২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৯:২৯:২৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম :


সরকার পতন ডেটলাইন দিয়ে হয় কি
সালেক সুফি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৫-১০-২০২৩
সরকার পতন ডেটলাইন দিয়ে হয় কি


যতই দিন ঘনিয়ে আসছে, সরকার বিরোধী কিছু দলের সরকার পতনের নানা মাত্রিক আন্দোলন গতি হারা, দিশা হারা হয়ে যাচ্ছে। যখন লেখাটি পড়বেন পাঠক, তখন ২৮ তারিখের নিষ্ফলা ডেটলাইন এবং সরকারি দলের প্রতিক্রিয়া নিষ্ফলা রূপ দেখবে দেশবাসী। আজকাল কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর উপর আস্থা হারানো মানুষ সকল পর্যায় থেকে সরকার পতনের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে না। বাংলাদেশ এবং বিশ্ব বাস্তবতায় ডেটলাইন দিয়ে সরকার পতন হবে সেটি চিন্তার অবকাশ নেই।

বেশ কিছু ব্যর্থতার মাঝেও অনেক সাফল্য আছে ধারাবাহিক তিন টার্মে  ক্ষমতায় থাকা সরকারের।  ১৯৯০, ১৯৯৬ ও ২০০৬  জনবিরোধী সরকার বিরোধী আন্দোলনগুলোতে যেভাবে সর্বস্তরের মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করেছিল। এখনও সে পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। সরকারের তৃণমূল পর্যায়ে বিপুল জনসমর্থন লক্ষ্য করা গেছে। সুসংগঠিত সংগঠন, সরকারের হাতে কনস্টিটিউশন, নিজেদের সাজানো প্রশাসনে থাকা বিভিন্ন সংস্থাও রয়েছে। সরকার কিন্তু বিরোধী দলের আন্দোলনের চেয়ে ভঙ্গুর অর্থনীতি, মুদ্রাস্ফীতি , অনিয়ন্ত্রিত দ্রব্যমূল্য, জ্বালানি সংকট নিয়ে উদ্বিগ্ন। বিরোধী দলগুলো এইসব বিষয়ে অবস্থান পরিষ্কার করে সুস্পষ্ট জনঘনিষ্ট পরিকল্পনা জনগণের সামনে তুলে ধরেনি। জনগণ কিন্তু বিএনপি ও জাতীয় পার্টির দেশ শাসন দেখেছে। বিশেষত ২০০২-২০০৬ সময়ের পরিস্থিতির কথা সবার স্মৃতি থেকে মুছে যায়নি। তাই বলা যায় চলমান রাজপথের আন্দোলন থেকে সরকার পতনের লক্ষণ এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান নেই। সংবিধান অনুসারে নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন হবে। তবে সেই নির্বাচন কতটা স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ, অর্থবহ হয় সেটিই দেখবার বিষয়। 

বিরোধী দলগুলো দেশের স্বার্থে এবং নিজেদের স্বার্থে নিজেদের অনড় অবস্থান থেকে সরে এসে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনকালীন সরকার বিষয়ে ঐক্যমতে পৌঁছতে পারে। যতদূর মনে হচ্ছে, সরকার নির্বাচন করবে, অনেক দল, এমনকি অস্তিত্বের স্বার্থে মূল বিরোধী দলও নির্বাচনে আসবে। এবার কিন্তু মাঠ ফাঁকা পাবে না সরকারি দল। 

নির্বাচন নিয়ে সরকারি দল এবং বিদেশী দলগুলোর সমস্যা সংকটের অনেক মিল এবং অমিল দুইটিই  আছে। সরকারি দলের অনেক মন্ত্রী সাংসদ তৃণমূলে বিতর্কিত। অধিকাংশ আসনে পরস্পর বিরোধী নেতা নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে সরকারের ব্যাপক উন্নয়নের সুফল কিন্তু জনগণের দোর গোড়ায় পৌঁছায়নি। সরকার প্রধান নানাভাবে নিজ দলের নেতা কর্মীদের আমলনামা সংগ্রহ করেছেন। বিশ্ব মিডিয়া এবং বাংলাদেশ নিয়ে প্রভাবশালী দেশগুলোর অতি আগ্রহের কারণে এবার ২০১৪ বা ২০১৮’র মতো নির্বাচন হবার সুযোগ নেই। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হতে হবে সরকারকে। সেই ক্ষেত্রে তৃণমূলে জনপ্রিয় নেতা নেত্রীদের মনোনয়ন দিতে হবে, সমমনাভাবপন্ন রাজনৈতিক দলের কিছু নেতাদের কিছু আসন ছেড়ে দিতে হবে। সেই ক্ষেত্রে মনোনয়ন বঞ্চিত সরকারি দলের অনেক নেতা নেত্রী নানাভাবে সংকট সৃষ্টি করবে। দ্বন্দ্ব সংঘাতও হতে পারে। 

একই ধরনের বা তারও বেশি সমস্যা সংকট মূল বিরোধী দলের। এর মধ্যে বিএনপির চেয়ারপার্সন দন্ডিত ও গুরুতর অসুস্থ। দন্ডিত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিদেশে অবস্থান করছেন। আন্দোলন করা এক বিষয় আর নির্বাচনে নেতৃত্ব দেয়া আরেক বিষয়। দীর্ঘ ১৭ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরির মত সমস্যা আছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়ে গেলে অনেক মেরুকরণ হবে। বিএনপি নির্বাচনে আসলেও প্রার্থী নির্বাচনে চ্যালেঞ্জ থাকবে। আর নির্বাচন বর্জন করলে দলের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। প্রভাবশালী প্রতিবেশী চাইবে না ভারত বিরোধী কোন দল বাংলাদেশে ক্ষমতায় আসুক। এখন পশ্চিমা দেশগুলো যে ভূমিকা নিক না কেন, নির্বাচন হয়ে গেলে সেই সরকারকেই সমর্থন দিবে নিজেদের বাণিজ্যিক স্বার্থে। তাই রাজনৈতিক দলগুলো রাজপথের আন্দোলনে শক্তিক্ষয় না করে আলোচনার টেবিলে বসে নির্ধারণ করুক বিদ্যমান অবস্থায় কতটা সুষ্ঠু , নিরপেক্ষ নির্বাচন করা যায় সে বাস্তবতায়। Truth is  Stranger than fiction.

শেয়ার করুন