০৬ মে ২০১২, সোমবার, ০৫:৫৪:৪১ পূর্বাহ্ন


জরুরি অবস্থার দিকেই কী হাঁটছে দেশ
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-১১-২০২৩
জরুরি অবস্থার দিকেই কী হাঁটছে দেশ বিএনপি ও অন্যান্য দলের অবরোধের দৃশ্য


বিএনপির ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ ঘিরে সৃষ্ট ঘটনার কী বার্তা- এ প্রশ্নটা এখন ঘুরপাক খাচ্ছে সর্বত্র। বিএনপিকে বেড়ধক পিটানো হয়েছে, সমাবেশ করতে দেয়া হয়নি, সমাবেশ পণ্ড করে দেয়া হয়েছে এমন বক্তব্য এক পক্ষের। বিএনপি সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করেছে, প্রধান বিচারপতির বাড়িতে হামলা করেছে, গাড়িতে আগুন দিয়ে অগ্নিসন্ত্রাস করেছে, পুলিশের উপর আক্রমণ করেছে, পুলিশ হত্যা করেছে- এমন দাবি অন্যপক্ষের। দুইপক্ষের দাবির পক্ষে স্ব স্ব যুক্তি বিদ্যমান। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় তোলপাড়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ সাত দেশ যৌথ বিবৃতি দিয়েছে। সেখানে ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে শনিবার বিএনপির রাজনৈতিক মহাসমাবেশ পণ্ড হয়ে যাওয়া নিয়ে সৃষ্ট ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, নরওয়ে সরকার। যৌথ ওই বিবৃতিতে আরো বলা হয়, সহিংসতায় যারা প্রাণ হারিয়েছেন বা আহত হয়েছেন তাদের প্রতি আমাদের সহমর্মিতা। বিবৃতিতে জানানো হয়, সব অংশীদারের প্রতি আমরা সহিংসতা থেকে বিরত থাকতে ও সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানাই। একই সঙ্গে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানাই। তবে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহলের পাশাপাশি জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষায়ক হাইকমিশন ২৮ অক্টোবর ঘটনার দায়ী হিসেবে ক্ষমতাসীন দলের সমার্থকদের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। এ বিষয়টাতে বাংলাদেশের সৃষ্ট ঘটনার মোর একপক্ষের দিকে টার্ন করছে কিছুটা হলেও। 

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বেলজিয়াম সফর উপলক্ষে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি আর কোনো সমঝোতা সংলাপে যাবেন না। তিনি বলে দিয়েছেন, নির্বাচন হবেই। এবং নির্বাচনকালীন সরকার হবে না। সেখানে বর্তমান দেশ পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সরকারই নির্বাচনকালীন সময়ে পূর্ণ দায়িত্বে থাকবেন। যা দীর্ঘদিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র  ও মিত্রদের যে প্রত্যাশা বা চাওয়া বা নির্দেশনা তার সম্পূর্ণ উপেক্ষা। এদিকে দেশের বৃহত্তর রাজনৈতিক দল বিএনপির সঙ্গে জামায়াতও যোগ দিয়েছে বিএনপির কর্মকাণ্ডে সমর্থন জানিয়ে। একই সঙ্গে এদের সঙ্গে আরো বেশ কিছু দল রয়েছে। এরা ২৯ অক্টোবর নজিরবিহীন হরতাল পালন করে এবার টানা তিনদিনের অবরোধের ডাক দিয়েছে। যার প্রথমদিন ছিল এ রিপোর্ট লেখাকালীন সময় ৩১ অক্টোবর মঙ্গলবার। অবরোধের এ প্রথমদিনে গোটা দেশই যেন অনেকটা স্থবির হয়ে পড়ে। এতটা কঠোর হবে পরিস্থিতি কেউ কল্পনাও করেনি। অবরোধের সফলতা হলে বিএনপি ও তার মিত্ররা আরো কর্মসূচিতে চলে যেতে পারে, যেহেতু দলটির মহাসচিব ও শীর্ষ আরো দুই নেতা মির্জা আব্বাস ও মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। এ ধারা আরো অব্যাহত থাকবে বলে পুলিশের বিভিন্ন নেতার বাসা বাড়িতে তল্লাশির খবরে প্রমান মেলে। সব মিলিয়ে নির্বাচনের তফসিলের প্রাক্কালে এসব ঘটনা মোটেও একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচনের প্রেক্ষাপট হয় না। এছাড়া বিদেশী দেশসমূহের প্রত্যাশা তো আছেই। যেখানে বড় চাওয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মত একটি বড় পরাশক্তির। 

