২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০২:০৪:৪৮ পূর্বাহ্ন


ডোনাল্ড লু’র সফরে যে প্রতিক্রিয়া
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৮-০১-২০২৩
ডোনাল্ড লু’র সফরে যে প্রতিক্রিয়া মার্কিন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু


জনশ্রুতি রয়েছে, মার্কিন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু পাকিস্তানের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করার ব্যাপারে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন। কিছুটা চাছাছোলা কথা বলতে অভ্যস্ত এ মার্কিন প্রতিনিধির বাংলাদেশ সফর নিয়ে বিভিন্ন মহলেও ব্যাপক সমালোচনা হয়। কারণ তিনি এ সফরে কয়েকজন মন্ত্রী, সচিব, রাজনীতিবিদ, সুশীলসমাজ থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্তরের সঙ্গে যে কথা বলে গেছেন, তাতে কী ম্যাসেজ রেখেছেন সেটা এখন ব্যাপক আলোচিত হচ্ছে। তবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত গণমাধ্যমকর্মীদের জানার সুযোগ নেই। প্রকাশ্যে সেসব কথা তারা বলেছেন তার ওপর ভিত্তি করেই রিপোর্ট হচ্ছে। তবে মিডিয়া এ মুহূর্তে কঠোর নজরদারি করছেন ডোনাল্ড লু’র চলে যাওয়ার পর রাজনৈতিক মহলের অভিব্যক্তি। এতে বিএনপিসহ বিভিন্ন সরকার বিরোধীরা মুখ খুলছেন না। মার্কিন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু’র সফর প্রসঙ্গে কোনো বক্তব্য বা প্রতিক্রিয়াও দেখাচ্ছেন না তারা এ পর্যন্ত। 

তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতা এ বিষয়গুলো নিয়ে ইশারা ইঙ্গিতে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন। বিশেষ করে ডোনাল্ড লু’র সফর নিয়ে যে একটা গুমট অবস্থায় ছিলেন ক্ষমতাসীনদের কেউ কেউ, সেটা যে আসলেই ছিল অনার্থক কিছু সেটাই বুঝানোর চেষ্টা করছেন তারা এবং ডোনাল্ড লু যে বাংলাদেশ সফরে এসে সরকারের উন্নয়ন প্রক্রিয়ার প্রশংসা ও র‌্যাবের কর্মকা- সন্তোষজনক সে কথাগুলো প্রকাশ্যে বলার চেষ্টা করছেন। 

একই সঙ্গে ডোনাল্ড লু’র সফর করে যাওয়ার পরও বিএনপিসহ বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের পূর্বধারা অনুসারে বিভিন্ন ইস্যুতে ধরপাকড় সেটাও অব্যাহত রয়েছে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে। সব মিলিয়ে ডোনাল্ড লু ইস্যু নিয়ে আপাতত কোনো দুশ্চিন্তা সরকারের নেই সে অভিব্যাক্তি ও খোশ মেজাজ ক্ষমতাসীনদের মধ্যে। 

ওবায়দুল কাদের, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী 

সোমবার রাজধানীর ভাটারা এলাকার মাদানী অ্যাভিনিউয়ে দলীয় শান্তি সমাবেশে বিএনপিকে ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, মার্কিন দূতাবাসে নালিশের পর নালিশ করেও কোনো লাভ হয়নি। বরং যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ঢাকায় এসে বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রশংসা করেছেন। ডোনাল্ড লু এসে বলেছেন, দেশ অগ্রগতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশে যথেষ্ট উন্নয়ন হয়েছে। বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, নালিশ কার কাছে দেবেন। কোথায় যাবেন, কার কাছে যাবেন? আশপাশের সবাই শেখ হাসিনার উন্নয়নের অংশীদার। 

সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী বলেন, বিএনপি হচ্ছে চুরিবিদ্যার জাদুকর। দেশকে দুর্নীতিতে তারা পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন করেছিল। এফবিআই এসে সাক্ষ্য দিয়ে গেছে। তারেক রহমানের দণ্ড হয়েছে। তাদের আরেক নেতাও এতিমের টাকা চুরি করে খেয়েছেন।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নতুন কোনো নিষেধাজ্ঞা আসছে না- এমন খবরে বিএনপি নেতারা অসুস্থ হলেন কিনা, হাসপাতালে গেলেন কিনা, হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে। আন্দোলন রেখে কেন তারা হাসপাতালে? 

