১৩ মে ২০২৫, মঙ্গলবার, ০৮:১১:৩৫ পূর্বাহ্ন


নিউইয়র্কাররা এখন মাইনকার চিপায়!
হাবিব রহমান
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-০৪-২০২৫
নিউইয়র্কাররা এখন মাইনকার চিপায়! হাবিব রহমান


নিউইয়র্কে বসবাসকারীরা এখন পড়েছেন মাইনকার চিপায়। ‘মাইনকার চিপা’ কথাটির আভিধানিক কোনো অর্থ নেই। কিন্তু আমরা বাংলাদেশিরা সবাই এর অর্থ নিজের মতো করে বুঝে নিই এবং ব্যবহারও করে থাকি। এটি লোকমুখে প্রচলিত। 

সাধারনত মাইনকার চিপা বলতে এমন পরিস্থিতির কথা বোঝানো হয় যে, সে না পারছে সেই পরিস্থিতির সমাধান করতে, না পারছে বের হতে। 

‘মাইনকার চিপা’ কথার অর্থ-চারদিকে বিপদ, সর্বত্র অসহনীয় অবস্থা বা উভয় সংকট। এটি এমন এক অবস্থাকে নির্দেশ করে, যখন কোনোদিক থেকে কোনোভাবে শান্তি পাওয়ার, কিংবা অশান্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার সুযোগ বা উপায় থাকে না। এর দ্বারা এমন একটা সংকটময় পরিস্থিতির কথা বোঝানো হয়, যেখান থেকে বেরিয়ে আসা কিংবা সমাধান করা- দুটোই অসম্ভব। 

ভূমিতে পাতা মাইনে চাপ পড়লে তা আরো চাপ দিয়ে রাখতে হয়। চাপ সরালে বিস্ফোরিত হয়ে যায়। তবে সর্বক্ষণ চাপ দিয়ে রাখা যেমন বিপজ্জনক তেমনি চাপ সরিয়ে ফেলা আরো বিপজ্জনক। ‘মাইনের চিপা’ থেকে এই মাইনকার চিপা কথাটি আসতে পারে বলে অনেকে মনে করেন। যদিও মাইনকার চিপার নামকরণ নিয়ে আরো কথা প্রচলিত রয়েছে। 

কথাটি বললাম এজন্য, সম্প্রতি নিউইয়র্ক সিটির কাউন্সিলম্যান এরিক বোচার ‘প্যাডেস্ট্রিয়ান প্রাইসিং’ নামে একটি বিল প্রস্তুত করেছেন, যাতে বলা হয়েছে ম্যানহাটন ৬০ স্ট্রিটের নিচে টোল এরিয়ায় হাঁটলে প্রতি ৩০ মিনিটের জন্য চার্জ করা হবে ৩.৯৯ ডলার। কাউন্সিলম্যান বোচারের মতে, এই টোল চালু করলে নিউইয়র্ক সিটির ডিপার্টমেন্ট অব ট্রান্সপোর্টেশন বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আয় করতে পারবে। এছাড়াও টোল চালুর পর যেহেতু পায়ে হাঁটা ট্রাফিক কমে যাবে, তাই সাইডওয়াকে ‘বাইসাইকেল লেন’ বসানো যাবে। 

তিনি অবশ্য বলেছেন, ওই এলাকায় যারা বাস করেন বা ব্যবসা করেন, তাদের এই টোল দিতে হবে না। কাউন্সিলম্যান আশা প্রকাশ করেছেন এই বিল পাস হলে আগামী বছর এপ্রিল থেকে তা কার্যকর হবে। 

উল্লেখ্য, ম্যানহাটনের ৬০ স্ট্রিটের নিচে বা দক্ষিণে গাড়ি চালিয়ে গেলে ইতোমধ্যে কনজেশন টোল দেওয়ার নিয়ম চালু হয়েছে। 

আর এসব দেখে বা শুনে অনেক রসিক বাংলাদেশি ব্যাপারটাকে মাইনকার চিপার সঙ্গে তুলনা করেছেন। 

মাইনকার চিপার কস্ট নিয়ে এতক্ষণ কথা বললাম। এবার এ নিয়ে একটি গল্প বলে মন ভালো করে দিই। রুচিশীল পাঠক দয়া করে ক্ষমা করবেন। 

