২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০১:০৭:৩৬ পূর্বাহ্ন


দেশ ও সরকারবিরোধী প্রোপাগান্ডা হিংসাত্মক রূপ নিচ্ছে
খন্দকার সালেক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৪-০৬-২০২৩
দেশ ও সরকারবিরোধী প্রোপাগান্ডা হিংসাত্মক রূপ নিচ্ছে


২০০৯-২০২৩ দীর্ঘ পরিক্রমায় তিন মেয়াদে সরকার পরিচালনায় বর্তমান সরকারের অনেক সাফল্যের পাশে ব্যর্থতাও আছে। দেশে এবং প্রবাসে সরকারবিরোধী মহল এবং বিশেষ করে কিছু কথিত ব্যক্তি সত্য মিথ্যা প্রোপাগান্ডা চালিয়ে প্রকৃতপক্ষে দেশের ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত করছে। প্রবাসে সরকার সমর্থক মহলের দ্বিধাবিভক্তি এবং কূটনৈতিক মহলের অদূরদর্শিতার কারণে বাংলাদেশ বিরোধী প্রোপাগান্ডা জোরদার করা হয়েছে। ২০০৯-এর বাংলাদেশ আর ২০২৩ বাংলাদেশ কোনোভাবেই তুলনীয় না। অর্থনীতি বিশাল রূপ নিয়েছে। অনেক সফল কার্যক্রমের পর বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রধান উন্নয়ন হাবে পরণিত। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, চীন, জাপান, ভারত সবাই চায় এখন বাংলাদেশে বিনিয়োগ এবং বর্ধিষ্ণু অর্থনীতি থেকে ফায়েদা লুটতে। যুক্তরাষ্ট্র এবং তার অক্ষশক্তির আরো একটি কৌশল, বাংলাদেশকে তার বলয়ে রেখে চীনের প্রভাব থেকে দূরে রাখা। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী অবশ্য ভারতের সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রেখেই রাশিয়া, চীন, জাপান, কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র সব উন্নয়ন সহযোগীকে সুযোগ করে দিয়েছে। 

কৃষিক্ষেত্রে কিছু যুগান্তকারী কার্যক্রমের কারণে বাংলাদেশ খাদ্যে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। কিন্তু সরকার ঘনিষ্ঠ কিছু মহলের কারসাজিতে মাঝে মাঝে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির কারণে ভোক্তাদের কাছে দ্রব্যমূল্য কখনো কখনো আওতার বাইরে। তেমনিভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা চাহিদার চেয়ে বহুগুণ বেশি হলেও ভ্রান্ত কৌশলের কারণে জ্বালানি বিদ্যুৎ সংকট। এখানেও সরকার ঘনিষ্ঠ মহল বিপুলভাবে বিত্তশালী, কিন্তু ভোক্তাদের ঘাড়ে উচ্চমূল্য অর্পিত। মোটকথা, সরকারের উন্নয়নের সুফল জনসাধারণের কাছে বিশাল বোঝা। 

তবে সবচেয়ে বিতর্কিত হলো, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে কোণঠাসা করার জন্য গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনেকাংশে সংকুচিত করা হয়েছে। সেনাবাহিনী, পুলিশ, প্রশাসন যন্ত্রকে রাজনৈতিককরণ এবং অনেকের ধারণায় বিরুদ্ধ মত দমনে ব্যবহার করেছে। সাধারণের ধারণা মেগা প্রকল্পসহ নানা অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পসমূহ নির্মাণে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। সরকার ঘনিষ্ঠ ব্যাবসায়ী মহলকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ায় অর্থনীতিকে চাপে ফেলা হয়েছে। সৎ নিবেদিত পেশাদারদের উপেক্ষা করে সুবিধাবাদী আমলাদের প্রাধান্য দিয়ে জ্বালানি বিদ্যুৎ খাতের মতো কারিগরি ঘন প্রতিষ্ঠানসমূহকে কারিগরিভাবে দুর্বল এবং অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করা হয়েছে। ফলশ্রুতিতে বিপুল বিদ্যুৎ উৎপাদন স্বভাবনা থাকা সত্ত্বেও জ্বালানি সংকটের কারণে প্রচণ্ড দাবদাহের সময়ে অসহনীয় বিদ্যুৎ সংকটে ভুগছে দেশ। 

এমনি এক অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র অবাধ, অংশগ্রহণমূলক এবং গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানকে উপলক্ষ করে সে দেশে বাংলাদেশিদের জন্য ভিসানীতি ঘোষণা করেছে। প্রাথমিকভাবে সরকারি দল এবং বিরোধী দল এই ঘোষণাকে নিজেদের বিজয় বলে প্রচার করে নিজেদের দেউলিয়াত্বের পরিচয় দিলেও সরকার প্রধান হঠাৎ করে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী অবস্থান  নিয়েছেন। কেন সরকার প্রধানকে ইদানীং অস্থির মনে হচ্ছে? 

সবাই জানে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব মোড়ল। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে গণহত্যা চালিয়েছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়েও যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশ বিরোধী অবস্থান নিয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ভূমিকার জন্য সরকারি দল এবং বিরোধী দল সমানভাবে দায়ী। সরকারের মন্ত্রী, উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে সরকার ঘনিষ্ঠ ব্যাবসায়ী, আমলা, পুলিশ এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কিছু দুর্নীতিপরায়ণ মানুষের আমলনামা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যুক্তরাষ্ট্রে অবাঞ্ছিত, সেই দলের অনেকের অর্থসম্পদ বিষয়েও ওদের জানা আছে। এসব দুর্বলতার কারণেই কিন্তু উভয় দল শঙ্কিত। কিন্তু ৯৯ শতাংশ নিরীহ বাংলাদেশিদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি দুর্ভাগ্যজনক এবং কলঙ্কের। আমি আশা করি সবার বোধোদয় হবে। একটি অবাধ, নিরপেক্ষ, জনগণের ভোটের অধিকার সংরক্ষিত নির্বাচনে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। তাহলেই উন্নয়নের ধারা বজায় থাকবে। ঘুরে দাঁড়াবে অর্থনীতি।

শেয়ার করুন