২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ৬:২১:১১ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


মনোবল অটুট থাকবে তো বিএনপির?
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-০১-২০২৪
মনোবল অটুট থাকবে তো বিএনপির?


নির্বাচন হয়ে গেছে যথাযথভাবেই। বড় ধরনের সহিংসতা ছাড়াই শেষ হওয়া নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতা মসনদ সাজাতে ব্যস্ত। দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে এখন প্রশান্তি। আবারও পাঁচ বছরের ম্যান্ডেট পেয়ে গেছে। নিজ কর্মে এখন তারা মন দেবে কয়দিন বিশ্রাম শেষে। এরপর নতুন কর্মসূচিও দিয়েছে দলটি। এতে ১০ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করবে তারা। 

কিন্তু ঠিক উল্টো চিত্র বিএনপিসহ মিত্র দলসমূহের মধ্যে। হতাশার সাগরে ভাসতে বসেছে তারা। আগেই জানতেন এমন একটা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। রেজাল্টও। তবু একটা শঙ্কা কাজ করছিল, এই কিছু একটা যদি হয়। কিন্তু কিছুই হয়নি। বরং নির্বাচনের যে একটা উত্তপ্ত পরিবেশ, সেটা না থাকলেও শীতের হিমশিতল আবহাওয়ায় অনেকটা নিরুত্তাপ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ম্যান্ডেট নিয়ে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। অনেকেই এমন নির্বাচনকে জনগণবিমুখ নির্বাচন বলতে চান। কিন্তু আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও পাল্টা যে জবাব-এমন একটা নিরুত্তাপ নির্বাচন বিএনপিও করেছিল, যা ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন নামে অভিহিত। কোন উদ্দেশ্যে করেছিল সে প্রেক্ষাপট সবারই জানা। তবু নির্বাচনটা কিন্তু যথাযথই হয়েছিল। বিরোধীপক্ষের কেউ কেউ ভেবেও ছিলেন, এই বুঝি বিএনপি আর ক্ষমতা থেকে সরবে না। কিন্তু না। কথা মোতাবেক বিএনপি সংসদে কিছু জরুরি কাজ করে সটকে পড়ে আরেকটি নির্বাচনের প্রেক্ষাপট তৈরি করে দিয়ে।

আওয়ামী লীগও তেমন একটা নির্বাচনই করলো। কিন্তু সমস্যা অন্যখানে। দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকাই শুধু নয়, বিএনপির নেতাকর্মীরা এ দীর্ঘ সময়ে যেসব মামলা-মোকদ্দমার শিকার যাতে করে অভাবনীয় দুঃখ-দুর্দশায় পর্যবেসিত তারা। কথাই রয়েছে, নেতাকর্মীরা আদালতপাড়া থেকে বাড়ি ফেরার সুযোগ পান না। হাজিরার পর হাজিরা। যারা কারাগারে। তারা কাটাচ্ছেন বছরের পর বছর। যারা মাঝেমধ্যে মুক্তি পান, তারা আবারও আটক হন অন্য মামলায়। এক কথায় ছাড় নেই। 

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পূর্বে দেওয়া তথ্যমতে, অন্তত ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলার খড়গ লক্ষাধিক। এসব নেতাকর্মীদের পরিবারের কী অবস্থা। অভাবনীয় দুর্দশায় পর্যবেসিত। আবারও পাঁচ বছর ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ মানেই পূর্বধারাতেই থাকছেন এরা। কেননা ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বিএনপি একটি সন্ত্রাসী দল’। যদি সেটাই হয়, তাহলে তাদের নেতাকর্মীদের মুক্তি দিয়ে দেশে অরাজকতা তৈরির সুযোগ দেওয়া যথার্থ কী। সেটা দেবেন তারা, মোটেও না। 

এমন দুশ্চিন্তা এখন তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে এমনকি তাদের পরিবারবর্গের মধ্যেও। আগেও ছিল, কিন্তু দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের রেজাল্ট হয়ে যাওয়ার পর এ শঙ্কা আবার নতুনভাবে চেপে বসেছে ওইসব ভুক্তভোগীর ঘাড়ে। কী হবে। ভবিষ্যৎ কি? আজানা এ আশঙ্কায় ঘুম হারাম হওয়ার উপক্রম। এতো কিছুর পরও বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মনোবল অটুট থাকবে তো- এ প্রশ্নটা উঠতে শুরু করেছে। 