অনেক দিন আগের কথা। মানিক নামে এক কাঠমিস্ত্রি ছিল। গ্রামের শেষপ্রান্তে ছিল একটা বিশাল বটগাছ, তার নিচে ছিল মানিকের কর্মক্ষেত্র। একা একা মনের আনন্দে এক মনে গাছের ছায়ায় কাজ করতো মানিক। বিপত্তি ছিল অন্য জায়গায়, ওই গাছে ছিল বানরের উৎপাত। মানিক যে কাজ করে ঠিক সে কাজ করার ভান করে মানিককে বিরক্ত করতো বানরগুলো। মানিক কাঠ চিড়ে, বানরগুলো ওই রকম করে, মানিক রঁ দ্যা চালায়, বানরগুলোও তা করার ভঙ্গি করে। শুধু তাই নয়, প্রতিদিন বাসা থেকে টিফিন বাক্সে আনা খাবারগুলোও চুরি করে খেয়ে নেয় বানরগুলো। 

এজন্য মানিক যারপরনাই বিরক্ত। এরকম আর কতদিন সহ্য করা যায়! তাই সে সিদ্বান্ত নিলো বানরগুলোকে শিক্ষা দেওয়ার। যেই ভাবা সেই কাজ। 

মানিক একটা যন্ত্র বানালো বানরগুলোকে সায়েস্তা করার জন্য। 

যন্ত্রটা এরকম-একটা ইংলিশ ভি-এর মতো দেখতে। ওইখানে কিছু রাখলেই খপ করে তা আটকে যাবে। 

মানিক তার বানানো যন্ত্রটার চিপার কাছে গিয়ে লুঙ্গি তুলে ওর দণ্ডটা রাখার ভান করে আবার উঠিয়ে নেয়। বানরগুলো দূর থেকে মানিক কী করে দেখছিল। আর মানিক এটাই চাইছিল। এ কাজ কয়েকবার করলো, যাতে করে বানরগুলো ভালোভাবে দেখতে পারে। 

এরপর বাড়ি যাওয়ার ভান করে মানিক আড়ালে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলো কি করে বানররা। যেই না মানিক আড়ালে গেল বানরের সরদার মানিক যা করলো তা করতে গেল। আর তাতেই সে চিপায় আটকে গেল বানরের বিচি। বানর যতই তা ছাড়ানোর জন্য নড়াচড়া করতে থাকে, তখন আরো ভালোভাবে চিপায় আটকে যায় তার বিচি। ব্যথায় বানর সরদার চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দিলো। তা শুনে এলাকাবাসী এসে জড়ো হলো বটগাছের নিচে। তারা দেখলো মানিকের তৈরি করা যন্ত্রের চিপায় আটকা পড়া বানর সরদারের আতঙ্কিত চেহারা। 

তখন গ্রামবাসী মানিকের প্রশংসা করে বলতে লাগলো, ‘মানিক মাশাআল্লাহ একখান চিপাই বানাইছে! আর মাইনকার চিপায় পড়েছে বানর সরদার।’

জলপথে নিউইয়র্ক দেখা

ছাদ খোলা বাসে উঠে যেমন ঘুরে ঘুরে নিউইয়র্ক দেখা যায়, তেমনি জলপথেও নিউইয়র্ক শহরটি ঘুরে দেখার ব্যবস্থা রয়েছে। আর সে সূযোগটি করে দিয়েছে সার্কেল লাইন ক্রুজ। আপনার ব্যস্ততম জীবন থেকে অন্তত দুটি ঘণ্টা সময় বের করুন। জলপথে মিড এবং লোয়ার ম্যানহাটনের দিন ও রাতের দৃশ্যাবলি মুগ্ধতার সঙ্গে উপভোগ করুন। 

সার্কেল লাইনের সুসজ্জিত ক্রুজগুলো সারা বছর পর্যটকদের জন্য জলপথে নগর পরিভ্রমণের ব্যবস্থা করে থাকে। এদের অনেকগুলো প্যাকেজ থেকে একটি বাছাই করে কিছুটা ব্যতিক্রমী সময় কাটাতে পারেন। 

এক, দুই বা তিন ঘণ্টার প্রত্যেকটি প্যাকেজই গাইডেট ট্যুর। আপনাকে বহনকারী জলযানটি যখন কোনো ব্রিজ অথবা সুউচ্চ কোনো অট্টালিকার পাশ দিয়ে অতিক্রম করবে, তখন অভিজ্ঞ গাইডের বর্ণনা শোনাবে আপনাকে। বোটেই স্ন্যাকস, ড্রিঙ্কসসহ নানা রকম খাবার-দাবারের ব্যবস্থা রয়েছে। আপনার সুন্দর মুহূর্তগুলো ধরে রাখার জন্য রয়েছে সার্কেল লাইনের নিজস্ব ফটোগ্রাফার। উপযুক্ত ফি দিয়ে তাকে দিয়েও ম্যানহাটনের আকর্ষণীয় ভিউ থেকে ছবি তোলাতে পারেন। বিয়ে বার্ষিকী, জন্মদিনসহ যে কোনো অনুষ্ঠান করতে পারেন এই জলের ওপর। এজন্য অবশ্য আগে থেকেই আপনাকে রিজার্ভেশন করতে হবে। 

