২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০১:৫৮:৪৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


আমার কোনো তাড়া নেই
আলমগীর কবির
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-০৪-২০২২
আমার কোনো তাড়া নেই আবদুন নূর সজল


দেশ’কে সজল

আবদুন নূর সজল। বাংলা নাটকে অভিনয় করছেন দীর্ঘদিন ধরে। একটা সময় টেলিভিশনে একক নাটকে সজলই থাকতেন পছন্দের তালিকায় সবার উপরে। তবে ইদানিং নাটকের কাজ কিছুটা কমিয়েছেন তিনি। মনোযোগী হয়েছেন সিনেমায়। সম্প্রতি চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন ‘সংযোগ’ নামের একটি সিনেমায়। পরিচালনা করবেন আবু সাইয়ীদ। এ বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন দেশ পত্রিকার সাথে। 

প্রশ্ন : ইদানিং নাটকে আপনাকে কম দেখা যায়। এর কারণ কি?

সজল : ইচ্ছে করেই নাটক এখন কিছুটা কমিয়েছি। দীর্ঘ দিন একটি জায়গায় কাজ করে এগেয়ে ভাব চলে এসেছে। তাই চিন্তা করেছি কিছুদিন সিনেমায় মনোযোগ দিব। 

প্রশ্ন : সম্প্রতি চুক্তিবদ্ধ হওয়া ‘সংযোগ' সিনেমায় আপনার সংযোগ কীভাবে হলো? 

সজল : নির্মাতা আবু সাইয়ীদ ভাইয়ের সঙ্গে বেশ আগে থেকেই ‘সংযোগ’ সিনেমাটি নিয়ে কথা হচ্ছিল। বছর দশেক আগে তাঁর একটি ফিকশনে কাজ করেছিলাম। আমার করা যত ভালো ফিকশন আছে, তার মধ্যে ওই ফিকশন একটা। ১০ বছর আগেই যে কনটেন্টটি করেছিলাম, সেটি এখনো আধুনিক। সাইয়ীদ ভাইয়ের গল্প বলা, ডিরেকশন- সব সময়ই আমার খুব পছন্দের। তাঁর ‘সংযোগ’ সিনেমায় অভিনয়ের অফার পাওয়ার পর আমি শুধু গল্পটা শুনতে চেয়েছিলাম। গল্প আর চরিত্রটি শুনলাম। ভালো লাগল। এভাবেই কাজ শুরু।


প্রশ্ন : কী ধরনের গল্প নিয়ে তৈরি হচ্ছে ‘সংযোগ’। কিছুটা ধারণা দেওয়া যায়?

সজল : বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির পাশাপাশি এই সময়ের সমাজ বাস্তবতা নিয়ে এই সিনেমার গল্প। আমি অভিনয় করছি একজন উদ্ভাবকের চরিত্রে। আমি আসলে লাকি যে এ রকম একটি গল্প, চরিত্র আমার কাছে এসেছে।

প্রশ্ন : ‘সংযোগ’ সিনেমাটি তৈরি হচ্ছে গণ-অর্থায়নে। বাংলাদেশে এ ধারণা অনেকটাই নতুন। স্বাধীন সিনেমার ক্ষেত্রে এদেশে গণ-অর্থায়নকে কতটা সম্ভাবনাময় মনে করেন?

সজল : হয়তো এ কনসেপ্টটা আমাদের জন্য নতুন। তবে গণ-অর্থায়ন বা ক্রাউন্ড ফান্ডিংয়ের সিনেমা কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। সারাবিশ্বে তৃণমূল পর্যায় থেকে অর্থ সংগ্রহ করে সিনেমা তৈরি হচ্ছে। সেগুলো বিশ্বজুড়ে প্রশংসাও পাচ্ছে। আমরা বাংলাদেশিরাও পিছিয়ে থাকব কেন! গণ-অর্থায়নে ‘সংযোগ’-এর মতো একটা সিনেমার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যে সিনেমাটি সামাজিকবার্তা বহন করছে, এটা তো নিশ্চয়ই সম্ভাবনার। আর আমি বরাবরই নতুন যেকোনো কিছুর সঙ্গে থাকি।

প্রশ্ন : একসময় আপনি মূলত ‘রোমান্টিক হিরো’ ছিলেন। গত কয়েক বছর ধরে নানা ধরনের চরিত্রে নিজেকে নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করছেন। এটি অভিনেতা হিসেবে আপনাকে কতখানি সমৃদ্ধ করছে?

