২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ১১:৫৪:২১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


যুদ্ধ জিইয়ে রাখবে রাশিয়া? কী হবে বাংলাদেশের
খন্দকার সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০৩-২০২২
যুদ্ধ জিইয়ে রাখবে রাশিয়া? কী হবে বাংলাদেশের রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে একজন সৈনিক অস্র তাক রত : ছবি সংগৃহীত


 রাশিয়ার যে হুমকি ধামকি তাতে এতোদিন সবকিছু শেষ হয়ে যাবার কথা। কিন্তু পরিস্থিতির নিবিড় পর্যবেণে মনে হচ্ছে প্রক্সি যুদ্ধরত কোনো পরে ইউক্রেন যুদ্ধ শিগগিরই শেষ করার সদিচ্ছা নেই। নিজেদের স্বার্থে ইউক্রেনকে যুদ্ধে নামিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রশক্তি। রাশিয়ার দীর্ঘদিনের ােভ আছে পশ্চিমা মিত্রশক্তির ওপর। প্রথম খুব ইউএসেসার ( টঝঝজ ) ভেঙে টুকরো করার ইন্ধন, তার পর মুজাহিদীন, তালেবান সৃষ্টি করে আফগানিস্তান থেকে রাশিয়াকে হাত গোটাতে বাধ্য করা। অবশেষে, রাশিয়ার আঙিনায় ন্যাটোকে সম্প্রসারিত করার অপপ্রয়াস। 

পারমাণবিক শক্তিধর, বিপুল জ্বালানি সম্পদ, কৃষিপণ্য এবং কারিগরি দতার অধিকারী রাশিয়া সুযোগ বুঝে আঘাত হানবে এটি অনুমেয় ছিল। এ মুহূর্তে যুদ্ধ কান্ত যুক্তরাষ্ট্র বা মিত্র শক্তির সেনাবহিনী কিছুতেই রাশিয়ার মতো শক্তিধর দেশের সঙ্গে যুদ্ধ করার মতো অবস্থায় নেই। হয়তো যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকটের বিষয়ে মিত্র শক্তিকে উপদেষ্টারা সঠিক উপদেশ দেয়নি। ফলে সুযোগটা পুরাপুরি নিয়ে নিয়েছে রাশিয়া বা ভ্লাদিমির পুতিন।

 ইউক্রেন নিজের দীর্ঘকালীন স্বার্থের হিসাব-নিকাশ না করেই পশ্চিমা শক্তির উস্কানিতে ফাঁদে পা দিয়েছে। ইতিমধ্যেই প্রায় অর্ধকোটি ইউক্রেনের নাগরিক বাস্তুহারা হয়েছে। রাশিয়া হয়তো বিপুল সম্পদ আর চীন, ভারত, ইরান, ইত্যাদি দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বিকল্পভাবে চালু রেখে পরিস্থিতি সামাল দেবে। অনেকটা ইচ্ছা করেই রাশিয়া সর্বশক্তি প্রয়োগ করে স্বল্পসময়ে ইউক্রেন দখল করছে না। যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি যুদ্ধ করবে না। ন্যাটোর সামর্থ নেই যুক্তরাষ্ট্র সমানে না থাকলে রাশিয়ার সঙ্গে পাল্লা দেয়ার। আর বর্তমান অবস্থায় রাশিয়ার জ্বালানি আর খাদ্য শস্য সরবরাহ ছাড়া পশ্চিমা দেশসমূহ তথা ইউরোপীয় দেশগুলোর অর্থনীতি ভেঙে পড়বে। পশ্চিম ইউরোপের মতো সচ্ছল দেশগুলোর যখন এই অবস্থা তখন কি করবে বাংলাদেশ?

