২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ৬:০৩:২৬ পূর্বাহ্ন


দেশকে সাইফুল হক
নেতৃত্বের সঙ্কটে আন্দোলন থেমে থাকবে না
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-১১-২০২৩
নেতৃত্বের সঙ্কটে আন্দোলন থেমে থাকবে না সাইফুল হক


বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন, আন্দালনে আমাদের প্রথম সারি নেতারা যদি গ্রেফতার হয়ে যায় তাহলে দ্বিতীয় পর্যায়ের লিডারশিপ এবং পর্যায়ক্রমে তা নির্ধারণ করা আছে। আসলে এটা নিশ্চিত থাকেন নেতৃত্বের সঙ্কটে আন্দোলন থেমে থাকবে না। আন্দোলনে জনগণই সম্পৃক্ত হয়ে গেছে, এটা সরকাররে বুঝতে হবে। আমেরিকা থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সাথে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে সাইফুল হক এসব কথা বলেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ। 

দেশ: আপনারা সারাদেশে হরতালের পাশাপাশি অবরোধের কর্মসূচি দিয়েছেন। এধরনের কর্মসূচি আবারো দিয়েছেন। আগের নেয়া অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি কিভাবে মূল্যায়ণ করেন। এসব কর্মসূচির পর কি আপনারা আপনাদের কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাবার ব্যাপারে বিএনপি’র সাথে আন্দোলনে অংশ নেয়া সমমনা হিসাবে কতটা আশাবাদী?

সাইফুল হক: পালিত হয়ে যাওয়া অবরোধ হরতাল কর্মসূচিতে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটেছে। এগুলি অনাকাঙ্খিত। এসব অনাকাঙ্খিত ঘটনার সাথে আন্দোলনকারীরা কতটা জড়িত? এর পাশাপাশি সরকার কিভাবে এসব ঘটনা ঘটিয়েছে এগুলি দেখার বিষয়ও আছে। তবে মানুষের সমর্থন ছিলো বলে জনগণের ন্যায্য দাবিতে ডাকা হরতাল অবরোধ সফল হয়েছে। জনগণ এধরনের কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে তাদের দীর্ঘ ক্ষোভের বহি:প্রকাশ ঘনিয়েছে। সর্বস্তরের জনগণের অংশগ্রহণ বিশেষ করে বিরোধী দলের বিশেষ কোনো ধরনের অবস্থান ছাড়া এমন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এতে করে বোঝা যাচ্ছে যে এধরনের কর্মসূচিতে মানুষের রাজনৈতিক এবং এর পাশাপাশি নৈতিক সমর্থন আছে। এটা তার একটি প্রমাণ আর কি..। এখনতো আমরা আস্থাশীল।  

দেশ: আমরা এমন একটি কর্মসূচি পালনে যেখানে দলের জোটের শীর্ষ নেতারা আত্মগোপনে গেছেন সেক্ষেত্রে এসব কর্মসূচি সফলের পেছনে কি কাজ করেছে বলে মনে করেন? সামনের দিনেও কি আশাবাদী?

সাইফুল হক: এর অন্যতম কারণ মানুষের অংশগ্রহণ। এর কারণ হচ্ছে অর্থনৈতিক। তার সাথে যুক্ত হয়েছে সরকারের লোকজনের বেপেরোয়া চুরি, দুর্নীতি অর্থপ্রাচার। মানুষ এগুলির দায় আর নিতে পারছে না। আমাদের ডাকে কর্মসূচিতে অংশ নেয়া সেই ক্ষোভের বহি:প্রকাশ। এই জনগণকে আমরা আরো কিভাবে রাজপথে নামাবো সেটা আমাদের চিন্তার মধ্যে আছে। বলা যায় মানুষেরতো দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। 

দেশ: তাহলে কি বলতে চান এখন রাজপথে মানুষ আপনাদের পক্ষে নেই। তাহলে কারা এমন কর্মসূচি পালন করলো? মানুষের সমর্থন ছাড়া কি মনে করেন অন্য কেউ এমন কর্মসূচি পালন করেছে বা সফল করে দিয়েছে..

সাইফুল হক: আরে কি মুসকিল.. মানুষতো রাজপথে আছে বলেই বড়ো ধরনের অবস্থান না নিয়েই কর্মসূচি সফল হয়ে যাচ্ছে। এটাতো জনগণের নীরব সরব সব ধরনের সমর্থনের বহি:প্রকাশ..। এমন একটা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মুখেও বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কর্মসূচি পালন করেছে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা জেনে বুঝেই নামছে কর্মসূচি সফলে। তারা জানে এমন স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে নামলে কাতের জীবন বিপন্ন হতে পারে, গুলি খেতে পারে..গুম হয়ে যেতে পারে..। তারা নামছে না?  হ্যাঁ আরো জনসম্পৃক্তা থাকলে ভালো হতো।

দেশ: একটা কথা বলা হচ্ছে যে বিএনপি’র প্রথম সারির নেতাকর্মীরা গ্রেফতার বা আত্মগোপনে আছেন। আর এমন পরিস্থিতিতে আপনারা আপনাদের আন্দোলনের সফলতা আসবে? বলা হচ্ছে সরকার পতনে এক দফার চূড়ান্ত আন্দোলনের লড়াইয়ে নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়ছে বিরোধী দল? কি মনে করেন আপনি?  