সব মিলিয়ে কোন দিকে যাচ্ছেন দেশের পরিস্থিতি এর একটা আগাম বার্তা মেলানো যায়। যা ইঙ্গিত করে একটি জরুরি অবস্থার দিকেই। বিশিষ্ট রাজনীতি বিশ্লেষক নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ এমন মত প্রকাশ করেছেন। তাছাড়া জরুরি অবস্থার পরেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে নির্বাচনটা আয়োজনও সম্ভব বলেও বিষেশাজ্ঞদের অভিমত। সেটা না হলে বিদেশীরা হস্তক্ষেপে গেলে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মত বড় খড়গও নেমে আসতে পারে বলে বেশ কিছুদিন আগে ঢাকার একটি পত্রিকায় ইঙ্গিত দিয়েছিল। তবে যেদিক দিয়েই বিবেচনা হোকনা কেন, পরিস্থিতি একটা জটিলতার দিকেই যাচ্ছে বিরাজমান পরিস্থিতি ইঙ্গিত করছে।  

পুলিশের মামলা 

বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনায় মোট ৩৬টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় নাম উল্লেখ করে ১ হাজার ৫৪৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে এ মামলায় মূলত বিএনপির শীর্ষ নেতাদেরই বেশি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ। এককথায় বিএনপির শীর্ষ নেতাদের খুব কম সংখ্যকের নামই বাকি। অজ্ঞাতজনও উল্লেখ রয়েছে মামলায়, যেখানে অনায়াসে ঠাঁই পেতে পারে সন্দেহজনক (!) অন্য যে কারোই নাম।   

আওয়ামী লীগের দাবি 

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ৩০ অক্টোবর সোমবার এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, বিএনপি নির্বাচন বানচাল করতে চায় বলেই আন্দোলনের নামে সংঘাতের পথ বেছে নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘বিএনপি বিহীন নির্বাচন করবো, এটা আমরা চাই না। নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচন হবে। তবে কে এলো আর এলো না তার জন্য নির্বাচন থেমে থাকবে না। বিএনপি নির্বাচন বানচাল করতে চায়। যারা নির্বাচন চায় তারা কখনো এমন সংঘাতের পথ বেছে নিতে পারে না। নভেম্বরে নির্বাচনের ট্রেন ছেড়ে দেবে।’

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপির লক্ষ্য নির্বাচনকে বানচাল করা, অংশ নেওয়া নয়। নির্বাচন চাইলে তারা এমন সন্ত্রাস করতো না। নৃশংসতা বিএনপির আসল রূপ। পুলিশ-সাংবাদিক কাউকেই ছাড় দেয়নি তারা। ওবায়দুল প্রশ্ন রাখেন, বিএনপি ৩১ অক্টোবর মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সড়ক-নৌ ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি দিয়েছে। কিন্তু তাদের দলের মহাসচিবতো জেলে; এ কর্মসূচির নেতৃত্বে দেবে কে? ঠিক প্রধানমন্ত্রীও এমন বক্তব্যই দিয়েছেন সংবাদ সম্মেলনে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের প্রত্যাশা 

দীর্ঘদিন থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র ইইউসহ অন্যান্য দেশসমূহ বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রত্যাশা করে আসছেন। সেজন্য বারবার তাদের শীর্ষ নেতৃত্ব বাংলাদেশে সফর করে গেছেন। আবার কখনো ডেকে নিয়ে কথা বলেছেন। ভিসানীতি তৈরি করেছেন। ভিসানীতি প্রয়োগেরও ঘোষণা দিয়েছেন।  ইতিমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এমন ঘটনার পর ভিসানীতির কথা আবারও স্মরণ করিয়ে দেয়। কিন্তু বাস্তবে যা ঘটেছে তা ওই ভিসানীতি আমলে নিচ্ছে না কেউ তেমনটাই মনে হচ্ছে। যদি এমনই হয় যে, ক্ষমতাসীন দল ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো একটি নির্বাচনের দিকেই এগোতে থাকলো। নভেম্বরের মাঝামাঝিতে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করলো, নির্বাচন পানে আওয়ামী লীগ এগিয়ে যেতে থাকলো, তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য মিত্রদের ভূমিকা কী হতে পারে? তারা কী সেটা সাপোর্ট দেবেন, নাকি ভিন্ন কোনো উদ্যোগ নেবেন, যার মাধ্যমে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের ব্যবস্থা হয়। সাধারণ মানুষ আশ্বস্ত হন। ফিরে পাক তাদের ভোটাধিকার। 

