২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৮:০৭:০৫ পূর্বাহ্ন


দক্ষিণ আফ্রিকা জয়ের নেপথ্যে
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩১-০৩-২০২২
দক্ষিণ আফ্রিকা জয়ের নেপথ্যে সিরিজ জয়ের উৎসবে মাতোয়ারা বাংলাদেশ দল


সাদা বাঘের দেশে বাংলার বাঘদের হুঙ্কার সুদূর অস্ট্রেলিয়ায় রাত জেগে উৎফুল্ল মন নিয়েই উপভোগ করেছি। যত ক্রিকেট দেখেছি বাংলাদেশ দলের সরাসরি বা ডিজিটাল তরঙ্গে সেগুলোর মাঝে নানা কারণে ক্রিকেটের অন্যতম দুর্গম দুর্গে চলতি সিরিজ জয়কে এগিয়ে রাখবো নানা কারণে। আমার অন্যতম প্রিয় অনুজ ক্রীড়ালেখক উৎপল শুভ্র লিখেছে ‘রঙধনুর দেশে নতুন সূর্যোদয়’। শুভ্র বর্তমান প্রজন্মের ক্রিকেটের সঙ্গে অনেক ঘনিষ্ঠ। অনেকের ক্রিকেট জীবন কাছে থেকে দেখেছে ঘনিষ্ঠভাবে। দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ছাড়া অন্য দলগুলোর সাফল্যের নজির হাতে গোনা। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার সাফল্য পেতে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ এযাবৎ জিততে পারেনি। ২০ বছরে বাংলাদেশও পারেনি কোনো ফরম্যাটে কোনো ম্যাচ জিততে। দুই দলের সাম্প্রতিক পারফরমেন্স বিচারেও পূর্ণ শক্তির দক্ষিণ আফ্রিকাকে দাপুটে ম্যাচ জয়ে হারিয়ে দিবে এটি, কিন্তু অনেকেই ভাবতে পারেনি। অথচ দেখুন সুপার স্পোর্টস পার্ক, সেঞ্চুরিওনে প্রথম এবং তৃতীয় ম্যাচ বাংলাদেশ জয় করেছে দক্ষিণ আফ্রিকাকে দুমড়ে মুচড়ে দিয়ে। একইভাবে জোহানেসবার্গের ওয়ান্ডারার্স মাঠে দাঁড়াতেই পারলো না বাংলাদেশ। বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো ম্যাচ জয় সিরিজ জয় করে ক্রিকেট বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিলো। দেশে এবং প্রবাসে বাংলাভাষা বলা সমাজে সবাই বিজয়োৎসবে মত্ত। নানাজন নানাভাবে বিজয়ের ব্যবচ্ছেদ করছে। 

এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠতে পারে কি এমন ঘটেছে, যা দলের রসায়ন রাতারাতি পাল্টে  দিলো? দেখুন এবারের দুটো ম্যাচ নিয়ে বাংলাদেশ মুখোমুখি মোকাবিলায় জয় পেয়েছে ৬টি, যার দুটি এসেছিলো ২০১৫ মাশরাফির নেতৃত্বের তুখোড় দলের বিরুদ্ধে। এবারের দুটি ছাড়া বাকি দুটো জয় ২০০৭ এবং ২০১৯ বিশ্বকাপে। সব জয়গুলোতে ছিলেন তামিম, সাকিব আর মুশফিক। সেই ২০০৭ ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপ ছিল ক্রিকেটের বিশ্বসভায় মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিকদের সূর্যোদয়ের বেলা। ১৫ বছর পর বিশ্বক্রিকেট রঙ্গমঞ্চে কত স্বনামধন্য ক্রিকেটার এলো গেলো। বাংলাদেশ ক্রিকেটে কিন্তু এখনো আপনাদের আলোয় দেদীপ্যমান  তামিম, সাকিব, মুশফিক। সঙ্গে যোগ করুন সাইলেন্ট কিলার ২০১৫ বিশ্বকাপে নিজেকে চিনালো মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ফিজখ্যাত কাটার মাস্টার মুস্তাফিজ আর অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী দলের শরিফুলকে। দলটি কেন যে নিয়মিত ওডিআই ম্যাচ জিততে পারেনি সেটি নিয়ে ব্যাপক গবেষণা হতেই পারে। বর্তমান মুহূর্তে ভারত, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, ইংল্যান্ড দলেও কিন্তু বিশ্বমানের চারজন অভিজ্ঞ খেলোয়াড় নেই। বলতে পারেন, অভিজ্ঞতাটা দিয়ে সবসময় জয় মিলে না।  বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কথাটি একেবারেই খাঁটি। না হয় ২০১৫ বিশ্বকাপ থেকে বিকশিত মাশরাফি স্কোয়াডটি দেশের মাটিতে পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ডকে হারানো ছাড়া কোনো বৈষয়িক টুর্নামেন্ট শিরোপা পেলো না? উত্তর মিলাতে কারো আলবার্ট আইনস্টাইন হওয়ার দরকার পড়ে না। বেশ কিছুদিন ধরেই দলের রসায়ন বহাল ছিল না।  

