২৬ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০৭:১৭:৪৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :


স্বাগত মাহে রমজান
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-০৩-২০২৩
স্বাগত মাহে রমজান


মহান আল্লাহর অশেষ অনুগ্রহ, অফুরান করুণা আর তাকওয়া অর্জনের শাশ্বত পয়গাম নিয়ে বছর ঘুরে আবারো হাজির মহিমান্বিত মাস রমজানুল মোবারক। অপার বরকতের এ মাসে মোমিন বান্দাগণ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় ও তাকওয়ার সোপান সিয়াম সাধনার পাশাপাশি সালাতুত তারাবিহ, তাহাজ্জুদ, কুরআন কারিম তিলাওয়াত, দান-সদকাহ ইত্যাদি ইবাদতে অধিক মনযোগী হয়ে নিজেদেরকে মহান প্রভুর কাছে সপে দেবেন, তার প্রিয় হতে আত্মনিয়োগ করবেন।  


আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘হে মুমিনগণ, তোমাদের ওপর ফরজ করা হয়েছে রোজা, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যাতে তোমরা তাকওয়ার অধিকারী হতে পারো।’ (সুরা বাকারাহ : ১৮৩)। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে রমজান মাসের রোজা রাখবে তার পূর্বের যাবতীয় গুণাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ (বুখারি, মুসলিম) 

অপর হাদিসে রাসূলে কারিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘বেহেশতের ৮টি দরজা রয়েছে, এর মধ্যে ১টি দরজার নাম রাইয়ান। রোজাদার ব্যতিত আর কেউ ওই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (বুখারী, মুসলিম)

অপার বরকতময় এ মাসে আল্লাহ তায়ালা মহাগ্রন্থ আল কুরআন নাজিল করেছেন। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘রমজান মাস, এতে কোরআন নাজিল করা হয়েছে মানুষের হেদায়াতের জন্য এবং হেদায়াতের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে এ মাস পাবে সে যেন এ মাসে সিয়াম পালন করে...।’ (সুরা বাকারাহ : ১৮৫)

পবিত্র রমজান মাসে আমরা প্রত্যাশা করব, শাবান মাসের শেষ গোধূলিবেলায় পশ্চিম দিগন্তে উদিত কৃষকের কাস্তের মতো বাঁকা চাঁদ যে ত্যাগ ও সংযমের বার্তা বহন করে নিয়ে এসেছে, তা সবাই শুনতে পাবে। রোজাদাররা পান, আহার ও জৈবিক চাহিদা বর্জনের পাশাপাশি আত্মিক পরিশুদ্ধির সাধনাও চালিয়ে যাবেন। পবিত্র রমজানের বড় শিক্ষা হলো- আত্ম সংযম। এই সংযম শুধু খাবার ক্ষেত্রে নয় সর্বত্র ক্ষেত্রে। খাবারের পাশাপাশি আমাদের চোখকে, হাতকে এবং মুখকে সংযম করতে হবে। সেই সাথে আত্মশুদ্ধি করতে হবে। আত্ম শুদ্ধি এবং আত্ম সংযম আমাদের প্রতিটি কাজেই দেখাতে হবে।

আমরা জানি, রোজা অনুভব করায় ক্ষুধার্ত ও বঞ্চিত মানুষের কষ্ট। শিক্ষা দেয় ত্যাগ ও মিতব্যয়িতার; ভোগ না করে বিলিয়ে দেওয়ার আদর্শ। দুঃখজনক হলেও সত্য, রমজানের ত্যাগ ও সংযমের এই শিক্ষা অনেকের জীবনে প্রতিভাত হয় না। এই রমজান মাস হচ্ছে নিজেকে পরিশুদ্ধ করার মাস, গুণাহ মুক্ত করার মাস। সেই বিষয়টি আমাদের মনে রাখতে হবে।

তারপরেও আমরা দেখি পবিত্র মাহে রমজানকে কেন্দ্র করে দেশে এবং প্রবাসে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের উর্ধ্বগতি। একশ্রেণীর মুনাফাখোর ব্যবসায়ী এই ঘৃণিত কাজটি করে থাকেন। বিশেষ করে বাংলাদেশে। প্রবাসেও নানা কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রে দাম অনেক বেশি। কিন্তু বাংলাদেশে কালোবাজারিরা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে এই কাজটি করে থাকেন। আল্লাহকে অসন্তুষ্টকারী কাজকর্ম কেন করে বেড়াব? কেন আমরা মিথ্যা বলব? কেন আমরা মিথ্যা সাক্ষ্য দেব? কেন আমরা মুসলমান ভাইয়ের মনে কষ্ট দেব? কেন অপরের হক নষ্ট করব? কেন মানুষের অধিকার হরণ করব? কেন জুলুম করব? কেন আমরা অন্যের রক্ত ঝরাব? মোট কথা, এরূপ যত বিষয় আছে, যেন সেসব অন্যায় ও গুনাহ থেকে বাঁচার অভ্যাস, ধ্যান-খেয়াল এবং গুরুত্ব সৃষ্টি হয়ে যায়- এটিই তাকওয়া।

আফসোসের বিষয় হলো, রমজানের প্রশিক্ষণের এ বিষয়টি আমাদের বোধ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। এ মাসে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে আমাদের জীবনাচার উন্নত ও সুন্দর করার মানসিকতা দিন দিন কমে যাচ্ছে। যার কারণে রমজান আসে রমজান যায় কিন্তু আমরা আগের মতোই থেকে যাই। রোজার কোনো প্রতিক্রিয়া আমাদের মাঝে পরিলক্ষিত হয় না। এর থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। তা নাহলে রমজানের যে ফজিলত তা থেকে আমরা বঞ্চিত হবো। পবিত্র রমজানে আমরা যদি পাপ মুক্ত হতে না পারি তাহলে এর চেয়ে দু:খের ও পরিতাপের আর কিছু হতে পারে না। কারণ আমরা জানি না, হয়ত এটাই আমাদের শেষ রমজান। সুতরাং সবার এই সুযোগটি কাজে লাগানো উচিত।

শেয়ার করুন