২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৩:৫৭:২৮ পূর্বাহ্ন


জি-২০ বা ব্রিকস নয়, বাংলাদেশের জনগণই শক্তি
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-০৯-২০২৩
জি-২০ বা ব্রিকস নয়, বাংলাদেশের জনগণই শক্তি


বাংলাদেশের শাসক দল এবং বিরোধী দলগুলো যতো তাড়াতাড়ি বুঝবে বাংলাদেশের জনগণই শক্তি ততোই মঙ্গল।  যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বের জি-২০ বা ব্রিকস কেউ কোনো দলকে ক্ষমতায় আরোহণ বা ক্ষমতায় দীর্ঘদিন থাকা নিশ্চিত করতে পারবে না এই সহজ-সরল সমীকরণ যতোদিন দেশের রাজনৈতিক দলগুলো না বুঝতে পারবে, ততোদিন দেশে গণতন্ত্র বা আইনের শাসন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাবে না। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে না। দেশ স্বাধীন হয়েছে ৫২ বছর শেষ হলো। ১৯৭৫-১৯৯০ এবং ২০০৬-২০০৮ ছাড়া পুরো সময়টা নির্বাচিত সরকার দেশ শাসন করেছে। 

আমি সেনা শাসকদের সৃষ্ট তথাকথিত রাজনৈতিক দলের স্বৈরশাসনকে জনগণের সরকারের শাসন বলবো না। বাকি সময়ে ২৩.৫ বছর দেশ শাসন করেছে স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়া আওয়ামী লীগ সরকার। বিশেষত ২০০৯-২০২৩ ক্রমাগত দেশ শাসনে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে। দেশ খাদ্যে প্রায় স্বনির্ভর হয়েছে, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে, দেশের একপ্রান্ত থেকে ওপর প্রান্তে সড়ক এবং রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। এতো ব্যাপক উন্নয়ন সত্ত্বেও বলা যাবে না আইনের শাসন অথবা জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। উন্নয়নের চোরাগলি পথে একশ্রেণির সুযোগ সন্ধানী গোষ্ঠী ব্যাপক দুর্নীতি করে সম্পদের পাহাড় গড়েছে। ব্যাপক সম্পদ বিদেশে পাচার করে সরকারি সঞ্চয় ভার তলাবিহীন ঝুড়ি বানিয়েছে।

আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে কারো যেন কোনো দায়বদ্ধতা নেই। তাই সরকার জাতীয় নির্বাচনে জনগণের শক্তির ওপর নির্ভর করে অবাধ সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে পুরোপুরি দ্বিধাহীন হতে পারছে না। আর বিএনপিসহ বিরোধী দল জানে জনগণ তাদের দুঃশাসনের কথা ভুলে যায়নি। সরাসরি নির্বাচনে শাসক দলকে পরাজিত করে ক্ষমতা অর্জন দুরূহ। তাই লবিস্ট নিয়োগ করে বিদেশে সরকার বিরোধী প্রোপাগান্ডা করছে। বিদেশি শক্তির দ্বারস্থ হয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। বর্তমান অবস্থায় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সংস্থান না থাকায় আপাতত মনে হচ্ছে, বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচন কমিশন নির্বাচন করবে। সেই নির্বাচন অবশ্যই ২০১৪ বা ২০১৮-এর মত একপক্ষীয় বা বিতর্কিত হবে না। সারা বিশ্বের শ্যানদৃষ্টির সামনে কারচুপির সম্ভাবনা কম থাকবে। তবে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে পারবে কি না নিশ্চিত নই।

যদি শাসক দল জনগণের ওপর পরিপূর্ণ আস্থা থাকে, তাহলে তৃণমূলে জনগণ সম্পৃক্ত নেতাদের নির্বাচনে মনোয়ন দিয়ে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন করতে বাধা কোথায়? বিরোধীদল বা গোষ্ঠী নির্বাচনে আসবেই। না এলে প্রধান বিরোধী দলেই ভাঙন দেখা দেবে। আর নেতা নির্বাচনে আজ বা কাল বিরোধী দলে বিরোধ সৃষ্টি হবেই। সরকার নির্বাচনকে সামনে রেখে কিছুটা অস্থির হয়ে পড়েছে। অধিকাংশ মেগা প্রকল্পগুলো ১০০ শতাংশ শেষ না করেই তড়িঘড়ি করে উদ্বোধন করার হিড়িক পড়েছে। তাহলে কি সরকারি দল ক্ষমতায় ফেরার ব্যাপারে সন্দিহান?

২০২৪-২০২৮ সময়টা কিন্তু দেশ শাসনের জন্য অনেক চ্যালেঞ্জ নিয়ে উপস্থাপিত হবে। জ্বালানি-বিদ্যুৎ সংকট তীব্রতর হবে। অর্থনৈতিক সংকট ঘনীভূত হবে। রফতানি আয় সংকুচিত হবে, ডলার সংকট ঘনীভূত হয়ে বিদেশি ঋণ পরিশোধের দায় চেপে বসবে। তবুও রাজনৈতিক দলগুলোকে বলবো দেশ শাসনে নিজেদের সার্বিক পরিকল্পনা ঘোষণা করে জনগণের কাছে যেতে। বাংলাদেশে ভারত বিরোধিতা বা ইসলাম রক্ষার জুজু দেখিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার দিন শেষ। সেনা শাসকরা এসেও কাউকে ক্ষমতায় বসাবে না। জনগণই হবে শক্তির উৎস। জি-২০ বা ব্রিকস অর্থনীতি বা বাণিজ্যিক স্বার্থ রক্ষা করবে। বাংলাদেশের উন্নয়নে সব বিদেশি শক্তি চাইবে বাংলাদেশে জনগণের শাসন বজায় থাকুক। স্থিতিশীল বাংলাদেশ আঞ্চলিক এবং বিশ্ব শান্তির জন্য অপরিহার্য।

শেয়ার করুন