৩০ এপ্রিল ২০১২, মঙ্গলবার, ১০:৫৪:৫০ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
যুক্তরাষ্ট্রে এবার বন্দুকধারীর গুলিতে তিন আইনশৃংলাবাহিনীর সদস্য নিহত ‘বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের প্রতিভা বিকাশে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা রাখা যাবে না’ সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ


আসল খেলার প্রেক্ষাপট কি তৈরি হচ্ছে
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২১-০৬-২০২৩
আসল খেলার প্রেক্ষাপট কি তৈরি হচ্ছে


জটিল ও গুমোট হয়ে উঠেছে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দেশের রাজপথ এখন যেমন উত্তপ্ত তেমনি নানা দিক দিয়ে আলোচিত। কি হতে যাচ্ছে? বা ভবিষ্যতেই বা কি হবে? কোনোটাই এখন কেউ আঁচ করতে পারছে না। অন্যদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দেশের রাজনীতি এখন জনগণের হাতে আছে কি-না সেব্যাপারেও তারা সন্দিহান। তারা মনে করেন, এটা একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের বা তার সরকারসহ জনগণ কারো জন্যই কোনোভাবেই মঙ্গলজনক না। তবে সামনের দিনগুলি মাঠের প্রধান বিরোধী দলের বড়ো ধরনের আন্দোলন দেখার চেয়ে অন্যরকম খেলাই দৃশ্যমান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে কেউ কেউ আভাস দিচ্ছেন। 

হুমকি ধামকি চলছেই..

দেশের প্রধান দু’টি রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং মাঠে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি’র মধ্যে হুমকি-ধামকি বা কর্মসূচি- পাল্টা কর্মসূচি দেয়া থামছেই না। চলছে একে অন্যকে লক্ষ্য করে বিবৃতি- পাল্টা বিবৃতি। এক্ষেত্রে কেউ শালিনতার সীমাও অতিক্রম করে ফেলছেন। প্রতি সপ্তাহ জুড়েই রয়েছে বিএনপি বা তাদের সমমনা বলে পরিচিতদের বিভিন্ন কর্মসূচি। এযাত্রায় এবার রোজার মাসেও বিএনপি কর্মসূচিতে বিরতি দেয়নি। আবার রাজপথে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি দুই দল কেউই ছাড় দিচ্ছে না। গতবছরের শেষের দিকেই ছিল না বিএনপি’র কর্মসূচির বিপরীতে আওয়ামী তৎপরতা। কিন্তু এই দৃশ্যপট পাল্টে গেছে গত বছরের শেষে দিকে বিএনপি’র ১০ ডিসেম্বর রাজধানীতে তাদের মহাসমাবেশকে ঘিরে। ওই কর্মসূচির আহবানের পর থেকেই যেনো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ খুবই সর্তক হয়ে গেছে, নড়ে চড়ে বসে। রাষ্ট্র, প্রশাসন দলকে সর্তক অবস্থানে নিয়ে যায়। সেই থেকে চলছে একের পর এক কর্মসূচি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। আওয়ামী লীগ এখন মাঠে শান্তি সমাবেশ নাম দিয়ে কর্মসূচি পালন করছে। এরপাশাপাশি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠে প্রধান বিএনপিসহ তাদের সমমনারা কর্মসূচি দিয়েই যাচ্ছে। এদিকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিএনপি’র বিপরীতে নেয়া কর্মসূচিকে শান্তি সমাবেশ বলা হলেও সেটিতে আর রাজনৈতিক পরিস্থিতি থাকছে না। কোথাও কোথাও সরকারি দলের এইসব শান্তি সমাবেশ থেকে দেয়া হয় উস্কানিমূলক বক্তব্য। আর এনিয়ে দিনের পর দিন সবার মনে প্রশ্ন এর শেষ কোথায়?

