২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৩:০৪:৩৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম :


দেশকে কামরুল আহসান
পঞ্চাশ বছরেও শ্রমজীবী মানুষের কাঙ্ক্ষিত দেশ হয়ে উঠেনি
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২১-০৬-২০২৩
পঞ্চাশ বছরেও শ্রমজীবী মানুষের কাঙ্ক্ষিত দেশ হয়ে উঠেনি কামরুল আহসান


জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন সভাপতি এবং শ্রমিক কর্মচারি ঐক্যপরিষদ (স্কপ)’র কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সদস্য কামরুল আহসান বলেছেন, শ্রমিক বান্ধব সংজ্ঞাটা কি? কি মাপকাঠিতে এটা নিরূপণ হয়? আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, স্বাধীনতার পর গত পঞ্চাশ বছরে শ্রমজীবী মানুষের কাঙ্ক্ষিত দেশ হয়ে উঠেনি বাংলাদেশ। সীমাহীন আয় বৈষম্য, সস্তামজুরি, শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রতিবন্ধকতা, সামাজিক সুরক্ষা নেই, মানুষ হিসেবে মর্যাদা নেই, মূল্যস্ফীতির কারণে খাদ্যপণ্যসহ দ্রব্যমূল্য নাগালের বাইরে, বৈষম্য কমাতে জাতীয় নিম্নতম মজুরির ব্যবস্থাও নেই। এ নিয়ে কথা বলা কি অন্যায়?

সংসদে অত্যাবশ্যক পরিষেবা বিল ২০২৩। বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে  বলা হয়েছে ১৯৫২ সালের এসেনশিয়াল সার্ভিসেস (মেইনটেন্স) অ্যাক্ট এবং ১৯৫৮ সালের এসেনশিয়াল সার্ভিসেস (সেকেন্ড) অর্ডিন্যান্স রহিত করে নতুন এই আইন করা হচ্ছে। এনিয়ে বাংলাদেশের শ্রমিকরা ফুসে উঠেছে। দিয়েছে আন্দোলন সংগ্রামের ডাক। আর পুরো বিষয়টি নিয়ে কথা হয় শ্রমিক আন্দোলনে সন্মুখভাগের অন্যতম যোদ্ধা কামরুল আহসানের সাথে। তার সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন দেশ পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ। 

দেশ: এ ধরনের বিল কেনো আনা হয়েছে?

কামরুল আহসান: বিলটি আইনে পরিণত করার জন্য। আর এখন যেভাবে আছে সেভাবে বিলটি সংসদে পাশ হয়ে আইনে পরিণত হলে এটি মালিকদের সুরক্ষা কিংবা প্রতিপক্ষকে (শ্রমিক) ঘায়েল করার কাজে প্রয়োগ করা করা হবে। বিলে যেসব বিধিবিধানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তাতে সরকার জনস্বার্থে দরকার মনে করলে কোনো জরুরি বা অত্যাবশ্যক পরিষেবার ক্ষেত্রে ধর্মঘট নিষিদ্ধ করতে পারবে। সরকার ধর্মঘট নিষিদ্ধ করার পরও যদি কোনো ব্যক্তি ধর্মঘট শুরু করেন বা অব্যাহত রাখেন তাহলে তিনি এক বৎসর কারাদণ্ড, বা ২৫ হাজার টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। কেউ যদি কোন ধর্মঘটে অংশগ্রহণ করে বা ধর্মঘট চলমান রাখার জন্য উৎসাহিত করে তাহলে ৬ মাস কারাদন্ড বা ২৫ হাজার টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। আবার কেউ যদি ধর্মঘট চলমান রাখার জন্য বা সমর্থন করার জন্য চাদা প্রদান করে তাহলে ১ বৎসর কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। 

দেশ : সরকারের অন্যতম শরিক আপনারা। আপনাদের মতো শ্রমিক নেতারা থাকতে কোনো পরামর্শ নেয়া হয়েছিলো আপনাদের?

