১৭ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ০৬:২৩:৫৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
গোপালগঞ্জ এখন মুজিববাদী সন্ত্রাসীদের আস্তানায় পরিণত হয়েছে- নাহিদ এনসিপি’র মার্চ টু গোপালগঞ্জ কর্মসূচি ঘিরে ব্যাপক সংঘর্ষ চারজন নিহত নিউইয়র্কে ২০ লাখ মানুষ মেডিকেইড ও ৩ লাখ পরিবার স্ন্যাপ সুবিধা হারাবে নতুন ভিসা ফিতে বাংলাদেশিদের খরচ বাড়বে আড়াই গুণ ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ২ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দাবি মাহমুদ খলিলের টেক্সাসের অভিবাসন আইন এসবি ৪ অসাংবিধানিক ঘোষণা ফ্লোরিডার ‘সিনেট বিল ৪-সির কার্যকারিতা বন্ধ করলো যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট নতুন নীতি ঘোষণা : ৯ কারণে নাগরিকত্ব হারাতে পারেন জঙ্গিবাদে সতর্ক থাকার মার্কিনী পরামর্শে নানা প্রশ্ন এনসিপিসহ ১৪৪ নিবন্ধন প্রত্যাশী দলের তথ্যে ঘাটতি


হাঁস দোকান
হাবিব রহমান
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৮-০৬-২০২৫
হাঁস দোকান হাবিব রহমান


ম‍্যানহাটান থেকে লংআইল‍্যান্ড এক্সপ্রেসওয়ে ধরে ৭১ নম্বর এক্সিট পার হোন। তারপর ২৪ নম্বর রাস্তার রিভারহুড সার্কেল পেরিয়ে ১০৫ নম্বরে পাঁচ মাইলের মাথায় সিয়াস বেলোজ কাউন্টি পার্কের প্রবেশপথে সবুজ গাছের সারির মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা একটি বিশাল হাঁস দেখতে পাবেন। হাঁসটি ৩০ ফিট লম্বা আর উচ্চতা ২০ ফিট। কাঠের ফ্রেম আর কংক্রিটের মিশ্রণে তৈরি হাঁসটি একটি পিকিং ডাক।

সাদা রঙের এই বিশাল হাঁসটি আসলে একটি স‍্যুভেনির শপ। হাঁসের বুকের মাঝে তৈরি একটি দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলেই চোখে পড়বে নানা উপহার সামগ্রী। হাঁসের ছাপওয়ালা টিশার্টসহ অনেক ধরনের স‍্যুভেনির। হাঁসের সুবিস্তৃত পেটটাই হচ্ছে বড় একটা দোকান। হাঁসের চেহারায় এই স্যুভেনির শপটির অফিসিয়াল নাম-দ‍্য বিগ ডাক। সাফোক কাউন্টির এটি একটি দর্শনীয় স্থান। ন‍্যাশনাল রেজিস্ট্রার অব হিস্টোরিক প্লেসে এর নাম রয়েছে। এই হাঁস দোকানটি তৈরির পেছনে একটি ইতিহাস আছে। আসুন তাহলে শোনা যাক।

১৮৭০ সালে লং আইল‍্যান্ডের একজন নাবিক সুদূর চীন থেকে ৯টি পিকিং ডাক প্রজাতির হাঁস নিয়ে আসেন। এই হাঁসগুলোর চোখ ছিল লাল আর ঠোঁট হলদে। এই প্রজাতির হাঁসই পরবর্তী সময়ে লং আইল‍্যান্ড এলাকায় বংশ বিস্তার করে এবং এলাকায় অনেকগুলো হাঁসের ফার্ম গড়ে উঠে।

১৯৩১ সালে এমনি একটি হাঁস খামারের মালিক মার্টিন ম‍্যুরার দম্পতি হাঁসের মাংসের একটি দোকান দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। ক্রেতা আকর্ষণের জন‍্য এই দম্পতি অনেক চিন্তা-ভাবনার পর চীনা হাঁসের ডিজাইনে তাদের দোকানটি তৈরির পরিকল্পনা করেন। তবে হাঁসের ডিজাইনে দোকান তৈরির পেছনে আরো একটা কারণ কাজ করছিল। ম‍্যুরার দম্পতি একবার ক‍্যালিফোর্নিয়া ভ্রমণ করেছিলেন। সে সময় তারা হাইওয়ের পাশে ‘কফি পট’ আকৃতির একটা দোকানে কফি পান করেছিলেন। আর সে চিন্তা থেকেই তারা তাদের হাঁসের মাংস বিক্রির দোকানটি হাঁস আকৃতি করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। আর সে পরিকল্পনা মতোই রিভার হেড অঞ্চলের ওয়েস্টমেন স্ট্রিটে একদিন দাঁড়িয়ে গেল তাদের স্বপ্নের হাঁস দোকানটি।

