২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৬:৪৮:৩৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


তামিম ইস্যু কী খাটো করে দেখা উচিত?
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৪-১০-২০২৩
তামিম ইস্যু কী খাটো করে দেখা উচিত? প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মাশরাফি ও তামিম


তামিম ইকবালের বিশ্বকাপে না থাকার বিষয়টি আর খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তামিমকে গণভবনে ডেকে এনে অবসর থেকে ফিরিয়ে আসন্ন এ বিশ্বকাপ পর্যন্ত খেলতে অনুরোধ করেছিলেন। তামিমও প্রধানমন্ত্রীর কথায় সায় দিয়ে ফিরেছেন, তাহলে সে তামিমকে কেন বিশ্বকাপ স্কোয়াডে রাখা হলো না-এটা এখন বড় প্রশ্ন আকারে দাঁড়িয়ে গেছে। এটাতে প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হলো কি না সেটাও দেখার বিষয় রয়েছে। 

কেউ স্বীকার করুক বা নাই করুক হেড কোচ হিসেবে বিতর্কিত শ্রীলঙ্কান চন্দ্রিকা হাতুরাসিংহকে হেড কোচ হিসেবে পুনরায় নিয়োগ দেওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশ ক্রিকেটে একের পর এক বিতর্কিত ঘটনা ঘটছে। আগের টার্মেও হাতুরাসিংহ মাশরাফি, তামিম, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ এবং এমনকি সাকিবের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়েছিল। ২০১৯ বিশকাপে বাংলাদেশের ব্যর্থতার পর দায়িত্বহীনের মতোই স্বার্থপর হাতুরা বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যায়। নিজ দেশের ক্রিকেটে নানা বিতর্ক সৃষ্টির পর বহিষ্কার হয়ে অস্ট্রেলিয়া থাকার নতুন চুক্তিতে আরো ক্ষমতাশালী হয়ে বাংলাদেশে ফিরে আসে। বাংলাদেশ কিন্তু ইতিমধ্যে তামিম ইকবালের নেতৃত্বে দেশে এবং বিদেশে অন্তত ওডিআই দল হিসেবে যথেষ্ট শক্তিশালী হয়ে ওঠে। নতুন দায়িত্ব নিয়েই আবার বিসিবির প্রভাবশালীদের আঙ্কারায় আবারও মাহমুদউল্লাহ, তামিমকে ছলেবলে কৌশলে দল থেকে ছেঁটে ফেলার নীলনকশা প্রণয়ন করে। বিসিবির অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকা অশুভ মহল চক্রান্ত করে মাহমুদউল্লাহকে বিশ্রামের নামে দলের বাইরে রাখে। তামিমের সঠিক চিকিৎসা না করে তার ইনজুরি জটিল করে তোলে। ঘটনা পরম্পরা প্রমাণ করে সাজঘরের পরিবেশও সাকিবের প্রচ্ছন্ন সহযোগিতায় নোংরা করা হয়। ষড়যন্ত্রের বিষয় উপলব্ধি করে উপায় না দেখে তামিম আফগানিস্তান সিরিজের মধ্যেই হঠাৎ অবসরের ঘোষণা দেয়। 

বিষয়টি নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের ক্রিকেট অনুরাগী প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে তামিমকে অবসর ভেঙে বিশ্বকাপ খেলার জন্য ফিরিয়ে আনেন। তামিম ইংল্যান্ডে চিকিৎসার পর আন্তরিকতার সঙ্গে রিহ্যাব করে নিজেকে প্রস্তুত করে। তবে সততার সঙ্গেই নিজের পরিস্থিতি বিবেচনায় অধিনায়কত্ব থেকে সরে যাওয়া থেকে তামিম-সাকিবের শীতল সম্পর্কের কথা জেনেও বিসিবি দলের স্বার্থে নিরসনের কোনো উদ্যোগ নেইনি। বরং অশুভ মহল কিছু মিডিয়ার প্রতিবেদকের সহায়তায় নানা মনগড়া প্রতিবেদন প্রকাশ করে তিক্ততা সৃষ্টি করে। তামিম নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে হোম সিরিজে দুটি ম্যাচ খেলে। দ্বিতীয় ম্যাচে অনেকটা নিজের সেরা ফর্মেই ভালো ইনিংস খেলে। অশুভ মহল গুজব ছড়িয়ে তামিম বিশ্বকাপে পাঁচটির বেশি ম্যাচ খেলবে না-এমন কথা প্রচারিত করা হয়। বিসিবি সভাপতি বিষয়গুলোর সত্য-মিথ্যা যাচাই না করেই তামিমকে স্কোয়াডের বাইরে রেখেই দল নির্বাচন করে।