করোনা অভিঘাতে অভিঘাতে বাংলাদেশে জ্বালানি সংকট দানা বেঁধে উঠছিলো। হয়তো দেশের কৃষি উত্পাদন উত্সাহব্যাঞ্জক হওয়ায় খাদ্য সংকট সৃষ্টি হয়নি। কিন্তু ইউক্রেনে সংকটের পর থেকে বাজারে নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য বাড়ছে ঘোড়ায় চড়ে। জ্বালানি বাজারের আগুন সংকট ঘনীভ‚ত করছে। বাংলাদেশ তরল জ্বালানি (ক্রুড অয়েল, পেট্রোলিয়াম পন্নাদি, এলপিজি, এলএনজি) পুরোটাই আমদানি করে বিশ্ববাজার থেকে। সঠিক কৌশলের অভাবে নিজেদের গ্যাস অ্যান্ড কয়লা উত্পাদন করছে না আকাক্সিক্ষত পরিমাণে। জ্বালানি বাজারের আগুন তাই জ্বালানি নিরাপত্তা সংকটাপন্ন করে তুলেছে।

 আমলানির্ভর জ্বালানি সেক্টর তাই মারাত্মক হুমকির মুখে। টিকে থাকার জন্য প্রয়োজন বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি অথবা জ্বালানি, বিউটি মূল্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৃদ্ধি। অন্যান্য খাতের চাহিদা থাকায় শুধু জ্বালানি বিউটি খাতে এখন বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দেয়ার সামর্থ নেই। অন্যদিকে জাতীয় নির্বাচন সামনে সরকারও সমস্যায়। কারণ এমনি অবস্থায় মূল্যবৃদ্ধির ঝুঁকি নেবে বলে মনে হয় না।

একটি বিষয় মনে রাখতে হবে যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে কোনো দেশ এযাবত রাশিয়ার জ্বালানি, খাদ্যপণ্য আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি। সৌদি আরব, ইউএই তেল উত্পাদন বাড়াতে রাজি হয়নি। ওপরন্ত রাশিয়া চীনা মুদ্রায় চীনকে তেল রফতানির কথা ভাবছে, ভারতকে ভারতীয় মুদ্রায় স্বল্প মূল্যের জ্বালানি সরবরাহের প্রস্তাব দিয়েছে। হন্য হয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ইরান এবং ভেনিজুয়েলার ওপর থেকে তেল রফতানির নিষেধাজ্ঞা পরিহার করতে চাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত নিষেধজ্ঞা বুমেরাং হতে চলেছে। বাংলাদেশের উচিত পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেণ করার। 

অন্যান্য বিকল্প হলো গ্যাস, জ্বালানি ক্ষেত্রে বিপুল পরিমাণ অপচয় এবং চুরি সীমিত করা, জ্বালানি আমদানিতে শুল্ক, কর কমানো, জ্বালানি ব্যাবহারে কৃচ্ছতা নিশ্চিত করা। দ্বিপাক্ষিক দাতা প্রতিষ্ঠানসমূহের নিকট থেকে ঋত গ্রহণ করার বিষয়টিও বিবেচিত হতে পারে। 

মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা হিসাবে বাংলাদেশকে নিজস্ব কয়লা সম্পদ উত্তোলন করতেই হবে। গ্যাস উত্তোলন কার্যক্রম জোরদার করতে হবে, নবায়ন যোগ্য জ্বালানি ব্যবহার দ্রুত সম্প্রসারণ করতে হবে। এসব কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য একান্ত আমলা নির্ভরতা থেকে সরকারকে বেরিয়ে আসতেই হবে।  ইউক্রেন সংকট দীর্ঘায়িত হলে- বিশ্ব দুই মেরুতে বিভক্ত হয়ে যাবে। মেরুকরণ হবে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়। বাংলাদেশ নিরপে ভ‚মিকা বজায় রাখতে পারবে না। একপক্ষে যেতেই হবে। এ নিয়ে এক উভয় সংকট বিরাজ করছে দেশটিতে। সেটিই বর্তমান সরকার তথা বাংলাদেশের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ।

শেয়ার করুন