আলোচনায় সেই পুরোনো রিপোর্ট আসছে মার্কিন ঝড়

২৮ অক্টোবরের সমাবেশ পূর্ব যে প্রেক্ষাপট বিরাজমান ছিল, তা আবারও উঠে আসছে আলোচনায়। যা কিছুদিন আগে ঢাকার একটি দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছিল যে ‘আসছে মার্কিনি ঝড়।’ সেখানে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের ওপর দিয়ে এক বিপজ্জনক অর্থনৈতিক ঘূর্ণিবার্তার ঝাপটা আসার লক্ষণ দেখা দিয়েছে। এই ঝাপটা আসতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা অর্থনৈতিক মহল থেকে। এ ব্যাপারে পাশ্চাত্যের অর্থনৈতিক মোড়লরা এখন কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে।’ বিশিষ্ট সাংবাদিক ও বরেণ্য সম্পাদক আবেদ খান তার রিপোর্টে আরো উল্লেখ করেছিলেন, ‘আমার তথ্যসূত্র যদি ভুল বার্তা না দেয়, তাহলে অনুমান করতে পারি দুর্নীতি এবং অর্থ পাচার সংক্রান্ত অভিযোগ তুলে কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পাঁয়তারা চলছে এবং এ বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। সরকারের ওপর একের পর এক চাপের পর এবার এই নতুন পদক্ষেপ। যেহেতু সরকারের কৌশলী ব্যবস্থায় মার্কিন ভিসানীতি কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছে, তাই এ পদক্ষেপটি হতে যাচ্ছে ব্যবসায়ী মহলের দিকে তাক করে।’ তার রিপোর্টে তিনি লিখেছেন, ‘নির্বাচন, গণতন্ত্র এসব নিয়ে সরাসরি কাজ করে ঢাকার আমেরিকান এম্বাসি ও ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্টের সাউথ এবং সেন্ট্রাল এশিয়ার শাখা। আর এ দুই জায়গার সঙ্গেই ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে চলেছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। তাদের হিসাব হলো, এখন যদি ব্যবসায়ীদের ওপর চাপ দেওয়া যায়, তাহলে বাজারে দৃশ্যমান প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে বাধ্য। সাধারণ মানুষ এ নিয়ে সরকারকে দোষারোপ করা শুরু করবে, যার সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া হতে পারে আগামী নির্বাচনে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের আরেকটি পদক্ষেপ ঘটতে পারে আইএমএফ ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের ব্যাপারে। নভেম্বরে এই দ্বিতীয় কিস্তির অর্থছাড় আটকে দেওয়া হতে পারে এবং সেটা বাংলাদেশের মানবাধিকার প্রসঙ্গ তুলে আর রিজার্ভ প্রসঙ্গ ও বৈদেশিক মুদ্রা পাচার বিষয়গুলোকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে। যারা এই পরিকল্পনার ছক কষেছে, তাদের হিসাব খুবই পরিষ্কার। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি যতোই নাজুক হতে থাকবে, রাজনৈতিক পরিস্থিতিও একই সঙ্গে উত্তপ্ত হবে এবং তার আয়োজন সেভাবেই বিন্যাস করা হচ্ছে বলে প্রতীয়মান হয়। সরকারের ওপর এখন ত্রিমুখী আক্রমণ হতে যাচ্ছে।’ 

কলিম উল্লাহর শঙ্কা 

৩০ অক্টোবর এক টিভি অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, রাজনীতি বিশ্লেষক ও জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের (জনিপপ) চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ ২৮ অক্টোবর প্রসঙ্গ তুলে শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, পরিস্থিতিটা আসলে ভয়ংকর। কারণ একজন পুলিশ সদস্য স্পট ডেথ। আরেকজন আনসার সদস্য আহত হয়ে পরের দিন মৃত্যুবরণ করেছে। আরো প্রায় ৩৯ জন আহত। যুবদল কর্মী নিহত হয়েছেন। এসব বিষয় আসলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গভীর পর্যবেক্ষণে নিয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে ইতিমধ্যে তারা (মার্কিন) মিলে সাত দেশের একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছে। যাতে নিন্দা উদ্বেগ মিশ্রিত স্টেটমেন্টে আহ্বান জানানো হয়েছে, উভয়পক্ষকে সংযোত থাকার জন্য। একই সঙ্গে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের একটি পরিবেশ তৈরি করার জন্য আহ্বান জানানো হয়। ফলে ওই ঘটনার পর বিএনপি হরতাল দিয়েছে। যাতে সমর্থন দিয়ে জামায়াতও হরতাল দিয়েছে। এতে একজন যুবলীগ কর্মী  নিহত হয়েছেন। ফলে উত্তরবঙ্গ কিন্তু উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে, যা ঘটছে পরিস্থিতি তা কিন্তু একতরফা ঘটবে না। এক হাতে তো তালি বাজে না। তাতে ব্যাপারটি দাঁড়াবে একটি সম্মুখ সমরের মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে। তাতে তিক্ততা বাড়বে। ফলে যে যাই বলুক না কেন, যে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয়েছে তাতে শাক দিয়ে মাছ কিন্তু ঢাকা যাবে না। ফলে যতোই দূরত্ব থাকুক, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে দূরত্ব কমাতে হবে। সমস্যার সমাধান করতে হবে। 