সংলাপে আওয়ামী লীগ-বিএনপি’র আগ্রহই নেই

দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ভবিষ্যতে কিভাবে এগুনো যায় বা একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করা যায় তা-নিয়ে একটি সংলাপের ন্যূনতম হাক-ডাক নেই। বরং সংলাপের ব্যাপারে একটু উঁকি-ঝুঁকি মারলেও চলছে বিবৃতি পাল্টা বিবৃতির ঝড়। সবচেয়ে নির্মম হচ্ছে দু’টি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ থেকেই এই সংলাপ নিয়ে অরাজনৈতিক বক্তব্য উঠে আসছে। এদিকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু সম্প্রতি কি ভেবে বলেছিলেন তা এখনো জানা যায়নি। তিনি বলেছেন- বিএনপির সঙ্গে সরকার নির্বাচন নিয়ে আলোচনায় রাজি আছে, প্রয়োজনে জাতিসংঘের মধ্যস্থতাতেও হতে পারে’। তার এমন বক্তব্যে তারই দল থেকে একেক জন একেক রকম বক্তব্য দিয়ে বলেন। খোদ তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমির হোসেন আমু আমাদের ১৪ দলের অন্যতম জ্যেষ্ঠ নেতা। তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটি তার ব্যক্তিগত বক্তব্য। তার এ বক্তব্য নিয়ে আমাদের দলের মধ্যে, সরকারের মধ্যে কোনো আলোচনা হয়নি। এমনকি ১৪ দলের মধ্যেও কোনো আলোচনা হয়নি। এটি সম্পূর্ণভাবে তার ব্যক্তিগত বক্তব্য। তবে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল, তিনি বলেছেন আসলে গণমাধ্যমে যেভাবে এসেছে তিনি ঠিক সেভাবে বলেননি। যেভাবেই আসুক এটি তার ব্যক্তিগত অভিমত, দল, সরকার কিংবা ১৪ দলের কোথাও এ নিয়ে আলোচনা হয়নি। অন্যদিকে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল বলেছেন, তারা আমাদের নেত্রীকে হত্যার হুমকি দিয়েছে। তাদের সঙ্গে আমরা কী আলোচনা করব? তারা আজকে নালিশের রাজনীতি করছে। কী পেয়েছে আমরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে নালিশ করে? পেয়েছে ঘোড়ার ডিম। কিছুই পাইনি, এখন তারা আবার জাতিসংঘের মধ্যেস্থতা চায়, যা বাস্তবতা বিবর্জিত কথা। আমুর বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি দলের কথা নয়, তার ব্যক্তিগত কথা। এর বাইরে কথা বলতে রাজি হননি তিনি। অপরদিকে বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ বিষয়ে গণমাধ্যমে জানান যে, তারা অফিসিয়ালি কিছু জানেনই না। তিনি বলেন, আমির হোসেন আমুর বক্তব্য কি আওয়ামী লীগের বক্তব্য? তিনি কি আওয়ামী লীগের মুখপাত্র হিসেবে কথা বলছেন? আমরা জানি না।

সংলাপ নিয়ে আসলে কে কি চায়?

বিএনপি’র একজন শীর্ষ নেতা এই প্রতিবেদকের সাথে একান্তে আলাপকালে বলেন, বিএনপি কেনো কি কারণে বর্তমান সরকারের সাথে সংলাপে বা আলোচনা বসবে? বিএনপি শীর্ষ থেকে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বদ্ধমূল যে, দেশে একটি সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হলেই তারা বড়ো আসনের ব্যবধানে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হবে। তাই কেনো তারা সরকারের সাথে সংলাপে বসবে? কারণ তারা ভালো করেই বোঝে ক্ষমতাসীনরা এমন সংলাপ করবে না, যাতে করে একটি অংশগ্রহনমূলক নির্বাচনের পরিস্থিতি তৈরি হোক, আর তাতে বিএনপি অংশ নিক। কেনো কি কারণে তারা সংলাপ করে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করে বিএনপি’র হাতে ক্ষমতা দিয়ে সরে পড়বে ক্ষমতাসীনরা- এটা অকল্পনীয়। তাই সংলাপ না, বিএনপি চায় কঠোর আন্দোলন। আর সে আন্দোলন করেই তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় করে নেবে। অন্যদিকে সরকারি দলও বোঝে বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনোভাবেই নির্বাচনে যাবে না। তাই সংলাপের আহবান দিয়েও লাভ নেই। 

আসলে হবে কি?

