২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০১:১০:০৬ অপরাহ্ন


বাংলাদেশে নিষিদ্ধ আতঙ্কে জামায়াত
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-০৮-২০২৩
বাংলাদেশে নিষিদ্ধ আতঙ্কে জামায়াত


বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের মধ্যে গ্রেফতার আতঙ্ক বিরাজ করছে। জামায়াতের নিবন্ধন ইস্যুতে আপিল শুনানি ১০ আগস্ট। নিবন্ধন ইস্যুতে আপিল শুনানির দিনই দলটিকে নিষিদ্ধ করা হতে পারে-এমন আশঙ্কা বিরাজ করছে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে। আর এর আগে জামায়াতের নেতাকর্মীরা ব্যাপকভাবে ধর পাকড়ের শিকার হতে পারে বলেই তাদের মধ্যে আশঙ্কা।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ইস্যুতে আপিল শুনানি আগামী ১০ আগস্ট ধার্য করেছেন আদালত।  সম্প্রতি প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ৭ সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ দিন ধার্য করেন। উচ্চ আদালতের রায়ে নিবন্ধন বাতিল হওয়ার পর রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করে নিবন্ধন দাবি করায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগের বিষয় শুনানির জন্যে ওইদিন কার্যতালিকায় ছিল।  শুরুতেই বিষয়টি উল্লেখ করে করেন রিটকারি আইনজীবী ব্যারিস্টার তানীয়া আমীর। আপিল বিভাগকে তিনি বলেন, মামলা কার্যতালিকার মধ্যেই ৪ আগস্ট  জামায়াত সমাবেশ করলে আদালত অবমাননা হবে। এ সময় আপিল বিভাগ জানায় আদালত অবমাননার আবেদন আনুন। 

পরে আদালত শুনানির এ দিন ধার্য করেন। জামায়াতের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে এবং তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে গত ২৬ জুন আবেদন করেছেন মওলানা সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, মো. হুমায়ুন কবির ও ইমদাদুল হক নামে তিনজন। ব্যারিস্টার তানিয়ার আমীর বলেন, জামায়াতের বিরুদ্ধে আমরা দুটি আবেদন করেছি। তার মধ্যে একটি হলো আদালত কর্তৃক নিবন্ধন বাতিল হওয়ার পর রাজনৈতিক কর্মসূচির মাধ্যমে সেই নিবন্ধন ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি করেছে তারা, যেটা আদালত অবমাননার শামিল। এর আগে  ২৬ জুন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন নিয়ে চলমান মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দলটির মিছিল-সমাবেশসহ সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়।

এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে গ্রেপ্তার ও হয়রানি করছে বলে অভিযোগ করেছে জামায়াতে ইসলামী। গত ৬ আগস্ট রোববার বিভাগীয় শহরে বিক্ষোভ মিছিল থেকে এবং আগের রাতে জামায়াতের ৩২ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে দলটি।

জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মুজিবুর রহমান এক বিবৃতিতে এসব অভিযোগ করেন। এদিকে ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, গত ৪ আগস্ট শুক্রবার রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল করার পর ২ দিনে ২০ নেতাকর্মীকে ধরে নিয়ে ‘গায়েবি মামলায়’ গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ। এতে আরও বলা হয়েছে, ৫ আগস্ট শনিবার দুপুরে মিরপুর মাজার রোড থেকে ঢাকার দারুস সালাম থানা জামায়াতের আমির হাবিবুল্লাহ রুমিকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির বিবৃতিতে বলেছেন, আজ কুমিল্লায় শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে সাতজনকে আটক করে। 

