২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৭:১০:৫৯ পূর্বাহ্ন


বদলে যাওয়া বাংলাদেশ
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-১২-২০২৩
বদলে যাওয়া বাংলাদেশ


এবারের বাংলাদেশ সফরে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া ভ্রমণের পরিকল্পনা থাকলেও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে সিলেট অঞ্চল ছাড়া ঢাকার বাইরে যাওয়া হয়ে ওঠেনি। বাকি সময় কতটা দেখবো জানি না। তবে ২০২২ আমি বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল ফরিদপুর, খুলনা, পটুয়াখালী, সাতক্ষীরা, কুমিল্লা, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী ও দিনাজপুর সফর করেছি। ঢাকা এবং প্রধান শহরগুলোর পাশাপাশি প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের জীবনমানের ব্যাপক পরিবর্তন দেখেছি। দুটি শহর রাজশাহী এবং পটুয়াখালী আমার ভালো লেগেছে। সাতক্ষীরা এবং কুড়িগ্রামে খেলাধুলার ব্যাপক প্রসার দেখেছি। সারা দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্প্রসারিত হওয়ায় গ্রামীণ এলাকার অর্থনীতি ধীরে ধীরে পাল্টে যাচ্ছে। আমি বিদেশ ফেরত অনেক শিক্ষিত তরুণদের গ্রামাঞ্চলে কৃষি, পশুপালন, ক্ষুদ্র শিল্পে নিয়োজিত দেখেছি। আমি নিশ্চিত নীরব বিপ্লব ঘটাতে চলেছে বাংলাদেশের বর্তমান প্রজন্ম। 

অনেকে নানা কথা বলেন। মাটি আর মানুষের সঙ্গে সংযোগবিহীন আতেলদের কোথায় বিভ্রান্ত হওয়ার কোন কারণ নেই। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন টানাপড়েনে থাকলেও অদূর ভবিষ্যতে স্বনির্ভর হয়ে যাবে। তথাকথিত ক্ষুধা, দারিদ্র্য আমি দেখছি না তেমন। তবে দেশজুড়ে উন্নয়ন কর্মযজ্ঞের সুযোগ নিয়ে অশুভ মহল দুর্নীতি করেছে বিধায় উন্নয়নের সুফল সাধারণ জনসাধারণ আকাঙ্ক্ষিতভাবে পায়নি। কিন্তু পদ্মা বহুমুখী সেতু, মেট্রো রেল, ঢাকা-চট্টগ্রামের এলিভেটেড এক্সপ্রেস হাইওয়ের সুফল পেতে শুরু করেছে জনগণ। ভুল কৌশলের কারণে জ্বালানি নিরাপত্তা কিছুটা অনিশ্চিত হয়ে পড়লেও নতুন সরকার সঠিক পথে চললে সংকট এড়ানো সম্ভব হবে। দেশজুড়ে যে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে তার পাশাপাশি দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকরি ব্যবস্থা গৃহীত হলে কারো কিছুই বলার থাকতো না। ভাবতে পারেন নিজেদের অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ। ঢাকার একটি অংশে মেট্রো রেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেস হাইওয়ে, ৩০০ ফুট মহাসড়ক কি স্বস্তি এনে দিয়েছে? ঢাকা থেকে মানুষ রেলযোগে কক্সবাজার ভ্রমণ করছে, কর্ণফুলীর নিচের সুড়ঙ্গ পথ পতেঙ্গা আনোয়ারাকে সংযুক্ত করে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে ব্যাপক উন্নয়নের দুয়ার উন্মোচন করেছে। মাতারবাড়িতে গড়ে উঠছে জ্বালানি বিদ্যুৎ হাব। পায়রা, মোংলা বন্দরসমূহ অর্থনৈতিক কর্মকা-ের নতুন কেন্দ্র হিসেবে বিকশিত হচ্ছে। বাংলাদেশ অচিরেই যোগদান করছে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের এলিট ক্লাবে। 

জানি কিছু মানুষ ভোটের অধিকার, বাকস্বাধীনতার কথা বলবে। বাংলাদেশে বাক্্স্বাধীনতা নেই এটি বলার কি সুযোগ আছে? অসংখ্য পত্রপত্রিকা, ইলেকট্রনিক মিডিয়া সরকারের সমালোচনা করছে। তবে দেশে দায়িত্বশীল রাজনীতি, সাংবাদিকতার কমতি আছে। বিজ্ঞ জনের অনেক সময় বিষয়বস্তুর গভীরে না গিয়ে অযথা সমালোচনা করছে, কিছু মানুষের অযথা সমালোচনা সরকারকে নিজেদের প্রাকৃতিক গ্যাস এবং কয়লা অনুসন্ধান উন্নয়ন ব্যাহত করেছে। ঢাকার কেন্দ্রস্থলে থাকা বিজেবি সদর দফতর, সেনা সদর দফতর, সচিবালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, ঢাকা মেডিকেল কলেজের মূল ক্যাম্পাসগুলো স্থানান্তর করলে ঢাকার অন্যতম সমস্যা যানজট মিটবে সহজে এটি নিয়ে কথা নেই। ঢাকার উন্নয়ন সুসমন্বিত করার জন্য মেট্রোপলিটন গভর্নেসের কথা বলা হলেও নগর পিতার অফিসগুলো প্রকৃত পক্ষে ঢাল তলোয়ারহীন নিধিরাম সর্দার। ঢাকায় জলজট, শব্দজট, বায়ুদূষণ, পানিদূষণ নিয়ন্ত্রণ অভিভাবকহীন। ঢাকার চারপাশে চারটি নদী দখলে-দূষণে মৃতপ্রায়। খালগুলো পুনরায় উদ্ধারে কথার চেয়ে কাজ হচ্ছে কম। মেয়র অফিস মশা মারতেই পারছে না। 

দেশের স্বাস্থ্যখাত সংকটে আছে। বিপুল জনগোষ্ঠীর জন্য উন্নত মানের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না দুর্নীতির কারণে। বিপুলসংখক মানুষ স্বাস্থ্যসেবার জন্য ভারতমুখী। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার মান ক্রমবনতিশীল। মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশমুখী। মেধা পাচার হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ দ্রুত মেধাহীন হয়ে পড়ছে। 

অভাবিত উন্নয়ন নিয়েও কেন দেশবাসী সরকারকে প্রাপ্য প্রশংসা করছে না তার কিছু কারণ উল্লেখ করলাম। আগামী সরকারগুলোর অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। অর্থনৈতিক সংকট, জ্বালানি সংকট কাটিয়ে উল্লিখিত বিষয়গুলো উন্নয়ন করতে হলে জনতার ভোটে নির্বাচিত জনগণের কাছে দায়বদ্ধ সরকার প্রয়োজন। জানি না আসন্ন নির্বাচনে সেই প্রয়োজন মিটবে কি না। চাই দুর্নীতির দমন এবং সৎ মানুষের শাসন।

শেয়ার করুন