ইতিহাস অনুসন্ধান এতোটুকুই থাকে বাংলাদেশের, কিন্তু ২০২২ বহাল যায়নি। দীর্ঘদিন ধরে অধুনা দুর্বল হয়ে পড়া জিম্বাবুয়ে ছাড়া অন্য কারো সাথেই হালে পানি পাচ্ছিলো না। কখনো তামিম, অধিকাংশ সময় সাকিব, কখনোবা মুশফিক নানা কারণে অনুপস্থিত থেকেছে। কোচিং স্টাফ এমনকি বিসিবির সঙ্গে কারো কারো শীতল সম্পর্কের কানাঘুষা শোনা গেছে। টি-২০ বিশ্বকাপের প্রাক্কালে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যাণ্ড দলকে মিরপুরের মরা উইকেটে পরাজিত করা, ২০২১ মৌসুম ছিল দুঃসহ স্মৃতির। বিশ্বকাপের পর সফরে এসে তুলোধুনা করে গেলো পাকিস্তান। তবে ঘুরে দাঁড়ানোর পালা শুরু হলো নিউজিল্যান্ড থেকে। তথাকথিত পাণ্ডবদের ছাড়াই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের আঙিনায় টেস্ট ম্যাচ জয় করলো মুমিনুল নেতৃত্বে বাংলাদেশ। চলতি সিরিজ নিয়েও জল ঘোলা কম হয়নি। বাংলাদেশের তুখোড় চৌকস সাকিব আল হাসান দক্ষিণ আফ্রিকায় যাবেন কি যাবেন না অনেক নাটক হলো। অবশেষে পূর্ণ শক্তির দল নিয়েই সফরে বাংলাদেশ।

আরো যেটি দেখার মতো এই প্রথম সত্যিকারের বিশ্বমানের কোচিং স্টাফ পেলো বাংলাদেশ। হেড কোচ রাসেল ডোমিঙ্গ নিয়ে বেশি কিছু বলার নেই। ব্যাটিংয়ে জেমি সিডন্স, ফার্স্ট বোলিংয়ে অ্যালেন ডোনাল্ড, স্পিনে রঙ্গনা হেরাথ, আলবি মরকেলের সমন্বয়ে গড়া কোচিং স্টাফ নিঃসন্দেহে অনেক কিছুই দেয়ার আছে। বাংলাদেশের বর্তমান দলের প্রতিভা নিয়ে কখনোই কারো কোনো আপত্তি ছিল না। কিন্তু দলের পরিবেশ, রসায়ন, খেলোয়াড়দের কারো কারো নিবেদন নিয়ে প্রশ্ন তোলা হতো। তিনটি ম্যাচ দেখে মনে হয়েছে তামিমের নেতৃত্বে জেগে উঠছে একসুতোয় গাঁথা দলটি, দোলে সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ, মুস্তাফিজ ছাড়াও ম্যাচ জয় করার মতো আছে লিটন, আফিফ, শরিফুল, ইয়াসির মেহেদী মিরাজ এবং অবশ্যই বদলে যাওয়া তাসকিন। ছন্দে থাকলে এবং দলীয় রসায়ন বজায় থাকলে দলটিতে ধারাবাহিকতা সৃষ্টি হবে। আমি দলের ব্যবস্থাপনায় খালেদ মাহমুদ সুজনকে সম্পৃক্ত করাকেও ইতিবাচক মনে করি। 


শেয়ার করুন