আগের রাতে বাড়িতে অভিযান চালিয়ে আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করে। তিনি আরও জানান, সাতক্ষীরা শহর শাখার সেক্রেটারি খোরশেদ আলম এবং রাজশাহীতে ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদিকে ময়মনসিংহে ভাঙচুর ও নাশকতামূলক কর্মকান্ডের অভিযোগে জামায়াতের ১৬০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। গত ৬ আগস্ট রোববার রাতে কোতোয়ালি মডেল থানার এক উপপরিদর্শক মামলাটি করেন। এতে ১২ নেতার নাম উল্লেখ করা হয় এবং অন্য আসামিরা অজ্ঞাত। পরে ৭ আগস্ট সোমবার পৃথক অভিযানে পুলিশ তিন নেতাকে গ্রেপ্তার করে পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে তাদের আদালতে পাঠিয়েছে। গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, সারাদেশে মিছিল-সমাবেশের অনুমতি না দেওয়ার প্রতিবাদ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে রোববার সকালে বিক্ষোভ মিছিল করেন মহানগর জামায়াতের নেতাকর্মীরা। নগরীর সানকিপাড়া রেলক্রসিং মোড় থেকে জিলা স্কুল মোড় পর্যন্ত বিক্ষোভ করেন তারা। এতে সড়কে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে।

রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন নেই। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দলটিকে নিষিদ্ধেরও দাবি আছে বিভিন্ন মহলের। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের বিচার ও দন্ড কার্যকর করাসহ সার্বিক প্রেক্ষাপটে ২০১৩ সাল থেকে জামায়াতে ইসলামীর স্বাভাবিক কার্যক্রম দৃশ্যমান নয়। কিন্তু পুলিশের অনুমতি সাপেক্ষে সবশেষ ঢাকার মতিঝিলে ২০১৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি তারা বিক্ষোভ মিছিল করেছিল।

দীর্ঘ ১০ বছরের বেশি সময় পর গত ১০ জুন রাজধানীতে সমাবেশ করেছে দলটির নেতাকর্মীরা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ, দলের আমির ডা. শফিকুর রহমানসহ জাতীয় নেতা ও ওলামায়ে কেরামের মুক্তি এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দাবিতে গত ১০ জুন রাজধানীতে সমাবেশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এরপর থেকে দলটি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ করে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবেদক প্রতাশ করা হয়। বলা হয় সরকারের সাথে আপোষ রফা করেই দলটি রাজধানীতে সমাবেশ করেছে। যদিও ক্ষমতাসীন দল এব্যাপারে তাদের শক্ত অবস্থানের কথা তুলে ধরে। 

তবে সম্প্রতি ব্যপাকভাবে জামায়াতের নেতাকর্মীরা গ্রেফতার হওয়ায় দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তারা আশঙ্কা করছে নিবন্ধন ইস্যুতে আপিল শুনানির আগে তাদের আরো নেতাকর্মী গ্রেফতার করা হবে। দলটির বেশ কয়েকজন নেতা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ তাদের বিভিন্ন ইউ টিউব চ্যানেলে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার এড়াতে নিজ নিজ গৃহে না থাকার পরামর্শ দিয়ে প্রচারণাও চালাচ্ছে। দীর্ঘ সময় পর পুলিশের মৌখিক অনুমতি নিয়ে গত ১০ জুন রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সমাবেশ করে জামায়াত। সমাবেশে তারা নিজেদের নিবন্ধন ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি করে এবং দলের নেতা-কর্মীদের মুক্তি চায়। 

আবার এই আগস্ট মাসেই বেশ কয়েকবারই সমাবেশ করার অনুমতি চেয়েছে জামায়াত। তবে একটি সুত্র জানায়, জামায়াতের নিবন্ধন ইস্যুতে আপিল শুনানি ১০ আগস্ট আসলে কি হবে তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারে না। তাই বর্তমানে বিভিন্ন স্থানে জামায়াত কর্মীদের আটক বা গ্রেফতার নিয়ে দলটি সরকারের বিরুদ্ধে যা প্রচার করছে তা একেবারে রাজনৈতিক। এধরনের প্রচার-প্রজারণা চালিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী দলটি আসলে আন্তর্জাতিক সহানুভুতির আশায় আছে কি-না সেটিই দেখার বিষয়। কেননা অনেকে মনে করে থাকেন, ইতোমধ্যে মার্কিন নতুন ভিসানীতির সুযোগেই গত ১০ জুন রাজধানীতে সমাবেশ করতে সুযোগ নেয় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

শেয়ার করুন