২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৯:৩৪:৪২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


শীত এলে লোডশেডিং কী কমবে?
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-১০-২০২২
শীত এলে লোডশেডিং কী কমবে?


জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীর কথায় অসহায়ত্বের করুণ সুর। সম্প্রতি তিনি বলেছেন ‘মধ্যরাতেও লোডশেডিং নিয়ে আপাতত কিছু করার নেই। সবাইকে আরেকটু কষ্ট করতে হবে। জ্বালানি তেল ও গ্যাস সংকটের কারণে বিদুৎকেন্দ্রগুলো চালানো যাচ্ছে না।’ পরিস্থিতিটা এমন পর্যায়ে গেছে যে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী এখন অনেকটা প্রকৃতির ওপরই পরিস্থিতি ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি আরো বলেছেন, ‘শীত এলে বিদ্যুতের চাহিদা কমবে। তখন হয়তো কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যাবে।’ বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী এর আগে এই অক্টোবরে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে জানিয়েছিলেন।

এখন নভেম্বর নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে মনে করছেন। কিন্তু সহসাই বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই। তবে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শীতের কারণে বাসাবাড়িতে বিদ্যুতের চাহিদা কিছুটা কম থাকে। সেই আশায় হয়তো বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু আসলেই কী। বিদ্যুৎ স্বাভাবিক হওয়ার কী কোনো আদৌ লক্ষণ আছে? অথচ একই মানুষ কিন্তু লক্ষ লক্ষ টাকা চাঁদা তুলে এরশাদ আর্মি স্টেডিয়ামে কনসার্ট করেছেন। 

এইতো ক’মাস আগে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়কে অনুপ্রাণিত করেছেন, ১৫ হাজার, ২০ হাজার, ২৫ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতা অর্জন উপলক্ষে হাতিরঝিলে বর্ণিল আলোকছটার উৎসব করতে। এখন জ্বালানি সংকটে ১২ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন করতেই হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ! কোভিড অতিমারীর অভিঘাত এবং ইউক্রেন যুদ্ধের অজুহাত দিয়ে পার পাওয়া যাবে না। নিজেদের জ্বালানি আহরণ আর উত্তোলনকে উপেক্ষা করে আমদানিকৃত জ্বালানিনির্ভরতার দিকে দ্রুত ধাবমান হওয়া বুমেরাং হয়েছে। 

বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন থেকেই সতর্ক করে আসছিলো। কানে তোলেনি অর্বাচীন পলিসি মেকার্স। নিজেদের গ্যাস উৎপাদন দ্রুত নিঃশেষ হবার পথে, গ্যাস আহরণ এবং উন্নয়ন প্রয়াস সীমিত। বিকল্প জ্বালানি কয়লা নিয়ে দিবানিদ্রা। আগুন ধরা বিশ্ববাজার থেকে জ্বালানি আমদানি বাংলাদেশের সাধ্যের অতিরিক্ত। জ্বালানি সংকটে বিপর্যস্ত সারা দেশ। একটি গণতান্ত্রিক সরকারের উপর্যুপরি তৃতীয় টার্মের শেষ পর্যায়ে কেন এমন হবে? কেন জ্বালানি নেই, কেন হাহাকার, কেন কৃচ্ছ্রতাসাধনের কথা। কেন ধর্মীয় উপাসনাগারে এসি না চালানোর পরামর্শ বা নির্দেশনা দেয়া। কেন সঞ্চালন ব্যবস্থা নাজুক? জনগণ কৈফিয়ত চাইতেই পারে। 

২০১০ তৎকালীন পরিস্থিতি বিবেচনায় দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহ আইনের আদলে টেন্ডারবিহীন সেবা এবং উপকরণ ক্রয় সাময়িকভাবে গ্রহণযোগ্য হলেও দীর্ঘদিন এটি চালু রেখে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু কেন এহেন বেহাল অবস্থা? দুষ্ট লোকেরা বলে, শুধুমাত্র জ্বালানি বিদ্যুৎ সেক্টরে দুর্নীতি করে একশ্রেণির মানুষ বিপুল বিত্ত-বৈভবের অধিকারী হয়েছেন। বিদেশে বিপুল অর্থ পাচার করেছেন। সংকট জিইয়ে রেখে এমনি কোনো কোনো মহলকে অযাচিত সুবিধা দেয়ার পাঁয়তারা করা হচ্ছে বলেও কিছু মানুষ মনে করে।