কামরুল আহসান : রাজনৈতিক শরিক, তবে শেয়ার হোল্ডার নই। এই বিষয়ে কোন পর্যায় আলোচনা হয়নি পরামর্শ তো নয়ই। উপরন্তু ত্রি-পক্ষীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াকে উপেক্ষা করে এই বিল উত্থাপিত হয়েছে। শ্রম সংক্রান্ত যে কোন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত টিসিসি (সরকার-মালিক-শ্রমিক পক্ষ সমন্বয়ে গঠিত) মিটিং এর মাধ্যমে অনুমোদিত হওয়ার কথা। কিন্তু ত্রি-পক্ষীয় কোন সভায় এই বিলের ব্যাপারে কোন আলোচনা হয়নি।

দেশ: এই পরামর্শ না নেয়ার কারণ কি?

কামরুল আহসান: এ ই  ইস্যু মালিক ও সরকারের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট। শ্রমিকরা তাদের অধিকার হরণকারী কোন আইন মেনে নেবে না, তাই। শ্রমিকের কম মজুরি মালিকের বেশি মুনাফার অন্যতম প্রধান শর্ত। শ্রমিকের মজুরি কম দেয়ার জন্যই আইনের নানা বাধা তুলে তাদেরকে সংগঠিত হতে দেয়া হয় না। এই সস্তা শ্রমিকের কথা বলে বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণের চেষ্টা করা হয়। অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা আইন বাস্তবে সেই সব বিনিয়োগকারীদের সেবা করবে।  শ্রমিককে আইনের শিকলে বেঁধে শোষণকে তীব্র করা, প্রতিবাদকে বন্ধ করে দেশি বিদেশী লুটপাটকে সহায়তা করা, ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার কেড়ে নেয়ার লক্ষ্যেই এই বিল উত্থাপন করা হয়েছে। 

প্রশ্ন: বিষয়টা কি এরকম কি-না যে আপনারা বিদেশি দের কাছেই গিয়ে নালিশ করেন। তাই সরকার আপনাদের মতো শ্রমিক নেতাদের পাশ কাটিয়ে চলছে? 

কামরুল আহসান : আমি শ্রমিক আন্দোলনের একজন কর্মী হিসেবে দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই আমরা কোন বিদেশীর কাছে নালিশ করতে যাই না। আমাদের অতীত ইতিহাস অত্যন্ত গৌরবোজ্জ্বল। আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে এদেশের শ্রমিকরা তাদের দাবি ও অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে।

দেশ : এখন এ-ই ধরনের বিলের বিরুদ্ধে কি করবেন? শ্রমিকরা কি ঐক্যবদ্ধ?

কামরুল আহসান: এই বিল উত্থাপনের পরই আমরা আমাদের প্রতিবাদ জানিয়েছি। শ্রমিক কনভেনশনের মাধ্যমে আমরা এই বিল সম্পর্কে শ্রমিকদের সচেতন করার কর্মসূচি নিয়েছি। শ্রমিক কর্মচারি ঐক্যপরিষদ (স্কপ) এর উদ্যেগে রাজপথে বিক্ষোভ করেছি, শ্রম ন্ত্রণালয়ে বিলপ্রত্যাহারে জন্য স্মারকলিপি প্রদান করেছি, জাতীয় সংসদের স্পিকার ও শ্রম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে স্মারকলিপি দিয়েছি। সংবাদ সম্মেলন করে জাতীর সামনে বিষয়টি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি ১৩ জুন, ২০২৩ ঢাকাসহ দেশের প্রত্যেকটি জেলায় জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি পাঠোনো হয়েছে। আগামী ২২জুন, ২০২৩ তারিখে শ্রমিক কর্মচারি ঐক্যপরিষদের (স্কপ) উদোগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে শ্রমিকদের পদযাত্রা কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত রয়েছে।

