দেখতে দেখতে অস্ট্রেলিয়ায় ২০ বছর পার করলাম। নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে অনেকটা জীবিকার তাগিদেই সেপ্টেম্বর ২০০৫ পরবাসী (প্রবাসী) হয়েছিলাম। এই দীর্ঘসময়ে কয়েকটি ঈদ বাংলাদেশে বৃহত্তর পরিবারের সঙ্গে করেছি। তিনটি ঈদ করেছি অবরুদ্ধ আফগানিস্তানে, বাকি সব রোজা ঈদ করেছি অস্ট্রেলিয়ায়। এবারের রোজার ঈদ নিঃসন্দেহে ছিল ব্যতিক্রম, অনেক আনন্দদায়ক। সঙ্গে ছিল রোজি, শুভ্র, ফাতিমা, জোহায়ের। ছোট ছেলে অভ্র ভিন্ন শহর মেলবোর্নে থাকায় যুক্ত হতে পারেনি। ১ থেকে ২০ রোজা কিংস্টনে আমাদের বাসায় থেকেছি। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে দুদিন বিদ্যুৎ এবং নেটসংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিলাম। বাকি দিনগুলো কিন্তু রোজির তৈরি করা উপাদেয় ইফতারি আর সাহরি খেয়েছি। লোগান লি ইন্দোনেশিয়ান কমিউনিটি মসজিদে তারাবি নামাজ পড়েছি। ২০-৩০ রোজা ২৪/৭ মসজিদে থেকে ইতেকাফ করেছি। এই প্রথম একেবারে একান্তে এবাদত করার সুযোগ হয়েছে। প্রতিদিন ইন্দোনেশিয়ানদের তৈরি নানা উপাদেয় খাবার ছিল ইফতার আর সাহরিতে। মসজিদে থেকে নিরবচ্ছিন্ন এবাদত বন্দেগি করেছি। কিছু অলৌকিক ঘটনার সাক্ষী হয়েছি। প্রায় প্রতিদিন তারাবিতে শুভ্র, ফাতিমা জোহের যোগদান করেছে। অবশেষে ৩১ মার্চ মসজিদে অন্তত ২৫ দেশের মুসলমানদের সঙ্গে সাড়ম্বরে ঈদ উৎসব পালন করেছি।
ঈদের পরদিন থেকেই শাওয়ালের রোজা রেখেছি আমি আর রোজি। ৬ মার্চ সকাল থেকে দুপুর ছিলাম নেইবার্স ডে উৎসবে। ২৫০-৩০০ প্রতিবেশী আনন্দ উৎসবে মেতেছিল অনন্য আয়োজনে। ছিল শিশু-কিশোরদের পনি রাইড, বাস্কেট বল খেলা, বারবি কিউ, উপাদেয় ভোজন ব্যবস্থা। নানা পেশা, নানা ধর্মের, নানা বয়সের মিলনমেলা। বিকাল থেকে সন্ধ্যা কেটেছে নাতি-নাতনির স্কুল আইসিবিতে ঈদমেলায়। বহুদিন পর ফাতিমা জোহরের সঙ্গে রাইড চড়লাম, ফায়ার ওয়ার্কস দেখলাম। আনন্দ উৎসবে কেটে গেলো সময়। শেষ করছি, শাওয়াল মাসের ষষ্ঠ রোজা। মহান আল্লাহকে অশেষ কৃতজ্ঞতা নিরাপদে সুস্থতায় রোজা-ঈদ পালন করার সুযোগ দেওয়ায়।
জানি না মহান আল্লাহ তায়ালা আরেকটি রোজা পর্যন্ত থাকার সুযোগ দেবেন কি না। সত্যি বলতে কি ৭২ বছর বয়সে এখনো শৈশব-কৈশোরে ফরিদপুর এবং যৌবনে ঢাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়া ঈদ উৎসব মিস করি। ২০২৪ কোরবানির ঈদ বাংলাদেশে ছিলাম। বাবা-মা, বড় ভাই-বোনেরা পরপারে। দেশে আছে ছোট ভাই সাকী, ভাতিজা, ভাগনে, নাতিরা এবং অনেক সহকর্মী বন্ধু। সুযোগ পেলে আরো একটি রোজা ঈদ বাংলাদেশে থাকার স্বপ্ন পোষণ করি। অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক হলেও মন-মননে এখনো বাংলাদেশকে ধারণ করি। অস্ট্রেলিয়ায় রোজা-ঈদ।