ফলে এমনি এক জ্বালানি সংকটে শীত আসলেই বাংলাদেশের সংকট মিটে যাবে ভাবার কোনো কী অলৌকিক যুক্তি বা সিস্টেম আছে? বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলায় দেশজুড়ে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের সিদ্ধান্ত সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয় গত ১৮ জুলাই। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, গত ১৯ জুলাই থেকে দেশজুড়ে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং শুরু হয়। চলতি অক্টোবর থেকে লোডশেডিং কমবে বলে জানিয়েছিল সরকার, কিন্তু তা হয়নি। বরং লোডশেডিং আরো বেড়েছে। বিশ্ববাজারে জ্বালানির মূল্য বাড়বে বই কমবে না। শীতে বিদ্যুৎ চাহিদা সামান্য কমতে পারে। কিন্তু এখন যে লোডশেডিং হচ্ছে, শিল্পকলকারানা বন্ধ রেখে উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটছে। শীতে কী ওই ঘাটতি মেটানো সম্ভবপর হয়ে যাবে? আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লা, গ্যাস এবং তরল জ্বালানি মূল্য বাড়তেই থাকবে। কারণ ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব এখানে পড়বেই। কবে ওই দুইয়ের মধ্যে যুদ্ধ থামবে তার কী কোনো গ্যারান্টি আছে। নিত্য নতুন যুদ্ধের কৌশল বাড়াচ্ছে দুই দেশ। একের ওপর অন্যের ধ্বংসাত্মক মনমানসিকতাও বাড়ছে দিনের পর দিন। সেখানে যুদ্ধ থামার কোনো লক্ষণ নেই। ফলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে হাহাকার বাড়বে এটাই ধরে নেয়া যায়। কিন্তু এমন পরিস্থিতি সামাল দেয়ার কী কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ হচ্ছে। অপরদিকে নিজেদের গ্যাস উৎপাদন কমতেই থাকছে। 

আগামী বছর রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা এবং সংঘাত বাড়ার ইঙ্গিত মিলছে। জ্বালানি সংকটের কারণে খোদ রাজধানী ঢাকায় এখন ৪-৫ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। রাজধানীতে কোথাও এর চেয়ে বেশি অর্থ সাত-আট ঘণ্টা লোডশেডিং হতে পারে বলে খবর বেরিয়েছে। ঢাকার বাইরের অবস্থা খুবই নাজুক। শিল্পকারখানার মালিকরা সত্যিকার অর্থেই উদ্বিগ্ন। এমতাবস্থায় বাংলাদেশের রফতানি আয় কমে গেলে বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয় সীমিত হয়ে পড়বে। 

একইসঙ্গে ডলার মূল্যমান বৃদ্ধি পাওয়ায় আমদানি ক্ষেত্রেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়বে। মূল্যস্ফীতি অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি করবে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ২০২৩ সালে কঠিন সময়ের ইঙ্গিত দিয়েছেন। বাংলাদেশ অপ্রয়োজনীয় খাতে বিপুল বিনিয়োগ করেছে। অনেক ব্যাংক দেউলিয়া হবার পথে, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর জমানো টাকা সরকার তুলে নিয়েছে। 

জ্বালানি উত্তোলন ক্ষমতা সীমিত হবার মূল কারণ পেট্রোবাংলা কোম্পানিগুলোর আর্থিক দৈন্যতা এবং আমলাতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণে সক্ষমতা হারিয়েছে। তিতাস, বাপেক্স, জিটিসিএল রুগ্ণ হয়ে পড়েছে। পেট্রোবাংলা কোম্পানিগুলোর মহাদুর্নীতির খবর মিডিয়ায় আসছে। এগুলোর জন্য মন্ত্রণালয় বা প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার দায় কম নয়।  কোন বিবেচনায় বাপেক্সকে অবাস্তব প্রকল্প দিয়ে পঙ্গু করা হলো? কোন বিবেচনায় জিটিসিএলকে অনেক অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পে বিনিয়োগে বাধ্য করে আর্থিকভাবে নাজুক পরিস্থিতিতে ফেলা হলো? 

তিতাস গ্যাসের লক্ষ লক্ষ অবৈধ সংযোগের জন্য কি মন্ত্রণালয় বা পেট্রোবাংলার দায় নেই? কি বলবেন, মাননীয় জ্বালানি উপদেষ্টা মহোদয়, কি বলবেন জ্বালানি সেক্টারের কর্তাব্যক্তিরা? শীত আসছে সহসাই, চলেও যাবে। এরপর গ্রীষ্ম আসবে। কিন্তু জ্বালানি সংকট কী এই ষড়ঋতুর মারপ্যাঁচে কমে যাবে? মনে তো হচ্ছে না।

শেয়ার করুন