দেশ: এ-র বিরুদ্ধে এখন আন্দোলন করে কোন লাভ  হবে? যা হবার তা হয়ে গেছে।

কামরুল আহসান: শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা ও দাবি আদায়ে আন্দোলনের কোন বিকল্প নেই। লড়াই সংগ্রাম করেই অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হয়।

দেশ: এটা কি ঠিক যে শ্রমিকরা কথায় কথায় আন্দোলন করে, মিল কল কারখানা বন্ধ করে দেয়। বিদেশে এ-ই নিয়ে বাংলাদেশের শ্রমিকদের বিরুদ্ধে দুর্নাম আছে।

কামরুল আহসান: না এটা ঠিক নয়। শ্রমিকরা অধিকার ক্ষুন্ন হলে আন্দোলন করতে বাধ্য হয়। বিদেশে এ নিয়ে কোন দুর্নাম নেই। বরঞ্চ বিদেশীরা এখন সরকারকে বাংলাদেশের শ্রম পরিবেশের উন্নয়ন ও শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করার পরামরর্শ দেয়। অন্য দিকে স্বার্থহানী হলে, অধিকার ক্ষুণ্ণ হলে ইউরোপ-আমেরিকার শ্রমিকরা কিভাবে তার প্রতিক্রিয়া দেখায় তার সাম্প্রতিক উদাহরণ ফ্রান্স, জার্মান, ইতালী ও ইংল্যান্ডের শ্রমিকদের বিক্ষোভ  ও ধর্মঘট কর্মসূচি পালন। 

দেশ: সরকারতো শ্রমিক বান্ধব সরকার। শুধু শুধু সমালোচন করেন কেনো।

কামরুল আহসান: শ্রমিক বান্ধব সজ্ঞাটা কি? কি মাপকাঠিতে এটা নিরূপন হয়? আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, স্বাধীনতার পর গত পঞ্চাশ বছরে শ্রমজীবী মানুষের কাঙ্খিত দেশ হয়ে উঠেনি বাংলাদেশ। সীমাহীন আয় বৈষম্য, সস্তা মজুরি, শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রতিবন্ধকতা, সামাজিক সুরক্ষা নেই, মানুষ হিসেবে মর্যাদা নেই, মূল্যস্ফিতির কারণে খাদ্যপণ্যসহ দ্রব্যমূল্য নাগালের বাইরে,  বৈষম্য কমাতে জাতীয় নিম্নতম মজুরির ব্যবস্থাও নেই। এ নিয়ে কথা বলা কি অন্যায়?

দেশ: শ্রমিকদের সমস্যা কি..

কামরুল আহসান: ট্রেড ইউনিয়ন অধিকারের সমস্যা, নিরাপদ কর্মক্ষেত্রের সমস্যা, শোভন কাজের সমস্যা, কর্মের নিশ্চয়তা, কম মজুরি, আয় বৈষম্য, জাতীয় নিন্মতম মজুরি না থাকা, মূল্যস্ফিতির কারণে খাদ্যপণ্যসহ দ্রব্যমূল্য ক্রয়ে নাজেহাল, দুর্ঘটনায় নিহত/আহত হলে ক্ষতিপুরণ আইন উপযোগী না থাকা ইত্যাদি।

দেশ: শ্রমিকদের সাথে সরকারের এখন সম্পর্ক কেমন?

কামরুল আহসান : আমার প্রশ্নোত্তর গুলোর মধ্যেই এর উত্তর আছে বলে মনে করি।

দেশ: শ্রমিকদের দাবি কি সরকার মেনে নেয়নি?

কামরুল আহসান : আমরা জাতীয় নিন্মতম মজুরিসহ নয় দফা দাবিনামা দিয়েছি। সরকারের মন্ত্রণালয় এই নিয়ে একবার বসেছে। কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।

দেশ: সরকারকে পরামর্শ কি? শ্রমিকদের মান উন্নয়নে সরকারের সাথে কোনো যোগাযোগ হয়েছে?

কামরুল আহসান: উপরের প্রশ্নটিতে এর উত্তর রয়েছে।

শেয়ার করুন