৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ৬:৫০:৪০ অপরাহ্ন


গ্র্যাজুয়েশনের মৌসুমে ড্রিমার ও তরুণ শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করছে আইস
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৮-০৬-২০২৫
গ্র্যাজুয়েশনের মৌসুমে ড্রিমার ও তরুণ শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করছে আইস গ্র্যাজুয়েশন ক্যাপ


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যখন শিক্ষার্থীরা গ্র্যাজুয়েশন সিজন উদযাপন করছে, তখনই দেশব্যাপী অভিবাসন ও শুল্ক প্রয়োগকারী সংস্থা (আইসিই) জোরদার করেছে অভিযান। এসব অভিযানের নতুন লক্ষ্য তরুণ অভিবাসী শিক্ষার্থীরা, যাদের অনেকেই ‘ড্রিমার’ হিসেবে পরিচিত। ম্যাসাচুসেটসের মিলফোর্ড শহরের হাইস্কুল ছাত্র মার্সেলো, যিনি স্কুল ব্যান্ড ও ভলিবল দলের সদস্য ছিলেন। জর্জিয়ার ১৯ বছর বয়সী কলেজ শিক্ষার্থী জিমেনা। নিউইয়র্ক সিটির দুই হাইস্কুল শিক্ষার্থী এবং কানেকটিকাটের এক শিক্ষার্থী এসব তরুণ সবাই সাম্প্রতিক সময়ে আইসিইয়ের অভিযানে গ্রেফতার হয়েছেন। গ্রেফতারগুলো সরাসরি স্কুল প্রাঙ্গণে না হলেও শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়েই এই অভিযান চালানো হয়েছে। মার্সেলোকে ভলিবল প্র্যাকটিসে যাওয়ার পথে গ্রেফতার করা হয়, জিমেনাকে তুলে নেওয়া হয় এক ভুল ট্রাফিক স্টপের সময়, নিউইয়র্কের শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার করা হয় ইমিগ্রেশন কোর্টে হাজিরার সময় এবং কানেকটিকাটের ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয় নিয়মিত চেক ইনে, যার কয়েকদিন পরই তার গ্র্যাজুয়েশন ছিল।

এসব ঘটনার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কমিউনিটিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। মিলফোর্ড স্কুলে মার্সেলো গ্র‍্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানে ব্যান্ডে বাজানোর কথা ছিল, কিন্তু তার পরিবর্তে শিক্ষার্থীরা তার মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেন। ব্রঙ্কসের স্কুলে ডিলান নামের শিক্ষার্থীর সহপাঠীরা শত শত সমর্থনপত্র লিখে আন্দোলন শুরু করে। এছাড়া জিমেনার কট্টর রক্ষণশীল জর্জিয়ান কমিউনিটিও তার মুক্তির দাবিতে একত্রিত হয়।

লস অ্যাঞ্জেলেসেও অভিভাবকদের মধ্যে ভয় ছড়িয়ে পড়েছে। আইসিইয়ের অভিযান চালানোর কারণে অনেক পরিবার স্কুল অনুষ্ঠানে যোগ না দিয়ে বাড়িতে বসেই স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে গ্র্যাজুয়েশন দেখেছে। এলএ ইউনিফাইড স্কুল ডিস্ট্রিক্ট শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য নতুন প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। গ্রেফতার হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে কেউ কেউ এখনো ডিটেনশনে রয়েছেন। নিউইয়র্কের ডিলান বর্তমানে পেনসিলভানিয়ার মোশানন ভ্যালি প্রসেসিং সেন্টারে বন্দি, যা তার স্কুল থেকে শত শত মাইল দূরে। কানেকটিকাটের ছাত্রকে পাঠানো হয়েছে টেক্সাসে।

