০১ মে ২০১২, বুধবার, ০৯:২২:৫১ অপরাহ্ন


বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের অভিযোগ
আন্দোলন থেকে জনদৃষ্টি সরাতে ‘সরকার জঙ্গি নাটক করছে'
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-০৮-২০২৩
আন্দোলন থেকে জনদৃষ্টি সরাতে ‘সরকার জঙ্গি নাটক করছে'


আন্দোলন থেকে জনদৃষ্টি সরাতে আর বিদেশীদের ‘জুজুর’ ভয় দেখাতে ‘সরকার জঙ্গি নাটক করছে’ বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রোববার দুপুরে এক আলোচনা সভায় সিলেটের কুলাউডায় জঙ্গি ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, ‘‘ কি রকম কুটকৌশলী এরা এবং কি রকম ভয়াবহ এরা। তার প্রমাণ গতকালের পত্রিকায় দেখেছেন কুলাউড়াতে হঠাত করে দেখা গেলো শহর সঙ্গে লাগা একটু দূরে একটা বাড়িতে একটা জঙ্গি বিরোধী অভিযান হয়েছে। সেখানে থেকে ৬জন মহিলা, চারজন শিশু, একজন শিশু গ্রেফতার করেছে। সঙ্গে আবার কি? ডেটোনেটার, তিন কেজি বিস্ফোরক… ভয়াবহ।”

‘‘ হঠাত করে কোত্থেকে আসলো? কারা আনলো? কিভাবে আনলো? ওই যখন আন্দোলন উঠতে থাকে তা আগে জঙ্গি নাটক অনুষ্ঠিত হয়। প্রত্যেকবার দেখবেন, প্রতিটি ক্ষেত্রে দেখবেন এবং এটা হচ্ছে অমিনাস সাইন।”

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘এখন দেখবেন যে জঙ্গি কথা বলে বলে মানুষকে ডাইভার্টট করবে, তাদের দৃষ্টি সরিয়ে নেবে। নিয়ে এই পশ্চিমা বিশ্বকে আবার সেই জুজুর ভয় দেখাবে যে, এই দেখো বাংলাদেশে আমরা যদি না থাকি জঙ্গি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।”

‘‘ এভাবে বিভিন্নভাবে এই নাটক করতে করতে করতে তারা এই জায়গায় এসে পৌঁছেছে। এখন তারা পুরো বাংলাদেশকে গিলে ফেলেছে। গিলে ফেলার পরে কি হয়েছে? দেখা যাচ্ছে যে, এখন তাদের বিভিন্ন যে অপকীর্তিগুলো সেই অপকীর্তিগুলো শুধু বাংলাদেশে না, বিদেশেও সেটা প্রচার হতে শুরু করেছে।”

গতকাল সিলেটের কুলাউড়ার পাহাড়ি এলাকায় কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম(সিটিটিসি) ইউনিট জঙ্গি আস্তায় অভিযান চালিয়ে ১০জনকে আটক করে। আটকরা ‘ইমাম মাহমুদ কাফেলা’ নামে নতুন একটি জঙ্গি সংগঠনের সদস্য। তাদের আস্তানা থেকে আড়াই কেজি বিস্ফোরক, ৫০ কেজি  ডেটোনেটরম প্রশিক্ষন ম্যুানুয়ল, কমান্ডো বুট,জিহাদি বই, নগদ তিন লাখ ৬১ হাজার টাকা, স্বর্ণাংকার, চুরি-রাম দাসহ অন্যান্য ধারালো অস্ত্র প্রভৃতি উদ্ধার করেছে।

রাজধানীর সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে বাংলাদেশ ক্রীড়া উন্নয়ন পরিষদের উদ্যোগে ক্রীড়া সংগঠক আরাফাত রহমান কোকোর ৫৪তম জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।

কোকোর জীবনী নিয়ে একটি স্মারণিকা এবং তার নামে ক্রীড়াঙ্গনে পুরস্কার প্রবর্তনের জন্য আয়োজকদের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।

‘আমি দেখছি, এই দানব সরে যাচ্ছে’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ বিএনপি বিশ্বাস করে জনগনকে, বিএনপি বিশ্বাস করে মানুষের শক্তিতে, বিএনপি বিশ্বা্স করে, বিএনপির যে রাজনীতি, গণতন্ত্রের রাজনীতি সেই রাজনীতি আজকে সমগ্র আন্তর্জাতিক বিশ্বে সমাদৃত হয়েছে। আজকে সেই কারণে আমরা অত্যন্ত আশাবাদী।”

