২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ১০:৫৯:২৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


বিদেশি কোনো প্রভুদেশ কাউকে ক্ষমতায় বসাবে না
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৪-১০-২০২৩
বিদেশি কোনো প্রভুদেশ কাউকে ক্ষমতায় বসাবে না


আসন্ন নির্বাচন নিয়ে যে পরিস্থিতি বিদ্যমান থাকুক না কেন, বাস্তবতা হলো ডিসেম্বর শেষ বা আগামী জানুয়ারির শুরুতে শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বর্তমান সরকারকে আন্দোলনের মাধ্যমে পদত্যাগের বাধ্য বা সামর্থ্য সম্মিলিত বিরোধীদলের নেই বা বিশ্ব পরিস্থিতিতে সেটি অর্জন যোগ্য নয়। তবে আসন্ন নির্বাচন ২০১৪ বা ২০১৮-এর মতো একতরফা এবং বিতর্কিত করতে পারবে না ক্ষমতাশীল সরকার। মিডিয়া এবং বিশ্ববিবেককে সাক্ষী করে লোক দেখানো ত্রুটিযুক্ত এক তরফা নির্বাচন করা এখন কল্পনার অতীত। সরকারি দল এবং বিরোধীদলসমূহকে আর পানি ঘোলা না করে পূর্ণোদ্যমে নির্বাচনী প্রস্তুতি নেওয়া এখন সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।

দেশের কোনো অগণতান্ত্রিক শক্তি বা বিদেশি কোনো প্রভু কোনো দলকে ক্ষমতায় বসাবে না। দেশের জনগণের আস্থা অর্জন করেই নতুন সরকারকে ক্ষমতায় আসতে হবে। সুশাসনের অভাব, সীমাহীন দুর্নীতি, দ্রব্যমূল্যের আকাশছোঁয়া ঊর্ধ্বগতি, জ্বালানি সংকটের কারণে সরকারের ভাবমূর্তি এখন দারুণভাবে বিঘ্নিত। সরকারের কিছু মন্ত্রী, সাংসদ, সরকার ঘনিষ্ঠ কিছু ব্যবসায়ীর জনবিরোধী কর্মকাণ্ডের কারণে সরকারের অনেক সাফল্য মেঘে ঢেকে গেছে। তৃণমূলে জনগণ অতিষ্ঠ হলেও বিরোধীদলের কালো ভাব মূর্তির কারণে সরকার বিরোধী আন্দোলনে সাড়া দেয়নি। তাই বলে নির্বাচন হলেই সরকার বিনা বাধায় পার পেয়ে যাবে মনে হয় না। রাজনৈতিক দলগুলো যদি আন্তরিকতার সঙ্গে জনঘনিষ্ঠ বিষয়সমূহ নিয়ে সুস্পষ্ট নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি নিয়ে নির্বাচনী প্রচার শুরু করে জনগণ সাড়া দেবে। অনেকটা এই উদ্দেশ্যেই শাসক দল আওয়ামী লীগ নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি প্রস্তুত করার জন্য কমিটি গঠন করেছে।

কি থাকা প্রয়োজন প্রতিশ্রুতিতে?

প্রতিশ্রুতিতে শুরুতেই বিদ্যমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট এবং জ্বালানি সংকটের সঠিক গভীরতা এবং ব্যাপ্তি নির্ধারণপূর্বক পর্যায়ক্রমিক সমাধানের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। দেশীয় প্রাথমিক জ্বালানি আহরণ, উন্নয়ন এবং ব্যবহারের জন্য বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা গ্রহণ করে বাস্তবায়নের সুস্পষ্ট প্রত্যক্ষ ঘোষণা করতে হবে। দেশের অন্যতম প্রধান সমস্যা দুর্নীতি দমন, সব পর্যায় থেকে দুর্নীতির মূলোৎপাটন, এই কাজটি করার বিষয়ে কেন সরকারপ্রধান ঘোষিত পরিকল্পনা হালে পানি পেলো না, সেটি চিহ্নিত করে আমলা নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত পেশাদার প্রশাসনব্যবস্থা এবং সুশাসনের বাস্তব অঙ্গীকার করতে হবে। দেশে পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য মজুদ থাকা এবং কৃষকরা নিয়মিত বাম্পার উৎপাদন করার পরেও কেন কিছু চিহ্নিত সিন্ডিকেটের করাল গ্রাস থেকে বাজার ব্যবস্থাপনা মুক্ত করা যাচ্ছে না, সেগুলো চিহ্নিত করে বাজার ব্যবস্থাপনা সিন্ডিকেটমুক্ত করার অঙ্গীকার করতে হবে। 

দেশের ক্ষয়িষ্ণু গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে কীভাবে শক্তিশালী করে কীভাবে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হবে, সেই বিষয়ে সুস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি থাকতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থাকে কীভাবে গণমুখী করে আধুনিক এবং কারিগরি বিজ্ঞানসম্মত করা হবে সেই প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।

সর্বজনীন স্বাস্থ্যব্যবস্থা যেন সাধারণ জনগণের জন্য সহজলব্ধ হয়, সেটি নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি থাকা অত্যাবশ্যক। অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য রফতানি কীভাবে বহুমুখী করা যায় সেটি জানাতে হবে। রেমিট্যান্স বৃদ্ধির জন্য নতুন বাজার সৃষ্টি এবং কর্মীদের কারিগরি দক্ষতায় দক্ষ করে বিদেশে পাঠাতে হবে। বিদেশি মিশনগুলোকে অর্থনৈতিক কূটনীতি আরো দক্ষভাবে করতে হবে। খেলাধুলার জগতকে রাজনীতি এবং দুর্নীতি মুক্ত করতে হবে।

সাধারণের ধারণা বাংলাদেশ ক্রমাগত ভারতনির্ভর হয়ে পড়ছে। বাংলাদেশ ভারতের প্রতি অনেক সৎ প্রতিবেশী সুলভ উদারতা দেখালেও ভারত অনেক বিষয়ে উদার মন নিয়ে এগোচ্ছে না। ভারত-বাংলাদেশের অনিষ্পন্ন থাকা বিভিন্ন বিষয় কীভাবে সমাধান করা হবে তার একটি সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে থাকা প্রয়োজন।

এটি সুস্পষ্ট ইসলাম ভীতি বা ভারতের জুজু দেখিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচনে জয় পাওয়া যাবে না। আশা করি, সরকারি দল এবং বিরোধীদলগুলো বর্তমান বাস্তবতা মেনে নিয়ে আগামী দিনের চ্যালেঞ্জসমূহ কীভাবে শামাল দেওয়া হবে সেই বিষয়ে কর্মপরিকল্পনার রূপকল্প সাধারণ ভোটারদের কাছে তুলে ধরবে। 

শেয়ার করুন