২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৮:৪৯:৪১ পূর্বাহ্ন


দেশকে বজলুর রশীদ ফিরোজ
বাম গণতান্ত্রিক জোট সরকার বিরোধী আন্দোলনে মাঠে
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৫-০১-২০২৩
বাম গণতান্ত্রিক জোট সরকার বিরোধী আন্দোলনে মাঠে বক্তব্য রাখছেন বজলুর রশীদ ফিরোজ


বাম জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেছেন, আমরা বাম গণতান্ত্রিক জোট সরকারবিরোধী আন্দোলনে আছি। আমরা বলেছি,  সকল বিরোধীদল যারা প্রকৃত গণতন্ত্র, ভোটাধিকার ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাসী, তারা যার যার অবস্থান থেকে আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে যান। আন্দোলনের মাঠে, আন্দোলনের পরিস্থিতিই বলে দিবে কখন কার সাথে যুগপৎ বা একমঞ্চে আন্দোলন হবে। আমরা আন্দোলনের জন্য কারো ডাকের অপেক্ষায় ছিলাম না, এখনো নেই। আমরা মাঠে ছিলাম, মাঠেই আছি। 

রাজনৈতিক মাঠে দেশের প্রায় সবক’টি দলই এখন একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। এই অবস্থায় বাম গণতান্ত্রিক জোট আসলে কি করছে বা করতে যাচ্ছে তা নিয়ে এবার আমেরিকা থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদের সাথে মুখোমুখি হয়েছেন জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ।

দেশ: দেশে একটি সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবিতে বাম জোট কি রাজনৈতিক অঙ্গনের মাঠে নেই। জোটের পক্ষ থেকে কি কি আন্দোলন কর্মসূচি নেয়া হয়েছে?

বজলুর রশীদ ফিরোজ: একটি অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন একটি গণতান্ত্রিক রজনৈতিক সংস্কৃতি। যেটার অভাব রয়েছে আমাদের দেশে। গত ৫১ বছরে দেশে ১১টি জাতীয় নির্বাচন হয়েছে তার মধ্যে ৪টি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে এবং ৭টি দলীয় সরকারের অধীনে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত ৪টি নির্বাচন আপেক্ষিক অর্থে সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে জনগণ মনে করে। দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত ৭টি নির্বাচনের কোনটিই অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়নি। বিশেষ করে ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচন, যেখানে ১৫৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছিল। এবং ২০১৮ সালের নিশি ভোটের নির্বাচন। এই অভিজ্ঞতা থেকেই দেশবাসী মনে করে বর্তমান দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্ভব নয়। তাছাড়া আমাদের দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাও ত্রুটিপূর্ণ। এখানে টাকার খেলা, পেশিশক্তির দৌরাত্ম্য ও সাম্প্রদায়িকতা-আঞ্চলিকতার প্রভাবও নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার পথে বড় বাধা এবং জাতীয় সংসদে সকল মত-পথের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে জাতীয় নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি চালু করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ফলে আমরা বাসদ ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের পক্ষ থেকে দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেয়া, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি চালু, কালোটাকা-পেশিশক্তি, সাম্প্রদায়িকতা দূরসহ নির্বাচনি ব্যবস্থার আমূল সংস্কার তথা, ভোট-ভাত ও গণতান্ত্রিক অধিকারের আশু ১০ দফা দাবিতে আন্দোলনে আছি। এই দাবিতে ঢাকাসহ সারাদেশে জেলা ও বিভাগীয় শহরে সমাবেশ, পদযাত্রা, মিছিলের কর্মসূচির মাধ্যমে জনগণকে সম্পৃক্ত করে তীব্র গণআন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। ইতিমধ্যে ৮-১০টি জেলা ও বিভাগীয় শহর এবং ঢাকায় উক্ত দাবিতে কর্মসূচি পালিত হয়েছে এবং এটা অব্যাহত আছে। এ ছাড়া প্রতি মুহূর্তেই সরকারের বিভিন্ন গণবিরোধী সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ যেমন গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিরুদ্ধেও আমাদের আন্দোলন কর্মসূচি চলমান আছে।

দেশ: বলা হচ্ছে আপনারা আপনাদের এদাবি আদায়ে ঐকবদ্ধ এমনকি যুগপৎ আন্দোলন করছেন না। এর কারণ কি? বাম জোট কি একলা চলো নীতিতে বিশ্বাসী?

