২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৬:২০:৩১ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান


দেশকে সাইফুল হক
সৌজন্য সাক্ষাতের ছবি প্রচার করে নির্বাচনকে বৈধতা দেয়া যাবে না
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-০১-২০২৪
সৌজন্য সাক্ষাতের ছবি প্রচার করে নির্বাচনকে বৈধতা দেয়া যাবে না সাইফুল হক


বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সাইফুল হক বলেছেন, এসমস্ত সার্টিফিকেট আর সৌজন্য সাক্ষাতের বক্তব্য ছবি প্রচার করে ডামি নির্বাচনকে বৈধতা দেয়া যাবে না। বাংলাদেশের মানুষ কিভাবে সরকারে প্রতি অনাস্থা দিয়েছে তা বিদেশীরা বুঝে গেছে। আমেরিকা থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সাথে এক সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বলেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ

দেশ: যেভাবেই বলেন না কেনো সরকার একটি নির্বাচন করে ফেলেছে। এখন তারা আবার ক্ষমতায়। কিন্তু আপনারা জনগণকে তো নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিলেন। বিভিন্ন ধরনের আন্দোলনও করেছেন। কিন্তু ফলাফল কি হলো? এনিয়ে আপনার মতামত কি?

সাইফুল হক: প্রথম কথা হলো দেশের ভোটাররা এবং জনগণ ৭ জানুয়ারির ডামি নির্বাচনে ভোট না দিয়ে গণআস্থা দেখিয়েছেন। এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বার্তা। যেখানে দেশের নব্বইভাগ মানুষ তামাশার নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করেছে। এখন এই যে নির্বাচনকে যারা গণপ্রত্যাখান করেছে সেই জনগণকে রাজপথের কর্মসূচিতে নামাতে হবে। এটা বিরোধী দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ। 

দেশ: এটাকে এখন কেনো রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ বলছেন?

সাইফুল হক : চ্যালেঞ্জ বলছি একারণেই যে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট না দিয়েই নির্বাচন বর্জন করেছে। কিন্তু রাজপথেতো এটার একটা বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর ব্যাপার আছে। কেনোনা আপনিই বলেছেন যে সরকারতো নির্বাচনটা করেই ফেলেছে। তাহলে জনগণতো নির্বাচনতো প্রতিরোধ করতে পারলো না? কিন্তু এটাতো ঠিক মানুষ একটা বার্তা দিয়েছে যে তারা এই ডামি নির্বাচনটা মানে না। তারা অনাস্থা জানাচ্ছে। এই অনাস্থাতো রাজপথে নিয়ে আনতে হবে, একটা সংগঠিত আকারে। এটাইতো এখন বিরোধী দলের জন্য চ্যালেঞ্জ। আরেকটি কথা হচ্ছে যারা নির্বাচনকে প্রত্যাখান বা বর্জন করেছে তারা পরস্পর পরস্পরের সাথে রাজপথে একটা ঐক্য তৈরি করেছে। অন্যদিকে যারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছে তাদের মধ্যে ২৭টি দলই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সাক্ষ্য দিচ্ছে যে এটা কারসাজি ডামি নির্বাচন। এটা তারা প্রকাশ্যেই বলে যাচ্ছে এই নির্বাচন অজানা জায়গা থেকে কন্ট্রোল করা হয়েছে। অভিযোগ করেছে আগের রাতে ভোট দেয়া হয়েছে। এমন হাজার হাজার অভিযোগ রয়েছে। এরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে স্বীকার করে নিচ্ছে এটা কোনো নির্বাচনই না। এমনকি যারা নৌকা মার্কা নিয়ে নির্বাচন করেছেন তারাও সাক্ষ্য দিয়েছেন যে সুষ্ঠু ভোট হয়নি। কিভাবে ভোট ডাকাতি বা কারসাজি হয়েছে। সরকার যাকে চেয়েছে তারাই নির্বাচিত হয়েছে। হয়তো সাংবিধানকিভাবে টেকনিক্যালি সরকারকে ক্ষমতায় থাকার একটা বৈধ্যতা দিয়েছে। কিন্তু এধরনের নির্বাচনকে রাজনৈতিক, নৈতিক বৈধতার ক্ষেত্র বিবেচনা করলে বাস্তবে কিছুই নেই এতে। এইজন্য সরকার ডেসপারেটলি বিদেশী মুরব্বীদের সার্টিফিকেটের জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছে। কে ফুল নিয়ে আসলো...। এনিয়ে মন্তব্য যে করা হচ্ছে..। তো এসমস্ত সার্টিফিকেট আর সৌজন্য সাক্ষাতের বক্তব্য দিয়ে ডামি নির্বাচনকে বৈধতা দেয়া যাবে না। বাংলাদেশের মানুষ যেভাবে অনাস্থা দিয়েছে তা বিদেশীরা বুঝে। এটা ঠিক যে আমরা কিছুটা চাপে পড়েছি। মানুষ যে বার্তা দিয়েছে সেটা আবার পুনর্গঠিত, পুনর্বিন্যস্থ, পুনর্বিন্যাস হবে। 

দেশ: আপনি কি মনে করে মাঠে আপনাদের যে অবস্থা এখন, এতে করে সামনে দিনগুলিতে সেভাবে আন্দোলনের মাঠে নামতে পারবেন? মাঠ গোছাতে পারবে..। 