বিএনপি দীর্ঘদিন থেকেই অহিংস আন্দোলন করে আসছিল। এরপরও ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর থেকে অন্তত কুড়ি হাজার নেতাকর্মী আটক হয়ে কারাগারে। যার মধ্যে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস, মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ একঝাঁক শীর্ষ নেতৃবৃন্দও রয়েছেন। বিএনপির মতো দেশের বৃহৎ এক রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় গত ২৮ অক্টোবর থেকে তারাবদ্ধ। শীর্ষ নেতৃবৃন্দও কারাগারে। অথচ দেশে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন। আবারও ক্ষমতায় বসছে আওয়ামী লীগ ৫ বছরের জন্য। তাহলে এ বিএনপির ভবিষ্যত কী। নেতাকর্মীদেরও ভবিষ্যৎ কি-এ আলোচনা এখন সর্বত্র। ইতিমধ্যে বিএনপি আবার কর্মসূচি দিয়েছে। এবার গণসংযোগ। মঙ্গলবার ও বুধবার দেশ ব্যাপী গণসংযোগ কর্মসূচি দিয়েছে। এখানে অবশ্য নতুন দাবি। নতুন নির্বাচনের দাবি এবং সেটা হতে হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীন। 

অনেকেই বলতে চান, নির্বাচন মানুষ বর্জন করেছে। কিন্তু এটাও বাস্তব প্রধান নির্বাচন কমিশন যখন বলছেন ৪১.৮ শতাংশ ভোট পড়েছে, তখন ওটাই বাস্তবতা এবং নির্বাচন আয়োজন, নির্বাচন অনুষ্ঠান, নির্বাচন সফল সমাপ্তি যেমন বাস্তবতা ফলাফলও যথার্থই। ফলে এ নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলে লাভ নেই। সে সুযোগটা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ রাখেনি। 

মানুষ এখন জানতে চায় আওয়ামী লীগ তো তাদের কাজটা করেই ফেলেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা মিত্রদের শত নির্দেশনা উপেক্ষা করেই। এরপর ওইসব দেশকে যেভাবেই হোক ম্যানেজ করতে পারবে আওয়ামী লীগ এ মনবল নিয়েই নির্বাচনটা তারা করেছে। কিন্তু বিএনপির ভবিষ্যৎ কি। বিএনপি কোনো জোটে না থাকলেও তাদের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে গ্রুপে রয়েছে জামায়াতসহ অন্যান্য দল। তবে নেতাকর্মী আটক মামলায় জর্জরিত হওয়ার দিক থেকে সবচে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বিএনপিই। 

বিএনপি ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে তাদের আন্দোলন যথাযথভাবে চলবে পূর্বের মতোই। কিন্তু এখন নতুন করে এ আন্দোলনে কারা মাঠে নামবেন, কারা তাদের কর্মসূচি সফল করবেন। শীর্ষ নেতৃবৃন্দের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে আর কত নিগৃত হবেন তারা। সব মিলিয়ে কঠিন এক বাস্তবতার মুখে দলটি। তবে হ্যাঁ, যদি কোনো আশার আলো দেখতে পেতেন যে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের একটা আভাস তারা দেখতে পাচ্ছেন বিভিন্ন দিক থেকে। তাহলে হয়তো সব কষ্ট হজম করে মাঠেই থাকতেন তারা। কিন্তু সেরকম কোনো পরিস্থিতিতে নেই বাংলাদেশ। ইতিমধ্যে বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের বেশ কয়েক জন এসে অভিনন্দন জানিয়ে গেছেন শেখ হাসিনাকে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভারত, রাশিয়া চীন, পাকিস্তানসহ ১১টি দেশ। দিয়েছেন সহযোগিতার আশ্বাস। অন্যদিকে রেমিট্যান্স আসছে। অর্থনীতির চাকা কিছুটা দুর্বল হয়তো। সেটাও এখন সরকার নতুন ফরমুলায় চাঙ্গা করার চেষ্টা চালাবেন। সরকার পরিচালনায় তাদের পূর্ব মেয়াদের দুর্বলস্থানগুলো চিহ্নিত করে উদ্যোগী হবেন। 

সর্বোপরি নির্বাচিত একটি সরকার আবারও পাঁচ বছরের জন্য। এমন সরকারকে চাইলেই কেউ টলাতে আসবে বলে মনে হয় না। বরং সখ্য স্থাপন করে দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ উদ্ধারে চেষ্টা চালাবে বন্ধুপ্রতিম সব দেশ এটাই তো বাস্তবতা। নয় আর কী!

শেয়ার করুন