২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ৬:৫০:১৯ অপরাহ্ন


দেশ’কে রফিকুল ইসলাম বাবু
চাই সিনিয়র নির্ভর জাতীয় দল
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-০৪-২০২২
চাই সিনিয়র নির্ভর জাতীয় দল বাংলাদেশের অনেক সাফল্যের কারিগর তারা। ক্রিকেট মানেই এদের মুখ ভেসে উঠবেই। এখন অবশ্য মাশরাফি নেই। মাহমুদুল্লাহও টেষ্ট ছেড়েছেন অভিমানে। অভিমান আরো আছে এদের কারো কারো, ছবি/সংগৃহীত


কী চলছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলে? দিন দিন বাজে ক্রিকেট খেলে চলেছেন ক্রিকেটাররা, কেন? এ প্রশ্ন তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে ক্রিকেট প্রেমীদের। ক’মাস আগেরও বাংলাদেশ দলের পারফরমেন্স। আর বর্তমান। অনেক পার্থক্য। দলে নেই অভিজ্ঞ সেই মুখ গুলো। একে একে হারিয়ে যাচ্ছেন যেন তারা। অভিমানেই কী সরে যাচ্ছেন ক্রিকেটাররা, নাকি যে কারনগুলো দেখিয়ে নিজেদের আড়াল করছেন সেটা লোকদেখানো। বিশ্বাস করতে পারছেন না। তামিম এক নাগাড়ে এত গ্যাপ দেননি তার ক্যারিয়ারে তাও ইনজুরির কারনে। সাকিবও হ্যামস্ট্রিং ইনজুরি দেখিয়ে বেশ বড় গ্যাপ।

মাহমুদুল্লাহ সর্বশেষ টেস্টেও দেরশ রানের ইনিংস খেলেও রিটায়ার্টের ঘোষনা। মুশফিককে নিয়ে যত সমালোচনা। মাশরাফিকেও যখন বিদায় নিতে হয় সেটা তার ইচ্ছায় ছিলনা- বেড়িয়ে এসেছে সে তথ্যও। ফলে ক্রিকেটারদের হেয় করা একটা রেওয়াজ সর্বত্র। বিশেষ করে সিনিয়র ক্রিকেটারদের নিয়ে কেন এমন বাহানা,হেয় করা- এ প্রশ্ন ক্রিকেট সংগঠক ও বিসিবি’র সাবেক যুগ্ন সাধারন সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বাবুর। 

রফিকুল ইসলাম বাবু 

সাপ্তাহিক দেশ’র সাথে বাংলাদেশ ক্রিকেটের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরতে গিয়ে তিনি ক্ষোভ ঝেড়েছেন বর্তমান ক্রিকেটের ম্যানেজম্যান্টের বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, ‘এখন যারা জাতীয় দলটার দ্বায়িত্বে, তারা অনভিজ্ঞ। বাংলাদেশ দলের বর্তমান পরিস্থিতিতে কী করা প্রয়োজন সেটা তারা জানেন না। যার খেসারত গুনতে হচ্ছে দলকে। দেশকে। নতুবা টি-২০ বিশ্বকাপে এত বাজে পারফরমেন্স করার দল না আমাদের। নামিবিয়া, স্কটল্যান্ডের মত দল প্রশংসা কুড়িয়েছে। আমরা কাংখিত ফল না পেলেও স্মার্ট ক্রিকেট খেলে প্রশংসা কুড়াতে পারতাম। কিন্তু লেজেগোবড়ে অবস্থা। লজ্জায় ফেলে দিয়েছে বাংলাদেশের ভাবমুর্তি।’ 

দেশে ফিরে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজেও কী বাজে অবস্থা। একই ধারা চট্টগ্রামে অনুষ্টিত প্রথম টেস্টেও। এটা হওয়ার কারন ক্রিকেট ম্যানেজম্যান্টের সিনিয়র, অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের অবমুল্যায়ন করা। আসলে বোর্ডে জাতীয় দলের ম্যানেজম্যান্টে যারা রয়েছে তাদের পক্ষে সিনিয়রদের মুল্যায়ন করা অসম্ভব। বিগত দিনের বেশ কিছু কর্মকান্ডে সেটাই মনে হয়েছে। সিনিয়র ক্রিকেটার যে কতটা অপরিহার্য সেটা কবে বোধগম্য হবে তাদের। কবে বুঝবেন? মাহমুদুল্লাহ কবে বলেছেন, তিনি সরে যেতে চান। কিন্তু তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগই করা হয়নি।

অথচ পাকিস্তানের সঙ্গে সিরিজের শুরুতে তিনি টেস্ট থেকে রিটায়ার্টের ঘোষনা দিলেন। অথচ এখনও রিয়াদ টেষ্ট দলে অপরিহার্য। তার স্থানে কাকে বিবেচনা করছেন আপনি? কে সে?’ তিনি বলেন,‘অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের সরিয়ে ওই পর্যায়ের কাছাকাছি যারা অর্থাৎ ইমরুল কায়েসের মত ক্রিকেটাররা যারা রয়েছেন, তাদের নিয়ে আসলেও অনেকটা রক্ষা। কিন্তু সেখানে আপনি রিপ্লেস করছেন তরুন। অনভিজ্ঞ। অনুর্ধ-১৯ খেলা ক্রিকেটারদের। ক্রিকেট তো বিভিন্ন লেবেলে খেলা হয়। দু’একজন আল্লাহ প্রদত্ব। তাই বলে এক সঙ্গে এক ঝাক দলে নিয়ে নেবেন?’

