২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৯:১৬:১০ পূর্বাহ্ন


বৃহত্তর আন্দোলনের ছক কষে এগোচ্ছে বিএনপি
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-০২-২০২৩
বৃহত্তর আন্দোলনের ছক কষে এগোচ্ছে বিএনপি


নতুন হিসাব-নিকাশে সামনে পা ফেলছে বিএনপি। যেহেতু ক্ষমতাসীন দলও ইতিমধ্যে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে গেছে। চট্টগ্রামের পর রাজশাহীতেও  প্রধামন্ত্রী ‘স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে নৌকায় আবারো ভোট চাইলেন, তাই বিএনপি ও সমমনাদের আন্দোলন কৌশল কী হতে পারে এ নিয়ে নিজেদের মধ্যে চলছে সলাপরামর্শ। ইতিমধ্যে সরকার ইভিএম থেকে সরে গেছে। প্রত্যাশার মধ্যে নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। এটাই এখন বড় দাবি বিএনপিসহ সমমনাদের। সরকার সব মানলেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিটা মানবে না কোনোক্রমেই। শেষ পর্যন্ত লড়াইটা সেখানেই। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নয়ন সহযোগীদের একটা বড় চাপ রয়েছে সব দলের অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য একটা নির্বাচন অনুষ্ঠানের। দেশে বিরোধীদলকে সেভাবে আমলে না নিলেও ভিনদেশিদের চাপটা সামাল দেয়াও বড় চ্যালেঞ্জের। 

বিএনপি ও সমমনা দলসমূহ কিছুটা ধীরে চলানীতিতে চললেও আবার তারা চাঙ্গা হওয়ার চেষ্টা করছে। যেহেতু এ বছরের শেষেই জাতীয় নির্বাচন। তাই মাঠ ছাড়ছে না। বিএনপির বিভাগীয় সম্মেলন থেকে মাঠপর্যায়ের যে একটা শঙ্কা ছিল সেটা দূর হয়ে গেছে। সরকারের দমন-পীড়ন থাকলেও বহু হামলা, নিহত, আহত হওয়ার ঘটনা ঘটলেও সব হজম করেছে, বৃহত্তর একটা আন্দোলন গড়ে তোলার পরিকল্পনা যেন অঙ্কুরে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়ে যায়। এটাতে তারা সফল। 

এরই মধ্যে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু’র সফরে কী বার্তা রেখে গেছে তা তো আর গোপন থাকেনি। জনসমক্ষনে না এলেও ভেতরে ভেতরে বিষয়গুলো সবার জানা! ফলে বিএনপিও কৌশলগত কারণেই হয়তো একটু ধীরে চলা নীতিতে ছিল। এবার ইউটার্ন নেয়ার চেষ্টা করছে। তবে হুটহাট নয়। বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, এবার আন্দোলন জোরদার করবে সমমনাদের সাথে নিয়ে। এ জন্য তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়ে পরবর্তী আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে প্ল্যান বা ছক আঁকছেন। 

পাশাপাশি বসে নেই বিএনপি। নেতাকর্মী যেন ঝিমিয়ে না যায়, চাঙ্গা মনোভাব ধরে রেখে সে জন্য তারা কিছু মাঠের কর্মসূচি রেখেছে। যার মূলে শান্তিপূর্ণ। কখনই মারামারি, হামলা জাতীয় কাজকর্ম দিয়ে নিজেদের কর্মীরা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সেদিকে কঠোর নজর রয়েছে। ওই লক্ষ্যমাত্রায় এখন চলছে ‘গণপথযাত্রা কর্মসূচি।’ 

সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ দশ দফা দাবিতে পূর্বঘোষিত ‘গণপদযাত্রা’ কর্মসূচি। পূর্বঘোষিত চারদিনের এই কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন সোমবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে পদযাত্রা করে দলটি। 

