০৩ মে ২০১২, শুক্রবার, ০৬:৫৪:৪৯ পূর্বাহ্ন


বিরাজমান সংকট অক্টোবরেই নিরসন
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৩-০৮-২০২৩
বিরাজমান সংকট অক্টোবরেই নিরসন


আওয়ামী লীগ সরকার বলে কথা নয়, দেশের আরো একটি সরকারের মেয়াদ অন্তিম পর্যায়ে। এরপর নির্বাচন, নতুন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ এবং দেশ পরিচালনা। আপাতদৃষ্টিতে এটাই দেশের সংবিধানসম্মত রীতি। কিন্তু চলমান এ সময় ভঙ্গুর অর্থনীতি, অর্থনীতিক সংকট, তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকা জ্বালানি সংকটের কারণে বিদ্যুৎ সংকট, বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় ক্রমাগত নিম্নমুখী হতে থাকা, মুদ্রাস্ফীতি এবং বিবিধ সংকট নিয়ে আগামী নির্বাচনে জয়ী হয়ে গঠন করা সরকার ২০২৪-২০২৮ বিশাল সংকটের মুখে পড়বে। বর্তমান সরকার চতুর্থ মেয়াদ ক্ষমতা পেলে তারা হয়তো বিগত (তিন টার্ম) ১৫ বছর অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সুনির্দষ্ট পরিকল্পনা করেই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। সে পরিকল্পনা তাদের সুরক্ষিত। কিন্তু বিরোধীদল এবং ফ্রন্টগুলো যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে এসে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে, তাহলে কীভাবে সামাল দেবে দেশের সব চ্যালেঞ্জ সেটি গভীরভাবে ভাবনার বিষয়। আগামী নির্বাচনে কে ক্ষমতায় আসবে সেটা বিবেচ্য নয়, বিষয় হলো দেশের চলমান অর্থনীতির প্রেক্ষাপট সমাগত ওই সময়ের আগাম ভাবনা প্রসঙ্গে। 

দেশীয় সুধীমহল, রাজনৈতিক দলগুলোর বিবেচক অংশ, বন্ধু দেশগুলোর ক্রমাগত প্রচেষ্টার ফলে আশা করা যায়, অক্টোবর নাগাদ নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট অচল অবস্থার অবসান হবে। এমন একটা ডেটলাইন দেশের মানুষ বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রত্যাশা করতেই পারে। অমনটা যদি হয়-ই, তাহলে হয়তো নির্বাচন উভয়পক্ষের কিছুটা ছাড় দেওয়ার ভিত্তিতে নির্দষ্ট সময়ে সম্পন্ন হয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। গণতন্ত্রের সৌন্দর্য হলো মতপার্থক্য নিয়েও পরস্পর শ্রদ্ধাশীল সরকারি এবং বিরোধীদলের উপস্থিতিতে সরব জাতীয় সংসদ। একক বা নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা স্বেচ্ছাচারের জন্ম দেয়। জাতীয় সংসদে শক্তিশালী বিরোধী দল না থাকলে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠিত হয় না। গণতন্ত্রের স্বার্থেই নিরপেক্ষ, অবাধ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হওয়া কাঙ্ক্ষিত। বর্তমান সংকট এমন জটিল নয় যে, আলোচনার ভিত্তিতে নিরসন করা যাবে না। ফলে এমন একটা প্রত্যাশা অমূলক নয়। 

বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে অধিকাংশ দেশেই কিন্তু মুদ্রাস্ফীতি, জ্বালানি সংকট। অনেক দেশ সঠিক মুদ্রানীতি এবং জ্বালানি খাত সংস্কারের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ করোনা মহামারি ভালোভাবে সামাল দিলেও কিছু ভ্রান্তনীতি এবং ক্ষেত্রবিশেষে অনিয়ন্ত্রিত দুর্নীতির কারণে মুদ্রাস্ফীতি সামাল দিতে পারছে না। নিজেদের প্রাথমিক জ্বালানি আহরণ এবং উন্নয়ন গুরুত্ব না দিয়ে বিশ্ববাজার থেকে জ্বালানি আমদানির দিকে ঝুঁকে পড়ায় বিপুল জ্বালানি আমদানির জন্য ডলার সরবরাহ করতে পারছে না।

