২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ১০:৫৮:৫১ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


জাপা’র রহস্যময় আচরণে দুশ্চিন্তায় আ.লীগ
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-১২-২০২৩
জাপা’র রহস্যময় আচরণে দুশ্চিন্তায় আ.লীগ


কি করছে সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি? কি তাদের উদ্দেশ্য? দলটি আগামীতে কি করতে পারে? নির্বাচনের আগে কিংবা পরে দলটির সত্যিকার ভূমিকা কি হবে? আগামী দিনগুলিতে অতীতের মতো জাপা’কে কি রাখা যাবে আওয়ামী লীগের হাতের মুঠোয়? জাপাকে নিয়ে এমন নানান ধরনের টেনশনে আওয়ামী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ? এসব কারণে জাপা’র হুমকি-ধামকিও আমলে নিচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ? একিই সাথে পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের আচরণও রহস্যজনক ঠেকছে তাদের কাছে?

সন্দেহের শুরু যেভাবে

জাপা’র শীর্ষ নেতারা বেশ তোড়জোর আর কণ্ঠ উঁচু গলায় বলেই যাচ্ছি তারা এই সরকারের অদীনে নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে ৩০ নভেম্বর। তারাও সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ না হলে নির্বাচনে যাবে না-এমনটাই আওয়াজ ছিল তাদের দলের পক্ষ থেকে। কিন্তু মেষমেষ অদৃশ্য কোনো চাপের কথা বলে দলটি নির্বাচনে যায় সবাইতে চমকে দিয়ে। প্রশ্ন হচ্ছে আসলে কি চাপে পড়েই দলটি নির্বাচনে অংশ নিয়েছে? খোঁজ নিয়ে জানা গেছে গেছে, দলটি চাপের ভান করেছে। গণমাধ্যমের বেশ কয়েকজন প্রতিনিধির সাথে কথা বলে পাওয়া গেছে এব্যাপারে কিছু তথ্য। তারা দেশ প্রতিনিধিকে বলেন, সেদিন জাপা আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদে সংসদের যাবার ব্যাপারে ঘোষণা দেয় সেসময় তাদের কোনো পর্যায়ের নেতার চোখেমুখে মধ্যে ক্ষমতাসীন মহলের চাপ বা অন্য কোনো ধরনের হস্তক্ষেপের নমুনা দেখা যায়নি।

রওশনকে আউট করতেই কি জাপা’র এমন নাটক?

অনেকে মনে করেন যেদিন সংবাদ সম্মেলন করে জাপা নির্বাচনে যাওয়া ঘোষণা দেয় জাপা অর্থাৎ সেদিন বিকেল সোয়া ৩টায় রাজধানীর বনানীতে দলীয় চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে জাপা মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নুকে বেশ ফুরফুরে মেজাজেই দেখা গেছে। এমনকি বেশ উৎসাহী মনে হয়েছে অনেকের কাছে। কোনো টেনশন বা মুখ গোমড়া মনে হয়নি। এটা ঠিক ঘোষণার দিনে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে ঘটনাস্থলে দেখা যায়নি। এমন মুহূর্তে দলের মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নুর পাশে না দেখা অনেক প্রশ্ন দেখা দেয়। তবে এব্যাপারে জানা যায় পুরো বিষয়টি হচ্ছে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের রাজনৈতিক কৌশল। তিনি এবং তার অনুসারীরা দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদের দাপটে কাহিল ছিলেন। আর তিনি সুযোগও খুঁজছিলেন কিভাবে রওশন এরশাদকে ঘায়েল করা যায়। ধারণা করা হচ্ছে জিএম কাদের ও তার অনুসারিরা সে-ই সুযোগটিই এবার কাজে লাগিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অত্যন্ত নাজুক মুহূর্ত কাজে লাগিয়ে। কেননা এই সময়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী রওশন না কাদের এমন বিবাদে না গিয়ে বর্তমানে অপেক্ষাকৃত ক্ষমতাধর জিএম কাদেরের পক্ষেই থেকেছে। ছুড়ে ফেলে দিয়েছেন সাবেক সেনাপ্রধান ও রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের স্ত্রী রওশনকে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিভিন্ন সময়ে বিশেষ করে অতীতে টালমাটাল অবস্থায় সাবেক সেনাপ্রধান ও রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের স্ত্রী রওশনের বলিষ্ট সহযোগিতাকেও ভুলতে কুন্ঠা বোধ করেনি। অনেকে মনে করে থাকেন বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের বর্তমানে প্রতিবেশি একটি দেশের টনিকে অত্যন্ত চাঙ্গা ও প্রভাবশালী। এই বিষয়টি টের পেয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ রওশন-কাদেরের বিবাদে নিজেদের দূরে রেখেছে। 

এখন জাপার ভূমিকা কি?