তবে জিমেনা ও মার্সেলো জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। জিমেনা স্টুয়ার্ট ডিটেনশন সেন্টারে কয়েক সপ্তাহ কাটানোর পর মুক্তি পান-যে কেন্দ্রটির বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই নির্যাতন ও চিকিৎসা অবহেলার অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে তারা নিজেদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে অন্যদের পক্ষে কথা বলছেন। জিমেনার বাবা এখনো ডিটেনশনে রয়েছেন। মার্সেলো এক সাক্ষাৎকারে বলেন, আমি মাত্র সাত বছর বয়সে আসার ভিসা হারিয়েছি। আমি তখন কী করতে পারতাম? জিমেনা সিনেট জুডিশিয়ারি কমিটিকে বলেন, হাত, কোমর ও গোড়ালিতে শিকল বাঁধা ছিল। এই অভিজ্ঞতা আমি কখনো ভুলতে পারবো না। এটা ছিল চরম অপমানজনক। আর সবচেয়ে কষ্টের বিষয় হলো যে লক্ষাধিক মানুষ একই রকম নিপীড়নের শিকার হয়েছে এবং হবে।

উল্লেখযোগ্যভাবে, আদালতের নির্দেশে ডিফারড অ্যাকশন ফর চাইল্ডহুড অ্যারাইভালস (ডাকা) প্রোগ্রামের সম্প্রসারণ বন্ধ থাকায় মার্সেলো ও জিমেনা কেউই এর সুরক্ষা পাননি। তারা দেশটিতে নির্ধারিত তারিখের পরে এসেছেন। ইমিগ্র‍্যান্ট অধিকার গোষ্ঠীর নেতারা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর অভিবাসন নীতির ধারাবাহিকতায় এই ধরনের অভিযান বেড়েই চলেছে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সেই তরুণরা, যারা আমেরিকাকেই নিজের দেশ মনে করে বড় হয়েছে, কিন্তু আজ তাদের মুখোমুখি হতে হচ্ছে বন্দিত্ব, বিচ্ছিন্নতা এবং অনিশ্চিত ভবিষ্যতের।

যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ও শুল্ক প্রয়োগকারী সংস্থা (আইসিই) তরুণ অভিবাসী শিক্ষার্থীদের ওপর গ্র্যাজুয়েশনের মৌসুমে জোরদার অভিযানের মাধ্যমে অভিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে ভয় ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। এসব অভিযান কেবল শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত ও শিক্ষাজীবনে বড় ধাক্কা দেওয়া নয়, বরং পুরো সম্প্রদায়ের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার বোধ বাড়িয়ে দেয়। এ তরুণরা, যারা অনেকেই ড্রিমার হিসেবে পরিচিত এবং দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকাকেই নিজেদের দেশ মনে করে এসেছে, তাদের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। ডিফারড অ্যাকশন ফর চাইল্ডহুড অ্যারাইভালস (ডাকা) প্রোগ্রামের সীমাবদ্ধতার কারণে অনেকে সুরক্ষার বাইরে থেকে যায় এবং তাদের ওপর চলমান এ কঠোর আইনপ্রয়োগ নীতিমালা মানবাধিকারের স্বাভাবিক মৌলিক অধিকারকে উলঙ্গন করছে। এই পরিস্থিতি শুধু ব্যক্তিগত জীবনের জন্য নয়, দেশের সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধের জন্যও একটি বড় সংকেত।

অতএব গ্র্যাজুয়েশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তরুণ অভিবাসী শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে আইসিইয়ের অভিযান কেবল একটি রাজনৈতিক নীতির বহিঃপ্রকাশ নয়, এটি আমেরিকার মানবতা ও ন্যায়বিচারের আদর্শের প্রতিও এক গুরুতর চ্যালেঞ্জ। মার্সেলো ও জিমেনার মতো শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতা থেকে স্পষ্ট যে, এই ধরনের অভিযান শুধু ব্যক্তিগত ও পারিবারিক ক্ষতি করে না, বরং পুরো অভিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভাজন ও আতঙ্ক সৃষ্টি করে। যুক্তরাষ্ট্রের উচিত এমন একটি সুশৃঙ্খল এবং মানবিক অভিবাসন নীতি গ্রহণ করা, যা এই যুবসমাজকে সুরক্ষা দেবে এবং তাদের স্বপ্ন ও আশা বাস্তবায়নে সহায়ক হবে। অন্যথায়, ভয়ের পরিবেশ, পরিবার বিচ্ছিন্নতা ও ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার এই ধারা অব্যাহত থাকবে এবং আমেরিকার বহুত্ববাদী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের মূল্যবোধ ক্ষুণ্ণ হবে।

শেয়ার করুন