ফজলুর রহমান বাবু। একাধারে তিনি অভিনেতা ও গায়ক। তবে নিজেকে তিনি অভিনেতা পরিচয় দিতেই বেশি স্বস্তিবোধ করেন। জনপ্রিয় অভিনেতা সালমান শাহর সাথে রয়েছে তার স্মৃতি। সেই স্মৃতি নিয়ে তিনি কথা বলেছেন নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সাথে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আলমগীর কবির
প্রশ্ন: ৬ সেপ্টেম্বর ছিল সালমান শাহর ২৬তম মৃত্যু বার্ষিকী। এই নিয়ে কোনো বিশেষ স্মৃতি আছে আপনার?
ফজলুর রহমান বাবু : মামুনুর রশীদের লেখা ও আলাউদ্দীন আহমেদের প্রযোজনায় ‘ইতি কথা’ নামে একটি ধারাবাহিকে আমরা একসাথে কাজ করেছিলাম। ওই নাটকটি ছিল আমার প্রথম দিকের কাজ। নাটকে আমার চরিত্র ছিল ‘পরান মাঝি’। গানপাগল মানুষ। সালমান শাহর চরিত্রটিও ছিল গানপাগল ছেলে, বিদেশ থেকে দেশে আসে। জমিদারের নাতি, গিটার বাজিয়ে গান করে। সুন্দর সময় কেটেছিল শুটিংয়ের সময়।
প্রশ্ন : বিশেষ কোনো স্মৃতি আছে ওনাকে নিয়ে?
ফজলুর রহমান বাবু: সালমান শাহ তখন হিরো। সেই সময় একটা ব্যাপার ছিল, যে হিরোদের জন্য শুটিং সেটে আলাদা চেয়ার থাকত। ওর একজন অ্যাসিস্টেন্টও ছিল। এই ব্যাপারটি আমার জানা ছিল না। একদিন শুটিংয়ের সময় হুট করে হিরোর চেয়ারটাতে আমি বসে পড়ি। ওর অ্যাসিস্টেন্ট ছুটে এসে বলছে, ‘তাড়াতাড়ি উঠেন। এটা হিরোর চেয়ার। এখানে বসা যাবে না। তখনই প্রথম জানলাম যে শুটিংয়ে হিরোর জন্য আলাদা চেয়ার থাকে। আমি তো থমকে গেছি। এর মধ্যেই সালমান শাহ এগিয়ে আসে এবং ওর অ্যাসিস্টেন্টকে ধমক দেয়। আমাকে বলে, ‘বাবু ভাই আপনি বসেন।
প্রশ্ন: ওই নাটকের পর কি আপনাদের মধ্যে কোনো যোগাযোগ ছিল?
ফজলুর রহমান বাবু: ওই ঘটনার মধ্য দিয়েই সালমান শাহর সঙ্গে ভালো বন্ধুত্ব হয়ে উঠে বলে জানান বাবু। পরে অভিনেতা তুষার খানের মাধ্যমে সেই বন্ধুত্ব আরও ঘনিষ্ঠতায় রূপ নেয়। তুষার আর আমি একই নাট্যদলে, মঞ্চে কাজ করি, আরণ্যক নাট্যদলে। সালমানের সঙ্গে তুষারের আগে থেকেই ভালো বন্ধুত্ব ছিল। পরে আমার সঙ্গেও সালমানের ভালো একটা বন্ধুত্ব হয়ে যায়। সিনেমায় আমরা একসঙ্গে কাজ করিনি। কিন্তু আমাদের মধ্যে একটা ভালো সম্পর্ক ছিল। সালমান খুব আড্ডাবাজ ছিলেন জানিয়ে ফজলুর রহমান বলেন, “তুষার আমি আর সালমান শাহ অনেক আড্ডা দিয়েছি। ও খুব আড্ডাবাজ এবং দিলখোলা মানুষ ছিল।”
প্রশ্ন : এখানতো অভিনয়দক্ষতায় জনপ্রিয়তার শীর্ষে আছেন। এই তারকা জীবন কেমন উপভোগ করেন?
ফজলুর রহমান বাবু : আমি আসলে নিজেকে তারকা মনে করি না। আমি মনে করি, আর দশজন অভিনেতার মতো আমিও অভিনয় করি। তবে এই পেশায় কিছু বাড়তি সুবিধা রয়েছে। যেমন, ভালো কোনও অভিনয়ের পর অনেক মানুষের ভালোবাসা পাওয়া যায়, আনুকূল্য, সমর্থন ও প্রশংসা পাওয়া যায়। সেই দিক থেকে আমি তো অবশ্যই সৌভাগ্যবান। আমি মনে করি অন্য দশটা পেশার মতোই আমার পেশা অভিনয়। মানুষ আমাকে ভালোবাসে বলে আমার অনেক দায়িত্বও রয়েছে। দর্শকদের সাথে ভালো ব্যবহার করা, আমার সামাজিক-রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করা- এ সবই আমি সঠিকভাবে করার চেষ্টা করি।
প্রশ্ন : নাটকে ভিউ প্রতিযোগিতা ও সিন্ডিকেটের গল্প শোনা যায়। আপনি তো সিনিয়র অভিনেতা, ব্যাপারগুলো কীভাবে দেখেন?
ফজলুর রহমান বাবু : ভিউভিত্তিক নাটক মানেই যে খারাপ হবে, সেটা আমি মনে করি না। আমি মনে করি, একটি ভালো নাটকেরও অনেক ভিউ হতে পারে, আবার খারাপ নাটকেরও অনেক ভিউ হতে পারে। ভিউ নির্ভর করে দর্শকের ওপর, কেমন দর্শক দেখছে সেটার ওপরে। উদাহরণ দিয়ে বলি, আমার অভিনীত একটি চলচ্চিত্র ‘অজ্ঞাতনামা’ টিকেট কেটে সিনেমা হলে গিয়ে যত মানুষ এটি দেখেছে, তার চেয়ে বেশি দেখেছে ইউটিউবে। এর ভিউও অনেক বেশি অন্যান্য ফিল্মের চাইতে। কিন্তু এটা তো নিঃসন্দেহে একটি ভালো ছবি। আবার অনেক খারাপ, নিম্নমানের ছবি বা নাটকে আমরা দেখি অনেক ভিউ। এটা নির্ভর করছে কোন শ্রেণির দর্শক দেখছে, তার ওপর।