২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০২:১০:৪১ পূর্বাহ্ন


৯ বছরের মেয়ের সঙ্গে যৌনাচার : বাংলাদেশে পালিয়ে গেলেন জহিরুল
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-০৩-২০২৪
৯ বছরের মেয়ের সঙ্গে যৌনাচার : বাংলাদেশে পালিয়ে গেলেন জহিরুল পুলিশের দেওয়া ছবিতে জহিরুল


৯ বছরের বাচ্চার সঙ্গে যৌনাচার করে গ্রেফতার হয়েছিলেন বাংলাদেশি মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম। ৪০ হাজার ডলার বন্ডে বেরিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে গিয়েছেন মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম। বাংলাদেশে গিয়ে যারা তাকে সহযোগিতা করেছেন এবং আমেরিকায় চাকরি দিয়েছেন তাদের নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন। মোহাম্মদ জহিরুলের বড় ভাই আওয়ামী লীগ নেতা। তিনিও চাকরিদাতাকে হুমকি দেন। জামিনে বের হয়ে মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি ফাঁস হলে দেশ পত্রিকার পক্ষ থেকে অনুসন্ধান করা হয়। অনুসন্ধান করে চাকরিদাতা ইয়াসিন মিয়াকে খুঁজে বের করা হয়।

অনুসন্ধান করে জানা গেছে, মোহাম্মদ জহিরুল ইসলামের বাড়ি কুমিল্লার হোমনা থানার কৃষ্ণাপুর গ্রামে। প্রায় পাঁচ বছর পূর্বে তিনি আমেরিকায় এসেছিলেন। আমেরিকায় এসে নিউইয়র্কের ব্রুকলিনে বসবাস শুরু করেন। এখানে এসে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন। এক পর্যায়ে নিউইয়র্কের আপটেস্টের বিংহামটনের রসকো কাউন্টির ব্যবসায়ী ইয়াসিন মিয়ার রসকো সুপার মার্কেটে চাকরি নেন মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম। এক প্রশ্নের জবাবে ইয়াসিন মিয়া বলেন, নিজ এলাকার লোক বলে আমি তাকে চার বছর আগে চাকরি দিই। প্রায় চার বছর ধরে ওই সুুপার মার্কেটেই জহিরুল কাজ করছিলেন। মালিকও তাকে খুব বিশ্বাস করতেন। যে কারণে মালিক তাকে দায়িত্ব দিয়ে ব্যবসায়িক কাজে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যেতেন। ঘটনার সূত্রপাত ২০২৩ সালের শেষ দিকে। রসকো সুপার মার্কেটের নিয়মিত এক শ্বেতাঙ্গ কাস্টোমারের সঙ্গে তার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হয়। মহিলার বয়সও ৫০-এর মতো। সেই সূত্র ধরে তিনি ওই মহিলার বাসায় যেতেন। মহিলার বাসায় মোহাম্মদ জহিরুল ইসলামের যাওয়া-আসা নিয়ে এলাকায় নানা ধরনের সমালোচনা শুরু হয়। ইয়াসিন মিয়া জানান, আমি তো কিছুই জানি না। একদিন ওই শ্বেতাঙ্গ মহিলা আমার সুপার মার্কেটে এসে আমাকে বলেন, তোমার কর্মচারী জহিরুল ইসলাম নিয়মিত আমার বাসায় যান, যা নিয়ে কমিউনিটিতে সমালোচনা শুরু হয়েছে। আপনি তাকে নিষেধ করে দেবেন, সে যেন আর আমার বাসায় না যায়। ইয়াসিন মিয়া জানান, আমার ওই সপার মার্কেটে সাত জন কর্মচারী রয়েছে। আমি তাদের মধ্যে থেকে দুই জনকে সঙ্গে নিয়ে মোহাম্মদ জহিরুল ইসলামকে বিষয়টি বলি। সে আমাদের কথা দিয়েছিল ওই বাসায় আর যাবে না। প্রায় দুই মাস পর একদিন সকালে ওই মহিলা আমার সুপার মার্কেটে এসে কান্নাকাটি শুরু করে এবং মোহাম্মদ জহিরুল ইসলামকে খুঁজতে থাকে। ওই সময় দোকান মালিক ইয়াসিন মিয়া দোকানে ছিলেন না। কর্মরত কর্মচারী তাকে ফোন করলে তিনি দোকানে ফিরে আসেন। দোকানে এসে তিনি মহিলাকে দেখতে পান এবং জিজ্ঞেস করলেন কি হয়েছে? মহিলা শুধু বললো, জহিরুল কোথায় আমি তাকে চাই। এক পর্যায়ে ওই মহিলা বলেন, মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম তার বাসায় তার ৯ বছরের মেয়ের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করেন, যা তার মেয়ে তাকে বলেছে। তার মেয়েটি স্পেশাল চাইল্ড। জহিরুল ইসলাম এই সুযোগ নিয়েছে। অবস্থা দেখে আমার সুপার মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় থাকা মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম পালিয়ে যান। আমি মহিলাকে বললাম, তাকে আমি ফায়ার করেছি। কোথায় আছে আমি জানি না। এক পর্যায়ে মহিলা চিৎকার করতে করতে চলে যান এবং পুলিশ রিপোর্ট করেন। মহিলা পুলিশ রিপোর্ট করার পর পুলিশ মোহাম্মদ জহিরুল ইসলামকে খুঁজতে থাকে। কিন্তু তাকে কোথায়ও পাচ্ছিলেন না।