সজল : আমার কাছে বরাবরই একটা জিনিস মনে হয়, যাঁরা অভিনয় ভালোবাসেন, এ শিল্পটাকে ভালোবাসেন, তারা সবাই চান ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে কাজ করতে। আমার শুরু থেকে আগ্রহ ছিল ভিন্ন চরিত্রে কাজ করার। কিন্তু একটা সময় পর্যন্ত আমার কাছে অত বৈচিত্রময় চরিত্র আসত না। একইরকম চরিত্র পেতাম। যে কারণে মাঝে এক-দেড় বছর কোনো কাজ করিনি। তখন চাওয়া এটাই ছিল, যেন ভিন্ন চরিত্রে কাজ করার সুযোগ তৈরি হয়। ভালো কনটেন্টের সঙ্গে সম্পৃক্ততা তৈরি হয়। সবচেয়ে ভালো বিষয়, একটা সময় যে নির্মাতারা খুব ভালো কাজ করতেন, তাঁরা আবারও কাজ শুরু করেছেন। এটা আমাদের ইন্ডাস্ট্রির জন্য অনেক বড় সু-সংবাদ। কারণ যত যা-ই বলি না কেন, আমরা যাঁরা অভিনয় করি, তাঁরা কিন্তু যে কোনো প্রজেক্টে একটা উপকরণের মতো। প্রজেক্টটা অবশ্যই একজন ডিরেক্টরের। ডিরেক্টর যখন কাজটি সুন্দর করে করেন, তখন আমাদের অভিনয় প্রশংসিত হয়।

প্রশ্ন : গল্প বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলো আপনি সবার আগে গুরুত্ব দেন? গল্প, চরিত্র, সহ-অভিনেতা নাকি পরিচালক?

সজল : আমার কাছে সবচেয়ে বেশি প্রায়োরিটি পায় সামাজিকবার্তা। সেটার জন্য যে অনেক বড় পরিসরে কাজ করতে হবে, সেটাও আমি বলি না। একটা পরিবারে কিন্তু অনেক রকমের সমস্যা থাকে, একটা সম্পর্কেও সমস্যা থাকে। নাটক বা সিনেমায় সেই সমস্যাগুলোর যদি সমাধানের পথ দেখানো যায়। কিংবা যে দৃষ্টিভঙ্গির ভেতর দিয়ে আমরা এসেছি, সেখান থেকেও দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের কোনো জায়গা যদি একটা ফিকশন বা একটা সিনেমার মধ্য দিয়েও বলা যায়; সেটা আমার কাছে মনে হয় অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য। সেই সাথে যে গল্পে মাটির গন্ধ আছে, আমাদের নিজস্ব কালচারের প্রেজেন্টেশনস আছে, শ্রমজীবী মানুষের গল্প-এসব কাজ আমাকে টানে। আমাদের তো কৃষিপ্রধান দেশ। খেটে খাওয়া, শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যাই এখানে বেশি। একজন রিকশাচালক থেকে শুরু করে একজন কৃষক, মুদি দোকানদার, মুচি, ফ্যাক্টরি শ্রমিক থেকে শুরু করে যাঁরা আছেন, এ রকম অনেক পেশা আছে। আমি পাঁচটা-সাতটা বললাম। তো এই মানুষগুলোর যে গল্প, তাদের যে ক্রাইসিস, সেই ক্রাইসিসের উত্তরণের যে পথ, এসব যে চিত্রনাট্যে পাই, সেগুলোতে কাজ করতে সব সময়ই ভালো লাগে।

প্রশ্ন : প্রায় দুই যুগের অভিনয় ক্যারিয়ার আপনার। সিনেমার সংখ্যা এত কম কেন?

