৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ১০:১৮:১৪ অপরাহ্ন


মুসলিম ছাত্রদের নজরদারি : মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা চুক্তি বাতিল
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১১-০৬-২০২৫
মুসলিম ছাত্রদের নজরদারি : মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা চুক্তি বাতিল


প্রো-প্যালেস্টাইন আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের গোপনে নজরদারি করার অভিযোগে ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগান ছাত্রদের প্রতিবাদের মুখে তাদের নিয়োগকৃত একটি বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থার সঙ্গে সব ধরনের চুক্তি বাতিল করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট ডমিনিকো গ্রাসো গত ৯ জুন রবিবার এক বিবৃতিতে জানান, আমরা সম্প্রতি জানতে পেরেছি, আমাদের নিরাপত্তা ঠিকাদারদের একজন কর্মী আমাদের নির্দেশনা ও মূল্যবোধের পরিপন্থীভাবে কাজ করেছেন। এটি উদ্বেগজনক, অগ্রহণযোগ্য এবং অনৈতিক। এ কারণে গোপন পোশাকে নিরাপত্তা প্রদানকারী সব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা হচ্ছে। এখন থেকে আমরা আর কোনো বাইরের ঠিকাদারকে গোপন পোশাকে নিরাপত্তা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নিয়োগ দেব না।

গ্রাসো আরও বলেন, সম্প্রতি গার্ডিয়ান পত্রিকার এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে প্রো-প্যালেস্টাইন ছাত্র সংগঠনগুলোর ওপর নজরদারি চালানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বেসরকারি তদন্তকারীদের নিয়োগ দিয়েছিল। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, এক তদন্তকারী ছাত্রের দিকে গাড়ি চালিয়ে দেন এবং ছাত্রটি ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মরক্ষা করেন। এমনকি কেউ কেউ প্রতিবন্ধী সেজে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগও তোলেন।

বিশ্ববিদ্যালয় দাবি করেছে, জনসমাগমপূর্ণ এলাকায় নিরাপত্তা বজায় রাখতে গোপন পোশাকে নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, তবে তাদের কাজ ছিল শুধুমাত্র সন্দেহজনক বা অপরাধমূলক কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ ও রিপোর্ট করা, কোনো ব্যক্তিগত মতাদর্শ বা গোষ্ঠীর ওপর নজরদারি নয়।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রো-প্যালেস্টাইন বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন যে তারা গত এক বছরে গোপন নজরদারির শিকার হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র ছাত্র জোসাইয়া ওয়াকার জানান, তিনি মনে করেন, গাজায় চলমান যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় তাকে গোপনে অনুসরণ করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে তার সঙ্গে এক ব্যক্তির প্রথম সাক্ষাতে ওই ব্যক্তি নিজেকে প্রতিবন্ধী দাবি করেন। দুই সপ্তাহ পর দ্বিতীয়বার, একই ব্যক্তি তাকে চুরির মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করেন। ওয়াকার এই ঘটনা ভিডিওতে ধারণ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ডেট্রয়েট-ভিত্তিক সিটি শিল্ড সিকিউরিটি সার্ভিসেস নামক একটি নিরাপত্তা সংস্থার চুক্তি ছিল। ২০২৪ সালের জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় তাদেরকে কয়েক লাখ ডলার পরিশোধ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, এ অর্থের একটি বড় অংশ ব্যবহার করা হয়েছিল সেসব কর্মীদের ২৪/৭ নিরাপত্তা প্রদানের জন্য, যারা ঘৃণামূলক হামলার শিকার হয়েছিলেন। এই হামলার দায় কিছু প্রো-প্যালেস্টাইন গোষ্ঠী স্বীকার করেছে। অন্যদিকে, মুসলিম অধিকার সংগঠনগুলো এই গোপন নজরদারি ও হয়রানির অভিযোগের স্বাধীন ও স্বচ্ছ তদন্তের দাবি জানিয়েছে। তাদের মতে, এ ধরনের আচরণ অন্য কোনো গোষ্ঠীর ওপর হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তা কখনোই মেনে নিত না।

২০২৪ সালের মে মাসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রো-প্যালেস্টাইন আন্দোলনকারীদের একটি ক্যাম্প উচ্ছেদ করে এবং বেশ কয়েকজনকে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে অভিযুক্ত করে। তবে ২০২৫ সালের মে মাসে মিশিগানের অ্যাটর্নি জেনারেল ডানা নেসেল সেই অভিযোগগুলো প্রত্যাহার করে নেন। এ বিষয়ে নিরাপত্তা সংস্থা সিটি শিল্ড সিকিউরিটি সার্ভিসেস জানিয়েছে, তারা ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে এবং পেশাদার আচরণ বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট জর্ডান অ্যাকার বলেন, এই ঘটনার পেছনে কার পরামর্শ ছিল এবং কীভাবে অনুমোদন পেয়েছে, তা খতিয়ে দেখা জরুরি। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, তবে তা যেন কারও সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন না করে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসিডেন্ট গ্রাসো শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যদি কেউ কোনো কর্মকর্তা বা ঠিকাদারের অনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করেন, তাহলে যেন তা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলিশ বিভাগ অথবা ইকুইটি, সিভিল রাইটস এবং টাইটেল ফোর অফিসে জানান। এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে-বিশেষ করে যখন বিষয়টি মধ্যপ্রাচ্যের মানবাধিকার সংকটের সঙ্গে যুক্ত।

শেয়ার করুন