২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৮:০৬:৪২ পূর্বাহ্ন


৩ জনের মৃত্যু, পুলিশসহ বহু আহত
অবরোধে অনেকটাই স্থবির দেশ
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-১১-২০২৩
অবরোধে অনেকটাই স্থবির দেশ বিএনপি ও অন্যান্য দলের অবরোধের দৃশ্য


বিএনপি’র গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আয়োজিত ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশে হামলা, নেতাকর্মীদের হত্যা, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস, আলালসহ আন্দোলনরত বিভিন্ন দলের সহস্রাধিক নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, বাড়ি বাড়ি তল্লাশী, হয়রানী ও নির্যাতনের প্রতিবাদে এবং এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সারাদেশে তিনদিনব্যাপী টানা অবরোধের প্রথম দিন অতিবাহিত হয়ে গত ১ নভেম্বর বুধবার এর দ্বিতীয় দিন। নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে শেষ হয় প্রথম দিন। তবে এক কথায় অবরোধের প্রথম দিন অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়ে দেশ। ফলে অবরোধ মানুষের কঠোরভাবে পালিত হওয়া ছিল টক অব দ্যা কান্ট্রি। দীর্ঘ প্রায় ১৭ বছর ক্ষমতার বাইরে থেকে মামলা হামলায় জর্জরিত বিএনপির নেতকর্মীরা এদিন নেমে আসে রাস্তায়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে সর্বত্রই এ অবরোধ সর্বাত্মক পালিত হয়েছে। অনেকটাই বন্ধ ছিল রাজপথ, সড়ক, রেল ও নৌপথ। একই সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ নানা ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে কাজের পরিবেশ ছিল অনুপস্থিত। 

এছাড়াও দেশের মহাসড়কগুলোতে যানবাহনের উপস্থিত ছিলনা বলেই চলে। কিছু সংখ্যক অটো সিএনজি টাইপের যানবাহন চললেও দূরপাল্লার বাসগুলো যাত্রীর অভাব ও রাস্তায় হামলার ভয়ে ছেড়ে যায়নি। 

রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে প্রতিনিয়ত যাত্রীদের পদচারণায় মুখর থাকে। কিন্তু অবরোধের প্রথম দিন মঙ্গলবার রাজধানীর একমাত্র লঞ্চ টার্মিনাল সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে দেখা গেছে একেবারেই ভিন্ন দৃশ্য। একেবারেই ফাঁকা। সকাল থেকে লঞ্চের সব শিডিউল ভেঙ্গেছে। যাত্রী কম থাকায় দুই একটি ছাড়া কোনো লঞ্চই নির্দিষ্ট সময় ছেড়ে যায়নি। ছেড়ে যাওয়া লঞ্চে  যাত্রী ছিলো খুবই কম। 

টার্মিনাল সূত্র জানায়, মঙ্গলবার ভোরে চাঁদপুর, নড়িয়া, মৃধারহাট, ইলিশার উদ্দেশে ছয়-সাতটি লঞ্চ ছেড়ে গেছে। সব মিলিয়ে ২৬, ২৭টি লঞ্চ ছেড়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। যেখানে অর্ধশত লঞ্চ প্রতিদিন যাতায়াত করে বলে জানা গেছে। যাত্রী কম থাকায় বেশিরভাগ লঞ্চই ছাড়তে পারেনি। 

কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে সিডিউল অনুযায়ী ছেড়ে যায় ট্রেন। ফিরে আসে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। কিন্তু এতে যাত্রী সংখ্যা ছিল নগন্য। যারা ছিলেন যাত্রী হিসেবে সে সকল সাধারণ মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক ও উদ্বেগ। কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে বিএনপির ডাকা অবরোধের প্রথম দিনে পুলিশ ও বিএনপি সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় দুজন নিহত হওয়ার কথা বিএনপি দাবি করলেও পুলিশ বলছে একজনের কথা।

মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) সকাল ৯টার দিকে উপজেলার ছয়সুতি এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এদিকে এ ঘটনায় কুলিয়ারচর থানার ওসিসহ অন্তত ১০ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এ ছাড়া বিএনপির ২০ থেকে ২৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে বলে জানা যায়। 

