২৬ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০৯:২৬:০৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :


অখণ্ড ভারতের মানচিত্রের ম্যুরাল : ভারতকে খেসারত দিতে হবে
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৭-০৬-২০২৩
অখণ্ড ভারতের মানচিত্রের ম্যুরাল : ভারতকে খেসারত দিতে হবে


ভারতের নয়া সংসদ ভবনে চলতি সপ্তাহে অখণ্ড ভারতের মানচিত্রের ম্যুরাল স্থাপনের ঘটনায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, ভারত সরকার কর্তৃক স্থাপিত মানচিত্রের ম্যুরাল বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও আত্মমর্যাদার প্রতি এক অবমাননাকর দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ। তারা বলেছেন, ভারতের নতুন সংসদ ভবনে ‘অখ- ভারতের’ মানচিত্র যদি কুমতলবে করা হয়ে থাকে, তাহলে ভারতকে এর খেসারত দিতে হবে।

বাংলাদেশ, নেপাল, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, মায়ানমারসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশকে অঙ্গীভূত করে ভারত সরকারের ভিস্তা প্রকল্পের আওতায় ভারতের নয়া সংসদ ভবনে অখণ্ড ভারতের মানচিত্রের ম্যুরাল স্থাপন করেছে দেশটি। গত ২৮ মে হিন্দুত্ববাদের প্রবক্তা বিনায়ক দামোদর সাভারকরের জন্মদিনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র  মোদি এই সংসদ ভবন উদ্বোধন করেন।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, ভারত সরকার কর্তৃক স্থাপিত মানচিত্রের ম্যুরাল বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও আত্মমর্যাদার প্রতি এক অবমাননাকর দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ। 

বাংলাদেশ, নেপাল, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, মায়ানমারসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশকে অঙ্গীভূত করে ভারত সরকারের ভিস্তা প্রকল্পের আওতায় ভারতের নয়া সংসদ ভবনে চলতি সপ্তাহে তথাকথিত অখণ্ড ভারতের মানচিত্রের ম্যুরাল স্থাপনের যে খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তার প্রতি সিপিবির নেতৃবৃন্দ দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়ে এই বিবৃতি দেন।  

বিবৃতিতে সিপিবি নেতারা বলেন, ভারতের বর্তমান সরকারের হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, আপত্তিকর এবং বিভ্রান্তিমূলক মানচিত্রের এই ম্যুরাল স্থাপনে সিপিবি তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে। একই সঙ্গে অবিলম্বে এটি অপসারণের দাবি জানান তারা। নেতৃবৃন্দ বলেন, ভারতের বর্তমান ক্ষমতাসীন উগ্রসাম্প্রদায়িক ভাবাদর্শের বিজেপি সরকার তথাকথিত হিন্দুত্ববাদ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনাকে অগ্রসর করার জন্য এই অখণ্ড ভারতের মানচিত্রের ম্যুরাল স্থাপন করেছে। 

বিবৃতিতে সিপিবি নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, তথাকথিত অখণ্ড ভারতের এই ম্যুরাল প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের অবনতি ঘটাবে, বিভ্রান্তি ছড়াবে এবং এমনকি সাম্প্রদায়িক সহিংসতা উসকে দিতে পারে। যা এই অঞ্চলের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার জন্য খুবই উদ্বেগজনক। 

সিপিবি নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশ সরকারকে অবিলম্বে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঘটনার প্রতিবাদ জানানোর জন্য জোর দাবি জানাচ্ছে।

এদিকে টাঙ্গাইলের সখীপুরে একটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, ভারতের নতুন সংসদ ভবনে ‘অখণ্ড ভারতের’ মানচিত্র যদি কুমতলবে করা হয়ে থাকে, তাহলে ভারতকে এর খেসারত দিতে হবে। এটা যদি অবুঝের মতো করে থাকে, তাহলে একরকম কথা আর যদি শতবর্ষ আগের মহাভারতের ইতিহাস তুলে ধরার জন্য করে থাকে, তবে তা ভিন্ন কথা। সখীপুর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে ‘মুক্তিযুদ্ধে কাদেরিয়া বাহিনীর ভ্রাম্যমাণ হাসপাতাল’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ‘কাদেরিয়া বাহিনী ৭১’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ভারতের নতুন সংসদ ভবনে ম্যুরালের মাধ্যমে ‘অখণ্ড ভারতের’ একটি মানচিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সেই ‘অখ- ভারতের’ মধ্যে রয়েছে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, নেপাল, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমার। 

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘কত বছর পরে কী হবে জানি না। সম্প্রতি ভারতে একটি নতুন সংসদ ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে ভারতের একটি মানচিত্র দেওয়া হয়েছে। সেই মানচিত্রের মধ্যে নেপাল, ভুটান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশও আছে। তাহলে ওটা কি মহাভারতের মানচিত্র? নাকি আজকের ভারতের মানচিত্র?’ তিনি আরো বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় পতাকার মধ্যে আমরা দেশের মানচিত্র দিয়েছিলাম। আমরা ওই মানচিত্র না দিলে ভারত আমাদের সমর্থন দিতো কি না জানি না। মানচিত্র না দিলে ভারত হয়তো ভাবতে পারতো, তাদের সীমানা নিয়েও বাংলাদেশ টানাটানি করতে পারে। তাই ওই সময় পতাকায় মানচিত্র দিয়ে সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছিল।’