‘‘অনেকে বলেন, আপনার মুখে এতো হাসি দেখি কেনো সবসময়। আমি হাসি এজন্য দেখবেন যে, আমি দেখতে পারছি খুব পরিস্কার… এই ভয়াবহ দানব আমাদের মুখ থেকে সরে যাচ্ছে জনগনের উত্তাল তরঙ্গের মধ্য দিয়ে। তখন আর এই স্টেডিয়ামের আপনাদের চিন্তা করতে হবে না, সব কিছু সঠিকভাবে হবে, আপনাদের চিন্তা করতে হবে যে, ওই সাতারে পলিটিক্সি করে আপনাদের পিছিয়ে রাখা হবে, সেখানে চিন্তা করতে হবে না ওই আম্পেয়ারিংয়ের জন্য সেখানে আবার দলাদলি হবে… সঠিকভাবে চলবে ইনশাল্লাহ। আমরা সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছি।”

তিনি বলেন, ‘‘ আমি শুধু আপনাদের কাছে অনুরোধ করব, আপনারা নিশ্চিন্তে থাকেন, পরিবর্তন আসছে, পরিবর্তন হবে। সত্যের জয় হবে, সুন্দরের জয় হবে, গণতন্ত্রের জয় হবে ইনশাল্লাহ।”

‘ডেঙ্গু পরিস্থিতি: ওদের কোনো উদ্বেগ নেই’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ ডেঙ্গু পরিস্থিতি… আজকে দেখলাম পত্রিকায় বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা-ডাব্লিউএইচও হাই এলার্ট করেছে, বাংলাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখন হাই এলার্ট। মানে সবচেয়ে উঁচু একটা সর্তকবার্তা দিয়েছে। প্রতিদিন ১০/১২/১৪ জন করে মারা যাচ্ছে। কিন্তু সরকারের কথা শুনে কি একবারও মনে হয় বা তাদের কোনো কনসার্ণ আছে এটাতে।”

‘‘ আজকে ছবি দিয়েছে মুগদা হাসপাতালে একদম যেভাবে আমরা জেলখানায় শাড়ি দিয়ে গিয়ে শুয়ে থাকি, ওইভাবে শাড়ি দিয়ে গিয়ে সমস্ত বাচ্চারা শুয়ে আছে। তাদের হাসপাতালের ওই মেঝের মধ্যে চিকিতসা হচ্ছে। কেনো? এতো উন্নয়ন, কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন, মেগা প্রজেক্ট আমার এখানে কোনো এই বাচ্চারা সঠিক চিকিতসা পাবে না।”

তিনি বলেন, ‘‘ কারণ একটাই… যে এই শেখ হাসিনার সরকার এদের জনগনের প্রতি কোনো দায়বদ্ধতাই নেই। দে হ্যাভ নো কনসার্ণ ফর দি পিপল এবং সেটা জানে বলেই তো এভাবে নির্বাচন করে, জানে বলেই তো এভাবে বিরোধী দলকে মেরে-পিটিয়ে সরিয়ে রাখতে চায়। জানে বলেই তারা কিন্তু এখন দেশের মধ্যে একটা ভয়াবহ পরিবেশ তৈরি করে রাখতে চায়।”

দ্রব্যমূল্যের ঊধর্বগতিতে মানুষের ‘দূর্বিষহ’ জীবনচিত্র তুলে ধরেন ফখরুল।

‘ক্রীড়াঙ্গনে রাজনীতিকরণের ফল’


ক্রীড়াঙ্গনে সরকারের ব্যাপক দলীয়করণের কারণে যোগ্য ও সত্যিকারের ক্রীড়াবিদ বেরিয়ে আসছে না বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, ‘‘ আমরা একটা জিনিস যেটা বুঝতে পারছি এতো বেশি রাজনীতিকরণ করা হয়েছে যার ফলে সেখানে কিন্তু প্রতিভা, যোগ্যতা, টেলেন্টস সেগুলো আর বেরিয়ে আসছে না।”

‘‘ আমরা দেখিছি আগে ইন্টারস্কুল প্রতিযোগিতা হতো, এ্যাথলেটিক্স হতো, ফুটবল হতো, ভলিবল-হকি-ক্রিকেট হতো… সেই ইন্টারস্কুল স্পোর্ট এখন আর হয় না এবং মাঠগুলোতে এখন আর খেলা আমরা দেখতে পাই না। আমি শুধু ঢাকার কথা বলছি না, জেলাগুলোতে কোনো খেলা-ধুলা হয় না।”

তিনি বলেন, ‘‘ এরা(আওয়ামী লীগ সরকার) রাষ্ট্রটাকে দখল করে আছে। আমরা ১৯৭১ সালে যে ভিত্তির ওপর যুদ্ধ করেছিলাম… আমরা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণ করবো, সেখানে সকলের সমান সুযোগ থাকবে, সেখান মানুষ মেধার বিকাশ ঘটাতে পারবে… এই একটা অবস্থা আমরা চেয়েছিলাম। সেখানে আজকে রাষ্ট্র দখল হয়ে গেছে কিছু সংখ্যক মানুষের হাতে। যারা এই রাষ্ট্রকে নিজেদের পৈত্রিক সম্পত্তি হিসেবে বিবেচনা করে।”

