৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ১০:১৭:৪২ অপরাহ্ন


লস অ্যাঞ্জেলেসে ইসলামিক সেন্টারে বিদ্বেষমূলক হামলা
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২১-০৫-২০২৫
লস অ্যাঞ্জেলেসে ইসলামিক সেন্টারে বিদ্বেষমূলক হামলা লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশ চিফ ম্যাকডোনেল ইসলামিক সেন্টার অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ায় ঘটে যাওয়া ঘৃণাজনিত ঘটনার তদন্ত ও নিরাপত্তাব্যবস্থা সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলন


দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার অন্যতম বৃহৎ মসজিদ, ইসলামিক সেন্টার অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া গত ১৮ মে একটি বিদ্বেষমূলক হামলার শিকার হয়েছে। অজ্ঞাত দুষ্কৃতকারীরা মসজিদের দেওয়াল এবং আশপাশের গাছে আপত্তিকর ধর্মীয় প্রতীক ও বার্তা অঙ্কন করে চলে যায়। লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশ বিভাগ ঘটনাটিকে ঘৃণাজনিত অপরাধ (হেইট ক্রাইম) হিসেবে বিবেচনা করে তদন্ত শুরু করেছে।

ঘটনাটি ঘটে রোববার ভোর ৫:৪৫ মিনিট থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে, ঠিক সেই সময়ে যখন মসজিদটি নামাজ ও শিক্ষামূলক কার্যক্রমের জন্য খোলা ছিল। লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশ বিভাগ জানিয়েছে, হামলাকারীরা শুধু দেওয়ালেই নয়, আশপাশের গাছেও ঘৃণাসূচক প্রতীক অঙ্কন করেছে, যার উদ্দেশ্য ছিল মুসলিম সম্প্রদায়কে ভয় দেখানো। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে এবং পুরো এলাকায় নিরাপত্তা নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দ্রুতই অপরাধীদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঘটনার পর পরই স্থানীয় সিভিক কর্মীরা মসজিদের আশপাশের এলাকা পরিষ্কার করেন। লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশের প্রধান জিম ম্যাকডোনেল জানিয়েছেন, এই ঘটনাটি একটি ঘৃণাজনিত অপরাধ হিসেবে তদন্তাধীন রয়েছে এবং পুলিশ সন্দেহভাজন ব্যক্তির পরিচয় ও উদ্দেশ্য নির্ধারণের জন্য কাজ করছে। এখন পর্যন্ত কোনো গ্রেফতারের খবর পাওয়া যায়নি, তবে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

এলএপিডি প্রধান চিফ ম্যাকডনেল বলেন, ঘৃণাজনিত অপরাধ কেবল ভাঙচুর বা সহিংসতা নয়- এগুলো পুরো একটি সম্প্রদায়ের আত্মপরিচয়, মর্যাদা ও নিরাপত্তাবোধের ওপর আঘাত। এই শহরে ঘৃণার কোনো স্থান নেই। তিনি আরো জানান, ইসলামিক সেন্টারের সঙ্গে এলএপিডির দীর্ঘদিনের পার্টনারশিপ রয়েছে। বিশেষ করে অলিম্পিক এরিয়া সিনিয়র লিড অফিসাররা নিয়মিত নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছেন, সাইট পরিদর্শন করছেন এবং কেন্দ্রের নেতৃত্বের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখছেন। চিফ ম্যাকডোনেল আশ্বাস দেন, আমরা প্রতিটি সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর, বিশেষত উপাসনালয়গুলো যেন নিরাপদ থাকে তা নিশ্চিত করাই আমাদের অগ্রাধিকার।

ইসলামিক সেন্টারের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, আমাদের মূল মিশন হলো সবার জন্য একটি নিরাপদ, সংবেদনশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ সৃষ্টি করা। এই হামলা আমাদের আহত করলেও, আমরা আমাদের মূল্যবোধ থেকে একচুলও সরব না। একই সঙ্গে তারা জানান, শুক্রবার সকাল ১০টায় লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশ বিভাগ, সিটি কাউন্সিলের সদস্য, আন্তঃধর্মীয় নেতৃবৃন্দ ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে একটি সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে ধর্মীয় বৈষম্য ও বিদ্বেষের বিরুদ্ধে সামাজিক ঐক্যের বার্তা দেওয়া হবে।

এই ঘটনার পর লস অ্যাঞ্জেলেসের মুসলিমদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়েছে। অনেক অভিভাবক তাদের শিশুদের মাদরাসা বা ইসলামিক স্কুলে পাঠানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। তবে আশার কথা, স্থানীয় খ্রিস্টান, ইহুদি এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বী প্রতিবেশীরা ইসলামিক সেন্টার অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়াকে সংহতির বার্তা পাঠিয়েছেন এবং ধর্মীয় সম্প্রীতির প্রতি তাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

কাউন্সিল অন আমেরিকান ইসলামিক রিলেশনস লস অ্যাঞ্জেলেসের নির্বাহী পরিচালক হুসসাম আইলুশ বলেন, সম্প্রতি দেশজুড়ে ইসলাম-বিদ্বেষী বক্তব্য ও আচরণ বেড়েছে। এই ঘটনা সেই ধারাবাহিকতারই অংশ। তবে আমেরিকার মৌলিক মূল্যবোধের পরিপন্থী এসব কর্মকাণ্ডের জবাব আমরা শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধের মাধ্যমে দেব।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ ও ২০১৯ সালেও দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার কয়েকটি মসজিদে আগুন লাগানো ও ইসলামবিরোধী বার্তা পাঠানোর ঘটনা ঘটেছিল। তখনও কেয়ার ও অন্যান্য মানবাধিকার সংগঠন সতর্ক করেছিল যে যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিমবিরোধী মনোভাব ক্রমবর্ধমান। ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রে হেইট ক্রাইমের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, যার একটি বড় অংশ ধর্মীয় বিদ্বেষপ্রসূত। ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে একই মসজিদে আরেকটি বিদ্বেষমূলক হামলার ঘটনায় কার্লোস মোরান নামের একজন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তিনি মসজিদের স্তম্ভে ইসলামবিরোধী বার্তা লিখেছিলেন এবং তার বিরুদ্ধে ঘৃণাজনিত অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছিল।

ইসলামিক সেন্টারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা মসজিদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো জোরদার করেছে এবং স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীকে সক্রিয় করা হয়েছে। পাশাপাশি, ধর্মীয় সম্প্রীতি ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষায় একটি বৃহত্তর সামাজিক সংলাপ শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে।

শেয়ার করুন