তামিম নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া সব বিষয় ভক্ত-সমর্থকদের সামনে তুলে ধরে। জানা যায়, তামিমকে দলে থাকতে হলে প্রথম ম্যাচ আফগানিস্তানের সঙ্গে না খেলার পরামর্শ দেওয়া হয় অথবা মিডল অর্ডারে খেলতে বলা হয়। এই ধরনের বিষয়গুলো খেলার আগে টিম ম্যানেজমেন্ট পরিবেশ পরিস্থিতি দেখে ঠিক করে। বাংলাদেশ দলের বর্তমান বাস্তবতা বিবেচনায় তামিম ইকবালের মোট প্রমাণিত আন্তর্জাতিক মানের ওপেনিং ব্যাটসম্যানকে লোয়ার অর্ডারে ব্যাটিং করার প্রস্তাব দেওয়া ধ্রষ্টতা। তামিম সংকট কারণেই পরিস্থিতির বিচারে তাকে বিবেচনা না করার কথা বলে। এই সুযোগের অপেক্ষায় ছিল বিসিবির অশুভ মহল। বলা হলো মেডিকেল রিপোর্ট অনুযায়ী, তামিম বিশ্বকাপে খেলার মতো অবস্থায় নেই। তামিম কিন্তু বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করেছে। প্রমাণ হিসেবে তিনি যে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে হোমে দুটি ম্যাচে পূর্ণ ফিট থেকেই খেলেছেন সেটাও টেনে আনেন। 

তামিমকে কিন্তু বিশ্বকাপ খেলার উপদেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। অবসর ভেঙে তামিম প্রধানমন্ত্রীর কথায় সায় দিয়ে ফেরেন ক্রিকেটে। সে সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাহবা কুড়ান। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তাহলে সে সময় কি বোর্ডের সঙ্গে না বুঝেই ওই উপদেশ দিয়েছিলেন? বা  প্রধানমন্ত্রীর ওই চাওয়াটুকু কি বিসিবি পূরণে ব্যর্থ হলো? এমন একটা প্রশ্ন কী দাঁড়িয়ে যায় না? অনেকেই এখানে তামিমের ফিট থাকার বিষয়টি তুলে আনবেন। কিন্তু তামিম তো হোমে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে দুটি ম্যাচেই খেলেছেন পুরোদমে। সেখানে তো তার ফিটনেস নিয়ে কোনো কথা ওঠেনি। তাহলে তামিম কেন এখন বাদ যাবেন, এ প্রশ্নটাই ব্যাপক ঘুরপাক খাচ্ছে। কেউ কেউ বলার চেষ্টা করছেন, যে তাহলে বিসিবি কী প্রধানমন্ত্রীর সেই উদ্যোগটাকে পাশ কাটানোর চেষ্টা করেছে?

তামিমকে গণভবনে ঢেকে অবসর ভাঙানোর বিষয়ে মাশরাফিও উপস্থিত ছিলেন। বিশ্বকাপের স্কোয়াড ঘোষণার পর মাশরাফিও প্রশ্ন তোলেন। তিনি এটাও বলেন, তাহলে সে সময় অবসর ভাঙানোর প্রয়োজন কী ছিল। কেন বিসিবি বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করলো না। মাশরাফি বলেছেন-তামিম নিজেই বলেছেন, নোংরা পলিটিকসের মধ্যে তিনি থাকতে চান না। কিন্তু ওই নোংরা পরিবেশ কীভাবে অনুভব করতে বাধ্য হলেন তামিম-রাজ্যের প্রশ্ন। 

বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন এটা সর্বজন সমাদৃত। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বোর্ডে ব্যাপক পরিবর্তন হলেও পাপনকে বিসিবি থেকে সরে যেতে হয়নি। যার অর্থ দায়িত্ব পালনে তিনি যথার্থ ব্যক্তি সরকারের কাছেও। কিন্তু সে সরকারপ্রধানের প্রত্যাশা এভাবে ওপেনভাবে প্রত্যাখ্যাত হচ্ছে না তো! বিষয়টি ভেবে দেখা উচিত। তামিমের গোঁজামিল দিয়ে বাদ দেওয়াটা কী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য একটু হলেও বিব্রত নয়? উচিত বিষয়টি হালকাভাবে না নিয়ে ঘটনার অনুসন্ধান ও ঘটনার আড়ালে কোনো ঘটনা আছে কি না সেটা খুঁজে বের করা। হাতুরাসিংহকে এখানে গুটি হিসেবে ব্যবহার করাও হতে পাওে বৈকি! কিন্তু এমন এক বিদেশি কোচকে ব্যবহার করে কেউ কেউ গোপনে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সর্বনাশ করছে না তো! সেটা খুঁজে বের করে জনসম্মুখে প্রকাশ করাও জরুরি।

শেয়ার করুন