সজল : সিনেমার ক্ষেত্রে আমার যে গল্পগুলো ভালো লাগছে, আমি কিন্তু সেটাতেই সম্পৃক্ত হচ্ছি। আমার কোনো তাড়া নেই। এ বছর এটা করতে হবে, পরের বছর এটা করতে হবে- নট লাইক দ্যাট। আমি কিন্তু ওয়েট করতেই থাকি একটা ভালো কাজের জন্য। চরিত্রের ক্ষেত্রেও যেমন, নেগেটিভ চরিত্রেও আমি পিছপা হই না। সামনে হয়তো আমার একটা সিনেমাও আসবে নেগেটিভ চরিত্রের। একজন অভিনেতা হিসেবে চরিত্রের মতো হয়ে উঠতে পারাটাই আমার কাজ।


প্রশ্ন : নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয় করলে কি ‘হিরো ইমেজ’ ক্ষতিগ্রস্ত হয় না?

সজল : সব চরিত্র কি পজিটিভ হয়? আমাদের মানুষদের মধ্যে কি সবাই পজিটিভ? যাঁর মধ্যে ভালোর পরিমাণ বেশি, মন্দের পরিমাণ কম, তাকে আমরা ভালো বলি। যাঁর মধ্যে মন্দের পরিমাণ বেশি, ভালোর পরিমাণ কম, তাঁকে আমরা মন্দ বলি। কিন্তু একজন মন্দ মানুষের ভেতরেও যে ভালো গুণ থাকে না, তা কিন্তু নয়। পরিমাণটা হয়তো কম-বেশি থাকে। তো এই ধরনের চরিত্র কেন করব না? কারণ এটা তো খুব সহজ-স্বাভাবিক চরিত্র, যেগুলো আশপাশেই দেখা যায়।

প্রশ্ন : ইন্ডাস্ট্রিতে আপনি সবার পছন্দের লোক। সবার সঙ্গেই আপনার ভালো সম্পর্ক। আপনাকে নিয়ে কোনো বিতর্ক-বিবাদ নেই। রহস্যটা বলবেন?

সজল : আমি এ ইন্ডাস্ট্রিতে ২০-২২ বছর কাজ করে ফেলেছি। এত বছর যে কাজ করতে পেরেছি, এটার কারণ- সবার সহযোগিতা। আমি অনেক মানুষের কাছে কৃতজ্ঞ, সৃষ্টিকর্তা তো আছেনই, আমার পরিবার তো আছেই, তাছাড়াও ডিরেক্টর, প্রডাকশন বয়, মেকআপ আর্টিস্ট, ডিওপি, লাইটম্যান, সাংবাদিক- সবাই আমাকে এত সাপোর্ট করেন, আমি সত্যিই কৃতজ্ঞ। তা নাহলে আমি যে পরিমাণ আলাভোলা, এতদিন ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে পারতাম না।

প্রশ্ন : আপনি সেটে থাকলে রিলাক্সে থাকেন সবাই। এ বিষয়টি কি আপনি মেইনটেইন করেন?

সজল : দায়বদ্ধতা আসলে। একজন যদি তাঁর কাজের জন্য আমাকে সিলেক্ট করেন, তিনি তার বিনিময়ে আমাকে পারিশ্রমিক দিচ্ছেন, সেই জায়গা থেকে তো আসলে সৎ থেকে আমার কাজটা করা উচিত। এই সৎ কীভাবে হবে? আমি আমার কাজটিতে যতটুকু পারি মনোযোগি থাকব। যতটুকু পারি কো-অপারেটিভ থাকব। এটাই তো স্বাভাবিক। আমি কিন্তু আলাদা করে কিছু করি না।

প্রশ্ন : আপনার অভিনয়ে যুক্ত হওয়ার গল্পটা বলবেন?

সজল : আমার মামার নাম ফিরোজ। উনি থিয়েটারের শো দেখাতে নিয়ে যেতেন। আমার এখনও মনে আছে, ‘দেওয়ান গাজীর কিস্সা’ নামে একটা নাটক ছিল নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের। এই নাটকটা আমি ছোটবেলায় ২২ বার দেখছি। আমি কিন্তু একই চরিত্র অনেককে করতে দেখেছি। মাখন চরিত্রে হায়াত কাকুকেও (আবুল হায়াত) দেখেছি, যুবরাজ ভাইকেও (খালেদ খান) দেখেছি করতে। লাইলি চরিত্র, এটাতে আমি নিমা আপাকে (নিমা রহমান) দেখেছি, সারা আন্টিকে (সারা যাকের) দেখেছি, বিপাশা আপাকেও (বিপাশা হায়াত) করতে দেখেছি। তখন বিষয়টা ছিল, রেজাল্টটা ভালো করতে হবে, কারণ ‘দেওয়ান গাজীর কিস্সা’ দেখতে হবে। এই নাটকটি এত ভালো লাগত যে, ওই সময় যতগুলো মঞ্চের নাটক হতো, সেই ‘সাত ঘাটের কানাকড়ি’, ‘কঞ্জুস’, ‘যৈবতী কন্যার মন’ মোটামুটি সব দেখছি।

