৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০১:১০:২৮ অপরাহ্ন


গুয়াতেমালার অনাথ শিশুদের ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনায় আদালতের স্থগিতাদেশ
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৩-০৯-২০২৫
গুয়াতেমালার অনাথ শিশুদের ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনায় আদালতের স্থগিতাদেশ গুয়াতেমালার অনাথ শিশুদের ফেরত পাঠানোয় নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে


যুক্তরাষ্ট্রের একটি ফেডারেল আদালত ট্রাম্প প্রশাসনের গুয়াতেমালার ৬০০-এর বেশি অনাথ শিশুকে হঠাৎ করে ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনায় জরুরি নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। শিশুদের পক্ষে অভিবাসন অধিকারকর্মীদের দায়ের করা মামলার পরপরই বিচারক স্পার্কল সুকনান ৩১ আগস্ট রবিবার ভোর ৪টার কিছু পর এই আদেশ দেন। নিষেধাজ্ঞা জারির সময় বিচারক বলেন, ছুটির দিনে ভোরে সরকার যখন অনাথ শিশুদের দেশ থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে, তখন এটা অত্যন্ত বিস্ময়কর , কিন্তু বাস্তবতা এটাই। বিচারক সুকনান শুরুতে বিকাল ৩টায় শুনানি নির্ধারণ করলেও পরে জানতে পারেন যে, কিছু শিশু ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। ফলে শুনানির সময় এগিয়ে এনে দুপুর ১২:৩০-এ করা হয়। তিনি বলেন, আমি সরকারের কাছ থেকে একটি বিবরণ পাচ্ছি, আবার শিশুদের পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি চিত্র উঠে আসছে।

শিশুরা বর্তমানে ইউএস হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিসেস অধীনস্থ রিফিউজি রিসেটলমেন্ট অফিসের হেফাজতে রয়েছে। শিশুদের আইনজীবীরা জানান, তাদের অনেকেই রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছে, যা এখনো বিচারাধীন। প্রশাসনের হঠাৎ এই পদক্ষেপে অনেকের মামলা থেমে যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের আইনজীবী ড্রু এনসিন আদালতে দাবি করেন, এটি কোনো ডিপোর্টেশন নয়, বরং রিপ্যাট্রিয়েশন বা পরিবারের কাছে শিশুদের ফিরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া। তিনি বলেন, এই শিশুদের প্রত্যেকেরই গুয়াতেমালায় অভিভাবক বা পরিবার রয়েছে, যারা তাদের ফেরত চেয়েছেন। তবে শিশুদের প্রতিনিধিত্বকারী আইনজীবীরা এ দাবিকে ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর বলে আখ্যা দেন। ন্যাশনাল ইমিগ্রেশন ল’ সেন্টারের আইনজীবী এফরেন অলিভারেস বলেন, অনেক শিশুর পরিবার এমন কোনো অনুরোধ করেনি। কিছু শিশু তখনো হার্লিঞ্জেন ও এল পাসো বিমানবন্দরে বিমানে অপেক্ষমাণ অবস্থায় ছিল।

প্রথমে এই আদেশ ১০ জন শিশুর জন্য প্রযোজ্য ছিল, পরে তা সম্প্রসারিত করে সব শিশুকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় যাদের বিরুদ্ধে এখনো কার্যকর কোনো চূড়ান্ত ডিপোর্টেশন অর্ডার নেই। শুনানির সময় বিচারক স্পষ্ট করে বলেন, আমি চাই না আমার আদেশ নিয়ে কোনো ধোঁয়াশা থাকুক। বিচারকের আদেশের পর যুক্তরাষ্ট্রে অপেক্ষমাণ শিশুদের সব ফ্লাইট স্থগিত করা হয় এবং বিমানে ওঠা শিশুদের নামিয়ে আনা হয়। তবে মামলার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, এই পরিকল্পনা নিয়ে গুয়াতেমালার সরকারের সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের সমঝোতার দাবি। এটি একটি প্রথমবারের মতো চালু হওয়া পাইলট প্রোগ্রাম।

আইনজীবীরা বলেন, কিছু শিশুর জন্য গুয়াতেমালায় ফেরা মানে নির্যাতন, মানবপাচার ও নিপীড়নের মুখে পড়া। তারা যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয়প্রার্থী এবং এ ধরনের পদক্ষেপ তাদের আইনি অধিকার লঙ্ঘন করে। অ্যাটর্নি অলিভারেস বলেন, একটি দেশের জন্য এটি অন্ধকার ও বিপজ্জনক সময়, যখন সরকার ১০ বছর বয়সী অনাথ শিশুদের টার্গেট করে এবং তাদের একটি অভিবাসন বিচারকের সামনে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরার ন্যূনতম সুযোগও দেয় না।

বর্তমানে ট্রাম্প প্রশাসনের এই হঠাৎ নেওয়া বিতর্কিত উদ্যোগ যুক্তরাষ্ট্রে শিশু অভিবাসীদের মানবাধিকার ও আইনি সুরক্ষা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলেছে। আদালতের প্রাথমিক আদেশে শিশুদের ফেরত পাঠানো আপাতত বন্ধ থাকলেও এ ঘটনাপ্রবাহ অভিবাসন নীতিতে আরো আইনি ও রাজনৈতিক টানাপোড়েন সৃষ্টি করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

শেয়ার করুন