২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৯:১৮:৫৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ইস্যুতে চীনের অভিমত
চীন আবারও স্মরণ করিয়ে দিলো তাদের নীতির কথা
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-০৫-২০২৩
চীন আবারও স্মরণ করিয়ে দিলো তাদের নীতির কথা চীনের রাষ্ট্রদূত


চীন আবারও স্মরণ করিয়ে দিলেন বাংলাদেশে তাদের নীতির কথা। ঢাকাস্থ চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনীতি বা কোনো ইস্যুতেই তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ পছন্দ করে না বেইজিং। এটা অবশ্য চীন দীর্ঘদিন থেকেই বলে আসছে। তবে এবারের প্রেক্ষাপটটা ভিন্ন। যখন বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক হওয়ার প্রত্যাশা করছে এবং কঠোরভাবে মনিটরিং করছে বলে জানান দিচ্ছে চীন এমনি মুহূর্তে আবারও তাদের মনোভাব ব্যক্ত করেছে। 

সম্প্রতি জাপান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফরে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনেকেই বলছেন, শেখ হাসিনার এ সফর মূলত আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে ক্ষমতাসীন সরকারের প্রতি ঐ প্রভাবশালী তিন দেশের সমর্থনটা যাতে আদায় করা বা অব্যাহত রাখা যায় সে লক্ষ্যে। কারণ ঐ তিন দেশসহ ইউরোপীয় ইউনিয়ন বেশ সোচ্চার এবারের জাতীয় নির্বাচন যেন ২০১৪ ও ২০১৮ মার্কা না হয় সেজন্য এবং সব দলের অংশগ্রহণে যেন নির্বাচনটা অনুষ্ঠিত হয়, যা সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা পায় ও সাধারণ জনগণ যেন তাদের নেতা নির্বাচন করতে সক্ষম হন, তাদের নিজের ভোটের মাধ্যমে। চীন ঠিক সে মুহূর্তে ঐ ধরনের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে।  

গত ৭ মে রাজধানী ঢাকায় ‘বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক 

ভবিষ্যতের পূর্বাভাস’  শীর্ষক কসমস ডায়ালগে চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন আরো বলেন, চীন বাংলাদেশের নিজস্ব  উন্নয়নের পথ বেছে নেওয়ার বিষয়টিকে সম্মান করে এবং এর ভিত্তিতে বাংলাদেশের সঙ্গে কৌশলগত যোগাযোগ ও পারস্পরিক শিক্ষা জোরদার করতে ইচ্ছুক। চীন ও বাংলাদেশের উচিত মূল স্বার্থসংশ্লিষ্ট ইস্যুতে একে অপরের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখা এবং এক কণ্ঠে বাহ্যিক হস্তক্ষেপকে ‘না’ বলা। 

অনুষ্ঠানে প্রদত্ত মূল বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে চীনের মধ্যস্থতাসহ সমসাময়িক বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলেন। ইয়াও ওয়েন বলেন, আমি নিশ্চিত করে বলতে চাই, যে কোনো যৌক্তিক প্রয়োজনে চীন বরাবরের মতো বাংলাদেশের পাশে থাকবে। এ সময় তিনি বিশ্বের প্রভাবশালী তথা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্রদের প্রতি আঙুল তুলে বলেন, বিশ্ব আজ অদৃশ্য বড় পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং সমৃদ্ধির পেনডুলাম প্রাচ্যের দিকে ঝুঁকছে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে চীন ও বাংলাদেশ উভয়ই নজিরবিহীন সুযোগ ও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। 

উন্নয়ন ও সীমান্ত প্রতিরক্ষা নিয়ে চীন বাংলাদেশ একযোগে কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, যে কোনো মূল্যে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় চীন কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে বিশ্বাসী চীন। তিনি চীনের দ্রুত অগ্রসমান কথা তুলে ধরে বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলে এক নম্বর অর্থনীতির দেশ হবে চীন। 

অথচ বিশ্বের অগ্রগতির জন্য মার্কিন-চীন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু ঐ সত্যটা এড়িয়ে এ দুই দেশের সম্পর্ক ক্রমশ নিম্নগামী। এ সময় তিনি ভারত প্রসঙ্গও কথা বলেন। ওয়েন বলেন, চীন ও ভারত একসঙ্গে কোনো বিষয়ে কথা বললে গোটা বিশ্ব তা গুরুত্বসহকারে শুনবে। দুই দেশ একজন আরেক জনের নিরাপত্তার হুমকি হবে না। ভারতের এ বিষয়ে ভাবা উচিত।

বিশ্বে যে প্রেক্ষাপট বিদ্যমান, সে বাস্তবতায় বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যকার কৌশলগত অংশীদারিত্বকে আরো গভীর করা উচিত উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, পারস্পরিক সহযোগিতার জন্য আমাদের নতুন প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রগুলো অন্বেষণ করা জরুরি।

গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (জিডিআই), গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভ (জিএসআই) এবং গ্লোবাল সিভিলাইজেশন ইনিশিয়েটিভের (জিসিআই) আওতায় সহযোগিতার সুযোগ অনুসন্ধানে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে চীন ইচ্ছুক। এ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত ওয়েন বলেন, বাংলাদেশে শিল্পের উন্নয়ন ও ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়াকে উৎসাহিত করতে এবং ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’-এর গুণগত মান ও প্রতিযোগিতার মান উন্নয়নে বেইজিং ইচ্ছুক। চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও সদ্য ঘোষিত বাংলাদেশের স্বতন্ত্র ‘ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক প্রসঙ্গেও কথা বলেছেন। তিনি বলেন, আইপিওর অনেক কিছু চীনের ধারণার অনুরূপ। 

স্বাধীনতার পররাষ্ট্রনীতি সংরক্ষণের পাশাপাশি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে বাংলাদেশকে আরো সক্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে চীন সমর্থন করে জানিয়ে তিনি উল্লেখ করেন যে, এ বছর বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) চালুর দশম বার্ষিকী পালিত হচ্ছে। বিআরআইয়ের আওতায় পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের মতো বাংলাদেশে মোট আটটি মেগাপ্রকল্প দ্রুত সম্পন্ন করে ব্যবহার উপযোগী করা হবে। একই সঙ্গে দ্রুত রাজশাহী সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট প্রকল্পের কাজও শুরু হবে বলেও তিনি আশাবাদ রাখেন। সম্পর্কের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে রাষ্ট্রদূত ইয়াও বলেন, বাংলাদেশ ও চীনের উচিত নিজ নিজ জাতীয় অবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ উন্নয়নের পথ অনুসরণে একে অপরকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন অব্যাহত রাখা। কারণ চীন ও বাংলাদেশ উভয়ের আধুনিকীকরণের সঙ্গে একটি বিশাল জনগোষ্ঠী জড়িত। 

রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে ইয়াও ওয়েন বলেন, আন্তর্জাতিক সহায়তা কমে যাওয়ায় সমাধানের একমাত্র উপায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন। যদিও এটা চীন-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় বিষয় নয়। তারপরও মধ্যস্থতাকারী হিসেবে বেইজিং এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে চীন কার্যকর ভূমিকা রেখে আসছে। রাষ্ট্রদূত বলেন, অনেক রাষ্ট্র মুখে বড় প্রতিশ্রুতি দিলেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মধ্যস্থতায় একমাত্র চীনই কার্যকর ভূমিকা রাখছে। চীন একটি দায়িত্বশীল বন্ধু হিসেবে রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিত করতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে অবিচলভাবে মধ্যস্থতা করে আসছে।

শেয়ার করুন