দোকানটি নির্মাণে ম‍্যুরার দম্পতিকে সহায়তা করেন কাঠমিস্ত্রি জর্জ রিভি। বুদ্ধি খাটিয়ে নতুন কিছু নির্মাণে তার কোনো জুড়ি ছিল না। ম‍্যুরার দম্পতিকে সহায়তা করার জন‍্য আরো এগিয়ে এলেন উইলিয়াম এবং শ‍্যামুয়েল কলিন নামে দুই সহোদর-যারা স্টেজশো ডিজাইনার হিসেবে সুনামের অধিকারী ছিলেন। কাজের সুবিধার জন‍্য তাদের সামনে দড়ি দিয়ে সর্বক্ষণ বেঁধে রাখলেন একটি জীবিত চীনা হাঁসকে। আর এভাবেই দাঁড়িয়ে গেল হাঁস দোকানটি।

১৯৩৬ সাল পর্যন্ত দোকানটি এই জায়গাতে ছিল। তবে ১৯৩৭ সালে দোকানটি সরিয়ে আনেন ২৪ নম্বর রাস্তায়। কিন্তু দীর্ঘ বছর পর ১৯৮৭ সালে একটা বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয় এই হাঁস দোকানটি। এলাকার উন্নয়নের জন‍্য দোকানটি স্থানান্তর করার প্রয়োজন দেখা দেয়। কিন্তু এলাকাবাসী এর বিরোধিতা করে বললেন, এটি এই এলাকার একটি ঐতিহ‍্য। কোনো মতেই এটিকে স্থানান্তর করা চলবে না।

অবশেষে এলাকাবাসীর সঙ্গে সমঝোতা করে সাফোক কাউন্টি কর্তৃপক্ষ তাদের খরচে দোকানটি সরিয়ে নিয়ে এলেন সিয়ার্স বেলোজ কাউন্টির প্রবেশপথে। আর সেই থেকেই দোকানটি এই জায়গায় রয়েছে। দোকানটি রক্ষায় এলাকাবাসীর উৎসাহে হাঁস দোকানটির তৎকালীন মালিক এটিকে কমিউনিটির সম্পত্তি হিসেবে দান করে দেন। এরপর থেকে কমিউনিটির তত্ত্বাবধানে এটি একটি ‘গিফ্ট শপ’ হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। এটি লংআইল‍্যান্ড ভ্রমণকারীদের ট্যুরিস্ট ইনফরমেশন সেন্টার হিসেবেও কাজ করে থাকে।

প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসের প্রথম বুধবার সাফোক কাউন্টি পার্ক ডিপার্টমেন্ট এই হাঁস দোকানের সামনে একটি উৎসবের আয়োজন করে থাকে। হাঁসটিকে বর্ণাঢ‍্য আলোকমালায় সজ্জিত করা হয়। স্থানীয় স্কুলের শিক্ষার্থীরা হাঁসটিকে ঘিরে গান, নৃত‍্য এবং কবিতা আবৃত্তি করে আনন্দ উল্লাস করে। সাফোক কাউন্টি কর্তৃপক্ষ এই দিনে বাচ্চাদের জন‍্য চকোলেট খেলনাসহ বিভিন্ন উপহার সামগ্রী এবং মজাদার খাবার-দাবারের আয়োজন করে থাকে।

মেমোরিয়েল ডে এবং লেবার ডে ছাড়া এই হাঁস দোকানটি সারা বছর সোম থেকে শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। নিউই‍য়র্কের নিত‍্যদিনের কোলাহল থেকে মুক্ত হয়ে যারা একটি দিন ভিন্ন ব‍্যঞ্জনায় কাটাতে চান, তারা সাফোক কাউন্টির বিগ ডাক বা হাঁস দোকানটি দেখে আসতে পারেন।

পায়ে পায়ে বন্ধুত্ব!

গলায় গলায় বন্ধুত্ব হয়। কিন্তু তা বলে পায়ে পায়ে? কিন্তু অবাক হলেও সত‍্য যে, তা হয় আর ঘটনাস্থল এই নিউইয়র্কেই। টেলিফোন বা ই-মেইল ব‍্যবস্থা যখন আজকের মতো এতো জেঁকে বসেনি, তখন পেন ফ্রেন্ড বা কলম বন্ধুত্বের কথা শোনা যেতো। বর্তমান যোগাযোগ ব‍্যবস্থার উন্নতির যুগে টেলিফোনের মাধ‍্যমে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠার খবর জানা যায়। আর ই-মেইল বন্ধুত্ব সে তো এখন ডালভাত। কিন্তু পায়ে পায়ে বন্ধুত্ব! এটা কি সম্ভব?