দেনার দায়ে পেট্রোবাংলা, বিপিডিবি, বিপিসির মতো সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম। সরকারের পক্ষেও বিপুল সাবসিডি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বারবার গ্যাস, বিদ্যুৎ, জ্বালানির দাম বাড়িয়েও চাহিদা মোতাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি সরবরাহ করা যাচ্ছে না। কলকারখানা, রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা সংকট হওয়ার কারণে বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়েছে রপ্তানি আয়ের ওপর। দুই বছর সময়ের মধ্যে আমদানি জ্বালানিনির্ভরতা ২৫ শতাংশ থেকে ৬০ শতাংশ উপনীত হয়েছে। দেশীয় জ্বালানি বিশেষত গ্যাসের সরবরাহ ক্রমশ কমছে। ২০২৬, ২০২৭ নাগাদ গ্যাস উৎপাদন ভয়াবহভাবে কমে যেতে পারে। এই সময়ের মাঝে দেশীয় গ্যাস উৎপাদন বাড়ানো অথবা এলএনজি আমদানি বাড়ানোর সুযোগ সীমিত। এখনই বছরে ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন জ্বালানি বিদ্যুৎ আমদানি সামাল দিতে। এটি বেড়ে অচিরেই ১৫-২০ বিলিয়ন ডলার হয়ে যেতে পারে। এদিকে সরকারের হাতে আইএমএফ হিসাব অনুযায়ী, ২৩ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় আছে। মেগা প্রকল্পসমূহের কয়েকটি চালু হয়েছে, বেশ কয়েকটি সেপ্টেম্বর ২০২৩-জুন ২০২৪ চালু হবে। এগুলোর ঋণের ক্ষতি সুদসহ পরিষদ শুরু হবে। অন্যদিকে বিশ্ব জ্বালানি বাজারে যে কোনো সময় আবার বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। 

ফলে নির্বাচনের তো তেমন সময় বাকি নেই। জানুয়ারির প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহে। এমন অবস্থায় রাজনৈতিক দলগুলো সঠিক হোমওয়ার্ক করে তাদের নির্বাচনী অঙ্গীকার অতি সহসা জনগণের সামনে তুলে ধরা উচিত বলে জনগণ মনে করছে। দেশের বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে আসন্ন সর্বব্যাপী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য ন্যূনতম ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচনের পর স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তিগুলোর সমন্বিত জাতীয় সরকার গঠনের পক্ষপাতী। রাজনীতিতে ভিন্ন মতপার্থক্য থাকবেই কিন্তু জাতীয় স্বার্থে কতগুলো স্ট্র্যাটেজিক বিষয় যেমন টেকসই জ্বালানি নিরাপত্তা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স, বাক্স্বাধীনতা, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহি বিষয়ে ঐকমত্য থাকা অপরিহার্য। আশা করি সরকারি দল এবং বিরোধী দল এবং ফ্রন্টসমূহের দেশপ্রেমিক অংশ দেশ পরিচালনার আসন্ন চ্যালেঞ্জগুলো উপলব্ধি করতে পারছে। 

চটকদার কথায় কাজ হবে না। ২০২৩-২০২৪-এর চ্যালেঞ্জগুলো মাত্রা এবং গভীরতা ব্যাপক এবং বহুবিধ। প্রয়োজন সর্বক্ষেত্রে পেশাদারি নেতৃত্ব এবং দেশপ্রেম। তরুণ সমাজ কিন্তু অগ্রসরমান এবং উদ্ভাবনী শক্তির অধিকারী। সঠিক কর্ম উন্মাদনা সৃষ্টি করে ওদের বিদেশমুখী স্রোত বন্ধ করে দেশ গঠনে উদ্বুদ্ধ করা জাতীয় দায়িত্ব। আধুনিকতম টেকনোলজি সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে প্রথম প্রয়োজন রাজনৈতিক  ন্যূনতম ঐকমত্য এবং আইনের শাসন।

শেয়ার করুন