তিনি বলেন,‘আমার মনে হয়, অনুর্ধ-১৯ দল বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর থেকেই কারো কারো মন মানসিকতা বদলে গেছে। তারা মনে করছেন ওই সকল জুনিয়র ক্রিকেটাররাই এখনই দ্বায়িত্ব নেবে জাতীয় দলের। হচ্ছেও তাই। হলোও। কিন্তু রেজাল্ট কী হলো? অনুর্ধ-১৯ আর জাতীয় দলের গ্যাপ বিশাল বড়। এটা মনে রাখতে হবে। অনুর্ধ-১৯ এর ভাল ক্রিকেটারদের ‘এ’ দল,হাইপারফরমেন্সে ৪-৫ বছর রেখে খেলিয়ে এরপর জাতীয় দলে নিয়ে আসলে তারা ভাল সার্ভিস দিতে পারতো। তা না করে তরুন ছেলেরা এত দ্রুত জাতীয় দলের হয়ে কিভাবে অন্য একটি জাতীয় দলের বিপক্ষে খেলে সফল হবে? ওই লেবেলে তো তারা ক্রিকেটই খেলেনি।

এটাই হচ্ছে এখন। বিশ্বকাপের আসরে দেখলাম অন্তত ৬ জন নতুন খেলোয়াড় নিয়ে খেললো বাংলাদেশ। কী হলো ফল। এখনও হোমে ও টেস্টেও একই অবস্থা। অপরদিকে সিনিয়র ও অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের সঙ্গে এমন সব আচরন হচ্ছে যেন তাদের আর দলে প্রয়োজনই নেই। না হয় মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের কী হলো ও এখনই টেস্ট থেকে অবসর নেবে? বুঝতে হবে। কেন তার ওই সিদ্ধান্ত। সাকিব কী সামান্য ইনজুরি নিয়ে সরে পরলো। সুপারলীগের শেষের দিকে পাওয়া গেল না। হোমে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তিন ম্যাচের সিরিজে অনুপুস্থিত এমন কী প্রথম টেস্টেও। অথচ তার গ্যাপ পুরন হওয়ার মত না। প্রথম টেস্টে অভিজ্ঞ সেই মুশফিক, লিটন,তাইজুলই যা করলো। আর কে কী করেছে?’ 

বাবু বলেন,‘আমাদের বুঝতে হবে। এখনও সময় রয়েছে চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন আনতে হবে। আমার প্রস্তাবনা হচ্ছে সিনিয়রদের সঙ্গে দুরত্বটা কমিয়ে আনা প্রয়োজন। কারন সিনিয়র ক্রিকেটার ছাড়া আমাদের এমন কোনো পারফরমার নেই যাদের মাধ্যমে সাফল্য আনা সম্ভব। ফলে মাশরাফির নেতৃত্বে সিনিয়র ক্রিকেটারদের সঙ্গে ঘরোয়াভাবে বসে তাদের মুল্যায়ন করে তাদেরকে দলে ফেরাতো হবে। তামিম, সাকিব, লিটন, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ, মুস্তাফিজ, প্রমুখ সিনিয়রদের দলে রেখে পাশাপাশি তরুনদের কাছাকাছি রেখে এগুতে পারলে সফলতা আসবে।

নতুবা এভাবে চলতে থাকলে একের পর এক পরাজয়ে দলের মনবল তলানীতে যেয়ে ঠেকবে। সেখান থেকে আর বের হওয়া কস্টকর হয়ে যাবে। যা বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা মোটেও ভালভাবে নেবে না।’ সাবেক এ সংগঠক বলেন, ‘কখনই তারুন্য নির্ভর দল হওয়া উচিৎ না। আমরা দল নিয়ে আর কত এক্সপ্রিমেন্ট করবো? সিনিয়র নির্ভর দল গঠনের বিকল্প নেই। সিনিয়ররাই সাফল্য এনেছে। তারাই আবার সাফল্য আনবে। তাদের সে যোগ্যতা পরীক্ষিত। তরুনরা খেলতে খেলতে শিখবে। ততক্ষনে দলের অবস্থা বাজে পর্যায়ে চলে যাবে। এ  জন্য তাদের দায়ীও করা যাবে না। ফলে সিনিয়রদের সঙ্গে দুরত্ব কমানো যত দ্রুত হবে, ততই মঙ্গল।’ 

তিনি বলেন, ‘টি-২০ ক্রিকেটে মুশফিক, লিটনকে নিয়ে অনেক কথা বলা হয়েছে। কই, টেস্টে এ দুই ব্যাটসম্যান তো প্রমান করে দিলেন, তারা কী পারে। অভিজ্ঞতার যে বিকল্প নেই এ দুইয়ের ব্যাটিংটা তার উজ্জল দৃষ্টান্ত। ফলে যে ফরম্যাটেই হোক না কেন, অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ের বিকল্প নেই। তাদের নিয়ে বসতে হবে। কথা বলতে হবে। তাদের চাহিদা শুনতে হবে।

পরামর্শ নিতে হবে। কারন ক্রিকেটে সাফল্য এলে আপনি (বোর্ডে যারা রয়েছেন) ও সফল। ক্রিকেট ব্যার্থ, আপনিও ব্যার্থ। আপনাকেও জবাবদিহীর আওতায় চলে যেতে হবে। কথাগুলো মনে রাখা উচিৎ সকলের। কারন ক্রিকেট হলো বাংলাদেশের দলমত নির্বিশেষে সবার ভালবাসার একটা স্থান। ক্রিকেটার বা দল। ফলে তাদের সাফল্যে সবাই হাসে, ব্যার্থতায় সবাই কষ্ট পায়। ভীষন কষ্ট পায়। কান পেতে শোনার চেষ্টা করতে হবে সে কান্না।’  


শেয়ার করুন