এক প্রশ্নের উত্তরে কলিম উল্লাহ বলেন, সরকার যে হার্ডলাইনে গেছে বা রয়েছে এটা তো পরিষ্কার। তারা জুনিয়র হতে চাচ্ছেন না, তারা প্রিভেন্ট করতে চায় সিনিয়র পার্টনার হিসেবে। রঙ্গমঞ্চ হিসেবে তারা এটা ধরে রাখার মাধ্যমে পিছপা হচ্ছেন না এবং ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিটির যে প্রত্যাশা সেটা উপেক্ষা করে তাদের যে ছক বা প্ল্যান সেটাই বাস্তবায়নের জন্য তারা এগিয়ে যাচ্ছেন। ফলে সবকিছুর প্রতিক্রিয়া পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আসবে। সবকিছু কিন্তু এক পেশে থাকবে না।  

সবকিছুরই একটা ভিন্ন লক্ষণ দেখা যায়। ভিসানীতি প্রয়োগের পরও যদি নির্বাচনপূর্ব এমন সহিংসতা সৃষ্টি হয় এবং এর সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সম্পৃক্ততা খুঁজে পাওয়া যায়, তাহলে তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কারণ ভিসানীতি যাদের ওপর প্রয়োগ করা হবে সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী (পুলিশ) এদের নামও রয়েছে। যদি এরপরও সরকার নির্বাচনমুখী হওয়া থেকে বিরত না থাকে তাহলে তারা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মত কার্যক্রমের দিকেও যেতে পারে। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষক, কলিম উল্লাহ আরো বলেন, বিএনপি ও তাদের মিত্ররা ইতিমধ্যে তিনদিনের অবরোধ কর্মসূচি দিয়েছে। এতে কিছু যানবাহনের ক্ষয়ক্ষতি হতেই পারে। এতে করে পণ্য পরিবহনের ওপরও একটা অ্যাফেক্ট পড়তে পারে। যা বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ঘটতে পারে। যাতে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার ঘটতে পারে। সেটা হলে মানুষ অহিসহিষ্ণু হয়ে উঠতে পারে। যা পরিস্থিতি অন্যদিকে নিয়ে যেতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে জরুরি অবস্থা জারি করা ছাড়া সংবিধান সম্মত অন্য কোনো পথ সাধারণত থাকে না। 

সরকার কোন দিকে যেতে পারে হার্ডলাইন, নাকি সমঝোতা?

এই প্রশ্নের জবাবে নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ বলেন, এখন পর্যন্ত যা দেখা যাচ্ছে সেটাতে হার্ডলাইনে থাকা দেখা যাচ্ছে। সামনে যা কিছু পড়বে দুমড়ে মুচড়ে এগিয়ে যেতে হবে। এটাতে আর যাই হোক নির্বাচনের বার্তা কিন্তু প্রদান করছে না। ফলে ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিটি যদি একটা উদ্যোগ নিয়ে মীমাংসা না করেন, তাহলে বলাই যায়, গত ২০১৪ বা ২০১৮-এর যে পরিণতি সেদিকেই সবকিছু ধাবিত হচ্ছে। 

সর্বশেষ

বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থেই একটা অনিশ্চয়তার পানেই এগোচ্ছে এটা এখন বাস্তব। এ থেকে পরিত্রাণের উপায় আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান। যা বহুবার রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা যেমন বলেছেন বৈদেশিক বন্ধুপ্রতিম দেশসমূহও সে পরামর্শ দিয়ে আসছেন। কিন্ত সে প্রেক্ষাপট এখন আর আছে বলে মনে হচ্ছে না। ফলে ক্ষমতাসীনরা একতরফা একটা নির্বাচনের পানেই যাচ্ছে এটাই এখন স্পষ্ট। ফলে ঘুরে ফিরে সেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্রদের কোর্টেই বল। তারা এ ঘঠনাপ্রবাহ কীভাবে নিয়েছেন বা নিচ্ছেন। তারা যদি তাদের প্রত্যাশার ওপর এক থাকে, তাহলে তাদের একটা উদ্যোগ বাংলাদেশের মানুষ দেখবে। যাতে একটা সংঘাতপূর্ণ এড়িয়ে সমঝোতা পরিলক্ষিত হবে। এর বাইরে যা হবে তা আরেকটি একতরফা নির্বাচন। যার ইঙ্গিত ২৮ অক্টোবরের পর দিতে শুরু করেছে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে। আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন বলছেন সে কথাও। যা হয়তো তারা বিএনপির নেতাকর্মীদের কারাগারে রেখেই সেরে ফেলতে চাইবেন। ক্ষমতা এমনি এমনি কে-বা ছেড়ে দিতে চায়।

শেয়ার করুন