১৯ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার, ০৪:৪৮:৪৮ পূর্বাহ্ন


নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িতদের বহিষ্কার করছে ঢাবি ও চুয়েট
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-০৩-২০২৫
নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িতদের বহিষ্কার করছে ঢাবি ও চুয়েট ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড


আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এক মন্তব্যে ছাত্রদের কোটা আন্দোলেনর আগুনে ঘি ঢেলে দেওয়া হয়েছিল। আন্দোলোনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীদের দমাতে ছাত্রলীগই যথেষ্ট বলে যে মন্তব্য তিনি করেছিলেন তার কুফল বয়ে বেড়াচ্ছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। এরপর নিরীহ ছাত্রছাত্রীদের ওপর লাঠিসোটা, হকিস্টিক ও মারধরের বিভিন্ন উপকরণ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে শিক্ষার্থীদের ওপর। এটাই আন্দোলন ফুলে ফেপে ওঠে। রূপ নেওয়া কঠোর আন্দোলনে। যার সুফল সবার জানা! তবে সে সময়ের ছাত্রলীগের যে নির্যাতন সাধারণ শিক্ষার্থীর ওপর তা আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকেও ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। অন্তর্বর্তী সরকার ওই ছাত্রসংগঠনটি নিষিদ্ধ করে। এবার এ নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠনের অপরাধী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্তদের খোঁজা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এদেরকে বহিষ্কার করছে। ইতিমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) এমন কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গত বছরের ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় অভিযুক্ত এমন ১২৮ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) প্রশাসন। গত ১৭ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভা শেষে বহিষ্কারের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান। তিনি সিন্ডিকেট মিটিংয়ে সভাপতিত্ব করেন। বহিষ্কৃত সবাই নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয় ছিলেন। উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান গণমাধ্যমকে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় অভিযুক্ত এমন ১২৮ জন শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমদ বলেন, সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. তাজমেরী এস ইসলামকে প্রধান করে বিশ্ববিদ্যালয় আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। ১২৮ জনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী জড়িতদের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এর আগে গত ১৩ মার্চ অভ্যুত্থানের সময়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা সংক্রান্ত বিষয়ে সত্যানুসন্ধান কমিটি উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খানের কাছে একটি প্রতিবেদন জমা দেন।

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট)

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) সাত শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম এবং স্থায়ীভাবে আবাসিক হল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া আবাসিক হল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে আরো ১২ শিক্ষার্থীকে। বহিষ্কৃত এই ১৯ জন নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা বলে জানা গেছে। এছাড়া দুজন শিক্ষার্থীকে সতর্ক করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

গত ১৭ মার্চ শৃঙ্খলা কমিটির সদস্য সচিব ও ছাত্রকল্যাণ অধিদফতরের পরিচালক মো. মাহবুবুল আলম সই করা পৃথক ২১টি বিজ্ঞপ্তিতে এসব সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটির ২৮১তম সভায় (জরুরি) এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটির বৈঠক হয়েছে। শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের পাঠানো কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাবের পরিপ্রেক্ষিতে সভায় শাস্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের মধ্যে চারজনকে দুই বছর এবং বাকি তিনজনকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়। একই সঙ্গে তাদের আবাসিক হল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।

দুই বছরের জন্য বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা হলেন চুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিজয় হোসেন, সাবেক সহ-সভাপতি মো. ইমাম হোসেন, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আজহারুল ইসলাম ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ তৌফিকুর রহমান। এক বছরের জন্য বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা হলেন সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৌমিক জয়, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আশিকুল ইসলাম ও তাহসিন ইশতিয়াক।

আবাসিক হল থেকে সাময়িক বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা হলেন চুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি তোফাইয়া রাব্বি, মো. সাদিকুজ্জামান, ইউসুফ আবদুল্লাহ, মো. তানভীর জনি, ইফতেখার সাজিদ ও শাকিল ফরাজী; সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তালহা জুবায়ের, মাহমুদুল হাসান, মো. রিফাত হোসাইন, মইনুল হক এবং সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইরফানুল করিম ও আবদুর রহমান।

এসব শিক্ষার্থীর বাইরে আরো দু’[জনকে কেবল সতর্ক করে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তারা হলেন- চুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি চিন্ময় কুমার দেবনাথ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. রাকিব উদ্দিন চৌধুরী।

উল্লেখ্য, ইতিমধ্যে বুয়েটে আবরার হত্যাকান্ডে জড়িত ২০ জন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীর মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছে হাইকোর্ট। এ ছাড়াও রয়েছে যাবজ্জীবন ও বিভিন্ন মেয়াদে শান্তির সিদ্ধান্ত।

শেয়ার করুন