প্রশ্ন : হুমায়ূন ফরীদির সঙ্গে অভিজ্ঞতা কেমন?

সজল : ফরিদী আঙ্কেলের সাথে সিন করতে গেলাম, সেটা আরেক অভিজ্ঞতা। এমনও হয়েছে ডায়লগের একটা জায়গায় লেখা আছে, উনি বলে দিলেন, একটা কাজ কর, তুই এখানে একটা গ্যাপ দে। গ্যাপ দিয়ে এরপর এই সংলাপটা বল। বললাম। দীপংকর দীপনের শুট। উনি কাট করলেন। তারপর বললেন, এভাবে না। একটা টেক গেল। সেকেন্ড টেক। উনি কিন্তু ওই দৃশ্যে নিজেও অ্যাকটিং করতেছেন। উনি বললেন, এভাবে না করে এখানে একটা ‘হু’ অ্যাড কর। বললাম। বলার পরে উনি আবার কাট করলেন। তিনবারের পর উনি আবার বললেন, শুরুর দিকে আরেকটা জিনিস অ্যাড কর। তারপর বল। উনাকেই কিন্তু অ্যাকটিং করতে হচ্ছে তিনবার করে।

উনার সঙ্গে আমার যতবার কথা হতো, উনার ডিরেকশনেও কাজ করতেছি। অনেক ছোট ছোট জিনিস, ওখানে ও রকম করিস না, এভাবে কর, এভাবে ওপর থেকে ডায়লগ বল। এ রকম বহু কিছু আছে। উনি আমাকে বকতেনই সারাক্ষণ। এমনও হতো, আমার একটা নাটক অনএয়ার হওয়ার পর, উনি ফোন করে বললেন, এ নাটকটা তুই কেন করছিস? এইটা তো কোনো অ্যাকটিং হইলো না। এ রকম কথা অনেক বলছেন উনি। আমি জানতাম, ফরীদি আঙ্কেল ফোন করা মানে এখন বকা খাবো। একদিন চ্যানেল ওয়ানের একটা শোতে গেছিলাম। সেখানে যে সব ডিরেক্টর বা অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করেছি, তাঁদের বাইটস নিয়ে আসতো। আই নেভার এক্সপেক্ট যে, ওখানে ফরিদী আঙ্কেলের বাইটস আসবে। শো হোস্ট করছিলেন তানিয়া হোসেইন। তো এ রকম শোয়ের মাঝখানে হঠাৎ করে বলল, সারপ্রাইজ আছে তোমার জন্য, চলো আমরা স্ক্রিনে দেখি। হঠাৎ দেখি ফরিদী আঙ্কেল। তাঁকে দেখে তো আমার হাত-পা কাঁপাকাঁপি শুরু হলো। এখন তো আমি বকা খাব। ফরিদী আঙ্কেল বললেন, ‘শোন, তোকে কখনও বলা হয়নি। আমি তোর ফ্যান’। এই কথা শোনার পর তাঁকে থ্যাঙ্কু পর্যন্ত বলতে পারিনি। (এতটাই ঘাবড়ে গিয়েছিলাম) বাকি পুরাটা শো আমি ‘হ্যাঁ, না, আচ্ছা’ ছাড়া আর কিছু বলেত পারিনি। আমি ওই কথা সারাজীবন ভুলতে পারিনি।

এজন্য আমি বলি, আমার পেছনে এ রকম অনেক মানুষ আছেন, যাঁরা আসলে সত্যি একদমই আমাকে হাতে ধরে ধরে শিখাইছেন। আমি তো আসলে কিছু শিখে আসিনি।


শেয়ার করুন