তবে বিএনপির দাবি, সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছেন। কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স দুজন নিহতের সত্যতা নিশ্চিত করে নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করে দাবি করেন, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে বিএনপির দুজন নিহত হয়েছেন। তারা হলেন বড় ছয়সূতি ইউনিয়নের ছাত্রদল নেতা শেফায়েত উল্লাহ (২০) ও একই ইউনিয়নের কৃষকদল সভাপতি বিল্লাল মিয়া (৩০)।

বিএনপির দখলেই ছিল বগুড়া-ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক। অপরদিকে শহরতলী এলাকা চারমাথা, তিনমাথা, সাবগ্রাম, বাঘোপাড়া, এরুলিয়া এলাকায় জামায়াতের নেতৃত্বে রাস্তায় অবস্থান করছেন নেতাকর্মীরা। তারাও সকাল থেকে অবরোধ জোরদার করার জন্য অবস্থান করছেন। পুলিশ এবং অবরোধকারীরা পাশাপাশি অবস্থানে করছেন। পুলিশ, বিজিবির স্পেশাল টিম সড়কগুলোতে টহল দিলেও কোথাও কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি।

ঢাকা সিলেট মহাসড়কের আড়াইহাজারে বিএনপির নেতাকর্মী ও পুলিশের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় ঘটনাস্থল ও আশেপাশের এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। ঘটনার সময় আড়াইহাজার থানার ওসি (তদন্ত ) হুমায়ুন কবির মোল্লা, এএসআই আবদুল মতিন ও কনস্টেবল নজরুল এবং বিএনপির অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। আহতদের মধ্যে পুলিশ সদস্য নজরুলের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে পুলিশ।

বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ জানান, আমাদের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী পুলিশ ও আওয়ামী লীগের যৌথ হামলায় আহত হয়েছেন। পুলিশ আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আমাদের ওপর নির্বিচারে গুলি করেছে। তবুও আমরা ৭২ ঘণ্টা রাজপথে থেকে অবরোধ সফল করব।

গাবতলী বাস টার্মিনালে দেখা গেছে, দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েন অনেক যাত্রী। তবে বিকেল থেকে কয়েকটি বাস দূরপাল্লার রুটে ছেড়ে যেতে দেখা গেছে। গাবতলী টার্মিনাল ও আশপাশের এলাকায় অবরোধ আহ্বানকারী বিএনপি-জামায়াতের কর্মী সমর্থকদের দেখা যায়নি। তবে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া দিতে দেখা গেছে। 

প্রায় একই ধরনের চিত্র ছিল মহাখালী বাস টার্মিনালে। এ টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, সারি সারি বাস পার্কিং করে রাখা হয়েছে। অলস সময় কাটাচ্ছেন বাসের কর্মচারীরা। তবে ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে চলাচলকারী এনা পরিবহনের কাউন্টারের চিত্র ছিল ভিন্ন। দুপুর ১২টার দিকে টার্মিনালে এনা বাসে যাত্রী তুলতে দেখা গেছে। 

সর্বশেষ

পুলিশের গুলিতে মৃত্যু, সংঘর্ষ-ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, গাড়ি ভাঙচুর এবং গ্রেফতারের মধ্যে দিয়ে বিএনপিসহ সমমনা দল এবং জামায়াতে ইসলামীর ডাকা টানা তিনদিনের অবরোধ কর্মসূচির প্রথম দিন শেষ হয়েছে। প্রথম দিনে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে সর্বমোট ৩ জন মারা গেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এবং অর্ধশত আহত হয়েছেন। 

এছাড়া রাজশাহী থেকে দূরপাল্লা বা অভ্যন্তরীণ রুটে কোনো গণপরিবহণ চলাচল করেনি। তবে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। পরিবহণ নেতারা বলছেন, সহিংসতার আশঙ্কায় তারা বন্ধ রেখেছেন গণপরিবহন। তবে নগরীর অভ্যন্তরীণ রুটে, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত পরিবহণগুলো চলাচল করছে স্বাভাবিকভাবেই। 

