০২ মে ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০৫:৫৬:৩৮ অপরাহ্ন


ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড ও লুর সফরে সজাগ দৃষ্টি
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৫-০৭-২০২৩
ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড ও লুর সফরে সজাগ দৃষ্টি


মুখে কেউ প্রসঙ্গ না আনলেও ভেতরে ভেতরে প্রস্তুতি চলছে মার্কিন প্রতিনিধিদলকে সামলানোর। ভিসানীতি দেয়ার পর ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ডের নেতৃত্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ চার নেতৃবৃন্দ আসছে ঢাকায়। এর মধ্যে রয়েছেন ডোনাল্ড লুও। যতদূর জানা গেছে, এ মাসের মাঝামাঝিতে আসছেন তারা ঢাকায়। কী আলোচনা করবেন। কী বার্তা দিয়ে যাবেন এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনা। 

বিশেষ করে ডোনাল্ড লুর আবারও বাংলাদেশ সফরে আসাটা অনেকেই একটু ভীতির চোখেই দেখছেন। যদিও তার চেয়েও বড় কর্মকর্তা তার দলে রয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অত্যান্ত দক্ষ ওই কর্মকর্তা স্টেট ডিপার্টমেন্টের রাজনীতি বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড। বাংলাদেশে কোনো ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এমন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ একই সঙ্গে এসেছেন তা সহসাই চোখে পড়েনি। এসেছেন, আলাদা, বিভিন্ন সময়ে। কিন্তু একই সঙ্গে যেহেতু তারা আসছেন সেখানে বড় কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েই হয়তো তারা আসছেন। 

অনেকেই ভেবেছিলেন, ভিসানীতির পর মার্কিনিরা চুপ করে থাকবে। কেউ আশঙ্কা করছিলেন, হয়তো বড় কোনো স্যাংশন আসতে পারে। কিন্তু এখন ওই স্যাংশনের শঙ্কাটা আপাতত কেটে গেছে। এবার আসছেন তারা একটি অবাধ, সুষ্ঠু  নির্বাচন অনুষ্ঠানের কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণে। কেননা এ সফরে তারা আলোচনা করবেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিরোধীদলে থাকা বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের সঙ্গে। একই সঙ্গে সুশীলসমাজের সঙ্গেও বৈঠক করবেন বলে শোনা গেছে। অনুমান করা যাচ্ছে এসব বৈঠকে চলমান রাজনৈতিক সংকটের একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানের চেষ্টা হয়তো তারা করবেন। সেটাতে সফল না হলে কী হতে পারে পরবর্তীতে সে ব্যাপারেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণও করতে পারেন। 

একই সঙ্গে যে গ্রুপে রয়েছেন ডোনাল্ড লু, একটি বেশি দুশ্চিন্তা তাকে নিয়েও। এর আগে ডোনাল্ড লুকে কয়জন চিনতেন, সেটা হয়তো জানা যাবে না। তবে পাকিস্তানের ইমরান খানের শাসনামল ভেঙে টুকরা হওয়ার পর ইমরান খান ডোনাল্ড লুকে নিয়ে কথা বলেছেন, তার পর থেকে এ ভদ্রলোককে সবাই একটু বেশিই চিনেছেন। বিশেষ করে ওনার যে কোনো উদ্যোগটা কেউ কেউ ভয়ও পাচ্ছেন। এর আগেও একবার এসে কোথায় কোথায় মিটিং করে গেছেন। ওইসব মিটিংয়ের কিছু খবর পত্রপত্রিকায় এসেছে, কিছু খবর বের হয়নি। এরপর ভিসানীতি নিয়ে বাংলাদেশের একটি মিডিয়ার সঙ্গে (তৃতীয় মাত্রা) একটা ইন্টারভিউ মানুষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখেছেন। 

ফলে সে ডোনাল্ড লু যখন সফরসঙ্গী ডোনাল্ড নুল্যান্ডের, এখানে কী কী হতে পারে এটা সত্যিই একটা দুশ্চিন্তারও বিষয়। কয়দিন আগেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ভূখণ্ডে সেন্টমার্টিন দ্বীপ লিজ চায় দখল চায়-এমন কথা বলে তোলপাড় হয়। ক্ষমতাসীন দলের জোটের নেতৃবৃন্দ থেকে আসে ওই বক্তব্য। এরপরই বাংলাদেশ সফরে ওই চার শীর্ষ নেতৃত্বের বাংলাদেশ সফরের ঘোষণা। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকাস্থ দূতাবাস ও স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্রও ওই বিষয়টা অস্বীকার করেছে। এরপর যেহেতু মার্কিন প্রতিনিধিরা আসছেন, তাদের কাছে বাংলাদেশে যারা ওই সেন্টমার্টিন দ্বীপ চেয়েছে বলে বক্তব্য দিয়েছেন, তারা এবার সরাসরি প্রশ্ন করার সুযোগ পাবেন। বাংলাদেশ ও এ বিষয়টার পরিষ্কার বক্তব্য ডোনাল্ড নুল্যান্ড ও ডোনাল্ড লুর কাছ থেকে জানা যাওয়ার সুযোগ মিলবে। এতে করে দুই দেশের মধ্যে যে চাওয়া-পাওয়ার বিষয়টি, সেটা সর্বসাধারণের কাছে ক্লিয়ার হবে, আসল ঘটনা কী। 

ইতিমধ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেছেন, এ সময় সেন্টমার্টিন প্রসঙ্গ উঠানোটা একটা রাজনৈতিক কৌশল। তবে মার্কিন প্রতিনিধিরা বিষয়টি নিয়ে কথা বললে কে সত্য সেটাও এখানে পরিষ্কার হয়ে যাবে বলে সাধারণ মানুষ মনে করছে। 

এদিকে বাংলাদেশে মার্কিন প্রতিনিধিদলের সফর উপলক্ষে একটা সমঝোতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। কেউ কেউ বলছে নির্বাচন প্রক্রিয়া কিভাবে অনুষ্ঠিত হবে সে ব্যাপারে একটা সমঝোতা হতে পারে। কিন্তু সেটা গ্রহণযোগ্য হবে কি-না সবার কাছে সেটাও প্রশ্ন। বিএনপি তাদের অবস্থান থেকে ছাড় দেবে না। তাদের দাবি ক্ষমতাসীনদের পদত্যাগ করে একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন জোট নির্বাচন চাচ্ছে, তাদের নির্বাচিত নির্বাচন কমিশন দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান। এ ব্যাপারে আরো অনেক প্রস্তাবনাও বাতাসে ভাসছে। তবে বাস্তবতা কী সেটা দেখার অপেক্ষা এখন সবার।

শেয়ার করুন