২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৩:০৯:৪৪ পূর্বাহ্ন


আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে চলছে সুগভীর ষড়যন্ত্র
বাংলাদেশ ভূ-রাজনীতির নির্মম শিকার
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩১-০৮-২০২২
বাংলাদেশ ভূ-রাজনীতির নির্মম শিকার


স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় থেকেই বাংলাদেশ আঞ্চলিক এবং আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতির নির্মম শিকার হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী, শেরেবাংলার অনুজপ্রতিম জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সারা জীববের আপসহীন সংগ্রামের ফসল লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশ পর্যায়ক্রমিকভাবে ভূ-রাজনীতির নির্মম শিকার হয়েছে। সকল খুন, হত্যা, সামরিক শাসনের যাঁতাকল এড়িয়ে বাংলাদেশ আজ দক্ষিণ এশিয়ার ধাবমান অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হলেও নানা ভূ-রাজনীতির মোকাবিলা করেই যেতে হচ্ছে। 

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে চলছে সুগভীর ষড়যন্ত্র।  অসীমের পানে ছটুতে চলা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অনেকটাই নির্ভর করছে রাজনীতির চোরা গলিপথে স্বাধীনতার সপক্ষ  শক্তি কীভাবে পরিস্থিতি সামাল দেয়।  মনে রাখতে হবে ১৯৭১ মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত রাশিয়া ছাড়া অধিকাংশ দেশের সরকার বাংলদেশের বিপক্ষে ছিল। ৫১ বছরের অবসানে সমীকরণ অনেক পাল্টে গেছে। অনেক আঞ্চলিক দেশ বাংলাদেশের অব্যাহত উন্নয়ন দেখে ঈর্ষাকাতর কাতর হয়ে ষড়যন্ত্রের জাল বুনছে। আসন্ন নির্বাচন তাই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ। চালে একটু ভুল হলেই এতো সময়ের অর্জন মুখ থুবড়ে পড়তে পারে।

বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে যুদ্ধকালীন সময়ে নেতৃত্বদানকারী অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারকে দখলদার পাকিস্তান সেনাবহিনী ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির মদদপুষ্ট আওয়ামী লীগ নেতাদের ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হয়েছে। সদ্য স্বাধীন দেশে যুক্তরাষ্ট্র, চীন সরকারের মদদপুষ্ট পরাজিত পাকিস্তান বাহিনীর প্রেত্মাতারা মুজিব- তাজউদ্দীন আস্থায় চিড় ধরাতে সক্ষম হয়েছিল। বঙ্গতাজ নীরবে সরে গেলেও ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠী দেশব্যাপী জ্বালাও পোড়াও নীতি গ্রহণ করে দেশবাসীদের বঙ্গবন্ধু সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলে। অবশেষে ভূ-রাজনীতির শিকার হয়েই বঙ্গবন্ধুকে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ নৃশংসভাবে মৃত্যুবরণ করতে হয়।

ডালিম, ফারুক, নূর গং হত্যাকারী হলেও বঙ্গবন্ধু হত্যার পেছনে নেপথ্য শক্তির মুখোশ উন্মোচন করলে হয়তো দেখা যাবে একই শক্তি জেলখানায় চার নেতা,  জিয়া, খালেদ মোশারফ, মনজুর, তাহের, হায়দার, হুদা হত্যা করেছে। অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে বাংলাদেশের। ১৯৭৫-১৯৯০ পর্যন্ত বাংলাদেশ চলেছে মুক্তিযুদ্ধ আদর্শের ভিন্ন পথে। স্বাধীনতা-পরবর্তী বঙ্গবন্ধু সরকারের অর্জনগুলো বিসর্জন হয়েছে। ১৯৯১-১৯৯৬ বিএনপি সরকারের মাঝেও খাঁটি দেশপ্রেম অনুপস্থিত থাকায় ঘুরে দাঁড়ানোর মিশন গতি পায়নি। 

অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ১৯৯৬ বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় এসে ১৯৯৬-২০০১ পর্বে দেশকে পুনরায় উন্নয়নের রেলগাড়িতে টেনে তোলেন। কিন্তু সর্বপর্যায়ে দুর্নীতি আর অপশাসনের মূলোৎপাটন করতে না পারায় ২০০১ সালে আবার দেশপ্রেমিক সরকারের পতন ঘটে। যুদ্ধাপরাধী জামায়াতকে সাথী করে বিএনপি ক্ষমতায় এসে হাওয়া ভবন সৃষ্টি করে দেশকে লুটপাটের অভয়ারণ্যে পরিণত করে। জ্বালানি সংকট বিদ্যুৎ সংকট তীব্র রূপধারণ করে। 

২০০৯ থেকে পুনরায় আওয়ামী লীগ সরকার ক্রমাগত তিনবার ক্ষমতাসীন হয়েও দেশকে দুর্নীতিবাজ শক্তির নিয়ন্ত্রণ মুক্ত করতে পারেনি। দেশের সকল ক্ষেত্রে অভাবনীয় উন্নয়ন হলেও সরকারি দল, অঙ্গসংগঠনগুলো অনুপ্রবেশকারীদের দখলে গাছে। আমলারা সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে, দুর্নীতি মহামারীর রূপধারণ করেছে। সরকারপ্রধানের আন্তরিকতা বা সততা নিয়ে প্রশ্ন করা যাবে না। কিন্তু তাকে ঘিরে রাখা চাটুকার মহল দেশকে ভুল পথে চালনা করার মহাসারণযন্ত্রে লিপ্ত। অনেকের বিরুদ্ধেই অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদ বিদেশে পাচারের অভিযোগ আছে। ওনাদের প্রতি সরকারপ্রধানের রুষ্ট মনোভাব আঁচ করে এখন ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে তাই বিদেশি শক্তি নাক গলাচ্ছে। জ্বালানি সংকটের সময়েও সরকার সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধাগ্রস্ত মনে হচ্ছে। কিছু কিছু সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী মনে হচ্ছে।

বাংলাদেশের জনগণ সম্মিলিতভাবে অশুভ বিদেশি শক্তির বিরুদ্ধে সজাগ সতর্ক না থাকলে বিপর্যয় সামাল দেয়া যাবে না। সরকারপ্রধানের উচিত ওনার শক্তির উৎস জনগণের কাছে সবকিছু খোলামেলা বলা। বাংলাদেশের ৯৯ শতাংশ মানুষ এখনো দেশপ্রেমিক এতো মর্যাদাশীল। যে কোনো ভূ-রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে জাগাতে হলে সরকারপ্রধানকে জনগণকে সঙ্গে নিয়েই আগাতে হবে। আমলা বা অন্য কেউ দুর্যোগ সময়ে কিছু করতে পারবে না।

শেয়ার করুন