২৬ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০৮:৫৬:৫১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :


সরকার পদত্যাগসহ ১৪ দফা দাবিতে গণতন্ত্র মঞ্চের রোড মার্চ শুরু
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৪-০৬-২০২৩
সরকার পদত্যাগসহ ১৪ দফা দাবিতে  গণতন্ত্র মঞ্চের রোড মার্চ শুরু


সরকার পদত্যাগ, অন্তবর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১৪ দফা দাবিতে দিনাজপুর অভিমুখে রোডমার্চ শুরু করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে গণতন্ত্র মঞ্চ যাত্রা শুরু করেন গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক।

 

তিনি বলেন, ‘‘ এই রোড এখান থেকে আমরা মতস্যভবন পর্যন্ত পায়ে হেটে রোড মার্চ করে গাড়ি উঠব। গাজীপুরে আমাদের পরবর্তি সমাবেশ। এরপর থেকে আমাদের ধারাবাহিক কর্মসূচি আছে। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে এই রোড মার্চ সম্পন্ন করতে চাই।”

 

‘‘ আমরা আশা করব, সরকার, সরকারি দল, প্রশাসন থেকে কোনো ধরনের সহিংসতা, কোনো ধরনের উস্কানি দেয়া হবে না। আমরা শান্তিপূর্ণ ভাবে জনগনকে সাথে নিয়ে জনগনের দাবি, আন্দোলনের দাবি, মানুষের রক্ষা করবার যে দাবি সেই দাবি আমরা আমাদের রোড মার্চ শেষ করতে চাই।৭ তারিখ রংপুরের সমাবেশের মধ্য দিয়ে রোড মার্চ সমাপ্ত হবে এবং সেখান থেকে আমরা আন্দোলনে পরবর্তি কর্মসূচি ঘোষণা করব।”

 

সংক্ষিপ্ত সমাবেশের সভাপতি গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি অভিযোগ করে বলেন, ‘‘ আজকে আমরা যখন রোড মার্চ করছি আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি যে, পথে পথেৃ. যেখানে আমরা পরিস্কার করে বলেছি যে, আপনারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকার আমাদের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাধা দিতে আসবেন না। কিন্তু ইতিমধ্যে জেনেছি, টাঙ্গাইলে তারা(সরকারি দল) আমাদের সমাবেশ স্থলে শান্তি সমাবেশ ঘোষণা করেছেন এবং পুলিশ এখনো পর্যন্ত আমাদের জন্য কোনো সমাবেশ স্থান নির্ধারণ করেনি। আমরা পরিস্কার করে বলতে চাই এক মুখে বলবেন সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করছেন আরেক মুখে বিরোধী দল শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করবে, জনগনের সামনে তার রাজনৈতিক বক্তব্য তুলে ধরবে সেখানে শান্তি সমাবেশের নামে এই কর্মসূচি বানচালের চেষ্টা করছেনৃ এই দ্বি-চারিতা করে জনগন সেটা আর মানবে না, এই দ্বি-চারিতার বিরুদ্ধে জনগন রুখে দাঁড়াবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারি দলের প্রতি আমরা আহ্বান জানাই অবিলম্বে এই সমস্ত হামলা-বাধা নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরির চেষ্টা থেকে আপনারা বিরত থাকুন।”

 

এরপর নেতবৃন্দ মিছিল সহকারে মতস্যভবন মোড় যান সেখান থেকে তারা ৮/৭টি মাইক্রোবাস নিয়ে যাত্রা শুরু করেন।রোড মার্চে সাইফুল হক, জোনায়েদ সাকি ছাড়াও ভাসানী অনুসারি পরিষদের আহ্বায়ক শেখ শহিদুল ইসলাম বাবুল, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার, জেএসডির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন পাটোয়ারি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সম্বয়নকারী হাসনাত কাইয়ুম প্রমূখ নেতারা রয়েছেন।

 

সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত, অন্তবর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে গত ডিসেম্বর থেকে গণতন্ত্র মঞ্চ গণমিছিল, অবস্থান কর্মসূচি, বিক্ষোভ সমাবেশ, পদযাত্রাসহ  কর্মসূচি করার পর ঢাকার বাইরে এটি তাদের প্রথম কর্মসূচি।

 

ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী প্রথম দিন ঢাকা থেকে যাত্রা শুরু করে প্রথম সমাবেশ করবে দুপুরে গাজীপুর চৌরাস্তায়।এরপর বিকাল ৪টায় টাঙ্গাইলের করাতিপাড়া বাইপাস মোড়ে সমাবেশ করবে তারা। 

 

দ্বিতীয় দিনে সোমবার বেলা ১১টায় সিরাজগঞ্জে শহীদ মিনার সংলগ্ন মুক্তি সোপানে এবং বিকাল ৪টায় হবে বগুড়ার শিবগঞ্জের মোকামতলায় সমাবেশ।