সার্কেল লাইনের প্যাকেজগুলো নিম্নরূপ

ফুল আইল্যান্ড ক্রুজ : সময়সীমা তিন ঘণ্টা। দর্শনীয় এলাকা হচ্ছে- ম্যানহাটন দ্বীপ, এর তিনটি নদী, সাতটি প্রধান ব্রিজ, ২৫টি বিশ্বখ্যাত ল্যান্ডমার্ক এবং স্টাচু অব লিবার্টি। 

সেমি সার্কেল ক্রুজ : ভ্রমণ সময় দুই ঘণ্টা। এই প্যাকেজে দর্শনীয় হচ্ছে- নিউইয়র্ক স্কাইলাইন, হাডসন রিভার, ব্যাটারি পার্ক, ইস্ট রিভার, ব্রুকলিন ব্রিজ, ম্যানহাটন ব্রিজ, উইলিয়ামসবার্গ ব্রিজ, জাতিসংঘ ভবন ইত্যাদি।

লিবার্টি ক্রুজ : এই ভ্রমণে সময়সীমা এক ঘণ্টা ১৫ মিনিট। ভ্রমণ স্থান-স্টাচু অব লিবার্টি, এলিস আইল্যান্ড এবং নিউইয়র্ক স্কাইলাইন ইত্যাদি। 

সার্কেল লাইনের জলযানগুলো ঘণ্টায় ৪৫ মাইল বেগে চলাচল করে। মাথার ক্যাপগুলো যাতে উড়ে না যায়, এজন্য সতর্ক থাকতে হবে। 

ক্রুজ ছাড়ার ঠিকানা: পিয়ার ৮৩, ওয়েস্ট ৪২ সেকেন্ড স্ট্রিট, নিউইয়র্ক। যাদের গাড়ি নেই তারা এনআর ২, ৭ ট্রেনে টাইম স্কোয়ার নেমে ৪২ বাস ধরে পিয়ার ৮৩ স্টপেজে নামবেন। সর্বশেষ প্যাকেজ ভাড়া বা অন্যান্য যে কোনো তথ্যের জন্য ২১২ ৫৩৬ ৩২০০ অথবা রিজার্ভেশনের প্রয়োজনে ২১২ ৬৩০ ৮১৪৭ নম্বরে যোগাযোগ করতে পারবেন। 

রয়েল হিবাচি বাফেট (হালাল)

রমজান মাসে ইফতার পার্টির গতানুগতিক খাবার খেয়ে হাঁপিয়ে উঠেছেন? ঈদ উত্তর ব্যতিক্রমী হালাল বাফেট লাঞ্চ বা ডিনার খেতে মনটা আনচান করছে? তাদের জন্য আমাদের সন্ধান- রয়েল হিবাচি বাফেট এবং অবশ্যই হালাল। 

এছাড়া ইদানীং ফেসবুকে দেখছি অনেকেই রুচি বদলাতে হালাল বাফেটের সন্ধান চান। তাদের জন্য রয়েছে- ‘রয়েল হিবাচি বাফেট’। বিশাল বড় হলরুমে বাফেট আয়োজন। অবশ্যই হালাল। মধ্যপ্রাচ্যের মালিকানার একটি প্রতিষ্ঠান। এখানে নিয়মিত খাবার ছাড়াও পাওয়া যায় কয়েক রকম বিরিয়ানি, নানা ধরনের মাছ ও মাংসের কাবাব এবং সুসী। নানা স্বাদের স্যুপ ও ফলফলাদি, পায়েস, নানা স্বাদের কেক, আনলিমিটেড ড্রিংকস, আইসক্রিম ইত্যাদি। এছাড়াও সুখটান দিতে আছে মজাদার কফির ব্যবস্থা। 

বুফে খরচ মাথাপিছু ৩০ ডলার + ট্যাক্স। অপ্রাপ্ত বয়সীদের জন্য ভিন্ন প্রাইস। টেক আউটের ব্যবস্থা আছে। ২০ ডলারের খাবার কিনলে একটা ড্রিংকস ফ্রি। আগে ভাগে ফোনে বুকিং করে যাওয়া ভালো। সামনেই ফ্রি পার্কিং। 

খাওয়া শেষে পাশেই ওয়ালমার্ট থেকে সাশ্রয়ে বাজার করে ফিরতে পারবেন। মলে কেনা কাটার জন্য নানাবিধ দোকান রয়েছে। 

ঠিকানা: রয়েল হিবাচি বাফেট

আরটি-৪৬, স্যাডল ব্রুক,

নিউজার্সি, এনজে-০৭৬৬৩

ফোন: ২০১ ৯৬৮ ৫৮৮৬

নিউইয়র্ক ১৩ এপ্রিল ২০২৫ 

শেয়ার করুন