২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৬:২৮:৩২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :


আমাদের আপিল শুভ বুদ্ধির কাছে : মির্জা ফখরুল
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৪-১০-২০২৩
আমাদের আপিল শুভ বুদ্ধির কাছে : মির্জা ফখরুল বক্তব্য রাখছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর


পরিবারের আবেদন আইন মন্ত্রণালয়ে নাকচের পরে এবার খালেদা জিয়াকে  বিদেশে পাঠানোর অনুমতি দিতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি। এর পাশাপাশি এই কমিটির পক্ষ থেকেই বলা হয় আমরা আপিল করছি শুভ বুদ্ধির কাছে।”

গত ৩ অক্টোবর মঙ্গলবার বিকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে জাতীয় স্থায়ী কমিটির আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই দাবি জানান। 

তিনি বলেন, সুচিকিৎসা পাওয়া একজন নাগরিকের মৌলিক অধিকার। বেগম খালেদা জিয়া দেশের একজন সিনিয়র সিটিজেন। সংবিধানে তাকে বেঁচে থাকার জন্য চিকিৎসা গ্রহণের অধিকার নিশ্চিত করেছে। যে রোগের চিকিৎসা দেশে সম্ভব নয়, সামর্থ্য অনুযায়ী দেশের বাইরে গিয়ে চিকিৎসা নিতে বাধা দেওয়া সংবিধানকে অবজ্ঞা করা। প্রকৃতপক্ষে দেশনেত্রীকে সংবিধানে দেওয়া চিকিৎসা সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে- যা অন্যায়, অমানবিক ও অসাংবিধানিক। তিনি বলেন, আমরা মনে করি, দারুণভাবে অসুস্থ এবং দেশে চিকিৎসা অসম্ভব হওয়া সত্ত্বেও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আইনের দোহাই দিয়ে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত রাখার সুযোগ নেই। সরকার হীন উদ্দেশ্যে আইনের দোহাই দিয়ে চিকিৎসা থেকে দেশনেত্রীকে বঞ্চিত রেখে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা পুনরায় সরকারকে বলব, রাজনৈতিকভাবে প্রতিপক্ষকে অন্যায়ভাবে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়ার পরিণতি কখনো ভালো হয় না বিধায় যত দ্রুত সম্ভব দেশনেত্রীকে সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিয়ে একজন নাগরিক হিসাবে তাকে রোগের চিকিৎসা পাওয়ার সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার প্রয়োগের সুযোগ দেয়া হোক। অন্যথায় সরকারকে একজন গুরুত্বপূর্ণ জনপ্রিয় প্রবীণ নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার না দিয়ে তার প্রতি বেআইনি, অমানবিক ও নিষ্ঠুর আচরণ করার জন্য সরকারকেই দায়ী থাকতে হবে।

সরকার বিদেশে যেতে দেবে না বলেছে এই অবস্থায় দলের চেয়ারপারসনের চিকিৎসার বিষয়ে সিদ্ধান্ত কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, উনার (খালেদা জিয়া) যারা চিকিৎসা করছেন এটা তাদের বিষয়। চিকিৎসকরা এখানে যতদূর পারা যায় বেস্ট ট্রিটমেন্ট এখানে পাওয়া যায় সেটাই করবেন, করছেনও। আমরা তো জোর করে বিদেশে তাকে নিয়ে চলে যেতে পারবো না। আমাদের পক্ষে সেটা সম্ভব না। আমরা এভাবে যা আছে সেই চিকিৎসা করিয়ে যাবো এবং আমরা বিশ্বাস করি, জনগণের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকারের পতন হবে এবং খালেদা জিয়ার তখন উন্নত চিকিৎসা করা সম্ভব হবে।

‘দৃষ্টান্ত অনেক’

ভয়েস অব আমেরিকাকে দেয়া সাক্ষাতকারে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য খন্ডন করে মির্জা ফখরুল বলেন, সত্য হলো যে, শহীদ রাষ্ট্র জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের শাসনামলে দন্ডপ্রাপ্ত আসামী তৎকালীন জাসদের সাধারণ সম্পাদক আসম আবদুর রবকে চিকিৎসার জন্য জার্মানীতে যাওয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছিলো। একইভাবে ১৩ বছরের দন্ডপ্রাপ্ত আসামী আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিমকে ১/১১ ‘র সরকার ২০০৮ সালে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দিয়েছে।এরকম দৃষ্টান্ত আরো আছে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনাও এমন সুযোগ (বিদেশে চিকিৎসা) ব্যবহার করেছেন ২০০৮ সালে। জরুরি আইনের সরকারের সময়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিলো। বেশ কয়েকটি চাদাবাজি মামলায় তার বিরুদ্ধে চার্জসিট দেয়া হয়েছিলো। এই অবস্থায় নির্বাহী আদেশে মুক্তি দেওয়া হয়েছিলো তাকে। অসুস্থতার কথা বলে উনি মুক্তির দুই/তিনদিনের মধ্যে বিদেশে চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন। তিনি বিদেশ থেকে দেশে ফিরে ছিলেন একজন ওয়ারেন্টি আসামী হিসেবে এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথও নিয়েছিলেন ওয়ারেন্টে আসামী থাকা অবস্থায়। সুতরাং আইনের দোহাই দিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে যেতে বাধা দেওয়ার সুযোগ নেই।

সরকার সুযোগ দিচ্ছে না আপনারা এই অবস্থায় কি গণতান্ত্রিক পথে হাটবেন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমরা গণতন্ত্রের বাইরে যেতে পারি না। আমরা গণতান্ত্রিকভাবে যাবো, আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে যাবো। এরপরে যদি কেউ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বাধা দেয় সেই বাধাও আমরা গণতান্ত্রিকভাবে অতিক্রম করবো। উনার (শেখ হাসিনা) বক্তব্য তো আপনারা শুনেছে। উনি তো দেবেন না বলেছেন। তারপরও আমরা আপিল করছি শুভ বুদ্ধির কাছে।

এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘উনার (খালেদা জিয়ার) পরিবারের পক্ষ থেকেও তো বলা হয়েছে যে, কোনো শর্ত সাপেক্ষে উনি বিদেশে যাবেন না।’ সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার করুন