সাইফুল হক: সেটা একটা সমস্যা আছে তা ঠিক আছে। কিন্তু আমরা সেকেন্ড, থার্ড ট্যায়র লিডারশিপ বিরোধী দলের বিবেচনায় আছে। এগুলি নিয়ে চিন্তা কোনো কারণ নেই। কারণ এই আন্দোলনে জনগণই সম্পৃক্ত হয়ে গেছে, এটা সরকাররে বুঝতে হবে। 

দেশ: এটা কি আরো ব্যাখ্যা করবেন? 

সাইফুল হক: আমি বলেছি আন্দালনে আমাদের প্রথম সারি নেতারা যদি গ্রেফতার হয়ে যায় তাহলে দ্বিতীয় পর্যায়ের লিডারশিপ এবং পর্যায়ক্রমে তা নির্ধারণ করা আছে। আসলে এটা নিশ্চিত থাকেন নেতৃত্বের সঙ্কটে আন্দোলন থেমে থাকবে না..। আমি মনে করি গ্রেফতার আটক মামলা-মোকাদ্দমা দিয়ে এই আন্দোলন থেমে থাকবে না..ব্যাহত হবে না। আন্দোলনের মধ্য দিয়েই নতুন নেতৃত্ব গড়ে উঠে। 

দেশ: আপনারা কি মনে করেন যে লক্ষ্য দিয়ে আন্দোলনে আছেন বা আপনারা বলে থাকেন গণতন্ত্র মুক্তির আন্দোলন, দেশে সুশাশাসন প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করে যাচ্ছেন। আপনি কি মনে করেন আপনারা সেলক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন? না-কি আরো কোনঠাসা হয়ে পড়বেন?

সাইফুল হক: সরকারতো কোণঠাসা করার চেষ্টাই করে যাচ্ছে। এই আন্দোলনে মূল শক্তিটা হচ্ছে জনগণ। সে-ই শক্তিটা হচ্ছে দেশের সাধারণ কোটি কোটি মানুষ। এই আন্দোলন মানুষের হৃদয়কে স্পর্শ করেছে। এটা বিএনপি, গণতন্ত্র মঞ্চের একক আন্দোলন না। জনগণের আন্দোলন। যতো অপপ্রচার করা হোক না কেনো.. কোনো কাজে আসবে না। স্বপ্ল সংখক লোককে অল্প সময়ের জন্য বিভ্রান্ত করতে পারে। কিন্তু ব্যাপক মানুষ এবারকার আন্দোলনে মানুষে সমর্থন আছে। তা না হলে এতো হামলা মামলা পরে দল কিংবা আন্দোলন টিকে থাকে? সুতরাং এই আন্দোলনে চড়াই উৎড়াই আছে..ঘাত প্রতিঘাত আছে। আন্দোলন এবার আমরা বিজয়ী হবোই। সরকারকে আমরা পিছু হটতে বাধ্য করতে পারবো। 

দেশ: সংলাপের একটা ডাক বিভিন্ন মহল থেকে আসছে..এটা কিভাবে দেখেন? 

সাইফুল হক: সরকারতো এটাকে আউট রাইট রিজেক্ট করেছে। সরকার একেবারে সরাসরি সংলাপকেতো তারাই প্রত্যাখ্যান করেছে। তো আমরা বলি এটা শর্তহীন সংলাপ না। আমরাতো বলেছি সরকারের পদত্যাগ এবং নির্বাচনকালীন সময়ে নিরপেক্ষ সরকার- এই দুটো ব্যাপারে নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত হলে সংলাপের একটা পরিবেশ হয়েছে বলে ধরে নেয়া যাবে। কিন্তু ওরা বলে তাহলে আর সংলাপের দরকার কেনো? আরে বেটা..তোমরা কখন কবে কিভাবে পদত্যাগ করবা..? সংবিধান সংশোধন করবা কি-না? অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ কতদিন হবে? ক’মাসের জন্য হবে? সংসদের কি হবে? বিরোধী দল যে আন্দোলন সংগ্রাম করে মামলা-মোকাদ্দমার শিকার হয়েছে, জেলখানায় ঢুকাইছো...এমন অসংখ্য ব্যাপারে আছে না? অল দিস আর ইস্যুজ, দেট সুড বি সেটেলড..সে জন্য সংলাপ দরকার..তা-ই না?। আর সরকারের একটা নিরাপদ এক্সিটের জন্য সংলাপ দরকার।

শেয়ার করুন