বজলুর রশীদ ফিরোজ : দেখেন গত ৫১ বছরে কখনো রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার, কখনো সংসদীয় পদ্ধতির সরকার, কখনো সামরিক শাসনের অধীনে দেশ পরিচালিত হয়ে আসছে। কিন্তু শোষণ-বৈষম্যের অবসান হয়নি। কারণ দেশ চলেছে পুঁজিবাদী পথে। মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনার বিপরীতে দেশ পরিচালনা করায় দেশের এই হাল দাঁড়িয়েছে। তাই আমরা মনে করি পুঁজিবাদী শোষণমূলক ব্যবস্থা বহাল রেখে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। ফলে আমরা যেমন বর্তমান আওয়ামী ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের অবসান চাই, তেমনি শোষণ, বৈষম্যমূলক পুঁজিবাদী ব্যবস্থারও বদল চাই। সে লক্ষ্যেই আমরা শাসক বুর্জোয়া শ্রেণির বিপরীতে বাম গণতান্ত্রিক বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলার প্রচেষ্টায় নিয়োজিত রয়েছি।

দেশ: বিএনপি সব দল-মতকে এ সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। এমন আহ্বানে আপনাদের সাড়া না দেয়ার পেছনে কি আছে?

বজলুর রশীদ ফিরোজ: আমরা বাম গণতান্ত্রিক জোট সরকার বিরোধী আন্দোলনে আছি। আমরা বলেছি  সকল বিরোধীদল যারা প্রকৃত গণতন্ত্র, ভোটাধিকার ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাসী তারা যার যার অবস্থান থেকে আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে যান। আন্দোলনের মাঠে, আন্দোলনের পরিস্থিতিই বলে দিবে কখন কার সাথে যুগপথ বা একমঞ্চে আন্দোলন হবে। আমরা আন্দোলনের জন্য কারো ডাকের অপেক্ষায় ছিলাম না, এখনো নেই। আমরা মাঠে ছিলাম, মাঠেই আছি।

দেশ: একটি ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ছাড়া কি সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবি আদায় করা কি সম্ভব হবে?

বজলুর রশীদ ফিরোজ : অবশ্যই না, আন্দোলন ও জনমতের চাপে সরকারকে বাধ্য করতে হবে। সেজন্যই তো বলেছি আমরা আন্দোলন করছি। অন্যরাও মাঠে থাকুক। জনগণ সম্পৃক্ত হলে আন্দোলন তীব্র হবে, সরকার দাবি মানতে বাধ্য হবে।

দেশ: আপনারা কি কি শর্তে দেশে একটি ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করতে চান?

বজলুর রশীদ ফিরোজ: এর উত্তর আগেই দিয়ে দিয়েছি।

দেশ: বামপন্থীরা এভাবে আলাদাভাবে কর্মসূচি দিয়ে সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবি আদায় করতে পারবে?

বজলুর রশীদ ফিরোজ : এটাও বলেছি।

দেশ : একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে তার প্রতি কি আপনাদের আস্থা নেই? প্রধানমন্ত্রীতে আশ্বস্ত করছেন এই নির্বাচন কমিশনের ব্যাপারে..

বজলুর রশীদ ফিরোজ : বাংলাদেশে যেসব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে দলীয়করণের ফলে তার প্রায় সবক’টির অবস্থাই ভঙ্গুর। আমরা বহু আগে থেকেই এসব প্রতিষ্ঠানের কর্তাদের নিয়োগে সংবিধানে উল্লি¬খিত গাইডলাইনের আলোকে আইন প্রণয়নের দাবি করে আসছিলাম। বলেছিলাম যারা এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পাবে তাদের যোগ্যতার মাপকাঠি ঠিক করতে। একটা সাংবিধানিক কমিশনের মানে নিয়োগ দিতে। সেভাবে নির্বাচন কমিশন গঠনেরও আইন করতে। কিন্তু ৫১ বছরেও হয়নি। বর্তমান সরকার তড়িঘড়ি করে কারো মতামত না নিয়ে ভোট ডাকাতির সংসদে একতরফাভাবে নিজেদের মতো করে একটি ত্রুটিপূর্ণ আইন প্রণয়ন করলো এবং নিজেদের পছন্দমতো কমিশন গঠন করলো। ফলে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থা-অনাস্থার বিষয় নয়, আমরা পুরো কমিশন গঠন প্রক্রিয়ার কথাই বলছি ত্রুটিপূর্ণ। আর প্রধানমন্ত্রীর আশ্বস্ত করার কথা বলছেন? আপনাদের মনে আছে ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপ করেছিলেন। আমরা বাম জোটও সেই সংলাপে গিয়েছিলাম। তিনি তখনও বলেছিলেন, ‘আমার প্রতি আস্থা রাখুন, ভোট সুষ্ঠু হবে’। কিন্তু দেশবাসী-রাজনৈতিক দল আস্থা রেখে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। ফলাফল কি হলো দিনের ভোট রাতের বেলা নিশি ভোট করে আস্থার প্রতিফল ঘটিয়েছিলেন। তাই জনগণ মনে করে ন্যাড়া বেলতলায় একবারই যায়, বারবার নয়। ফলে আমাদের দাবি জনগণের আকাঙ্কার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বর্তমান সরকার অবিলম্বে পদত্যাগ করে সংসদ ভেঙে দিয়ে তদারিক সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু অবাধ-অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের। আমরা জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলে এ দাবি মানতে সরকারকে বাধ্য করার আহ্বান জানাই।

শেয়ার করুন