০৬ মে ২০১২, সোমবার, ০৯:০৬:০৫ পূর্বাহ্ন


দাবদাহে ঘরে বাইরে পুড়ছে মানুষ
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-০৪-২০২৪
দাবদাহে ঘরে বাইরে পুড়ছে মানুষ ঢাকার বাজার


বাংলাদেশে ঈদের পরপরই বর্ষবরণ করলো দেশ। এরপর থেকেই সূচনা দাবদাহের। গোটা দেশই এখন পুড়ছে প্রচণ্ড তাপে। সর্বোচ্চ রেকর্ড গড়ছে তাপমাত্রা। কখনো চুয়াডাঙ্গা, কখনো যশোর বা ঢাকা। দেশজুড়ে তিনদিনের হিট অ্যালার্ট জারি করেছিল সরকার। দেশজুড়ে তীব্র গরমে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। ২১ এপ্রিল থেকে ঈদের পর সকল স্কুল-কলেজসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কথা থাকলেও সরকার দাবদাহের কথা চিন্তা করে এক সপ্তাহ ছুটি বাড়িয়েছে। এ রিপোর্ট লেখাকালীন সময় (রোববার) যশোরে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪২.৬। 

রাস্তাঘাটে কর্মজীবী মানুষ অসহ্য গরম সহ্য করে ছুটছেন কর্মস্থলে। খেটে খাওয়া মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত। শুধু যে বাইরে এমনটা তা-ও না। ঘরেও স্বস্তি নেই। রাজধানীতে বিদ্যুৎ লোডশেডিং একটু কম হলেও রাজধানীর বাইরে স্থানভেদে লোডশেডিং অতিষ্ঠ মানুষ। বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় অনুভূত হচ্ছে গরম। কাঠফাটা রোদে তপ্ত চারপাশ। এর মধ্যে দিনের তাপমাত্রা আরো বাড়বে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। জানাচ্ছে তারা পুরো এপ্রিলজুড়েই সারা দেশে তাপপ্রবাহ থাকবে। মাঝেমধ্যে সামান্য বৃষ্টির দেখা মিললেও গরমের অস্বস্তি কমার সম্ভাবনা নেই। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। 

কমছে না নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম 

শুধু এখানেই সব সীমাবদ্ধ তা নয়। রমজান শুরুর আগ থেকেই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গিয়েছিল। গোটা রমজান ওভাবেই চলার পর ঈদের আগে সেটা আরো বৃদ্ধি পায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে। যেমনটা গরুর মাংস ও মুরগির মাংস, পেঁয়াজ, আলুসহ অন্যান্য জিনিসপত্রে। সাধারণ মানুষ ধারণা করেছিল, ঈদের পর ওই দাম কমে আসবে। কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি। তরিতরকারি বা সবজিতে কিছুটা কমতি লক্ষ করা গেলেও আলুর বাজার বাড়ছে প্রতিনিয়ত। আমদানি করার পরও বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। টিসিবির দেওয়া তথ্যমতে দেশি মুরগির মূল্য ৪৮০ থেকে ৫২০, বয়লার মুরগির মাংস ঈদের পূর্বে ১৮০-১৯০ থেকে ক্রমশ বাড়ছিল। এরপর ২২০ এ চলে রমজানের শুরুতে। সেখান থেকে ঈদপূর্বে জাম্প করে ২৫০-২৬০ এ চলে গিয়েছিল, সেটা থেকে খুব কমেনি। ২৩৫ থেকে ২৫০ করে এখন বিক্রি হচ্ছে। সব সময় বয়লার মুরগির সঙ্গে দেশি জাতের ফার্মে লালনপালন করা মুরগির দামে ঢের পার্থক্য থাকে। এখন এ দুইয়ে পার্থক্য ২০ থেকে ৩০ টাকা। গরুর মাংস সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে যেমনটা ঈদের আগে চলেনি, ঈদের পরও না। সেই ঈদের আগের সাড়ে ৭০০ থেকে ৭৮০ টাকা দরে এখনো হাকাচ্ছে মাংস বিক্রেতা। খাসির মাংস ৯৫০ থেকে ১১৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই বাজারে। টিসিবির দেওয়া তথ্যঅনুসারে (২০ এপ্রিল) নিম্নে দেওয়া গেল আরো কতিপয় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দর। আলু ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, পেঁয়াজ দেশি ৫০ থেকে ৬৫, পেঁয়াজ (আমদানি) ৫০ থেকে ৭০, চিনি ১৩৫ থেকে ১৪০, আদা ২২০ থেকে ৩২০, মসুর ডাল ১৩৫ থেকে ১৮০, বেগুন ৪০ থেকে ৬০। 

বাইরে যেমন পুরছে তাপপ্রবাহে, তেমনি ঘরেও সেই তাপপ্রবাহ নিত্যবাজার সদয়ে। 

বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই 

খরায় পুড়তে থাকা মানুষ প্রায়ই আকাশ পানে তাকিয়ে ঝড়বৃষ্টির প্রত্যাশায় থাকরেও সেখানে কোনো সুখবর লাভের মতো কিছু দেখছে না। মাঝেমধ্যে আকাশ ঘনকালো মেঘ দেখলেও মুহূর্তে উদাও। আবহাওয়া অফিস এখানেও দিচ্ছে হতাশার খবর। বৃষ্টির তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। 

আবহাওয়া অধিদফতরের আগের আভাস ছিল এই চলমান সপ্তাহে তাপমাত্রা বেড়ে ৪২ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যেতে পারে। সে আলামতই পরিলক্ষিত হয়েছে। শুক্রবার চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ ৪১.৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে, যা ওই সময় পর্যন্ত এ মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। 

সতর্কবার্তা 

আবহাওয়া অধিদফতরের সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, জলীয়বাষ্প বেশি থাকার কারণে অস্বস্তি বাড়তে পারে। একই সঙ্গে সমুদ্রের লঘুচাপটি পশ্চিমবঙ্গ ও আশপাশের এলাকায় অবস্থান করায় গরমের প্রভাব দেখা যাচ্ছে ভূপৃষ্ঠে। এর আগে দেশে ১৫ থেকে ১৩ দিন পর্যন্ত লাগাতার তাপপ্রবাহ থাকার রেকর্ড থাকলেও এবার চলতি মাসের ১৯ দিনই টানা তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আগামী বেশ কয়দিনেও আবহাওয়ায় পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। পূর্বাভাসে আরো বলা হয়েছে, এপ্রিলজুড়েই তাপমাত্রা ওঠানামা করবে ৩৬ থেকে ৪২ ডিগ্রির মধ্যে। তবে বাতাসে জলীয়বাষ্প বেশি থাকায় গরম অনুভূত হবে এর চেয়েও বেশি। এ সময় কোথাও কোথাও বৃষ্টি সাময়িক স্বস্তি দিলেও আগামী মে মাস পর্যন্তই দাবদাহ থেকে যাবে বলে জানাচ্ছেন তারা।

শেয়ার করুন