দেশ প্রতিনিধির এক প্রশ্নের জবাবে ইয়াসিন মিয়া জানান, একদিন হঠাৎ করে প্রায় ১৭ জন পুলিশ আমার সুপার মার্কেটে আসে। যার মধ্যে ছিল লোকাল শেরিফ এবং স্টেট পুলিশ। তারা এসেছে মোহাম্মদ জহিরুল ইসলামের খোঁজে। আমি তাদের বললাম, আমি জানি না, সে কোথায়? তাকে আমি ফায়ার করে দিয়েছি। এক পর্যায়ে তারা আমাকে বলে, জহিরুল ইসলামের খোঁজ দিতে, না হয় তারা আমাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাবে এবং জহিরুল ইসলামকে এনে দিলে আমাকে ছেড়ে দেবে। তারা আমার কাছ থেকে মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম ফোন নম্বর নিয়ে নেয়, যা আমি দিতে বাধ্য হই। তা না হলে তারা আমাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাবে। পুলিশ সেই ফোন ট্র্যাকিং করে আমার ওই সুপার মার্কেট থেকে কয়েক মাইল দূরত্বে অবস্থিত আমার আরেকটি গ্যাস স্টেশন থেকে তাকে ২০২৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর গ্রেফতার করে। মোহাম্মদ জহিরুল ইসলামকে গ্রেফতার করে সোলিভান কাউন্ট্রি জেলে নিয়ে যায়। তার জেলের আইডি নম্বর ১৩৭।