সাইফুল হক: না আমি মনে করি না এটা খুব কঠিন। যে কোনো সময়েই একটা স্ফুলিঙ্গ হবে। মানুষেন জীবনে যে গ্যাসের চাহিদা..দ্রব্যমূল্যের যে অবস্থা..মানুষের জীবনে যে ভয়াবহ সঙ্কট- তা তো অবর্ণনীয়। তার সাথে রাজনৈতিকভাবে তারা দেশটাকে জবরদস্তি করে চালাতে গিয়ে প্রকান্তারে অনিশ্চিত জায়গায় নিয়ে গেছে। একারণে কোনো সময়ে রাজপথে পুঞ্জিভূত ক্ষোভের একটা বহিঃপ্রকাশ ঘটতে পারে। 

দেশ: কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে ৭ জানুয়ারি নির্বাচন বর্জনের ডাক দেয়া পর্যন্ত আপনারা বিশেষ করে বিএনপিসহ সমমনারা যে একসাথে অর্থ্যাৎ যুগপত আন্দোলনে ছিলেন তেমনভাবে ভবিষ্যতে কি ঐক্যবদ্ধ থাকবেন? যেমন বলা চলে আপনারা বাম ডান উদার গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক ধারায় যারা বিশ্বাস করেন রাজপথে গড়ে উঠা রাজনৈতিক দলের সে ঐক্য কি টিকে থাকবে?

সাইফুল হক : আমরা ভবিষ্যত বলতে এমনটা বলছি না যে কালকেই একমঞ্চ হবে। আমরা মনে করি রাজপথে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সব বিরোধী দলের সাথে একটা ঐক্য গড়ে উঠেছে। আগামী দিনগুলিতে রাজপথোর এই ঐক্যটাকে আরো সংহত জোরদার করা। আমরাতো এরশাদ পিরিয়ডে আটদল, সাতদল মিলে আন্দোলন করেছি না? সামনের দিনে বিরোধী দলের মধ্যে সার্বিক যোগাযোগের জন্য একটি লিয়াজোঁ কমিটি করবো, যাতে সমন্বয়টা জোরদার করা যায়। একথা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন যে দু’একটি পেশাজীবী সংগঠন যারা আমরা ছাত্র-শ্রমিকসহ আপামর জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারিনি। তাদের কিন্তু রাজপথে নামাতে পারিনি। এটাও সামনের দিনে একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ হবে। পাশাপাশি রাজনতিক প্লাটফরম ছাড়াও সমাজের একটি বৃহত্তর জনগোষ্ঠী যারা বিক্ষুদ্ধ হয়ে আছেন এমন জনগণকে রাজপথে এসে আন্দোলনে নামতে উদ্ধুদ্ধ করতে হবে। আর সরকারতো জনগণের কেনো পপুলার ম্যানডেইট নেই। এসরকারতো একটা ফাপা সরকার। তারাতো টিকে আছে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে প্রশাসনের ওপর টিকে আছে। ভয়ের জায়গা হলো সরকারতো নিয়মতান্ত্রিকভাবে ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতা পরির্বতনের জায়গাটা বন্ধ করে দিয়েছে। এধরনের পরিস্থিতিতে প্রাসাদ ষড়যন্ত্র জোরদার হয়। রাস্তাটা বাড়ে আর কি। কাজেই এধরনের নৈরাজ্যকর একটা পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে দেশ না চলে যায় তাতে শুধু আওয়ামী লীগ ডুববে না, পুরো দেশটা বিপন্ন হবে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে যে এভাবে ক্ষমতায় থাকতে গিয়ে বাংলাদেশকে নিয়ে পরাশক্তিগুলি বাংলাদেশকে ঘিরে তাদের নীতি কৌশলের একটা ভূ-রাজনৈতিক লীলা ক্ষেত্রে পরিণত করেছে। যেটা স্বাধীনতা স্বার্বভৌমত্বের জন্য বিপদজ্জনক। তাই ৭ জানুয়ারির এই ডামি নির্বাচন বহৃমাত্রিক সঙ্কটকে ঘনীভূত করবে। একথা ঠিক যে বিরোধী দল শেষ মুহূর্তে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ঝুঁকি নিয়ে কর্মসূচি দিতে পারেনি-এটা স্বীকার করতে আমরা দ্বিধা নেই। 

দেশ: এমন পরিস্থিতিতে আপনি কি মনে করেন ভবিষ্যতে আন্দোলন নিয়ে হতাশা আছে বিরোধী দলের মধ্যে..। 

সাইফুল হক: রাজনৈতিক দলগুলি মধ্যে কিছুটা হতাশা আছে। সেটা আমি অস্বীকার করবো না। কিন্তু ব্যক্তি মানুষ হতাশার জন্য আত্মসর্মপন করে। কোটি কোটি লোকতো আর আত্মসমর্পন করবে না। মানুষ প্রতিরোধ প্রতিবাদ করবে, ঘুরে দাঁড়াবে। কিছু হতাশা যেটা আছে সেটা খুব অল্প দিনেই তা কাটিয়ে উঠবে।

শেয়ার করুন