৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৮:০৩:৩৭ অপরাহ্ন


পেমেন্ট নিয়ে কেলেঙ্কারি : পিপিএলএ ব্যাপক দুর্নীতি
দেশ রিপের্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৩-০৭-২০২৫
পেমেন্ট নিয়ে কেলেঙ্কারি : পিপিএলএ ব্যাপক দুর্নীতি পিপিএল প্রেসিডেন্ট মারিয়া পেরিন পদত্যাগ করছেন


নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোচুলের প্রশাসন-নিযুক্ত বিতর্কিত মেডিকেইড হোমকেয়ার প্রোগ্রামের কেন্দ্রীয় পেমেন্ট প্রতিষ্ঠান পাবলিক পার্টনারশিপস এলএলসি (পিপিএল)-এর একজন কর্মী হাজার হাজার অংশগ্রহণকারীর জন্য বরাদ্দ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন। ওই কর্মী প্রায় ১০ হাজার অংশগ্রহণকারীর ডিরেক্ট ডিপোজিট তথ্য জাল করে বেতন বিদেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করছিলেন। পিপিএল হলো সেই প্রতিষ্ঠান, যাকে হোচুল প্রশাসন নিউইয়র্ক স্টেটের কনজিউমার ডিরেক্টেড পারসোনাল অ্যাসিস্ট্যান্স প্রোগ্রাম (সিডিপ্যাপ)-এর একমাত্র পেমেন্ট মধ্যস্থ হিসেবে নিযুক্ত করেছে। এ প্রোগ্রামে প্রতিবন্ধী বা বয়স্ক আত্মীয়দের যত্ন নেওয়া সহকারীদের বেতন দেওয়া হয়। পূর্বে এই কাজ শত শত কমিউনিটিভিত্তিক পেমেন্ট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সম্পন্ন হতো, কিন্তু সম্প্রতি স্টেট গভর্নমেন্ট পুরো ব্যবস্থা একত্রিত করে শুধুমাত্র পিপিএল-এর মাধ্যমে কার্যকর করেছে।

পিপিএলের একজন প্রতিনিধি স্বীকার করেছেন, অনুমোদিত প্রক্রিয়া অনুসরণ না করায় অভিযুক্ত কর্মীকে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং তদন্ত চলছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটি সরাসরি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ অস্বীকার করেনি। ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) এই বিষয়ে জড়িত থাকলেও এখনো আনুষ্ঠানিক তদন্তের ঘোষণা দেয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, শত-সহস্র ডলারের মেডিকেইড অর্থ লোপ পেয়েছে। এর আগে পিপিএলকে লক্ষ্য করে একটি ফিশিং স্ক্যামের ঘটনাও ঘটেছিল, যেখানে ভুয়া গুগল বিজ্ঞাপন ব্যবহার করে অংশগ্রহণকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করা হয়। প্রতিষ্ঠানটি দাবি করেছে, তাদের সিস্টেম হ্যাক হয়নি এবং ক্ষতিগ্রস্ত সহকারীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। তবে পিপিএলের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে বিশৃঙ্খলার চিহ্ন স্পষ্ট। প্রেসিডেন্ট মারিয়া পেরিন আগামী ৬০ দিনের মধ্যে পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন। এর আগেই সিইও ভিনস কাপোলা এবং এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ভিসেন্টে আর্মেন্ডারিজ পদত্যাগ করেছেন।

হোচুল প্রশাসন এখন পর্যন্ত সরাসরি মন্তব্য না করলেও জানিয়েছে, স্টেট পরিস্থিতি নজরে রেখেছে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। রাজ্য সরকার পুরোনো পদ্ধতিকে অকার্যকর বলে দাবি করে নতুন সিস্টেমের পক্ষে অবস্থান নিচ্ছে। কিন্তু সমালোচকরা বলছেন, একক প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল তাড়াহুড়ো এবং স্বজনপোষণের উদাহরণ, যা বর্তমানে ভয়াবহ পরিণতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