 

তৃতীয় দিনে মঙ্গলবার বেলা ১১টায় বগুড়ার সাতমাথায়, বিকাল ৪টায় গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে, শেষ দিন বুধবারে দিনাজপুরে সকাল ১১টায় ইন্সটিটিউট চত্বরে এবং বিকাল ৪টায় রংপুর টাউন হল প্রাঙ্গনে সমাবেশে মধ্য দিয়ে চারদিনের রোড মার্চের শেষ করবে গণতন্ত্র মঞ্চ।

 

যুক্তরাষ্ট্রে ভিসা নীতি: প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে’

 

সাইফুল হক বলেন, ‘‘ গতকাল প্রধান মন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি নিয়ে যে বক্তব্য রেখেছেন তার এই বক্তব্যে রাগ-ক্ষোভ-অভিমানের একটা বর্হিপ্রকাশ ঘটেছে। এতোদিন ধরে বলে সরকার আসছিলো বিএনপিসহ বিরোধী দলের বিরুদ্ধে নাকী এই ভিসানীতি ঘোষণা করা হয়েছে।গতকাল প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে মধ্য দিয়ে এটা পরিস্কারভাবে বেরিয়ে এসেছে যে, আজকে তারা(সরকার) যে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আরেকটা দখলদারিত্ব, আরেকটা তামাশা নির্বাচন, আরেকটা এক তরফা নির্বাচন করতে যাচ্ছেন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এটা বুঝতে পেরে মার্কিনযুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আগে থেকেই তারা নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা, ভিসানীতি জারি করেছে। সরকারের তলের বিড়াল ইতিমধ্যে বেরিয়ে পড়েছে। এভাবে সরকার বাংলাদেশকে বিপদগ্রস্থ করছে। গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকতে যেয়ে তারা দেশ ও জনগনকে বাজি ধরছে। এই ধরনের দায়িত্বহীন ও গণবিরোধী সরকার জনগন মেনে নিতে পারে না।”

 

ভারতের নতুন সংসদ ভবনে সেখানে ম্যুরাল অখন্ড ভারতে যে মানচিত্র স্থাপন করেছে এর প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ এখনো বাংলাদেশ সরকার এর বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ করতে দেখিনি, কোনো নিন্দা জানাতে দেখিনি। ভারতের এই ততপরতা এই অঞ্চলের দেশগুলোর স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, জাতীয় নিরাপত্তার সরাসরি বিরুদ্ধে একটা উস্কানি, অস্থিতিশীলতা, একটা সাম্প্রদায়িক বাতাবরণ তৈরি করছে।আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।”

‘‘ অনতিবিলম্বে ওই ম্যুরাল যে মানচিত্রের ছবি সেই মানচিত্রের ছবি প্রত্যাহারের দাবি জানাই। পাশাপাশি সরকারকে অনবিলম্বে এই ম্যুরালে যে মানচিত্র দেয়া হয়েছে তার প্রতিবাদ করে আনুষ্ঠানিকভাবে দিল্লী মোদী সরকারের বক্তব্য দেয়া দরকার। না হলে বুঝা যাবে চোরের সাক্ষী গাছ কাটার মতো এই সরকার যে আজকে ভারতকে এতো বড় একটা সার্বভৌমত্ব বিরোধী ততপরতার পরেও তারা যে স্পষ্টভাবে নিন্দা জানাতে না পারে তাহলে এই সরকার কিভাবে বাংলাদেশকে বিপদগ্রস্থ করছে তা বুঝা যায়।”

 

জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘‘ গতকাল আওয়ামী লীগের নেতাদের যুক্তিতর্ক প্রধানমন্ত্রী নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে, আমেরিকা যাওয়ার দরকার নাই, আমেরিকার ছাড়া নকি পৃথিবীতে আরো দেশ আছে। এই বক্তব্যের মাধ্যমে কি বুঝা গেলো? প্রধানমন্ত্রী স্বীকার করে নিলেন যুক্তরাষ্ট্রের এই নতুন ভিসানীতি দিয়েছে সেটা ২০১৪ ও ২০১৮ সালের ন্যাক্কারজনক সবচেয়ে কলঙ্কজনক যে নির্বাচন সেই নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে নিয়েছে। এটা খোদ প্রধানমন্ত্রী স্বীকার করে নিলেন। আজকে আমরা পরিস্কার করে বলতে চাই, এই ভিসানীতি বাংলাদেশের মর্যাদাকে ক্ষুন্ন করেছে। এই সরকার সারা বিশ্বের কাছে আমাদের মাথা হেট করেছে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন করে। ২০২৩ সালেও নাকি তারা এই ধরনের নির্বাচন করতে যাচ্ছে বলেই যুক্তরাষ্ট্র এই ভিসানীতি দিলো।”


শেয়ার করুন