‘‘ আপনারা ফুটবলের কথা বললেন। আমার সত্যি কথা বলতে কি যে আন্তর্জাতিক ফুটবল ফেডারেশন(ফিফা) সেখান থেকে নির্দেশ আসার পরেও সেখানকার তদন্ত হওয়ার পরেও কেমন করে কর্মকর্তারা সেই দায়িত্বে থাকেন আমরা মাথায় আসে না। এটা জাতির জন্য অত্যন্ত লজ্জার ব্যাপার যে তারা ফিফার টাকার মেরে খেয়েছে।”

ফখরুল বলেন, ‘‘ একইভাবে দেখুন ক্রিকেটের যে প্রচুর টাকা সেই টাকাগুলো কি সত্যিকার অর্থেই সঠিক হিসাব হয় … আমি জানি না। কি কারণে বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামকে একেবারে আপনার বলা যেতে পারে এভান্ডেন্ট করে দেয়া হলো, বাদ দিয়ে দেয়া হলো এটার তো কোনো কৈফিয়ত তারা দিতে পারবেন না।একটাই কারণ সেটা হচ্ছে যে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে।”

‘‘ আপনি যদি বগুড়ায় যান সেখানকার প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানকে তারা ধবংস করে ফেলেছে। সেখানে চমতকার একটা হাসপাতাল আছে যেহেতু সেটার না জিয়া ম্যামোরিয়াল হসপিটাল, সরকারি হাসপাতাল হওয়া সত্বেও সেটাকে কোনো রকমের সুযোগ সুবিধা দেয়া হয় না। আপনি যদি হসপিটালের ভেতরে ঢুকেন দেয়ালের সমস্ত প্লাস্টার খসে পড়ছে, ফ্লোর-টাইলস ভেঙে গেছে… সেগুলো মেরামত করা হয় না।”

‘ধর্মের কল একবার না একবার বাতাসে নড়ে’

তিনি বলেন, ‘‘ এই অবস্থার পরিবর্তন আনতে হলে গণতন্ত্র দরকার। অর্থাত কোনো ফ্যাসিস্টের হাতে কখনো কোনো দেশের মঙ্গল হয় না, ধবংস হওয়া ছাড়া। এরা যত কিছুই বলুক সব কিছু পেছনে অর্থ হচ্ছে চুরি করা, লুট করা। সেই লুট করেছে অত্যন্ত সাকসেসফুলি… এফিসিয়েন্টলি লুট করেছে।”

‘‘ ওই যে বলে না, ধর্মে কল একবার না একবার বাতাসে নড়েই। ওই বাতাসে নড়তে শুরু করেছে।এখন সারা বাংলাদেশের মানুষ জেগে উঠেছে। আমাদের ক্রীড়াবিদরা, ক্রীড়াঙ্গনের সাথে যারা আছে তারা নিশ্চয়ই শুনে জেনে আশ্বস্ত্র হবেন সমগ্র বাংলাদেশের মানুষ একবাক্যে একটা জিনিস চায় সেটা হচ্ছে যে, শেখ হাসিনা পতন চায়, সরকারের পতন চায় এবং তারা সত্যিকার অর্থেই একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণ করতে চায়।”

গত ২৮ জুলাই ঢাকায় বিএনপি মহাসমাবেশের সারাদেশ থেকে আসার মানুষের সমাগত ও সরকারের দমন-নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।  

তিনি বলেন, ‘‘ আমরা এমন কিছু চাই না। আমরা একটা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটা গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। আমরা চেয়েছি যে, একটা নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন। এটা তো ছিলো। আপনারা(আওয়ামী লীগ) ওই সরকারের অধীনে নির্বাচন করে ক্ষমতায় এসেছিলেন… ”

‘‘ তাহলে আজকে কেনো সেটা পুরোপুরি বাতিল করে দিয়ে কোনো কথাই শুনতে চান না। কারণ আপনারা জানেন যে, যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেয়া যায় তাহলে আপনারা শতকরা ১০টি আসনও পাবেন না।”

বাংলাদেশ ক্রীড়া উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি ক্রীড়া সংগঠক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও সাবেক ক্রিকেটার দেবব্রত পালের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় এ্যাথলেটিক ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী ইমাম তপন, মোহামেডান স্পোটিং ক্লাবের সাবেক পরিচালক শরীফুল আলম, বাংলাদেশ ক্রীড়া উন্নয়ন পরিষদের অতিরিক্ত মহাসচিব কাজী মহিউদ্দিন বুলবুল, ফুটবল ফেডারেশনের সাবেক সহসভাপতি মঞ্জুর হোসেন মালু, বিসিবির, সাবেক পরিচালক আল ফুয়াদ রেদোয়ান, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বাবু, ক্রীড়াবিদ শাহ আলম, ক্রীড়া সাংবাদিক নাসিমুল হাসান দোদুল ও মোজাম্মেল হক চঞ্চল প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।


শেয়ার করুন