ক্যারিং মেজরিটি রেসিং সংগঠনের রাজনৈতিক পরিচালক ইলানা বার্গার বলেন, এই নিরাপত্তা লঙ্ঘন এবং নেতৃত্বের পদত্যাগ প্রমাণ করে, পিপিএল সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খলার মধ্যে রয়েছে এবং সিডিপ্যাপের দায়িত্ব পালনে তারা অযোগ্য। এ ঘটনার ফলে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে চরম হতাশা, আর্থিক অনিশ্চয়তা ও ভোগান্তি সৃষ্টি হয়েছে, যার দায় রাজ্য সরকার এড়াতে পারে না। সিডিপ্যাপ কর্মীরা, যারা পরিবার বা প্রিয়জনদের যত্ন নিয়ে বেতন পেতেন, তাদের অনেকের বেতন নির্ধারিত সময়ে জমা হয়নি বা অন্য অ্যাকাউন্টে চলে গেছে। অনেক পরিবার বেতন না পেয়ে খাদ্য ও ওষুধের মতো মৌলিক প্রয়োজন মেটাতেও হিমশিম খাচ্ছে। হোচুল প্রশাসনের একচেটিয়া চুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়ে শুরু থেকেই প্রশ্ন ছিল এবং এখন সেই সিদ্ধান্ত সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে।

বর্তমানে ইউ এস ডিপার্টমেন্টের কনজিউমার অ্যাফেয়ার্স শাখা পিপিএল ও সিডিপ্যাপ প্রোগ্রাম নিয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু করেছে। নিউইয়র্কের প্রসিকিউটররাও রাষ্ট্রীয় অর্থ অপব্যবহার এবং ফেডারেল মেডিকেইড তহবিল চুরির বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পিপিএল যথাযথ সাইবার নিরাপত্তা ও অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা ব্যবস্থা না গড়ে তোলায় এ দুর্নীতির সুযোগ তৈরি হয়েছে।

পিপিএলের একজন কর্মী জানান, অবস্থা প্রতিদিন আরো খারাপ হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির ভেতরে বিশৃঙ্খলা বেড়েছে। গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তারা পদত্যাগ করছেন, দায়িত্ব নেওয়ার মতো কেউ নেই। যদিও নিউইয়র্ক স্টেট এখন পর্যন্ত ঘটনার পূর্ণ দায় স্বীকার করেনি, গভর্নরের মুখপাত্র বলেছেন, পিপিএল বিষয়টি স্টেটকে জানিয়েছে এবং আমরা নিয়মিত বিষয়টি তদারকি করছি। প্রয়োজনে আরও পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

পিপিএল এবং স্টেট গভর্নমেন্ট দাবি করছে, অধিকাংশ সহকারী সময়মতো বেতন পেয়েছেন। ১৫ মে পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী, ১ লঅখ ৯৮ হাজার সহকারীর মধ্যে ৯৮ শতাংশ সময়মতো টাইমশিট জমা দিয়েছেন এবং বেতন পেয়েছেন। তবে সমালোচকরা বলছেন, এই পরিসংখ্যান বিভ্রান্তিকর। কারণ যারা ক্ষতিগ্রস্ত, তাদের দুর্ভোগ অস্বীকার করার জন্য এই পরিসংখ্যান ব্যবহার করা হচ্ছে। নিউইয়র্ক লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স গ্রুপ ইতোমধ্যে সিডিপ্যাপ রেজিস্ট্রেশনের সময়সীমা বাড়ানোর জন্য মামলা করে কিছুটা স্বস্তি এনেছে। তবে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, পিপিএল-এর চুক্তি বাতিল করা হবে কি না বা হোচুল প্রশাসন স্বচ্ছ, দক্ষ কোনো বিকল্প প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেবে কি না।

এ মুহূর্তে হাজার হাজার নিউইয়র্কবাসীর জীবন ও জীবিকা এ সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে এবং ভুল সিদ্ধান্তের খেসারত প্রশাসনকেও দিতে হতে পারে। জনসাধারণের একাংশ মনে করছেন, জনসেবায় প্রাইভেট ইক্যুইটি-চালিত সংস্থার অন্ধ বিশ্বাস বিপজ্জনক, কারণ তাদের মূল লক্ষ্য লাভ, জনসেবার দায়বদ্ধতা নয়।

সার্বিকভাবে, পিপিএলের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার এই কেলেঙ্কারি গভর্নর হোচুল এবং রাজ্য সরকারের জন্য একটি সতর্কবার্তা। এখন জরুরি হলো, ক্ষতিগ্রস্তদের দ্রুত ক্ষতিপূরণ দেওয়া, দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ, এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধে একটি স্বচ্ছ, প্রযুক্তিনির্ভর ও দায়িত্ববান পেমেন্ট সিস্টেম গড়ে তোলা। কারণ জনসেবায় দায়িত্বশীলতা এবং নাগরিক অধিকার রক্ষা করাই সরকারের প্রধান দায়িত্ব।

শেয়ার করুন