২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৬:৩২:০১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


সরকারের উচিৎ পদত্যাগ করে জাতীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা দেয়া
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-০৪-২০২২
সরকারের উচিৎ পদত্যাগ করে জাতীয়   সরকারের হাতে ক্ষমতা দেয়া জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব


দেশ’কে আ স ম আবদুর রব

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেছেন, এ সরকারকে পরামর্শ দেওয়া প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে। এ সরকারের ধ্বংসাত্বক আগ্রাসী ভূমিকায দেশবাসী গত পঞ্চাশ বছর প্রত্যক্ষ করেনি। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় স্বার্থেও প্রয়োজনে তাই সরকারের উচিত পদত্যাগ করে জাতীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা।

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসু ভিপি -জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব এসব কথা বলেছেন সাপ্তাহিক দেশ পত্রিকার সাথে এক সাক্ষাৎকারে। 

রব  তিনি ১৯৭১ সালের ২রা মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক বটতলায় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন এবং ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম বিরোধী দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল গঠন করেন।

জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রবের কাছে জানতে চাওয়া হয় দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি’তি কেমন বলে মনে করেন?

আ স ম আবদুর রব,দেশের আর্থসামাজিক পরিস্থিতি ভয়াবহ। সরকার এক যুগ ধরে নির্বাচনের নামে প্রতারণার আশ্রয় গ্রহণ করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে আছে। সরকার অবৈধ ক্ষমতাকে ধরে রাখার জন্য রাষ্ট্রীয় প্রশাসন এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে অবৈধভাবে রাতের আঁধারে ভোট সম্পন্ন করার কাজে ব্যবহার করে রাষ্ট্রকে দলীয় সম্পদে পরিণত করেছে। বিরোধীদলের আন্দোলন সংগ্রামকে দমন-পীড়নের মাধ্যমে স্তব্ধ করা কূটকৌশলে সরকার জাতীয় রাজনীতিকে অবরুদ্ধ করে ফেলেছে।

রব বলেন, ভোটারবিহীন সংস্কৃতি, দুর্বৃত্তপনা, দুর্নীতি, রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় ইত্যাদির মধ্য দিয়ে সরকার জমিদারি প্রথা চালু করেছে।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি এখন দুর্বৃত্ত বৈশিষ্ট্যপূর্ণ রাষ্ট্রে রূপান্তর হয়েছে। সুতরাং জনগণের ভোটাধিকার, মানবাধিকার, আইনের শাসন এবং জীবনের নিরাপত্তাসহ সবকিছু সরকারের ইচ্ছাধীন করে ফেলেছে।

আ স ম আবদুর রব বলেন, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনে সারা বিশ্বে এখন বাংলাদেশ মায়ানমার উত্তর কোরিয়া ও বেলারুশের সমকক্ষ হয়েছে। তারপরও সরকার বিরতিহীনভাবে মিথ্যা বক্তব্য প্রচার করার মাধ্যমে রাষ্ট্রকে বিপজ্জনক জায়গা নিয়ে যাচ্ছে। 

তিনি বলেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতির বাইরে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। কয়েক কোটি মানুষ প্রতিদিন অভূক্তির শিকার হচ্ছে। কয়েক কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে, লক্ষ লক্ষ কর্মক্ষম শিক্ষিত যুবক বেকার। তারপরও সরকার উন্নয়নের জয়জয়কার বলে আত্ম প্রচারণা চালাচ্ছে। দৃশ্যমান উন্নয়নের নামে, ক্ষমতাকে ধরে রাখার স্বার্থে জাতীয় অর্থনীতিকে ক্রমাগত ঋণের জালে আটকে ফেলেছে। প্রতিটা মেগা প্রকল্প বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল, রাষ্ট্রীয় সম্পদ দুর্নীতি পাচার এবং লুটপাটে জনগণের ত্রাহি অবস্থা। কৃষক দিশেহারা। আইএলও বলেছে বাংলাদেশে প্রকৃত মজুরি কমেছে। কিন্তু সরকার মাথাপিছু আয় বেড়েছে বলে আত্মতৃপ্তি পাচ্ছে। যে দেশে শতকরা ৩০ ভাগ অতি দরিদ্র মানুষের হাহাকার।সেখানে রাষ্ট্রীয় টাকার অপচয় অপরাধের নামান্তর।

সরকার উন্নয়নের নামে জনগণের প্রতি মনোযোগ দেয়নি, সরকার মনোযোগ দিয়েছে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ফ্লাইওভার এবং মুজিববর্ষের দিকে। পরিবেশ দূষণে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮০দেশের মধ্যে ১৭৯ স্থানে। সরকারের উন্নয়নের যূপকাষ্ঠে গণতন্ত্র মানবতা ও পরিবেশের অপমৃত্যু হয়েছে।

এধরণের পরিস্থিতির জন্য দায়ী কে? আপনারা কি দায়ি নন?

