২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৭:৪৬:৪১ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান


আনু মুহাম্মদ বললেন
শুধুমাত্র ভারত নয়, যে যা চাচ্ছে তা দিতেই সরকার প্রস্তুত
বিশেষ প্রতিবেদক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৬-০৭-২০২৩
শুধুমাত্র ভারত নয়, যে যা চাচ্ছে তা দিতেই সরকার প্রস্তুত অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ


জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও সর্বজনকথা পত্রিকার সম্পাদক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, সুশাসন, গণতন্ত্র নাজুক হওয়ায় বাংলাদেশের মত দেশ বাধ্য হয় নানান পরাশক্তির চাহিদা পূরণ করতে। আওয়ামী লীগ তার শাসনামলে ভারতকে অনেক কিছুই দিয়েছে বলে খোদ প্রধানমন্ত্রীই জানিয়েছেন কয়েক বছর আগেই। শুধুমাত্র ভারত নয়, যে যা চাচ্ছে তা দিতেই সরকার প্রস্তুত। সমস্যা হচ্ছে, বিএনপি এখন আসলে খুঁজে পাচ্ছে না আর কী দেওয়ার আছে পরাশক্তিগুলোকে, যুক্ত করেন তিনি।    

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের আয়োজনে “দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতা ও পুঁজির পরিবর্তিত বৈশিষ্ট্য- বামপন্থীদের করণীয়” শীর্ষক সেমিনারে তিনি একথা বলেন।

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ আরো বলেন, ভারতীয় উপমহাদেশে বামপন্থী রাজনীতির ইতিহাসের অবতারণা করে নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতার জন্য বামপন্থীদের নতুন কর্মপদ্ধতি অবলম্বনের তাগিদ দেন। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো একত্রিত হয়ে “সাউথ এশিয়ান ইউনিয়ন” গঠন করা সম্ভব হলে পরাশক্তিগুলোর কূটচালকে প্রতিহত করা যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি। বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলো এধরণের উদ্যোগের সুচনা করতে পারে বলে জানান তিনি। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)’র কনফারেন্স রুমে ২৪ জুলাই সোমবার অনুষ্ঠিত সেমিনারে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. প্রতীপ চট্টোপাধ্যায়, ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. তানজীমউদ্দিন খান প্রমুখ। 

ড. প্রতীপ চট্টোপাধ্যায় দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে বৈশ্বিক রাজনীতির প্রভাব আলোচনার সাথে সাথে এ অঞ্চলের টাল-মাটাল রাজনৈতিক বাস্তবতায় বামপন্থীদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন এবং বৃহত্তর স্বার্থে  বামপন্থীদের একসাথে কাজ করার প্রয়োজনীয়তার উপর প্রাধান্য দেন। তিনি আরও বলেন যে “দক্ষিণ এশিয়ায় বামরাজনীতির গতিপথ ও কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণে বৈশ্বিক রাজনীতির চেয়ে আমাদের আঞ্চলিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতায় অধিক গুরুত্বারোপ জরুরি। তিনি ‘জিওপলিটিক্স’ শব্দের বদলে ‘জিওঅপ্রেশন’ ব্যবহার করা বেশি প্রাসঙ্গিক বলে মনে করেন। কারণ হিসেবে তিনি জানান, ভূ-রাজনৈতিক কৌশলের নামে আসলে একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের জনগণের উপর শোষণ-নির্যাতন নেমে আসে। 

পরবর্তী পরাশক্তি হিসেবে নিজেদের জায়গা সুরক্ষিত করার জন্য চীনের যে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চুক্তি রয়েছে এবং সেসবের আলোকে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সাথে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে চীনের নতুন কৌশলগত পদক্ষেপ নিয়ে বিস্তার আলাপ করেন আলোচক তানজীমউদ্দিন খান। যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি এক্সন মবিলকে গভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ দেওয়ার পাঁয়তারা এবং আদানির সাথে বিদ্যুৎ সংক্রান্ত চুক্তি দেশের স্বার্থবিরোধী উল্লেখ করেন অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান এবং একে ভূ-রাজনৈতিক চাপে নতজানু কূটনীতির ফল হিসেবে চিহ্নিত করেন। বিশ্বব্যাপী পুঁজিভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রভাবে দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্রগুলোর কল্যাণকর ভূমিকার পরিবর্তে রাষ্ট্রগুলো কোম্পানিসূলভ আচরণ করছে বলে ইঙ্গিত করে তানজীমউদ্দিন খান বলেন “রাষ্ট্রগুলো একেকটা কোম্পানিতে পরিণত হচ্ছে, পুঁজির প্রভাবে যেখানে সাধারণ মানুষের অধিকার দারুণভাবে নিগৃহীত হচ্ছে।”

সেমিনারে উপস্থিত আলোচকেরা দক্ষিণ এশিয়াকে বর্তমান বৈশ্বিক রাজনীতির অন্যতম উত্তপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করেন। সেমিনারে ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাওয়া এই অঞ্চলের রাজনৈতিক গুরুত্ব ও প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। বক্তারা বলেন, নাইন-ইলেভেনের পর এই অঞ্চলের বিশেষত বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের উপর বিশেষ নজর পড়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক পলিসি ও চীনের ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড ইনিশিয়াটিভ’ কৌশলগত কর্মপন্থার আওতায় এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে চীনের প্রভাব বিস্তারের সচেতন প্রচেষ্টাকে আলোচনায় আনেন বক্তারা।

সেমিনারে ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা ছাড়াও অন্যান্য বামপন্থী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও উপস্থিতি ছিলেন। সেমিনারে আরো উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. শাকিল আহম্মেদ, ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অনিক রায়, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শোভন রহমান, বিপ্লবী ছাত্র-মৈত্রীর সভাপতি সাদেকুল ইসলাম সোহেল, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ ও একই সংগঠনের ঢাবি শাখার আহ্বায়ক আরমানুল হক। 

শেয়ার করুন