এদিকে এই ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, সম্প্রতি ভারতের কেন্দ্রীয় সংসদ ভবনে সে দেশের শাসক দল বিজেপির কল্পিত ‘অখ- ভারতের’ মানচিত্রের প্রতিলিপি স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে ভারতের বর্তমান শাসক দল কর্তৃক বাংলাদেশসহ ভারতের পার্শ্ববর্তী আরো কয়েকটি রাষ্ট্রের ভূখ-কে ভারত রাষ্ট্রের অংশ হিসেবে দেখানো হয়েছে। এর আগে বিভিন্ন সময় ভারতীয় শাসকদল বিজেপির নেতাদের পক্ষ থেকে ‘অখ- ভারত’ প্রতিষ্ঠার নানারকম হুমকি-ধামকি শোনা গেছে। এইরূপ লাগাতার হুমকি-ধামকির ধারাবাহিকতার মধ্যে বাংলাদেশের ভূখণ্ডকে ‘অখণ্ড ভারতের’ অংশ দেখিয়ে মানচিত্রের প্রতিলিপি স্থাপনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সর্বস্তরর জনগণের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে রাষ্ট্রসংস্কার আন্দোলন। এক বিবৃতিতে দলের পক্ষ থেকে বলা হয় যে আমরা সবাই জানি, বাংলাদেশ-ভারত প্রতিবেশী ও বন্ধুপ্রতিম দেশ। আমরা চাই ভারত রাষ্ট্র তার প্রতিবেশীর সঙ্গে মর্যাদাপূর্ণ, দায়িত্বশীল ও ন্যায়সংগত আচরণ করুক। কিন্তু বিগত সময়ে ভারত রাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান ও বর্তমান শাসক দলের আচরণ প্রতিবেশী দেশের জনগণের জন্য কোনোভাবেই বন্ধুত্বপূর্ণ ও সম্মানজনক ছিল না। বরং ভারতের শাসক দলের এইরূপ আচরণ প্রতিবেশী রাষ্ট্রের নাগরিকদের জন্য চরম অমর্যাদাকর ও অসম্মানজনক। 

ভারতের নতুন সংসদ ভবনে ‘অখ- ভারতের’ ম্যুরাল স্থাপনে যে সীমানা রেখা প্রদর্শন করা হয়েছে তাকে অত্যন্ত দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জাসদ সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া ও সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান। এক বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, সমগ্র বিশ্ব যখন গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে বিভিন্ন রাষ্ট্র ও জাতিগোষ্ঠীর সসম্মানিত স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে ঠিক সেই সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারত ‘অখ- ভারতের’ ম্যুরালে যে সীমানা নির্ধারণ করেছে, তার মধ্য দিয়ে ভারতের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশসমূহের সমমর্যাদার চেতনাগত ঘাটতি বাড়িয়ে দিতে পারে। শুধু তাই নয়, এতে প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যা এতদাঞ্চলের রাজনীতি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। আমরা মনে করি, এই মানচিত্র ভারত এবং তার জনগণের প্রতিবেশী দেশসমূহের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি গঠনে খুব নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আমরা আশা করি, ভারত সরকার এ বিষয়ে তাদের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেবেন এবং এতদাঞ্চলের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ককে দৃঢ় করতে তাদের সিদ্ধান্তকে পুনর্বিবেচনা করবেন।’

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, ভারতের বিজেপি  সরকার কর্তৃক স্থাপিত এই ম্যুরাল বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও আত্মমর্যাদার প্রতি এক অবমাননাকর দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ। এটি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের অবমাননা এবং বাংলাদেশের জনগণের মর্যাদাবোধকে তা দারুণভাবে আহত করেছে। অবিলম্বে এই ম্যুরাল অপসারণের আহ্বান জানাই আমরা। ভারতের বর্তমান ক্ষমতাসীন উগ্রসাম্প্রদায়িক ভাবাদর্শের বিজেপি সরকার হিন্দুত্ববাদী মতাদর্শ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনাকে অগ্রসর করার জন্য এই অখণ্ড ভারতের মানচিত্রের ম্যুরাল স্থাপন করেছে। আমরা এই আগ্রাসী নীতির তীব্র নিন্দা জানাই এবং তার পেছনে থাকা ইতিহাসের হিন্দুত্ববাদী পুনর নির্মাণের প্রচেষ্টাকে প্রত্যাখ্যান করি।

বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ এক বিবৃতিতে বলেন, ভারতের হিন্দুত্ববাদী মোদি সরকারের এই কর্মকা- উসকানিমূলক এবং বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সার্বভৌমত্বের ওপর প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ ও আগ্রাসী মনোভাবের নগ্ন বহিঃপ্রকাশ। ভারত সরকারের এহেন আচরণ আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে নস্যাৎ করবে।

শেয়ার করুন