কর্মসূচির তৃতীয় দিন মঙ্গলবার গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে দুপুর ২টায় পদযাত্রা শুরু করে। কর্মসূচির চতুর্থ দিন বুধবার ১ ফেব্রুয়ারি দুপুর ২টায় মুগদা স্টেডিয়াম থেকে পদযাত্রা শুরু হবে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। প্রতিটা কর্মসূচিতে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দিয়ে সাথে থাকছেন কেন্দ্রীয় নেতা মির্জা ফখরুল, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় প্রমুখ। 

‘নীরব পথযাত্রাকে দুবর্লতা ভাববেন না’

বিএনপির এমন কর্মসূচিকে দুর্বলতার চোখে দেখছেন। কেউ কেউ ভাবছেন, যে দেশে জ্বালাও-পোড়াও কর্মসূচি দিয়ে ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতাচ্যুতি ঘটাতে হয়, সেখানে বিএনপির এমন নীরব কর্মসূচি কতটা ভূমিকা রাখবে। এ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা ঢাকা শহরে পথযাত্রা করছি। আমরা প্রতিটি কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালন করছি। এই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে কেউ দুবর্লতা মনে করবেন না। এই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দিলে প্রতিরোধ গড়ে উঠবে।’ মির্জা ফখরুল আরো বলেন,‘তাই পরিষ্কার করে বলতে চাই, এখন এই পথযাত্রার মধ্য দিয়ে জনগণ সম্পৃক্ত হচ্ছে, ঢাকার মানুষ সম্পৃক্ত হচ্ছে। এই যাত্রার মধ্য দিয়ে আমরা চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করব। এই পথযাত্রার মধ্য দিয়ে আমরা নতুন যাত্রা শুরু করেছি, নতুন অধ্যায় শুরু করেছি। আমাদের এই পথযাত্রা আমাদের মুক্তির লড়াই, এটা আমাদের জনগণের অধিকারকে পুনরুদ্ধার করবার লড়াই।’

বৃহত্তর আন্দোলনের ছক কষছে বিএনপি 

এদিকে বৃহত্তর আন্দোলনের দিকে যেতে সমমনা দলের সঙ্গে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে বিএনপির সঙ্গে চারটি জোট ও কয়েকটি দল পৃথকভাবে যুক্ত রয়েছে। ইতোমধ্যে গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে মির্জা ফখরুল আলোচনা করেছেন। দ্বিতীয় জোট হিসেবে ১২ দলীয় জোট করেছে। ক্রমান্বয়ে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যসহ এলডিপি, গণফোরামসহ আরো কিছু দলের সঙ্গে কথা বলবে বিএনপি। গত রোববার ১২ দলীয় জোটের বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে আভাস দেয়া হয়েছে, ইতিমধ্যে গণতন্ত্র মঞ্চসহ বাকি তিনটি জোটের সঙ্গে আলোচনার জন্য বিএনপি লিয়াজোঁ কমিটি করলেও সবক’টি জোট ও দল মিলিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত লিয়াজোঁ কমিটি বা সমন্বিত লিয়াজোঁ কমিটি হতে পারে। তবে জানা গেছে, বিষয়টি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। বৈঠকে যুগপৎ আন্দোলন আরো কী প্রক্রিয়ায় সমন্বয় করা যায়, সে বিষয়টিও ছিল। এছাড়া বিএনপির পক্ষ থেকে পরবর্তী যুগপৎ কর্মসূচি নিয়েও পরামর্শ চাওয়া হচ্ছে। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে ত্বরান্বিত করা এবং দেশের মানুষকে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা থেকে মুক্ত হতে কার্যকর ও গ্রহণযোগ্য কর্মসূচি নিয়ে বিশদ আলোচনা করছেন।

এর মধ্যে থাকতে পারে ‘বিদ্যুৎ অফিস ঘেরাও, তিতাস গ্যাস ঘেরাও, ঢাকা শহরে দীর্ঘ মানববন্ধন, রাজপথে গণঅবস্থান, টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া মহাসড়কে অবস্থান’ কর্মসূচি পালন করার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে বলে জানা গেছে। 

শেয়ার করুন