নানা কানাঘুষা চলছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। দেশের বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ঘাটলে দেখা যায় যে এক্ষুনিই ক্ষমতাসীনদের পতন হচ্ছে। কালকেই সরে যাচ্ছে সরকার। অন্যদিকে বিএনপি’র একটি অংশ মনে করে মার্কিনীদের একের পর এক না নান ধরনের পদক্ষেপে সরকার দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে জনগণ আসলে এমন পরিস্থিতিতে আঁচই করতে পারছে না যে আসলে কী হতে যাচ্ছে বা কী হবে? তবে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া যায় যে, এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে আরো মাস তিনেক সময় লাগবে। যতই গণমাধ্যমে দাবি করা হোক না কেনো জুলাইয়েই বিএনপি’র আন্দোলন বা সরকার পতনের ডাক আসতে পারে বা দিবে। কারো কারো মতে, এই ক্ষুদ্র সময়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে অনেক চড়াই উৎড়াইও দেখা যাবে। গণ অধিকার পরিষদের রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হক নুরের দ্বন্দ্বের কারণে ভাঙ্গনের যে ঘটনা দেখা যাচ্ছে তা-ও রাজনৈতিক অঙ্গনে চড়াই উৎড়াইও এর অংশের কিছু নমুনা। অন্যদিকে জামায়াতকেও হঠাৎ করে সমাবেশ করতে দেয়াও এর একটি অংশ বলে মনে করেন কেউ কেউ। অন্যদিকে ইসলামী আন্দোলন কাংলাদেশের পক্ষ থেকে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয়া এবং এর পরে তা অনেক ঘটনার সৃষ্টি পেছনেও চড়াই উৎড়াইয়ের আরেক দৃশ্য। এমন ধরনের ঘটনা অবশ্য প্রধান বিরোধী বিএনপি’র বেলায় হবে না। তবে সাম্প্রতিক ঘটনাগুলি তাদের নেতাকর্মী সমর্থকদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের বিভ্রান্তি বা হতাশার সৃষ্টি করবে। আর এটা করার জন্যই একের পর এক ঘটনা ঘটে যাচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। রাজনৈতিক অঙ্গনে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, এটাই চাচ্ছে ক্ষমতাসীনদের কেউ কেউ। তবে গণ অধিকার পরিষদের নুরুল হক নুরের বিভিন্ন বিষয়গুলি সামনে চলে আসায় সরকারের একটি অংশ খুবই বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে। কেননা কেউ কেউ মনে করেন গণ অধিকার পরিষদের শীর্ষ নেতা নুরুল হক নুরের সাথে সরকারের একটি অংশের বড়ো ধরনের যোগাযোগ আছে এবং ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক অঙ্গনে নুরুল হক নুর বেশি বিতর্কিত হয়ে যাওয়ায় সরকারের গোপন উদ্দেশ্যে একটা বিরাট ছেদ পড়ে গেল বলে কেউ কেউ মনে করেন। একিইভাবে রাজনৈতিক অঙ্গনে জামায়াতকে মাঠে নামিয়েও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ এই দু’টি দলই নানান ধরনের বির্তক ও প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। আর এজন্য অনেকে মনে করেন সামনের দিনগুলিতে বড়ো ধরনের আন্দোলনের চেয়ে দেশী-বিদেশী কুশীলবদের দ্বারা খেলাধুলাই দেখা যাবে বেশি। সে খেলাধুলার পরই রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি আসল রূপ দেখা যাবে,তার আগে না-এমনটাই খবর পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন সূত্র থেকে। 

শেয়ার করুন