বরিশাল থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, বরিশালে বিএনপি ও জামায়াত ইসলামী আহূত অবরোধ কর্মসূচির প্রথম দিন শান্তিপূর্ণভাবেই অতিবাহিত হয়েছে। বরিশাল-ফরিদপুর-ঢাকা, বরিশাল-ভোলা-লক্ষ্মীপুর-চট্টগ্রাম, বরিশাল-ঝালকাঠী-খুলনা/মোংলা ও বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা জাতীয় মহাসড়কসহ এ অঞ্চলের সবগুলো আঞ্চলিক মহাসড়ক ও জেলা সংযোগ সড়কগুলোতে যানবাহনের সংখ্যা ছিল খুবই কম। যাত্রীর অভাবে বরিশাল নৌবন্দরসহ দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ৪০টি নৌপথেও বেসরকারি লঞ্চ চলাচলও অনেকটাই সীমিত ছিল। সবগুলো জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে পুলিশি টহল ছিল। সবগুলো বাস টার্মিনালে সশস্ত্র পুলিশের পাশাপাশি নিরস্ত্র আনসারও মোতায়েন করা হয়। বরিশাল মহানগরীর স্পর্শকাতর স্থানগুলোতেও পুলিশ চৌকি স্থাপনের পাশাপাশি নিয়মিত টহল অব্যাহত ছিল।

ময়মনসিংহ থেকে জানা গেছে, বিএনপি-জামায়াতের ডাকা অবরোধের প্রথম দিন ময়মনসিংহ থেকে ঢাকা মহাসড়কসহ দূরপাল্লার সড়কে বাস চলাচল খুব কম। এতে যানশূন্য অবস্থায় ফাঁকা হয়ে পড়েছে মহাসড়ক। মূলত অবরোধের ভয়-আতঙ্কে ভয় আতঙ্কে যাত্রী সংকটের কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। সিলেট থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, সিলেটে গোলাপগঞ্জ উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জিল্লুকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। এদিন বিকেলে এ অভিযোগ করেছেন সিলেট জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন দিনার। তিনি জানান, সিলেট গোলাপগঞ্জ উপজেলা যুবদল নেতা জিলু আহমেদসহ আমরা যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা লালাবাজারে শাহ সিকান্দর সড়কে সকাল ৯টার দিকে অবরোধের সমর্থনে বিক্ষোভ করছিলাম। তখন পুলিশের সাথে আমাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এক পর্যায়ে পুলিশের একটি পিকআপ জিলু আহমেদকে ধাক্কা দিয়ে গাড়ির নিচে ফেলে দেয়। এরপর তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরে আমরা বেলা ১১ টার দিকে খবর পাই, পুলিশ হেফাজতে জিলু আহমেদের মৃত্যু হয়েছে। অবরোধের প্রথম দিনে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে গাছ ফেলে পিকেটিং করার সময় পুলিশের সাথে বিএনপির নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ সেখানে ফাঁকা গুলি ছুঁড়েন। সকাল থেকে শুরু হওয়া বিএনপি ও জামায়াতের তিন দিনের অবরোধে গণপরিবহণ ছিল না সিলেটের রাস্তায়। ব্যক্তিগত গাড়ি নেই বললেই চলে।

কুষ্টিয়া থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, দূরপাল্লার যাত্রীবাহী পরিবহন বন্ধ ছিল। অভ্যন্তরীণ রুটেও সীমিত আকারে চলাচল করছে রিকশা, ভ্যান, অটোসহ অন্যান্য যাত্রীবাহী পরিবহন। দূরপাল্লার পরিবহণ বন্ধ থাকায় কিছুটা বিপাকে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা।

চাঁদপুর থেকে খবরে জানা গেছে, অবরোধকে ঘিরে বিএনপির নেতাকর্মীদের চোখে না পড়লেও রাজপথ দখল করে রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ভোর থেকে শুরু হওয়া অবরোধে চাঁদপুরে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে রয়েছে কড়া নজরদারি। তবে চাঁদপুর থেকে ছেড়ে যায়নি দূরপাল্লার বাস ও যাত্রীবাহী লঞ্চ। যদিও যাত্রী পরিপূর্ণ হলে চাঁদপুর থেকে লঞ্চ ছাড়বে বলে জানিয়েছিল লঞ্চ মালিক কর্তৃপক্ষ।