রব বলেন, দায়ী হচ্ছে তারা, যারা রাষ্ট্রক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। যারা স্বাধীন দেশে উপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থাকে পুনর্বহাল করেছে তারাই বর্তমান অবস্থার জন্য দায়ী। যারা জনগণের ভোটাধিকারকে ধ্বংস করছে তারা বিদ্যমান সংকটের জন্য দায়ী। যারা গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করেছে তারা দায়ী। আমাদের কর্মকান্ডেরও আত্মসমালোচনা করতে হবে। আমরা কতটুকু দায়ী তাও নির্ধারণ করা উচিত।

সরকারের বিরুদ্ধে কোনো ধরণের আন্দোলন সফল হচ্ছে না কেনো? আপনাদের গ্রহণযোগ্যতা কমে গেছে জনগণের কাছে?

রব বলেন, সরকার জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন কিন্তু সরকার ক্ষমতায় টিকে আছে নিপীড়ন নির্যাতনের মাধ্যমে। সরকার টিকে আছে অবৈধ ক্ষমতার সুবিধাভোগী গোষ্ঠীর আশ্রয়-প্রশেেয়, সরকার টিকে আছে  বহিঃশক্তির অনুগ্রহভাজন হয়ে। ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে যুগে যুগে জনতার গণঅভ্যুত্থান জনতার বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছে এবং ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়।

প্রশ্ন হলো জনগণ আপনাদের ডাকে সাড়া দিচ্ছে না।অতীতে যারা ক্ষমতা ছিল তাদের শাসনামলও জনগণ দেখেছে।এখন এসব দল আবারও ক্ষমতায় গেলে দেশের অনেক উন্নতি হবে বা আরো ভালো হবে-এমন ধারণা জনগণের নেই।

রব বলেন, হ্যাঁ যারা ক্ষমতায় ছিল সরকার পরিচালনা করেছেন তাদের কারো অতীত ধোঁয়া তুলসী পাতা নয়। কোন শাসকের কৃতকর্মই জনগণ ভুলে যায় না। তাদেরকে অতীতের ভুল থেকে বেরিয়ে এসে রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিতে হবে, রাষ্ট্র মেরামতের সুস্পষ্ট কর্মসূচি দিতে হবে। কিন্তু বিদ্যমান বাস্তবতায় জাতীয় জাগরণের লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের বিকল্প নেই।

প্রশ্ন ছিলো এ সরকার কি দেশের উন্নয়ন করছে না? দেশে বিদেশে কি দেশের সন্মান বাড়াচ্ছে না?

রব বলেন, দেশের জনগণের ট্যাক্সের টাকায় আরো ব্যাপক উন্নয়ন করা যেত, যদি পরিকল্পনা গ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জনগণের বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় গণমুখী প্রকল্প গ্রহণ করা যেত। যদি দুর্নীতি অপচয় এবং ব্যয়বহুল বিলাসী প্রজেক্ট বাতিল করে পরিবেশবান্ধব এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিক প্রকল্প গ্রহণ করা যেত তাহলে দেশের অবস্থা আরো অনেক বেশি ইতিবাচক হত।

ভোটারবিহীন নির্বাচন, গুম-হত্যা মানবাধিকার লঙ্ঘনে আধ্যাত্মিক বিশ্বে রাষ্ট্রের মর্যাদা দারুণভাবে ক্ষুন্ন হয়েছে।

এসরকারকে আপনার পরামর্শ কি?

রব এব্যাপারে বলেন, এ সরকারকে পরামর্শ দেওয়া প্রয়োাজন ফুরিয়ে গেছে।  স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় স্বার্থেও প্রয়োজনে সরকারের উচিত পদত্যাগ করে জাতীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা।

প্রশ্ন করা হয় আপনাদের জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে কিছু বলেন।

রব বলেন, ধ্বংসপ্রাপ্ত রাজনৈতিক ব্যবস্থা, চরম অবনতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, সংবাদ পুরনো রাজুদা পরিবেশ এবং রাজনৈতিক প্রক্রিয়া যেখানে অধঃপতিত সেখানে দীর্ঘদিনের স্বৈরাচারের পতনের পর জাতীয় ঐক্যমতের  ভিত্তিতে জাতীয় সরকার' গঠন করা হবে রাজনৈতিকভাবে সঠিক কর্তব্য। সরকার পতনের পর জাতীয় নৈরাজ্য ও রক্তপাত পরিহার করার জন্য জাতীয় সরকার ছাড়া অন্য কোন বিকল্প নেই। জাতীয় সরকার  নিরপেক্ষ নির্বাচন, সংবিধান সংস্কার,ন্যায়বিচার, মানবাধিকারের নিশ্চয়তা, রাষ্ট্র মেরামতসহ এই পাঁচটি মৌলিক করণীয় সম্পাদন করবে।



 

শেয়ার করুন