২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৯:২০:১৮ পূর্বাহ্ন


নির্বাচনী বছরে জ্বালানি নিরাপত্তা প্রধান চ্যালেঞ্জ
খন্দকার সালেক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-০৪-২০২৩
নির্বাচনী বছরে জ্বালানি নিরাপত্তা প্রধান চ্যালেঞ্জ


তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর আন্তর্জাতিক সংগঠন ওপেক এবং রাশিয়া তাদের বাণিজ্যিক স্বার্থে ১ মে ২০২৩ থেকে অন্তত ২০২৩ শেষ পর্যন্ত দৈনিক ১ মিলিয়ন ব্যারেল হরে জ্বালানি তেলের উৎপাদন হ্রাসের ঘোষণা দিয়েছে। ঘোষণার পর দিন ব্রেন্ট অপরিশোধিত তেলের মূল্য বেড়ে ৮৪ মার্কিন ডলার/ব্যারেল এবং ডাবলু টিআই  ৮১ মার্কিন ডলার হয়ে যায়। পর্যবেক্ষকরা অচিরেই মূল্য ১০০ মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। স্মরণে আছে করোনা উত্তর বিশ্বে জ্বালানি চাহিদা বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে অপরিশোধিত তেলের মূল্য ১২৪ মার্কিন ডলার, স্পট মার্কেটে এলএনজি মূল্য ৬২ ডলার এবং কয়লার মূল্য ৫০০ মার্কিন ডলার হয়ে পড়ায় জ্বালানি আমদানিকারক দেশগুলোতে হাহাকার শুরু হয়েছিল। তবে ২০২৩ জানুয়ারি থেকে জ্বালানি মূল্য কমতে থাকায় কিছুটা স্বস্তি আসার মুহূর্তে আবার মূল্যবৃদ্ধি বাংলাদেশের মতো দেশকে সংকটে ফেলবে। 

অপরিশোধিত তেলের মূল্য বৃদ্ধির পথ ধরে কয়লা, এলএনজি, এলপিজি, পেট্রোলিয়াম জাত পদার্থের মূল্য বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশ নিজেদের জ্বালানি উত্তোলন উপেক্ষা করে ক্রমাগত আমদানিকৃত জ্বালানির ধারায় জ্বালানি মিশ্রণের ৪৮ শতাংশ আমদানির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। ডলার রিজার্ভ আশঙ্কাজনকভাবে কমতে থাকায় আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক থেকে ঋণের দিকে ঝুঁকে পড়ে। আইএমএফ ঋণের শর্ত হিসেবে জ্বালানি বিদ্যুতের ওপর থেকে দ্রুত ভর্তুকি তুলে নেওয়ার প্রয়াসে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির অধিকার সরকার বার্কের পাশাপাশি নিজেদের হাতে তুলে নেয়। কয়েক বার বিদ্যুৎ এবং গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি করে সরকারি আদেশে। বলা হয়, বিশ্ববাজারে মূল্য হ্রাস পেলে দেশেও মূল্য সমন্বয় করা হবে।

জানুয়ারি ২০২৩ থেকে তেল গ্যাসের মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে কমতে থাকায় দেশীয় বাজারে মূল্য সমন্বয়ের সুযোগ সৃষ্টির সম্ভাবনা সৃষ্টি হওয়ার মুহূর্তে বাংলাদেশকে আবার সংকটে ফেললো। তেলের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি কয়লা এবং এলএনজির মূল্য অচিরেই বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশ স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কিনতে না পারলে আবারো গ্যাস সংকট ঘনীভূত হবে। কয়লার মূল্যবৃদ্ধি পেলে আমদানিকৃত কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হবে। এখনো গ্রীষ্মকালের পিক চাহিদা আসে নি। তবে মে, জুন, জুলাই, আগস্ট মাসের জ্বালানি বিদ্যুৎ চাহিদা সামাল দেয়া দুরূহ হয়ে পড়তে পারে। ভারত থেকে পাইপলাইনে ডিজেল আমদানি কিছুটা সাশ্রয় সৃষ্টি করেছে। গভীর সাগর থেকে এসপিএম সিস্টেম চালু হলে জ্বালানি তেল পরিবহনে খরচ কমবে। পাশাপাশি গ্যাস ব্যাবহারে কৃচ্ছ্রতা, সিস্টেম লস দ্রুত কমানো না হলে শিল্পবিদ্যুৎসহ সব গ্যাস গ্রাহক সংকটে পড়বে। ডলার সংকটের কারণে বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্যের ভ্রাতৃসুলভ দেশগুলো থেকে দেরিতে মূল্য পরিশোধের ভিত্তিতে জ্বালানি তেল কেনার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আলাপ করতে পারে। তবে মূল কথা বছরটি জাতীয় নির্বাচনের বছর। বর্তমান সরকার তার তৃতীয় টার্মের শেষ বছরটি অতিক্রম করছে এবং বছরের চার মাস অতিক্রম করেও ফেলেছে। ফলে নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে এমন সংকট দেখা দিলে সেটা ক্ষমতাসীনদের দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে। ফলে  নির্বাচনের বছরে জ্বালানিনিরাপত্তা বজায় রাখা সরকারের প্রধানতম চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।

শেয়ার করুন