কুমিল্লা থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে অবরোধের সমর্থনে বিএনপির-জামায়াত মিছিল বের করলে পুলিশ বাধা দেয়। এতে পুলিশের সাথে জামায়াত ও বিএনপি সমর্থকদের সাথে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ, ককটেল বিস্ফোরণ ও ফাঁকা গুলি ছোড়ার ঘটনা ঘটে। মহাসড়কের উত্তর গৌরিপুরে মহাসড়কে গাছের ডাল ফেলে ও টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে অবরোধ সমর্থনকারীরা। অপরদিকে মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অবস্থান নিতে দেখা যায়। তারা মহাসড়কে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, বিএনপির মহাসমাবেশে পুলিশের হামলা ও গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে সারাদেশের মতো ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়ও অবরোধ চলছে। ফরিদপুর থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, ফরিদপুরে ঢিলেঢালা অবরোধ পালন হয়েছে। দেখা মেলেনি বিএনপির কোনো নেতাকর্মীর। তারপরও সকাল থেকে ফরিদপুরের ওপর দিয়ে দূরপাল্লার পরিবহণ বাস তেমন একটা ছেড়ে যেতে বা আসতে দেখা যায়নি। তবে স্থানীয় ও অভ্যন্তরীণ রুটের বেশ কিছু গাড়ি চলতে দেখা গেছে। কোথাও কোনো অঘটনের সংবাদ শোনা যায়নি। তবে পুলিশের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।

গাজীপুর থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, গতকাল অবরোধের প্রথম দিন সকালে গাজীপুরের শিববাড়ি, রাজবাড়ি, চান্দনা চৌরাস্তা, ভোগড়া বাইপাসসহ আশপাশের এলাকায় অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ ছিল এবং দূরপাল্লার কোনো যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়নি। সকাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নেন অবরোধ সমর্থনকারীরা। ভোরে সালনা এলাকাতে টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ এবং গাজীপুর মহানগরীর হারিনাল এলাকায় একটি পিকআপ ভ্যানে আগুন ধরিয়ে দেয় অবরোধকারীরা। অবরোধ চলাকালে ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। এ ছাড়া কালিয়াকৈরের চন্দ্রা, শ্রীপুরের মাওনা ও গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীতেও সীমিত সংখ্যক যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়।

ঝিনাইদহ থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, বিএনপির ডাকা তিন দিনের সার্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। অবরোধের প্রথম দিন গতকাল ঝিনাইদহ থেকে দূরপাল্লার কোনো যাত্রীবাহী বাস ছেড়ে যায়নি। চট্টগ্রামের মীরসরাই থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্ক পাহারার মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে বিএনপি-জামায়াত জোটের ডাকা টানা তিন দিনের অবরোধের শুরুর দিন। গতকাল সকাল থেকে গণপরিবহণ শূন্য রয়েছে দেশের ব্যস্ততম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মীরসরাই অংশে। সরেজমিনে দেখা গেছে, কিছু পণ্যবোঝাই ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও কাঁচামাল সরবারহকারী মিনি পিকআপ চলাচল করতে। গণপরিবহণ বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে অফিসমুখী চাকুরিজীবীদের।

পঞ্চগড় থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, বিএনপি-জামায়াতের ডাকা তিন দিনের অবরোধে বাস ছাড়া সব যানবাহনই চলছে। পটুয়াখালী থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, বিএনপি-জামায়েতের আহূত অবরোধের প্রথমদিনে পটুয়াখালীতে অবরোধকারীদের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। সকাল থেকে কিছু সংখ্যক অভ্যন্তরীণ রুটের যানবাহন চলাচল শুরু করলেও দূরপাল্লার রুটে গাড়ি তেমন চলাচল করেনি। শেরপুর থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, অবরোধের প্রথম দিনে শেরপুর জেলায় অবরোধকারীদের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। তবে ছেড়ে যায়নি দূরপাল্লার যানবাহন। ফেনী থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা দলগুলোর ডাকা ৭২ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচির প্রথম দিন ফেনীতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা, সংঘাত-সহিংসতা ছাড়াই পালিত হয়েছে। অবরোধে সকাল থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অনেকটাই ফাঁকা থাকতে দেখা যায়। মানিকগঞ্জ থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, বিএনপি-জামায়াতের ডাকা অবরোধের প্রথম দিনে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে দূরপাল্লা ও লোকাল বাস চলাচল করেনি। তবে জেলার বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ সড়কে সল্পপরিসরে কিছু ছোট যানবাহন চলতে দেখা গেছে। দূরপাল্লার বাস না চলায় যাত্রীদের পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ। এছাড়াও নেত্রকোনা, সুনামগঞ্চ, নোয়াখালি, টাঙ্গাইলসহ দেশের প্রতিটি স্থানেই দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যায়নি, বা আসেওনি। এ তিনদিনে যেসকল শিক্ষাপ্রাতিষ্ঠানে পরীক্ষা ছিল সেগুলো সব পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ছিল না তেমন। ক্লাশও ছিল ঢিলেঢালা।

শেয়ার করুন