০২ অক্টোবর ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১০:৩৩:১০ অপরাহ্ন


মতপ্রকাশ দমনে প্রো-প্যালেস্টাইন শিক্ষার্থীদের ১ লাখ ডলার ক্ষতিপূরণ
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-০৮-২০২৫
মতপ্রকাশ দমনে প্রো-প্যালেস্টাইন শিক্ষার্থীদের ১ লাখ ডলার ক্ষতিপূরণ কলেজ পার্কে ফিলিস্তিনের ন্যায়বিচারের দাবিতে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন ও প্রার্থনাসভার আয়োজন করে গাজাপন্থী ছাত্ররা


ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড (ইউএমডি) প্রো-প্যালেস্টাইন ছাত্রসংগঠন স্টুডেন্টস ফর জাস্টিস ইন প্যালেস্টাইনের গাজাপন্থী একটি ইভেন্ট বাতিল ও মতপ্রকাশ দমন করায় ১ লাখ মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে সম্মত হয়েছে। প্যালেস্টাইন লিগ্যাল এবং কেয়ার গত ৬, ৭ আগস্ট বৃহস্পতিবার ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ডের সঙ্গে প্রো-প্যালেস্টাইন শিক্ষার্থীদের ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত চুক্তির ঘোষণা দেয়। এই তারিখেই চুক্তিটি চূড়ান্ত এবং প্রকাশিত হয়। এ ঐতিহাসিক নিষ্পত্তি আসে একটি ফেডারেল মামলার পর, যা দায়ের করে মার্কিন সিভিল রাইটস সংগঠন প্যালেস্টাইন লিগ্যাল এবং কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস (কেয়ার)। মামলার অভিযোগ ছিল, বিশ্ববিদ্যালয় ২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় প্রাণহানির প্রতিবাদে আয়োজিত একটি শান্তিপূর্ণ আন্তঃধর্মীয় ভিজিলের অনুমোদন বাতিল করে এবং ওইদিনে সব ছাত্রসংগঠনের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়ে শিক্ষার্থীদের মতপ্রকাশের সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন করে।

ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড কর্তৃপক্ষ আদালতে দাবি করে যে, তারা এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয় কিছু প্রো-ইসরায়েলপন্থী ব্যক্তির হুমকির কারণে। এসব হুমকির মধ্যে ছিল সশস্ত্র উপস্থিতির হুমকি, কু ক্লাক্স ক্ল্যান (কেকেকে) র‍্যালির আয়োজন এবং এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসিডেন্ট ড্যারিল পাইন্স ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে সরাসরি প্রাণনাশের হুমকি। আদালতে ইউএমডির পুলিশ প্রধান ডেভিড মিচেল বলেন, হুমকিদাতারা বর্ণবাদী ভাষা, বিশেষ করে এন-শব্দ ব্যবহার করেছিল। বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তার অজুহাতে ইভেন্ট বাতিল করলেও আদালত এই যুক্তি নাকচ করে দেয়।

২০২৪ সালের ১ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট অব মেরিল্যান্ডের বিচারক পিটার জে. মেসিটে রায় দেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের প্রথম সংশোধনী অনুযায়ী মতপ্রকাশের অধিকার লঙ্ঘন করেছে। বিচারক বলেন, এটি একটি আইনের বিষয়, আবেগ বা কারো অনুভূতির বিষয় নয়। আদালতের রায়ে উল্লেখ করা হয়, ‘ফ্রম দ্য রিভার টু দ্য সি, প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি’-এ জনপ্রিয় স্লোগানটিও মতপ্রকাশের অধীনে সংবিধান দ্বারা সুরক্ষিত এবং তা নিষিদ্ধ করা যাবে না। মামলার শুনানির সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দাবি করে তারা স্টুডেন্টস ফর জাস্টিস ইন প্যালেস্টাইনের সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক বজায় রেখেছে এবং আদালতের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয় এখন আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেছে, স্টুডেন্টস ফর জাস্টিস ইন প্যালেস্টাইন একটি বৈধ ছাত্রসংগঠন এবং তারা গত এক বছরে ১০০টিরও বেশি ইভেন্ট আয়োজন করেছে, যেগুলো সব বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুসরণ করেই সম্পন্ন হয়।

এ মামলার নিষ্পত্তির অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় ১ লাখ মার্কিন ডলার অর্থদণ্ড দিতে সম্মত হয়। নাগরিক অধিকার সংগঠন প্যালেস্টাইন লিগ্যাল বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে প্রো-প্যালেস্টাইন শিক্ষার্থীদের অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় আরোপিত সবচেয়ে বড় আর্থিক ক্ষতিপূরণ। বিশ্ববিদ্যালয় যদিও দায় স্বীকার করেনি, তবে আর্থিক ক্ষতিপূরণ এবং সংগঠনটিকে ‘গুড স্ট্যান্ডিং’ এ স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি একপ্রকার নতি স্বীকার করেছে।

ইউএমডি স্টুডেন্টস ফর জাস্টিস ইন প্যালেস্টাইনের সদস্য ড্যানিয়েলা কোলোম্বি বলেন, এ আইনি জয় আমাদের প্রমাণ করে দিয়েছে, ফিলিস্তিনিদের ওপর চলমান গণহত্যার বিরুদ্ধে আমরা প্রতিবাদ জানাতে পারি এবং সেটি আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। তিনি আরো জানান, ক্ষতিপূরণের পুরো অর্থ ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পক্ষে সংগঠিত হওয়ার কাজেই ব্যয় করা হবে। প্যালেস্টাইন লিগ্যালের সিনিয়র স্টাফ অ্যাটর্নি টরি পোরেল বলেন, এই জয় কেবল ইউএমডি স্টুডেন্টস ফর জাস্টিস ইন প্যালেস্টাইনের জন্য নয়, বরং দেশের সব শিক্ষার্থীর জন্য যারা ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বলছে। এটি প্রমাণ করেছে, শিক্ষার্থীদের কণ্ঠরোধ করলে তার পরিণতি ভোগ করতে হবে। একইভাবে কেয়ারের আইনজীবী আহমাদ কাকি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের তথাকথিত ‘অক্টোবর ৭ ব্ল্যাকআউট’ ছিল একটি পরিকল্পিত প্রচেষ্টা প্রো-প্যালেস্টাইন কণ্ঠরোধ করার এবং আদালত তা প্রত্যাখ্যান করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে গুরুত্ব দেয় এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই তাদের অগ্রাধিকার। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিশেষ করে ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখন রাজনৈতিক চাপের মুখে রয়েছে। ওই প্রশাসন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়কে হুমকি, তদন্ত এবং অর্থায়ন কেটে নেওয়ার ভয় দেখিয়ে প্রো-প্যালেস্টাইন কণ্ঠ দমন করতে চায় বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ মামলার রায় এবং নিষ্পত্তি মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে একটি স্পষ্ট বার্তা পৌঁছে দিয়েছে মতপ্রকাশের অধিকার লঙ্ঘন করলে তার জন্য বড় মূল্য দিতে হতে পারে। এটি যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষার আন্দোলনে একটি মাইলফলক বলে বিবেচিত হচ্ছে।

শেয়ার করুন