এর আগে ১৪ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি ভেতরে ভেতরে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিলেও ভোটে জিতবে এমন আশ্বস্ত হতে পারছে না। তাই তারা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে চোরাইপথে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করছে। একটা ওয়ান ইলেভেন হয়েছে, আরেকটা ওয়ান ইলেভেন বা ১/১-এর পুনরাবৃত্তি করে বেনিফিশিয়ারি হবে। এ লক্ষ্যে তারা অশুভ খেলায় মেতে উঠেছে। 

ড. এ কে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী 

দু’দফা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ডোনাল্ড লু’র আলোচনায় কী হলো এটা জানাতে গিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, বার্তাটি হচ্ছে উনি এসেছেন বাংলাদেশের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় করার জন্য, আরো শক্তিশালী করার জন্য। তাদের একটা তহবিল আছে ইউনাইটেড স্টেটস ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স করপোরেশন (ডিএফসি) ফান্ড, ওইটা গ্রহণ করতে বাংলাদেশ সুযোগ পাচ্ছে না। কীভাবে বাংলাদেশ এ ৪ বিলিয়ন ডলার গ্রহণ করতে পারে, সেটার সুযোগ সৃষ্টি করা। সেজন্য আমাদের এদিকে কিছু কাজ করার দরকার পড়বে। সেই কাজগুলো আমরা যতো তাড়াতাড়ি করে এ সুযোগটা যাতে নিতে পারি। কোন কাজটি করতে হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সেটা মোস্টলি লেবার, শ্রম ছাড়া অন্য কোথাও কিছু না। এ বিষয়ে কিছু সমস্যা আছে। এটা নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমরা একটা রোডম্যাপ দিয়েছি। শ্রম মন্ত্রণালয় ভালো বলতে পারবে। উনি এসেছেন আমার শহরে। আমরা বাংলাদেশি খাবার খাওয়ালাম। উনি চাইনিজ অরিজিন। আমাদের খাবার পছন্দ করেন।

র‌্যাবের সংস্কার প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দে হ্যাভ ইন বিল্ট সিস্টেম অব অ্যাকাউন্টেবিলিটি। ওই জিনিসটা অনেকে জানে না। এখন যেমন জানিয়েছি যে র‌্যাবের বহু সদস্যের পদাবনতি হয়েছে। বহু সদস্য চাকরি থেকে বাদ হয়ে গিয়েছে। সাতজন র‌্যাবের সদস্য, তাদের ফাঁসির উপক্রম হয়েছে। এগুলোর তথ্য তাদের কাছে ছিল না, সেজন্য। আমরা বলেছি, তোমাদের জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট সিস্টেম ডিজাইন করেছে। এখন তোমাদের কোনো পরিবর্তন প্রয়োজন মনে হলে আমাদের বলো। তবে আমরা প্রায়ই বলি যে পাঁচ আঙুল সমান না, কোথাও অ্যাবিউজ হয়, ডিএসএ ইজ আ ভেরি গুড ল। কখনো কখনো কেউ কেউ এটার অ্যাপ্লিকেশন করেছে রং, অ্যাবিউজ হয়েছে। আমরা সংশোধন করছি।

শ্রমিক অধিকারের বিষয় দু’দেশের সম্পর্কের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ এমন প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, শ্রমিক অধিকারটা একটা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু, এটা আমাদের অর্জনের জন্য প্রয়োজন। 

আসাদুজ্জামান খান কামাল, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী  

ডোনাল্ড লু’র সঙ্গে বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ১০ ডিসেম্বর আমরা শান্তিপূর্ণভাবে বিএনপিকে সমাবেশ করার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। এ জন্য যুক্তরাষ্ট্র খুশি। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, সবার রাজনীতি করার অধিকার আছে। আমরা বলেছি, আমরা সেটা মানি। সেজন্যই বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি করছে। কর্মসূচিতে আমাদের কোনো বাধা নেই।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিএনপি জনগণের সম্পদ নষ্ট, প্রকাশ্যে গুলি কিংবা রাস্তাঘাট বন্ধ করলে আমরা তাদের নিষেধ করি। অন্যথায় তারা অবাধে কর্মসূচি করতে পারে। তারা রাজনৈতিক দল। তারা মত প্রকাশ করতে পারে। তারা ১০ তারিখে কর্মসূচি করেছে, কিছুদিন আগেও করেছে এবং সবার জন্য এই সুযোগটা আছে। উল্লেখ্য, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছিলেন ১০ ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশ প্রসঙ্গে। 

র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান প্রসঙ্গে স্বরাষ্টমন্ত্রী বলেন, তারা (ডোনাল্ড লু) বলেছে, এটা তাদের দেশে একটা জটিল প্রক্রিয়া। এতে সময় লাগতে পারে।

শেয়ার করুন