সরকারি সাহায্য কমানো।

এই মামলা যুক্তরাষ্ট্রে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের আইন এবং সরকারের ক্ষমতা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলছে। ট্রাম্প প্রশাসনের নির্বাহী আদেশ এবং তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা দেশটির আইনি পরিসরে গভীর বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। সুপ্রিম কোর্টে এই বিষয়ে পরবর্তী রায় যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হতে পারে, কারণ এটি নাগরিকত্বের সংজ্ঞা এবং এটি সম্পর্কিত অধিকারকে প্রভাবিত করতে পারে। এই মামলার চূড়ান্ত রায় ভবিষ্যতে দেশের অভিবাসন নীতি এবং সংবিধানের ১৪তম সংশোধনী সম্পর্কিত নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করতে পারে।

শেয়ার করুন