জানা গেছে, মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বিবাহিত এবং তার ১১ বছরের পুত্র সন্তানও রয়েছে। তারা কুমিল্লার হোমনাতেই থাকে। আরেক প্রশ্নের জবাবে ইয়াসিন মিয়া জানান, জহিরুল ইসলামকে গ্রেফতারের পর দেশের সঙ্গে তার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ওই অবস্থার তার স্ত্রী আমাকে ফোন করে জানালেন, তিনি তার স্বামীকে পাচ্ছেন না। আমি প্রথমে তার স্ত্রীকে কিছু বলতে চাইনি। এক পর্যায়ে বলতে বাধ্য হই পুরো ঘটনা। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম পুলিশের কাছে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। একদিন তাকে কোর্টে তোলা হয়ে মাননীয় আদালত ৪০ হাজার বন্ডে তার জামিন মঞ্জুর করেন। ইয়াসিন মিয়া বলেন, এক পর্যায়ে পুরো বিষয়টি আমি তার স্ত্রীকে জানাই। তার স্ত্রীকে বলি, তাকে বের করতে হলে প্রায় ৬০ হাজার ডলার লাগবে। আমার কাছে এই অর্থ নেই। তার স্ত্রী বলেন, আমি এতো অর্থ কোথায় পাবো? যে করেই হোক আপনি আমার স্বামীকে বের করে আনেন। ওই সময় আমি তার বড় ভাইকে (আওয়ামী লীগ নেতা, যিনি এখন আমাকে হুমকি দিচ্ছিন) ফোন করি। তিনি বলেন, যে ভাই আমাকে কোনোদিন ফোন দেয়নি, যোগাযোগ রাখেনি, তাকে আমি সাহায্য করতে পারবো না। কয়েক দিনের মধ্যেই তার স্ত্রী আমাকে ১০ হাজার ৫৯০ ডলার পাঠিয়ে বলে-ভাই, আমার কাছে আর কোনো অর্থ নেই, যে কোনো উপায়ে দয়া করে আমার স্বামীকে বের করে দেন। ওই অবস্থায় আমি আমার অন্য ব্যবসায়িক বন্ধুদের ঘটনাটি বলি। তারা সবাই সাহায্যে এগিয়ে আসে। আমরা একটি ক্রিমিনাল আইনজীবী ধরি এবং সেই সঙ্গে বন্ড দেওয়ার জন্য আরেকজন লোককে ধরি। চুক্তি হয় আইনজীবীকে ১০ হাজার ডলার দিতে হবে এবং বন্ড দেওয়া লোককে ১১ হাজার ডলার দিতে হবে। আইনজীবী আমাদের জানিয়েছেন, যেহেতু সে কোর্টে বিষয়টি স্বীকার করেছে, সেহেতু তার অপরাধের শাস্তি ২৫ বছর অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে। আমরা আইনজীবীকে প্রথমে ৪ হাজার এবং বন্ডের লোককে ১ হাজার ডলার দিই। মামলা শেষ হলে বা মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম জামিনে বের হয়ে এলে বাকি অর্থ দেওয়া হবে। মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম ৪০ হাজার বন্ডে বেরিয়ে আসেন। তবে কোর্টে তার পাসপোর্ট জমা দিয়ে আসতে হয়। তার যে দুটি পাসপোর্ট রয়েছে, সেটাতো আর কোর্ট জানে না। জহিরুল ইসলাম কৌশল অবলম্বন করে তার হাতে লেখা পাসপোর্টটি কোর্টে জমা দেয়। জামিনে বের হওয়ার পর জহিরুল ইসলামকে পুরো বিষয়টি অবগত করি এবং মানুষ যে অর্থ পাবে তা জানাই। সেই সঙ্গে একটি কাগজে পুরো হিসাব লিখে তা স্বাক্ষর করে রাখি। মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম জেলে ১২ দিনের মতো ছিল।

এক পর্যায়ে মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম নিউইয়র্কে চলে আসে। নিউইয়র্কে এসে সে তার ডিজিটাল পাসপোর্ট নিয়ে জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে বাংলাদেশে পালিয়ে চলে যায়। বাংলাদেশে গিয়ে জহিরুল ইসলাম ইয়াসিন মিয়াকে ফোন করেন এবং বলেন, আপনি আমার জীবন শেষ করে দিয়েছেন। তার বড় ভাই বলে, জহিরুল ইসলাম নাকি আমার কাছে ৭৬ হাজার ডলার পায়। তারা আমার বিরুদ্ধে গ্রামে সালিশ বসায়। আমিও সেই সালিশে হোয়াটঅ্যাপের মাধ্যমে অংশ নিই। এক পর্যায়ে সবাই বলেন, আপনি আমেরিকায় থাকেন, ব্যবসা করেন, মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম শূন্য হাতে বাংলাদেশে চলে এসেছেন। তার চলার জন্য আপনাকে বাংলাদেশি ১ লাখ টাকা দিতে হবে। ইয়াসিন মিয়া বলেন, মানুষের উপকার করে আজকে আমাকে গালি খেতে হচ্ছে। আর ওই সময় যারা আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেছেন, তারাও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, উপকার করার ওই প্রতিদান? তাদের মতে, জহিরুল ইসলামের শাস্তি পাওয়াই যথার্থ ছিল। বিদেশের মাটিতে একজন বাঙালি বিপদে পড়লে আরেকজন বাঙালি সহযোগিতা করবেন, তাতে দোষের কিছু নেই। মানুষ ভুল করতে পারে। কিন্তু বিপদ থেকে উদ্ধারের পর যদি যে বা যারা উপকার করেছেন, তাদের গালি শুনতে হয়, তাহলে আগামী দিনে কেউ কারো উপকার করবে না। তারা বলেন, এতো অকৃজ্ঞ মানুষ কীভাবে হতে পারে?

শেয়ার করুন