শুধু সম্ভব নয়। বাস্তবেও এই ঘটনা ঘটেছে আর তা এই নিউইয়র্ক শহরেই।

পিটার ট‍্যালটিস। পেশায় একজন থেরাপিস্ট। বাস করেন নিউইয়র্ক শহরে। তার পা দুটো ছিল অসমান মাপের। ডান পায়ের জুতার মাপ ৯। আর বাম পায়ের জুতার মাপ ১৩। ব‍্যাপারটা তাহলে বুঝতে পারছেন দু’পায়ের জুতা সংগ্রহ করা তার জন‍্য কত কঠিন ছিল। পিটারের জন‍্য এটা ছিল মনোকষ্টেরও। হঠাৎ করেই একটা ভাবনা খেলে যায় পিটারের মাথায়। তিনি তার সমস‍্যার কথা উল্লেখ করে পত্রিকায় একটা বিজ্ঞাপন দেন-যদি তার মতো অন‍্য কাউকে পাওয়া যায়!

বিজ্ঞাপনটি দেখে সঙ্গে সঙ্গে সাড়া দিলেন নিউইয়র্ক শহরেই বসবাস করা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির একজন এজেন্ট ম‍্যাকরমিক। তার পা-ও ছিল অসমান এবং পিটার ট‍্যালটিসের ঠিক বিপরীত। অর্থাৎ তার ডান পায়ের জুতার মাপ ১৩ আর বাম পায়ের মাপ ৯। ব‍্যাপারটা যদিও কো-ইনসিডেন্ট তারপরও খুব মজার না! জিম ও পিট একই শহরের বাসিন্দা হলেও পরিচয় ছিল না দু’জনের। হয়তো পরিচয় হতোও না কোনোদিন। কিন্তু পিটারের ছোট্ট একটা বিজ্ঞাপন দু’জনকে কাছে ডেকে এক নিবিড় বন্ধুত্ব গড়ে দেয়। দু’পা নিয়ে বন্ধুত্ব হলেও তাদের সম্পর্ক হয়ে যায় গলায় গলায়। প্রতি উইকেন্ডে একজনের বাসায় চলে অন‍্যজনের দাওয়াত। প্রতিদিন চলে ফোনালাপ। একজনকে ছাড়া অন‍্যজনের যেন চলেই না।

দু’জনের পরিচয় হওয়ার পর তাদের জুতার সমস‍্যা মিটে যায়। তারা দু’জনেই দোকান থেকে এক জোড়া জুতাই কেনেন। তারপর দুই বন্ধু বদলে নিয়ে নিজেদের সাইজ করে নেন। পায়ের জুতো তাদের বন্ধুত্বটা আরো নিবিড় করে দেয়। আর এভাবেই তাদের ‘পায়ে পায়ে বন্ধুত্ব’র খবর ছড়িয়ে পড়ে অন‍্যদের কাছে।

একটানা ২৪ ঘণ্টা গলফ খেলা

বিচিত্র শহর নিউইয়র্ক। সারা বিশ্বের নানা ধরনের মানুষের বসবাস এখানে। সম্প্রতি নিউইয়র্কের একজন বাসিন্দা একনাগাড়ে ৩৬ ঘণ্টা গলফ খেলে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড করার পথে রয়েছেন। তার নাম কেলিহি ইজিহি। জন্ম নাইজেরিয়ায়। তবে স্থায়ীভাবে বসত করেন নিউইয়র্কে। তিনি নিয়মিত গলফ খেলেন। সম্প্রতি গলফ ক্লাবে গিয়ে জানতে পারেন, নরওয়ের এক ব্যক্তি টানা ৩২ ঘণ্টা গলফ খেলেছেন। এ খবর শোনামাত্র এই পরিকল্পনাটি তার মাথায় আসে। এরপর তিনি ৩৬ ঘণ্টা গলফ খেলে বিশ্ব রেকর্ড গড়ার যোগ্যতা অর্জন করেন। গত ১০ জুন সন্ধ্যায় হানিংটন ক্রিসেন্ট ক্লাবে তিনি এ রেকর্ড গড়েন।

গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষ এখন ইজিহির রেকর্ড পর্যালোচনা করবে। ইজিহি বলেছেন, গলফ খেলার প্রসার ঘটানো তার লক্ষ্য; বিশেষ করে নাইজেরিয়ার তরুণদের মধ্যে। ইতিমধ্যে তিনি সেখানে জমি কিনেছেন এবং একটি গলফ কোর্স চালুর পরিকল্পনা করছেন। সিবিএস নিউইয়র্ককে ইজিহি বলেন, ‘মানুষের ধারণা, গলফ শুধু ধনীদের খেলা। আমি সেই ধারণা বদলে দিতে চাইছি। আমার লক্ষ্য, মানুষকে এটা জানানো যে, গলফ সবার খেলা। আপনার অর্থনৈতিক সক্ষমতা যেমনই থাকুক কিংবা আপনার যদি কোনো বিশেষ চাহিদা থাকে, তবু আপনি গলফ খেলতে পারেন।

নিউইয়র্ক ১৫ জুন, ২০২৫

শেয়ার করুন