শেষমেষ আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৮৯টিতে প্রার্থী ঘোষণা করেছে জাতীয় পার্টি। কিন্তু অতি সম্প্রতি শীর্ষ নেতাদের বিভিন্ন ধরনের বক্তব্যে নানান ধরনের সন্দেহ ডানা মেলছে। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে সন্দেহের জন্ম দিয়েছে। ৪ ডিসেম্বরের জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, নির্বাচন কমিশন এবং সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে সুষ্ঠু পরিবেশ হবে। আমরা সেই সুষ্ঠু পরিবেশ হওয়ার জন্য অপেক্ষায় আছি। তিনি আরও বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হবে সে ব্যাপারে তার দল এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত না। গণমাধ্যমের খবরে দেখা গেলো যে, সত্যিকারের বিরোধী দল হিসাবে জাতীয় পার্টির নিজেদের প্রমাণ করার মোক্ষম সময় এখন-আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের জবাব দিয়েছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু। তিনি বলেছেন, তাহলে তাদের তো (আওয়ামী লীগ) ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে, পদত্যাগ করে এসে নির্বাচনে আসা উচিত ছিল। ওনারা তো এখন ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করছেন। সরকারে আছেন, মন্ত্রী আছেন। ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করবেন। আর বলবেন জাতীয় পার্টিকে প্রকৃত বিরোধী দল হওয়ার জন্য। সুবিধাজনক অবস্থায় থেকে এ রকম অনেক কথাই এখন ওনারা বলছেন, বলবেন। আমার তো মনে হয় আমার জায়গায় (বিরোধী দলে) থাকলে উনি নির্বাচনই করতেন না।’ প্রশ্ন হচ্ছে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নুর এমন বক্তব্য কেন দিলেন? তার এমন বার্তা কোন পক্ষে যাবে? যেখানে বলা সারা বিশ্ব বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে আছে এখানে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। যেখানে বর্তমানে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে দুই মাসের মিশন নিয়ে ঢাকায় পৌঁছেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) চার সদস্যের নির্বাচনী কারিগরি প্রতিনিধি দল। যে সময়ে জাতিসংঘ বলে দিয়েছে তারা এবার বাংলাদেশে পর্যবেক্ষক পাঠাবে না। ঠিক সে সময়ে নির্বাচন নিয়েও ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে জাপা নেতার এমন চোখা বক্তব্যকে বিভিন্ন ব্যাখা করছে রাজনৈতিক মহল। তাদের কারো কারো মতে, সব আসনে নৌকা নিয়ে জাপায় শঙ্কা ও ক্ষোভ আছে। তাছাড়া সংসদে বিরোধী দল হতে অনেক বেশি আসর নিয়ে জিতে আসতে চাইছে দলটি। ধারণা করা হচ্ছে, দরকষাষির জন্য ক্ষমতাসীনকে চাপের রাখতে হয়তো জাপা এমন করছে। কিন্তু জাপা’র নেতারা তো এখন বলে যাচ্ছে তারা সাবালক হয়ে গেছে। হুঙ্কার দিয়েছে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতা নয়, সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ চায় জাতীয় পার্টি (জাপা)। সেক্ষেত্রে আসলে জাপা নেতারা কেনো চোখা বক্তব্য রাখছেন তা পরিস্কার না। 

তাহলে কি চায় জাপা? 

আসন সমঝোতা চায় না চায় সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ জাপা? অবাধ সুষ্ঠু হলে জাপা বেশি আসন পাবে? এমন ধারণা জাপাকে দিয়েছে কে? সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি’র ভোট ব্যাংকে জাপা হাত দিবে? বেশি আসন পাবে? শক্তিশালী বিরোধী দল হবে? প্রশ্ন হচ্ছে এমন টনিক কে দিলো? ভারতর সফর করে কি জি এম কাদের কি বাড়তি টনিক নিয়ে এসেছেন? তা- না হলে কেনইবা নির্বাচনে অংশ নিলেও পরিবেশ নিয়ে এখনও সংশয় রয়েছে । কেনো এমন অভিযোগ করা হচ্ছে খোদ ক্ষমতাসীন সরকারী দলটির অন্যতম শরিক জাপা’র পক্ষ থেকে? কেন বলা হচ্ছে ‘নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু হবে, সে ব্যাপারে পুরোপুরি আস্থা আসেনি। কিন্তু আমরা আশ্বাস পেয়েছি। নির্বাচন কমিশন এবং সরকারের পক্ষ থেকে সুষ্ঠু পরিবেশের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। পরিবেশ সুষ্ঠু হওয়ার অপেক্ষায় আছি। ভোটার আসবে- এমন আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এটাই নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রথম ও শেষ কামনা।” প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে জাপা’র সেই শেষ আশা পূর্ণ না হলে কি কঠোর কেনো সিদ্ধান্ত নেবে? সমঝোতা হলেই ভোট হবে, নইলে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবে জাপা? নাকি অন্য কিছু করবে জাপা? দলের একটি সূত্র জানায়, গত আগস্টে চার দিনের ভারত সফরে গিয়েছিলেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের। সফল শেষে ঢাকায় ফিরে জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের একটু অন্যরকম হয়ে গেছেন। মনে হচ্ছে তার নিজস্ব পরিকল্পনা গুছিয়েছেন তিনি। আবার কারো মতে, দেশটি সফর করে জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের বাড়তি টনিক পেয়েছেন। আবার ভারত থেকে আসার পরে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠক করেছে জাতীয় পার্টির সাথে। যা এই সময়ে ছিলো উল্লেখ করার মতো। অনেক মনে করেন, এত্তোসব টনিকেই জাপা এখন অনেক বলিয়ান। আলোচিত হচ্ছে সেই ক্ষমতা বলেই এখন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের দলের পৃষ্ঠপোষক দাবিদার রওশনতে ছুঁড়ে ফেলেছেন। এমনকি রওশনের ব্যাপারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শীর্ষদেরও পরামর্শও গুরুত্ব দিচ্ছেন না? ভারত-আমেরিকার যৌথ টনিকে আগামীতে জাপা আসলে কি আচরণ করে বা প্রতিবেশী দেশটি থেকে আসলে কি ম্যাসেজই-বা নিয়ে মাঠে নেমেছে সে দুশ্চিন্তায়ই পেয়ে বসেছে ক্ষমতাসীনদের শীর্ষ পর্যায়ে। এমন খবরই পাওয়া যাচ্ছে রাজনৈতিক মাঠ থেকে।

শেয়ার করুন